প্যাহলে গুণবিচারী বাদ মে দর্শনধারী! : তন্ময় সিংহ রায়।

0
716

ভালোবাসা বা প্রেম হল এক মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা।
পরস্পর সন্নিহিত দু’বর্ণের মিলনকে যেমন বলা হয় সন্ধি অনুরূপ, পরস্পর সন্নিহিত একটি ছেলে ও একটি মেয়ের দুটি মনের মিলনকেই বলা উচিৎ ভালোবাসা!
ভালোবাসায় যৌনকামনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা অপেক্ষাকৃত গৌণ বিষয়, এখানে মানবিক আবেগটিই বহন করে বেশি গুরুত্ব। সর্বোপরি এটি হওয়া উচিৎ একটি পবিত্র অনুভূতি!
বর্তমানে, পাল্টেছে ভালোবাসার সংজ্ঞাটা এরূপ, ‘ভালোবাসা হল একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা।
ভালোবাসায় যৌনকামনা কিংবা শারীরিক লিপ্সা ও স্বার্থ, অপেক্ষাকৃত মুখ্য বিষয়। এখানে মানবিক আবেগটি বেশি গুরুত্ব বহন করেনা।’
বলাবাহুল্য, অনন্ত মহাশূন্য থেকে স্পেস স্যুট/প্যারাসুট ছাড়া অনেক আগেই ‘ভালোবাসা’ লাফ দিয়েছে পৃথিবীর ভূমির উদ্দ্যেশ্যে।

মনের সৌন্দর্যের শব্দহীন ও অব্যক্ত যন্ত্রণার গুরুত্ব যেখানে অপেক্ষাকৃত কম!
বাহ্যিক সৌন্দর্য সেখানে আজও বহাল তবিয়তে বজায় রেখে চলেছে তার হিটলারি কর্তৃত্ব! হয়তো জনপ্রিয় সেই প্রবাদ বাক্যকে ভালোবেসে ও সম্মান জানিয়েই,
‘প্যাহলে দর্শনধারী বাদ মে গুণবিচারী!’

‘মালটা কি দেখতে রে! স্ক্রিন টাইট টি-শার্ট আর জিন্স পরলে যা লাগে না, উহ!…পটালে হয়।’
বর্তমানের এক সিংহভাগ নবপ্রজন্মে’র বিশেষত টিনেজারদের প্রেমের বাতাবরণ ভূমিষ্ঠ হচ্ছে এইরূপ মানসিক প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করেই।
সৌন্দর্য ও শরীরকেন্দ্রিক ভালোবাসায়, প্রেম/ভালোবাসা ভেঙে যাওয়ার প্রতিশব্দ ‘ব্রেকআপ’
ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর মতই বর্তমানে অর্জন করেছে বেশ জনপ্রিয়তা!
অর্থাৎ, চলমান সমাজে ভালোবাসা’র উর্বরতা শক্তি হ্রাস যে পেয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে তা আর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বোঝাবার কোনো অপেক্ষাই রাখে না।
পুষ্টিহীন জীর্ণ-শীর্ণ ‘প্রেম’টা আজ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে, সেই কবে থেকে অবহেলায়, অযত্নে ও অসম্মানে রাস্তার কোণায় পড়েই আছে মুখ থুবড়ে!

ক্রমশঃ বাজারের সস্তা পণ্যে পরিণত হচ্ছে ‘ভালোবাসা’র সম্মান!
মনের জরায়ুতে এখন খুব সহজেই জন্ম নিচ্ছে নিত্যনতুন প্রেমের ভ্রুণ! তদুপরি সেখানে অতিত বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা পরে।
বিষয়টি একটু বিশ্লেষণধর্মী করলে দাঁড়ায় এমন যে,
কোনো ছেলে বা মেয়ে যদি প্রেমে পড়েই যায় বা ভালোবাসা কারুর প্রতি জন্মেই যায় তবে সে সাধারণত অনুসন্ধান করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেনা যে ছেলেটি/মেয়েটি’র আচার-আচরণ, স্বভাব-প্রকৃতি, ইতিহাস ও বর্তমানটি ঠিক কি?
এবং যাকে ভালোবাসা হল/হচ্ছে, তার সাথে কোন কোন মানবিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে চললে সেই ভালোবাসাটি, গ্রহণযোগ্যতায় সমৃদ্ধ লাভ করবে অধিক থেকে অধিকতর পুষ্টিতে!
যদিও এই বিষয়টির গুরুত্বকে অত্যন্ত যত্ন-ভালোবাসার মাধ্যমে গুরুমস্তিষ্কে আশ্রয় দিয়ে তাকে বাস্তবে কার্যকর করা অত্যাবশ্যক উভয় পক্ষেরই।

অনেকজনকে বলতে শুনেছি, প্রথম দেখাতেই নাকি হয়ে যায় প্রেম!
এখন প্রথম দেখাতেই প্রেম সত্যিই হয়ে যায় কিনা তা আমার যুক্তিকে দেয়নি কখনও ইতিবাচক ঈঙ্গিত কারণ,
প্রথম দেখাতেই যা সৃষ্টি হয় তা বোধকরি আবেগে’র প্রাথমিক পর্যায় অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের সহজাত এক আকর্ষণ!

ভালোবাসা/প্রেম নামক বিশালাকার বাড়ি’টি দাঁড়িয়ে থাকে যে সমস্ত স্তম্ভ নামক আদর্শকে অবলম্বন করে তা হল,
ত্যাগ, বিশ্বাস, দয়া, মায়া, নিষ্ঠা, সততা, শ্রদ্ধা প্রভৃতি।
এর যে কোনো একটি/দুটি পিলারের ছোট্ট একটি ফাটল পরবর্তীতে রূপান্তরিত হতে পারে ভাঙনে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সম্পূর্ণ বাড়িখানাই এমনকি, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়াটাও কিঞ্চিৎ পরিমাণে আশ্চর্যের কিছুই নয়।
তাই প্রেমের ক্ষেত্রে না হয় বিশেষ খ্যাতি অর্জনকারী সেই প্রবাদ বাক্যটিকে নিজেরাই একটু করে নিই অদলবদল,
‘প্যাহলে গুণবিচারী বাদ মে দর্শনধারী!’

এখন বর্তমানের প্রায় ঘরে ঘরে, ‘ভালোবাসা ভাঙা’, ‘আত্মহত্যা’, ‘খুন’ ও ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’কে, অসচেতনায়/অবচেতন মনে অক্সিজেন প্রদানের মাধ্যমে, সমাজকে হলুদ-লালচে আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়িয়ে কার্বন কণায় পরিণত আমরা করবো কি-না?…তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আমাদের বুদ্ধাঙ্কের উপরেই।