‘একুশ বছর’ কবিতায় কবি প্রমোদ বসু লিখেছিলেন-
‘এই দেখ, পুরনো আর্শির কাঁচে জলছোপ,
আমার দিন-রাত্রির ছবি,
এখানে শেওলা- মোড়া উঠোন,
এসো, এই আমার একুশ বছর, এই আমার
শ্রেষ্ঠ আসবাব।’
একুশ বছরের একটি মেয়ে স্বপ্ন দেখেছিল পৃথিবীকে সুন্দর করবার, জাতি বৈষম্য মুছে দেবার, মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবার। যার কথা বলছি সে কবি জোৎস্না রহমানের সুযোগ্যা কন্যা মৌসম রহমান। সাধারণত এই বয়সের মেয়েরা অবসরে মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখে কিংবা শপিং মলে মার্কেটিং করে বেড়ায় কিন্তু মৌসমের চিন্তা-ভাবনাগুলো বরাবরই সাধারণের থেকে আলাদা। ক্ষমতা সীমিত জেনেও ওর চোখে আলোর পৃথিবীর স্বপ্ন। মৌসমের বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী মাহাবুব রহমান। ওনার উৎসাহে বড় বাঁকরা গ্রাম ছেড়ে মাত্র একুশেই এম.এস.ডব্লিউ পড়তে কলকাতায় আসা। কলকাতায় এসেই মানুষের কাজ করবে বলে মৌসুম যুক্ত হল কয়েকটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সেই থেকে চার বছর ধরে মৌসম চালিয়ে যাচ্ছে ওর কর্মকাণ্ড। কখনো রক্তদান শিবিরের আয়োজন, কখনো দরিদ্রদের কম্বল বিতরণ, আবার কখনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ছুটে যাওয়া; সর্বক্ষেত্রেই মৌসমের উৎসাহ- উদ্দীপনার এতটুকু খামতি নেই, বিরতি নেই। কলকাতায় এসেই মৌসম যুক্ত হল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কোয়েস্ট ফর লাইফে’র সঙ্গে, যারা রক্তদান শিবির থেকে শুরু করে দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অনেক জনহিতকর কাজ করে থাকে। ওপর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নবদিগন্তে’র সঙ্গেও যুক্ত হল। ‘নব দিগন্ত’ থেকে ৫৫০০ টাকা আর্থিক সহয়তা পেয়েছিল মৌসম। সেই টাকায় নিজের গ্রামের ২৫ জন বৃদ্ধাদের এবং কিছু দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জন্য চাল , ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, সাবান দিতে সক্ষম হয়। এরপর ফেসবুক মারফত এক বন্ধু আর্থিক ভাবে সহায়তা করেন যার সাহায্যে আরও ৫০ জনকে চাল, ডাল, সয়াবিন, পেঁয়াজ, আলু দিতে সক্ষম হল। এই দুই ক্ষেত্রেই মৌসমের বাবাও আর্থিক সহায়তা করেছিলেন।
লকডাউনের শুরু থেকেই মৌসমদের ‘বাতাসবাড়ি’র (যেটি কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত) বাচ্চাদের বিশেষ ভাবে পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। প্রতি দিন এক প্যাকেট দুধ এবং কলা দেওয়া হয়েছে। আম্ফান পরবর্তী সময়ে বস্তিবাসীর ঘর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সবার উদ্যোগ এবং সহযোগিতায় তাদের বাসস্থান বানাতে সক্ষম হয় মৌসমরা।
আম্ফান পরবর্তী সময়ে হাসনাবাদ সংলগ্ন কিছু এরিয়া এবং স্বরূপনগর ব্লকের কিছু ক্ষতিগ্রস্থ এরিয়াতে আবু তৈয়ব এর সাথে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন এনজিওর সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী বন্টনের কাজও চালায় মৌসম। এমন সাহসী, কর্মদ্যোগী এবং পরোপকারী মেয়ে বাংলার ঘরে ঘরে জন্মাক।