শীত যাই যাই। বসন্ত আসার আনন্দ শুধু আবহাওয়াতে নয়। তার রেশ শুভেন্দুর মনঘরেও। আজ ফরেন ডেলিগেটদের সাথে মিটিং দারুণ সাকসেসফুল। ওদের কোম্পানি একটা বড় বরাত পাচ্ছে। শুভেন্দুরও প্রমোশন পাকা। চেয়ারম্যান সাহেব সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন। “মি. চ্যাটার্জী, গ্রেট জব। ম্যানেজমেন্ট ইজ গোয়িং টু গিভ ইয়ু আ সারপ্রাইজ ভেরি সুন”। আহা! চেয়ারম্যান সাহেবের কথাগুলো যেন কানে মধু ঝরিয়েছে। এবার মিলির বিয়েটা পাকা করতে হবে। আকাশের বাবা মায়ের সাথে বসে ব্যাপারটা ফাইন্যাল করে নিতে হবে। অনেক ঘোরাঘুরি, একে অন্যকে চেনাচিনি করেছিস মা। আর নয়। কোটিপতি বাবার ছেলে। হাতছাড়া হয়ে গেলে? তখন? মেয়েটা রানীর মতো থাকবে। ব্যাস। আর কি চাই? সাকসেস যেন এখন ওর পোষা বেড়াল। পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করে। বাড়িতে ঢোকার মুখে আত্মতৃপ্তির এক চিলতে হাসি মুখ ছুঁয়ে যায়। কিন্তু বাড়িটা এত অন্ধকার কেন? এখন তো আলোর রোশনাইতে সেজে ওঠার সময়। সকালেই তো মুখে হাজার বাতির আলো নিয়ে মিলি বলল, “বাপি, আজ প্রমিস ডে। পুরো উইকটাই প্রেমের। আকাশ মেসেজ করেছে। ভেরি আর্জেন্ট”।
শুনে উল্লসিত শুভেন্দু বলেছিল, “বাব্বা! কতো রকমের ডে আজকাল তোদের। আমাদের সময় এসব ছিলনা। ভাল একটা গিফট কিনে নিয়ে যাস আকাশের জন্য। তারপরে না হয় প্রমিস শুনিস। প্রমিস করিস”। উদার বাবা দেরি করেনি। আঙ্গুলের ত্বরিত চলনে ইন্টারনেটের কাঁধে চাপিয়ে দশ হাজার টাকা মেয়ের অ্যাকাউন্টে ট্র্যান্সফার করে দিয়েছে।
সুনয়নার মুখ থমথমে। চোখ দুটো ফোলা ফোলা। শুভেন্দুর বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে। সুখের আকাশে মেঘের ছায়া কেন?
“আকাশ ব্রেক আপ করে দিয়েছে। লন্ডন চলে যাচ্ছে। ম্যানেজমেন্ট পড়তে। ওর বাবার বিজনেস পার্টনারের মেয়ের সাথে এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে….”, আঁচল চাপা দেয় সুনয়না। ধুপ করে সোফায় বসে পড়ে হতবম্ব শুভেন্দু। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ব্রেক আপ করে দিল মানে? উল্টোদিকের আয়নায় ওর আবছা প্রতিবিম্ব অট্টহাসি হাসছে। চিৎকার করে বলছে, “ব্রেক আপ কথাটা নুতন শুনছিস? খুব চোট লেগেছে, শুভেন্দু? খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? মনে পড়ে? এমনই এক সন্ধ্যায় ক্যারিয়ার গড়ার স্বার্থে কবিতাকে ত্যাগ করেছিলি। ওর চোখে অকাল শ্রাবণের বানভাসি হয়েছিল। বুকের মধ্যে গলগল করে রক্তের স্রোত। কিচ্ছু দেখতে পাসনি। দেখতে চাসনি। তোকে পাগলের মতো ভালবেসেছিল গরীব বাপের মেয়েটা। হিসেব কষে ভালবাসা হয়? হা, হা, হা, হা”। দুহাতে মুখ ঢাকে শুভেন্দু।