দৈনন্দিন জীবনে কুসংস্কারের হালহকিকৎ — একটি পর্যালোচনা : দিলীপ রায় ।

0
1371

বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে কুসংস্কার, বলা চলে, ওতপ্রোতভাবে জড়িত । মানুষের জীবনে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত । আজকের বিশ্বায়ন ও ডিজিটাল যুগেও কুসংস্কারের প্রভাব সতত প্রবহমান । আমরা যতই চিৎকার করি না কেন বিজ্ঞান মানুষকে অনেক সচেতন করেছে, কিন্তু বাস্তব উল্টো । চোখ কান খোলা রাখলেই এটা সুস্পষ্ট যে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে কুসংস্কারের ব্যাপক প্রভাব লক্ষণীয় । এমন কিছু কুসংস্কার আছে যেটা আপনা আপনি নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত । যেটা শিশুদের মনে প্রভাব বিস্তার করে । বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও কুসংস্কারের গন্ডিতে মানুষ এখনও শৃঙ্খলাবদ্ধ । বরং কিছুক্ষেত্রে মানুষ আপনা আপনি কুসংস্কারে নিমজ্জিত । গ্রাম বাংলায় কুসংস্কারের বাড়-বাড়ন্ত এখনও সুস্পষ্ট । তবে একটাই সান্ত্বনা, কুসংস্কারমুক্ত পৃথিবী গড়তে কতকগুলি বেসরকারি সংস্থার প্রয়াস নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয় । তাঁরাই বরং সেমিনার, পথনাটক, পোস্টার, ইত্যাদির মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়িয়ে চলেছেন । তুলনামূলকভাবে মানুষের মধ্যে আগের চেয়ে ইদানীং শিক্ষার প্রসার ঘটায় কুসংস্কারের গতিধারা কিছুটা হলেও প্রসমিত । এতসব প্রয়াস সত্বেও আমরা এখনও বুকে হাত দিয়ে বলতে পারছি না “আমরা কুসংস্কারমুক্ত” !
এখনও মায়েরা দুগ্ধ-শিশুকে কারও কোলে দেওয়ার আগে কিংবা বাইরে বের করার আগে শিশুটির আঙ্গুলে মুখ দিয়ে কামড় দেন । এতে নাকি শিশুটির অমঙ্গল ধারে-কাছে আসে না । আবার ঐ বাচ্চা শিশুকে কারও কোলে দেওয়ার আগে কিংবা বাইরে বের করার আগে মা শিশুটির মাথার এক কোনে রান্নার কড়াইয়ের কালিতে সরষের তেল মাখিয়ে ছোট টিপ এঁকে দেন । এতে নাকি শিশুটির প্রতি মানুষের কুদৃষ্টি পড়ে না । তাছাড়া রাস্তা দিয়ে বহমান অমঙ্গল বাতাস তাকে আক্রমন করতে পারে না । এই চিরাচরিত প্রথা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে । এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা যাই থাক, মায়েরা তাঁর সদ্যজাত শিশুর প্রতি ষোলোআনা সজাগ ।
গ্রামের দিকে কান পাতলে শোনা যায় অনেক কাহিনী । যদিও সেগুলো এখনও বাস্তব ঘটনার ন্যায় । ঢাকার সন্নিকটস্থ নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছাকাছি গ্রামে একটি বর্ধিষ্ণু পরিবারের বয়স্ক মহিলার দীর্ঘদিন পায়ের ব্যথা । কিছুতেই সারছিলো না । অনেক ডাক্তার-বৈদ্যের ঔষধ খেয়ে তিনি এখন বিরক্ত । ঐগাঁয়ে আবার গুনিনদের পসার রমরমা । সেখানকার তথাকথিত গুনিন তাঁকে জানালেন, মন্ত্র পড়ে মঙ্গলবার ও শনিবার দিন ঝাড়ফুঁক করলেই ঐ ব্যাথার নিরাময় অবশ্যাম্ভাবী । গুনিন আরও বললেন, কর্তামার জন্যে মঙ্গল কামনায় যজ্ঞ করতে । যেই কথা, সেই কাজ । গুনিন মশায়ের বিধান । সুতরাং শুরু হোলো ঝাড়ফুঁক ও যজ্ঞ । কিন্তু পায়ের ব্যথা যথাপূর্ব । অথচ ঐ পরিবারের ধারণা জন্মালো, নিশ্চয়ই অশুভ শক্তির কারণে কর্তামায়ের পায়ের ব্যথা সারছে না । গুনিনও পরিবারের সাথে সহমত । সুতরাং এই বিশ্বাস পরম্পরা । খন্ডাবার নয় । সুতরাং গুনিন-প্রথা সমাজে সতত উজ্জীবিত ।
ভূতে ধরাটার ক্ষেত্রে তো আরও ভয়ানক । কোনো অসুস্থতার কারণে মাথা ঘুরপাক খেলেই গ্রামের মানুষের মধ্যে বদ্ধ ধারণা, তাকে ভূতে ধরেছে । সঙ্গে সঙ্গে ওঝার ডাক । ওঝার আবার ভূত ছাড়াতে ঝাঁটা দরকার । মন্ত্র পড়ার সাথে সাথে ঝাঁটা দিয়ে ভূত ছাড়ানোর কী তড়িৎগতি ! ঝাঁটার আঘাতে সুস্থ মানুষটা বরং আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে । তবুও ঝাড়ফুঁক নিরন্তর । অথচ মানুষের এতেই স্বস্তি ।
তবে এটা ঘটনা, ওঝার কেরামতি থেকে মানুষ এখন অনেকটাই সচেতন । বুঝতে শিখেছেন । ফলে গুনিনদের পসার অনেক কমেছে । ঝাড়ফুঁকের বদলে ভুক্তভোগী মানুষ মালিশের কথা ভাবছেন । অথবা স্থানীয় হাসপাতালে অথবা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের ডাক্তার মহাশয়দের পরামর্শ নিচ্ছেন । এটা ভাল লক্ষণ । আরও একটা স্বস্তির ব্যাপার যে, বিরাট রুদ্রাক্ষের মালা পরিহিত ওঝা/গুনিনদের কদর লুপ্তপ্রায় । মানুষ সচেতন হলেই বরং মঙ্গল । কিন্তু “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর” এই বিশ্বাসে মানুষ এখনও অনুপ্রাণিত । যার জন্য গাঁয়ে-গঞ্জে গুনিনদের ঔদ্ধত্য সতত বর্তমান ।
রাস্তায় বের হলে একটা শালিক (পাখি) দর্শন নাকি অমঙ্গলের প্রতীক । পথ চলতি মানুষ এক শালিক দেখলে অন্ততঃ হাত দিয়ে ঐ শালিককে দশবার প্রণাম করবেন । যাতে বিপদ কেটে যায় । অনেকে আবার দ্বিতীয় শালিক না দেখা পর্য্যন্ত নড়বেও না চড়বেও না । দুটি শালিক দেখা নাকি শুভযাত্রা । এক শালিক মানেই যাত্রাপথে অশুভ সংকেত । একদিন শিলচর বাজারে সায়নি ও তার বাবার সঙ্গে দেখা । মেয়েকে নিয়ে একদৃষ্টে শালিকের দিকে তাকিয়ে । দাঁড়িয়ে থাকবার হেতু পরান মিস্ত্রি সায়নির বাবাকে জিজ্ঞাসা করতেই আক্ষেপের সুরে তিনি বললেন, “আর কেন মশাই, যাচ্ছি অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে । রাস্তায় হঠাৎ এক শালিক । অলক্ষণে ব্যাপার ! দ্বিতীয় শালিক না দেখা পর্য্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না” । পরান মিস্ত্রি মুচকি হেসে বললো, “দাদা ঐসবে অযথা মাথা ঘামাবেন না । আপনি যে কাজে যাচ্ছেন, সে কাজে নির্ভয়ে ও নিশ্চিন্তে যান । আত্নবিশ্বাসই নিজের জন্য মজবুত হাতিয়ার” । কে শোনে কার কথা ! তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তে তিনি অটল । সেধে বিপদ আনতে তিনি গররাজি ।
এক চোখে হাত দিলে, দ্বিতীয় চোখেও হাত দেওয়াটা বাঞ্ছনীয় । নতুবা অশুভ’র ঘনঘটা । নিশ্চিত অমঙ্গলবার্তা । যিনি এক চোখে হাত দেওয়া দেখবেন তাঁর ক্ষেত্রে অমঙ্গলের আগাম বার্তা । এই ধারণার পরম্পরা আজও বিদ্যমান । এমনও দেখা যায় পথ চলতি অনেক সচেতন মানুষ ঐরূপ এক চোখে হাত দেওয়া কাউকে দেখলে তাঁকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দ্বিতীয় চোখে হাত লাগিয়ে তবেই সেখান থেকে বিদায় নেবেন । নতুবা অজানা বিপদের সম্ভাবনা । এটা তাঁদের মজ্জাগত । আত্নবিশ্বাসের পরম্পরা ।
মানুষের মধ্যে এখনও বিশ্বাস, “ডান হাতের তালু চুলকালে সেটা অর্থ-সম্পত্তির আগমনবার্তা” । উল্টোটা, “বা-হাতের তালু চুলকালে মানুষ ভাবেন ভয়াবহ বিপদের সম্ভাবনা” । তাই বিপদমুক্ত হওয়ার জন্য (বা-হাত চুলকালে) বা-হাত একবার বা-পায়ের নীচে এবং আরেকবার বা-চোখে ছোঁয়া লাগাবেনই । এতে সম্ভাব্য বিপদ থেকে নিস্কৃতি । নতুবা একরাশ দুশ্চিন্তায় নিশ্চিতভাবে রক্তচাপ বাড়বার সম্ভাবনা ।
একদিন ঢাকার হাতিরপুল বাজারের রাস্তার বা-দিক দিয়ে হাঁটছিলাম । এমনিতেই হাতিরপুল বাজারের পার্শ্বস্থ রাস্তা, ভীষণ ব্যস্ততম । তার উপর গাড়ি, রিক্সা, বাইক অহরহ । হঠাৎ আমার পিছনে মোটর সাইকেল । আর একটু হলেই ধাক্কা দিচ্ছিলো আর কী ! মোটর সাইকেল আরোহী দ্রুত ব্রেকে চাপ দেওয়ায় বাচোঁয়া । কী ব্যাপার জানতে চাইলে মোটর সাইকেল আরোহী বিনীতভাবে বললেন, তাঁর সম্মুখ দিয়ে একটা কালো “বিড়াল” রাস্তার এপাশ থেকে ছুটে ওপাশে গেলো । কী বিপজ্জনক ব্যাপার ! সামনে দিয়ে বিড়াল গিয়েছে মানেই অশুভ সংকেত । সমুহ বিপদের সম্ভাবনা । আবার ঢোক গিলে আমার দিকে তাকিয়ে মোটর সাইকেল আরোহী বললেন, “এইভাবে সামনে দিয়ে বিড়াল ছুটে গেলে, বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়ালে আগত বিপদ কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল”। কথাপ্রসঙ্গে জানা গেলো, ঐ ভদ্রলোক পরস্পর মানুষের কাছে জেনে এসেছেন সামনে দিয়ে বিড়াল ছুটে যাওয়া অশুভ সংকেত । এর পিছনে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টভঙ্গি তার জানা নেই । “বিড়াল” সম্মুখে পড়েছে মানে অমঙ্গলবার্তা । তাই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অমঙ্গল খন্ডন করাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
কথিত আছে, বাড়ি থেকে বের হবার সময় হাঁচির শব্দ অযথা বিপদ বহন করে আনে । বাইরে জরুরি কাজের জন্য বা অফিসে যাওয়ার জন্য, বাড়ির কর্তা বা অন্য কেউ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হাঁচির শব্দ শুনলে তাঁর পা আর এগোবে না । বরং উল্টে যে মানুষটা হাঁচি দিলো তাকেই দুকথা শুনিয়ে দিয়ে তাঁরা বলবেন, “হাঁচি দেওয়ার আর সময় পেলি না । দিলি তো আমার যাত্রাটা মাটি করে” । রাগে গজরাতে থাকেন । তাই এই অশুভ লক্ষণ বন্ধ করার জন্য তিনি কোথাও একটু বসবেন । তারপর কিছু সময় কেটে গেলে গন্তব্যস্থলে যাত্রা শুরু করবেন । এতে নাকি বিপদ কাটে । যাত্রাপথ মসৃণ হয় ।
যাত্রাপথ শুভ হওয়ার আরও একটা আপ্তবাক্য প্রচলিত । সেটা নাকি হাতি দর্শন । হাতি দর্শন করার অর্থ যাত্রাপথ শুভ । যাত্রাপথ শুভ করার জন্যে অনেকেই বাড়িতে হাতির ছবি এমনভাবে রাখেন যাতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অবধারিতভাবে সেই ছবি দেখা যায় । কারণ যাত্রাকালে হাতি দর্শন শুভযাত্রা ।
আবার কথিত আছে, যাত্রাপথে যদি কেউ শবযাত্রা দেখেন সেক্ষেত্রেও শুভযাত্রা । কথায় বলে “শ্মশানে যে যাচ্ছে তাঁর অস্তিমযাত্রা, অথচ তাঁর অস্তিমযাত্রার পথে যাঁরা তাঁকে দেখছেন তাঁদের শুভযাত্রা” ।
অনেক মানুষ দূরে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বা প্রয়োজনীয় কাজের উদ্দেশ্যে রাত্রিবেলায় বের হন । আর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় যদি পেঁচার ডাক শুনতে পান তাহলে নির্দ্বিধায় সেটা অশুভ যাত্রা । অমঙ্গলের স্পষ্টবার্তা । আবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় “মা” ছাড়া কেউ পেছন ডাকলে সেটাও নাকি বিপদের আভাস । এজন্য পিছন থেকে যে ডাকে তাকে অবধারিতভাবে বকা শুনতে হয় । তাছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কোনো কারণে পায়ে হোচট্‌ খেলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, “তাঁর বিপদ আসন্ন” ।
রাত্রিবেলায় বাড়ির সম্মুখে কুকুরের কান্না অশুভ লক্ষণ । কুকুর কাঁদলে ঐ গৃহে অমঙ্গলের সম্ভাবনা । তাই গৃহকর্তা কষ্ট হলেও বাড়ির সম্মুখ থেকে ঐ ক্রন্দনরত কুকুরদের তাড়াবেনই । নতুবা রাত্রির ঘুম উধাও ।
কোনো বিবাহ অনুষ্ঠানে বা শুভ অনুষ্ঠানে বিধবা মহিলার উপস্থিতি অনেকেই “অশুভ” মনে করেন । পেছনে কী যুক্তি তার সঠিক ব্যাখা এখনও অধরা । অথচ কোনো বাড়ির শুভকাজে বংশ পরস্পরায়ভাবে বিধবা মহিলাদের প্রতি অবহেলা আজও বিশেষ করে গ্রাম বাংলায় আজকের সমাজে উজ্জীবিত ।
আমরা প্রায়শই খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাই, ডাইনি অপবাদে কোনো নিরপরাধ মহিলাকে চুলের মুঠি ধরে নির্লজ্জভাবে পরিবারের লোকজন এমনকি গ্রামের মানুষজন মারধর করছেন । এটা গ্রাম বাংলায় প্রকট । মারধর করেই সাধারণ মানুষ ক্ষান্ত থাকেন না, ঐ নিরপরাধ মহিলাকে ডাইনি অপবাদে শারিরীক নিগ্রহ করে গাঁ থেকে তাঁড়িয়ে ছাড়েন । দেখা যায়, ডাইনি অপবাদের মহিলাদের মধ্যে বিধবা ও নিঃসন্তান মহিলাদের সংখ্যা বেশী । তাঁর অপরাধ, ঐ ডাইনি নাকি ছোট ছোট বাচ্চাদের রক্ত চুষে খায় । তাই ডাইনিকে গ্রামছাড়া করাতেই মারধর । তাছাড়া এটা লক্ষণীয় যে, ডাইনি অপবাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া আগের মতো আজও সমাজে সমানভাবে প্রবহমান । অথচ বাস্তবে প্রতিবাদ, ঐ হইচই পর্য্যন্ত ।
ঘুম থেকে উঠে কৃপণ লোকের মুখ দর্শন করলে নাকি সেই দিনটাই ভীষণ খারাপ । গাঁয়ে গঞ্জে এখনও চালু আছে, কৃপণ লোক দর্শন করলে ভাত রান্নার সময় ভাতের হাঁড়ি ফেটে যাওয়ার রেওয়াজ । শোনা যায়, আগের বাংলাদেশের মাদারীপুর মহাকুমার অধীনস্থ মাতবর চর গ্রামে খালেম চাচার বাড়িতে মাটির হাঁড়িতে ভাত রান্না হচ্ছিলো । সন্ধ্যাবেলায় মাটির হাঁড়িতে ভাত রান্নার সময় জালাল চাচার মুখ দেখার পর হঠাৎ মাটির ভাতের হাঁড়ি ফেটে যায় । সেই সময় সকলেই জানতো, জালাল চাচা এলাকায় এক নম্বর কৃপণ মানুষ । সেই থেকে কথাটা এখনও চালু ।
আর ইংরেজী নম্বর ১৩ ? “আনলাকি থার্টিন” জনপ্রিয় শব্দযুগল । বহুল প্রচলিত । বলা চলে জগৎ বিখ্যাত । একেই বলে কুসংস্কার, কোনো যুক্তির ধার ধারে না ।
কুসংস্কারের হালহকিকৎ দীর্ঘায়িত । এর পিছনে বিজ্ঞানের যুক্তি পাওয়া দুস্কর । অথচ আবহমানকাল ধরে দৈনন্দিন জীবনে উল্লিখিত কুসংস্কার বিদ্যমান । যদিও বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কুসংস্কার দূর করার প্রয়াস অব্যাহত । কিন্তু নির্মূল হওয়ার আশা, এখনও পর্য্যন্ত সম্পূর্ণটাই দুরাশা ।
ছোটখাট কম-বেশী কুসংস্কারে মানুষ আচ্ছন্ন । শতচেষ্টা করেও নিজেদেরকে কুসংস্কারমুক্ত নৈব নৈব চ । এইজন্য সঠিক জনসচেতনতার পদক্ষেপ প্রয়োজন । সাধারণ মানুষকেই কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে ও কুসংস্কারকে সমূলে উৎপাটন করতে এগিয়ে আসতে হবে । এজন্য শিক্ষার বিকাশ আশু কর্তব্য । বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান যেমন সেমিনার (বিজ্ঞানভিত্তিক), পথ-নাটক, ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে আরও সচেতন করা দরকার । নিজস্ব চেতনার উদগ্রীব ঘটলে একদিন হয় তো আমরা নিজেদেরকে বলতে পারবো “কুসংস্কারমুক্ত” । কুসংস্কার একটি সামাজিক ব্যধি । এই নিকৃষ্ঠতম সামাজিক ব্যধির নিরসন সত্বর প্রয়োজন ।
এ১০এক্স/৩৪, কল্যাণী – ৭৪১২৩৫ (ভারত) / মো ঃ +৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪