THE WALL: আপনাকে নির্বাক করে দেবে।

0
1671

‘The Academy of motion Picture Arts and Science’ আমাদের জানিয়েছে “an original motion picture that has running time of 40 minutes or less Including all credits.” চল্লিশ মিনিট অথবা তার কম সময়ের ভিতর এমন একটি ব্যঞ্জনাময় ছবি, যা গল্পটির সমস্ত সার্থকতা নিয়ে বিদ্যমান। ইংরেজি ‘short-film’ অথবা বাংলায় ‘স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি’ শব্দ গুলো আমাদের কাছে নতুন নয়৷ সত্যি বলতে কি বর্তমান সময় হল গতির যুগ, আমরা প্রত্যেকেই ‘faster than a light’, আর ‘brighter than a sun’ হতে চাই! স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি গতির সাথে সংস্কৃতির একটা সুষ্ঠ মেলবন্ধন ঘটিয়ে দিয়েছে। পরিসর সীমিত অথচ মানবিক আবেদনে ভরপুর এরকমই একটি শর্ট ফিল্মের কথা আজ বলতে চলেছি;- ‘THE WALL’। পায়েল বসু প্রযোজিত, সুমন্ত শুভ্র পরিচালিত এই ছবিটির দৈর্ঘ্য মাত্র ১৯:০৯ মিনিট। প্রশ্ন উঠতে পারে ছবির নাম ‘দ্য ওয়াল’ হোলো কেনো? একটা দেওয়াল কে নিয়ে ছবি করা যায়? একটা কথা বলি, এখানেই শর্টফিল্মের সাথে ছোটোগল্পের কোথায় যেন একটা অদ্ভুত যোগাযোগ আছে। ছোটোগল্পের ক্ষেত্রে ব্যঞ্জনাই প্রধান উপজীব্য বিষয়। আর শর্টফিল্মের ক্ষেত্রেও তাই। ব্যঞ্জনা যত গভীর হবে, আমরা তত থেমে যাব। আমরা তত নির্বাক হব। আশ্চর্যের বিষয় যে চলচ্চিত্র দেখে চোখে জল আসে, সেটাই বাস্তবে ঘটতে দেখলে আমরা এড়িয়ে যাই, কোনো কাজের অজুহাত দিয়ে পালাই, অথবা আপন বিকারে নোংরামি করি। আমাদের শিখতে হবে। আমাদের অভ্যাস করতে হবে। অধ্যয়ন করতে হবে। না হলে আমরা কিছুতেই এই ঘূণ ধরা সমাজটাকে পাল্টে ফেলতে পারবো না।

হ্যাঁ আজকের দিনেও একটা দেওয়ালকে নিয়ে ছবি হয়। মূক বধির জড়ভরত সেই দেওয়ালের গায়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন ঠেসে দেওয়া হয়। সামনে একটা চায়ের দোকান। কাঠের বেঞ্চে বসা দুজন খদ্দের শুরু করে পরনিন্দা পরচর্চা। রাস্তা দিয়ে দেহ ব্যবসায়ী এক মেয়ে হেঁটে যায়। হ্যাংলার মত তাকিয়ে থাকে চায়ের দোকানে বসে থাকা সেই লোক দুটো! চোখ, জিভ আর ঠোঁট দিয়ে শুষে নিতে চায় যুবতী মেয়েটার সব মধু। একটা দামী ফোরহুইলার এসে থামে। নেমে আসেন একজন অভিনেত্রী। সেও পুরুষতান্ত্রিক বিকৃত লালসা থেকে রেহাই পায়না। দেওয়ালের কাছে রাস্তার ওপারে একটা পাগল বসে থাকে। মানসিক ভারসাম্যহীন এক পাগল! চেয়ে চেয়ে দেখে সারাদিন, রাস্তায় মানুষের আনাগোনা। খাবার যত না পায়, গালগাল পায় তারও বেশি। পাগলের একটা নিজস্ব ডেরা আছে। পুরোনো খবরের কাগজ, কাঠ কয়লা, কাঁচামাটির তাল, ইঁট এগুলো তার সম্পদ! কি যে গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছে কে জানে! স্কুলের একজন ছেলে তাকে পেন দিয়েছিল! পেন দিয়ে আবার পাগল কি করে!

সময় পাল্টায়। বেশ্যাবৃত্তি ছেড়ে মেয়েটি এখন স্কুলে পড়ায়। বিস্কুটের প্যাকেট কিনে পাগলকে দেয়, তবু সামাজিক চটুলতা কমেনা। পাগলটা সাক্ষী থাকে এক বিবর্তনের, এক সমাজ পরিবর্তনের, রাতের অন্ধকারে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যুবতীর ঘরে ফেরায়, দেওয়ালে চেটানো অজস্র স্বার্থপর পোস্টারের। দেওয়াল দাঁড়িয়ে থাকে; ছবির দর্শকের মত নীরব, নির্বাক হয়ে। তার জীর্ণ রঙচটা গায়েও একদিন লাগবে বসন্ত। হাওয়া পাল্টাবে। সেই জড়ভরত দেওয়ালও একদিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে কালিদাসের ছিটকে লাগা কালির আঁচড়ে! কিন্তু সেই কারিগরটা কে?

আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে তো? অপেক্ষা করুন। আপনাকে নির্বাক করতে আসছে THE WALL। বাংলা শর্টফিল্মের আসরে সাড়া জাগানো এক ছবি। সিনামাটি ইতিমধ্যেই অনেক ফেস্টিভ্যালে প্রশংসার সঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছে। সামনে রয়েছে আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্র উৎসব।

ছোটো ছবির বাণিজ্যিক সাফল্য নেই বললেই চলে। তবু এছবির নির্মাণে কার্পণ্য করেননি প্রযোজক। ধন্যবাদ জানাই “THE WALL” ছবির প্রয়োজক পায়েল বসুকে; কাহিনী নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক সুমন্ত-শুভ্র –(সুমন্ত বসু ও শুভ্র দত্ত)-কে। সহকারী পরিচালক হিসেবে ছিলেন ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় ও নন্দিনী দেব। ছবিটির কলাকুশলীদের জন্য রইল অজস্র অভিনন্দন। পাগলের ভূমিকায় ‘নরেণ ভট্টাচার্য্য’ এবং চায়ের দোকানের প্রধান মাতব্বর ওরফে নীলুর ভূমিকায় ‘অমিত সিংহ’–এর অভিনয় দক্ষতা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়াও ছোটো ছবির স্বল্প পরিসরে আবীর বিশ্বাস, তিতাস চক্রবর্তী, সুস্মিতা মজুমদার, সুকৃত সাহা ও দেবাদ্রিতা ঘোষ ও শ্রমণা রায়চৌধুরী প্রত্যেকেই নিজ নিজ চরিত্রে সত্য হয়ে উঠেছেন। ছবিটি দর্শক মনের ক্ষিদে মেটাতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস।
______________
শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়