দশ গ্রাম সোনার দাম পঞ্চাশ হাজার টাকা।
মেয়ের বিয়ে আর দিতে হবে না!
লোহা দিয়ে গয়না বানাতে হবে এবার। সোনা না যাবে গায়ে পরা,
না দেওয়া যাবে উপহার।
সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলেই গেল।
সব বন্ধ, বিক্রিও নেই, তবু সোনা এত মহার্ঘ কেন?,
কারণ, শেয়ার বাজার স্তব্ধ, সোনাও লাগামছাড়া।
পুজোর আগে যদি ষাট হাজারে ওঠে অবাক হওয়ার থাকবে না।
সে যাই হোক, সাধারণ মানুষের কি আর যায় আসে।
সোনার চেয়ে সবজি তাদের কাছে দামি।
তবে এমন একটি দিনে সোনা পঞ্চাশ হাজারি হল, যে দিন আবার আমেরিকায় করোনা-মৃত্যুও পঞ্চাশ হাজার ছুঁল।
মার্কিন দেশে ভয়ংকর রূপ কোভিডের।
এত হম্বিতম্বি করে ভারত থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তাতে কি কাজ হল না?
তখন এমন একটি ভাব করেছিলেন কত কি জানেন, ওটাই বুঝি অব্যর্থ ওষুধ।
লোকটা এরকমই। ত্রিপুরার বিপ্লব দেবের সঙ্গে বিরাট মিল।
দেখলাম আজ আবার বলেছেন, জীবাণুনাশকে যদি করোনা ভাইরাস মরে, তাহলে সেটা রোগীর শরীরে ইনজেক্ট করে নিলেই হয়।
অতি বেগুনি রশ্মি নিয়েও হাস্যকর মন্তব্য করেছেন এদিন।
ভাবুন, কী উন্মাদের হাতে পড়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিত্তশালী দেশটি!
করোনার মায়াখেলায় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে দুনিয়া।
তখন উনি এই সব ছেলেমানুষি করছেন।
একটানা ঘরবন্দির কুফল বিরাট।
মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
একা থাকারও একটা সীমা আছে।
কত আর ভাল লাগে।
কোথায় গরমের সন্ধ্যায় ভেঁপু বাজিয়ে ইডেনে আইপিএল দেখতে যাবে, ভেলপুরি খাবে, তা নয় গৃহবন্দি হয়ে ফেসবুক আর ফেসবুক। কাঁহাতক পারা যায়।
লকডাউন নিদান।
কিন্তু সেটা মানতে গিয়ে হতাশা গ্রাস করছে যুবকদের।
বন্ধুদের সঙ্গে না মারা যাচ্ছে আড্ডা, না প্রেমিকার সঙ্গে দেখা।
রাস্তায় বেরলেই পুলিশ তাড়া করবে।
এই বৈশাখে আমার এক অতি পরিচিতর বিয়ে ছিল।
দিনক্ষণ চূড়ান্ত।
কার্ড ছাপাতেও দেওয়া হয়ে গিয়েছিল।
ঠিক ছিল, বিয়ের পর রাবাংলায় মধুচন্দ্রিমা।
বেচারা!
বিয়ে লকডাউনের গ্রাসে।
নতুন করে অগ্রহায়ণে ডেট করার কথা কনেপক্ষ বলেছিল বটে, কিন্তু বরপক্ষ রাজি হয়নি।
যুক্তি, করোনা কতদিন থাকবে, কেউ বলতে পারছে না।
দ্বিতীয় দফায় যুগলে যদি আবার ‘ডেটভ্রষ্ট’ হয়, সেটা মোটেও মঙ্গলকর হবে না।
তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।
ওদের দু’জনের মনের অবস্থা ভাবুন।
নতুন জীবনে প্রবেশের স্বপ্ন চুরমার।
কবে বিয়ে হবে কেউ জানে না।
তাহলে এমন দিন এল, বিয়েও ঠিক করে দেবে ভাইরাস!
চাকরি বাকরির বাজার তো লাটে।!
কত লোকের কাজ যাবে, কত লোকের বেতন কাটছাঁট হবে, তার হিসেব নেই।
নতুন রিক্রুটমেন্ট সরকারি বেসরকারি কোনও স্তরেই এখন আর হবে না।
খোদ সরকার ডিএ বন্ধ করে দিয়েছে।
এখন নিয়োগ নৈব নৈব চ।
ব্যবসা যে করবেন, তার বাজার কী দাঁড়াবে কেউ জানে না।
লাইফস্টাইল বদলে যাচ্ছে।
আগামী দিনে মানুষ খুব মেপে খরচ করবে। যে টুকু না করলে নয়।
বিনোদন, বেহিসাব শব্দগুলো গুরুত্বহীন হয়ে পরবে।
সবমিলিয়ে সত্যি খুব খারাপ দিন।
কিট অপ্রতুল দেশে।যার জন্য টেস্ট কম হচ্ছে। অথচ, যতবেশি কিট তত দ্রুত মুক্তি।
এক্ষেত্রেও ডুবিয়েছে চিন। ওই দেশ থেকে যে কিট এসেছে, সেগুলো ফালতু।
ভুলভাল রিপোর্ট আসছে টেস্টের। করোনাই ধরা পড়ছে না।
কী মারাত্মক!
চিন কি এক নম্বরি কিছুই বেচতে পারে না। করোনা কিটেও দু’নম্বরি!
একে মারণ ভাইরাস আমদানি করে পৃথিবীকে ওলটপালট করে দিল, এখন করোনার পরীক্ষা হবে যে কিটে সেটাও ভুলভাল।
এই দেশটার জন্য আর কী কী মূল্য দিতে হবে কে জানে!
এদিন ভাল খবর একটাই যে করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কারের পথে অনেক দুর এগিয়ে গিয়েছেন অক্সফোর্ডের গবেষকরা। মানবদেহে সেটি দেওয়া হয়েছে।
গবেষকরা এতটাই নিশ্চিত যে তাঁরা আস্বস্ত করেছেন।
তবে সাফল্য এলেও সেই ভ্যাকসিন বাজারে আসতে সেপ্টেম্বর।
শুনে চোখ কপালে উঠে গেল আমার এক বন্ধুর।
সকালে ভ্যাকসিন আবিস্কারের খবর কাগজে দেখে গদগদ হয়ে ফোন করেছিল।
বললাম, লাফিওনা ভায়া। পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হবে।
শুনে হতাশ গলায় তাঁর জিজ্ঞাসা,
ততদিনে আমেরিকা-ইউরোপে কেউ বেঁচে থাকবে তো?
আমাদেরই বা কী হবে?
বললাম, বাড়িতে থাকো, কিচ্ছু হবে না।
বলল, এবার পাগল হয়ে যাব।
প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা আরও হচ্ছে। বহু জায়গায় হচ্ছে। ভারতেও।
কিন্তু কোনও দিশা এখনও নেই।
এও জানা গেল, যখন এই ভ্যাকসিন ছাড়পত্র পাবে, তখন হয়তো তার কোনও প্রয়োজনীয়তা থাকবে না।
কারণ, হয় বহুরূপী ভাইরাস তার চরিত্র বদলে ফেলে আরও মারণ হয়ে উঠবে, নতুবা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহে এমন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে যে তখন কোভিড ঢোঁড়া সাপে পরিণত।
লাগবেই না কোনও প্রতিষেধক।
সত্যি এ এক বিচিত্র অধ্যায় উপস্থিত। তাহলে এখনি সমাধান কি?
উত্তর অজানা।
মানুষে মানুষে আজ আর কোনও লড়াই নেই।
এখন লড়াই মানুষ বনাম ভাইরাস।
দ্বিতীয় কোনও পক্ষ নেই।
কে জিতবে এই জৈব যুদ্ধে?
জ্যোতিষীগুলো গেল কোথায়?
কি কিছু বলু্ন মশাই?
মুহূর্ত বিচার করবেন না।
মাঝরাতে ভাট বকা লোকগুলো আজকাল বড্ড চুপচাপ।
কিংশুক প্রামাণিক
25 april 2020