নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ-নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরের ‘উড়ান’ এর নাম রাজ্য জুড়েই শিল্প-সংস্কৃতি জগতের মানুষ জানেন। এবার এই বিশ্ব জুড়ে গৃহবন্দির সময়ে তাঁরা গত ৮ ই এপ্রিল থেকে তাঁদের ফেসবুক পেইজ থেকে শুরু করেন এক অভিনব উদ্যোগ। উড়ান নাম দেন “লক ডাউন কনসার্ট “। অর্থাৎ মানুষ নিজের নিজের ঘরে বসেই ফেসবুকের মাধ্যমে শুনতে পাবেন ভালো ভালো গানের অনুষ্ঠান। সেই মত তাঁরা আয়োজন করেন প্রতিদিন সন্ধের সময় বিভিন্ন শিল্পীর অনুষ্ঠান। প্রাথমিক স্তরে অভিষেক, দীপ এর মত সদ্য উঠে আসা প্রতিভাবানেরা গায়লেও পিছিয়ে নেই নামের তালিকায় কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পীরাও।
দেবদীপ মুখার্জি, খ্যাঁদা ভট্টাচার্যরা এসে জমিয়ে দেন নিজেদের এই সময়ের বেশ কিছু বিখ্যাত গানে। দেবদীপ বাবু লাইভ চলাকালীন বলেন “আমি এই কনসার্ট টি কে উৎসর্গ করছি মৃদুল বাবুর (চা কাকু) নামে, উনি ভাল থাকুন। আর উড়ান এর এই আয়োজন যে উদ্দেশ্য, সারা রাজ্য জুড়ে রক্তের বিরাট ঘাটতি, তাঁরা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের যোগান দিচ্ছেন, সেখানে আপনারাও পাশে আসুন, আমি ও আছি।” সাথে সাথে তাঁর অগণিত ভক্তরা লিখে পাঠাতে থাকেন নিজেদের রক্তের গ্রুপ। অভিনব এই উদ্যোগে খুশি ভার্চুয়াল দর্শকরাও। খ্যাঁদা আহবান জানান ‘উড়ান’ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিল্পীদের যে রেশন এর ব্যবস্থা করেছে, তার পাশে যেনো সবাই এসে দাঁড়ান।
অন্য দুই পৃথক দিনে কাঁপিয়ে দেন ফোক মিউজিক নিয়ে দীপময় দাস ও টিনা ঘোষাল। তাঁদের নিজেদের গানের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম বাউল গান দিয়ে মন ভরিয়ে দেন দর্শকদের।
বাংলাদেশ থেকে বাংলা ফাইভ ব্যান্ডের ভোকাল সিনা হাসান আসেন তাঁর নিজস্ব বেশ কিছু সৃষ্টি নিয়ে। আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্য ভীষন সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করার সাথে সাথে তাঁদের এই করোনা ভাইরাস নিয়ে করে ফেলা নতুন গান ‘যুদ্ধ’ ও পারফর্ম করেন তিনি, যে গানটি প্রথম বারের জন্যে মানুষের সামনে আসে, এবং তাতেই মেতে উঠেছে ইতোমধ্যে বাংলা ফাইভ এর ফ্যানরা।
বাঙলাদেশ যোগ উড়ান এর সাথে আগেও ছিল, কিন্তু এবার যুক্ত হল আরেক পালক। উড়ান লাইভ হল এবার সুদূর গ্রিস থেকে। গ্রিস থেকে বিভিন্ন রকম ইন্সট্রুমেন্ট একসাথে নিয়ে ছিলেন ইয়াসোনাস সারাকিস। সুরের জাদু তে মানুষ কে যেনো দিয়ে গেলেন এই অস্থির সময়ে প্রাণের আরাম। তিনি নিজেও যদিও এই করোনার প্রকোপে গৃহ বন্দি।
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এর পরও আরো বেশ কিছু শিল্পীদের আসার কথা আছে, যারা বাংলা তথা এ দেশের এক একজন উজ্জ্বল মুখ। অনুপ বাবু জানিয়েছেন, “ধন্যবাদ সকল দর্শকদের, যারা প্রতিদিন এই ভাবে উড়ান-এর পেইজে এসে প্রোগ্রাম উপভোগ করছেন, এবং রক্ত দিতে চেয়ে উৎসাহ প্রকাশ করছেন। ঠিক এই উদ্দেশ্যেই আমাদের এগিয়ে আসা। আর সাথে বেশ কিছু প্রান্তিক বাউল শিল্পীর জন্যে আমরা শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছি, সে গুলো ও পৌঁছে দিচ্ছি। কারণ এই অস্থির সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পারলে আমরা সময়ের কাছে অপরাধী থেকে যাবো বলে আমাদের মনে হয়। “