১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে যখন ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বাধীনতা দানের কথা ঘোষণা করে তখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রথমে একটি অস্থায়ী কেন্দ্রীয় সরকার এবং ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতবর্ষের একটি সংবিধান তৈরির উদ্দেশ্যে সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি গণপরিষদ গঠিত হয়।
এই গণপরিষদের সভাপতিত্ব করেছিলেন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতিত্ব করেন ডঃ বি আর আম্বেদকর যিনি বাবাসাহেব আম্বেদকর নামেও সুপরিচিত। অবশেষে ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ সংবিধান তৈরির কাজ শেষ হয়ে ২৬শে ডিসেম্বর এই সংবিধানটি ভারতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তার ঠিক এক মাস পরে ২৬শে জানুয়ারি সমগ্র দেশে এই সংবিধান লাগু হয়ে যায়।
ভারতের এই সংবিধানের প্রস্তাবনার শুরুতে স্থান পাওয়া “আমরা ভারতের জনগণ” এই তিনটি শব্দই ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর রচনা করে দেয়। প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ২৬শে জানুয়ারি তারিখটিকে গ্রহণের পেছনে একটি ইতিহাস আছে। দেশে ভারতীয় সংবিধান লাগু হবার ঠিক একুশ বছর আগে ১৯২৯ সালে এই একই দিনে জাতীয় কংগ্রেসের তরফ থেকে প্রথমবার ভারতের পূর্ণ স্বরাজের দাবি জানানো হয়।
ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের ঐতিহ্য:
স্বাধীন ভারতবর্ষে জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের একটি বিশেষ ঐতিহ্য এবং রীতি প্রচলিত রয়েছে। প্রত্যেক বছর এই দিনে দিল্লির রাজপথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে একটি জাঁকজমকপূর্ণ মহড়ার আয়োজন করা হয়। সেই মহড়াতে ভারতীয় স্থল সেনা, জল সেনা এবং বায়ুসেনা অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন রাষ্ট্রের কর্ণধার এবং দেশের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ এবং অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া প্রতি বছরই বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন পৃথিবীর নানা দেশের কোন না কোন নেতা। ভারতবর্ষে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে এক অদ্ভুত উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। তাৎপর্যগত দিক থেকে এই দিনটি স্বাধীনতা দিবসের থেকেও কোন না কোন ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব লাভ করে থাকে।
ভারতীয় সীমানা রক্ষীবাহিনীর প্রজাতন্ত্র দিবস:
দেশের প্রতিটি সীমানা অঞ্চলে সদা প্রহরারত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের বিষয়ে আলোচনা না করলে প্রজাতন্ত্র দিবস সংক্রান্ত আলোচনা একপ্রকার অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
দেশের অভ্যন্তরে রাজধানী দিল্লির রাজপথে একদিকে যেমন ভারতীয় সেনা জাঁকজমকপূর্ণ মহড়া করে, অন্যদিকে তেমনি ভারতের প্রতিটি সীমানায় সীমানা রক্ষীবাহিনীর জওয়ানরা ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তরফ থেকে এই দিন মোমবাতি জালানো, মিষ্টি বিতরণ ইত্যাদি দৃশ্য চোখে পড়ে।
প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের গুরুত্ব:
ভারতবর্ষে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের সবিশেষ গুরুত্ব এবং প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। যে দেশে ভারতবাসী বসবাস করে সেই দেশে এই দিনটি পালনের মাধ্যমে তারা আপন শাসনব্যবস্থাগত নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উদযাপন করে থাকে।
এ কথা মনে রাখা দরকার যে জাতীয় স্তরে উন্নতি করার জন্য নিজের ঐতিহ্যকে সবসময় মনে রাখা এবং উদযাপন করা একান্ত প্রয়োজনীয়। প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন আদপে ভারতবর্ষের সেই উন্নয়নমূলক মানসিকতারই সাক্ষ্য বহন করে। এই দিনটি পালনের দ্বারা বৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষে জনগণের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় হয়।
আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র ছাড়াও প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের একটি আন্তর্জাতিক তাৎপর্যগত দিকও রয়েছে। প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে ভারতীয় সেনার মহড়া প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিপুল ক্ষমতার নিদর্শনকেই তুলে ধরে। একথা অনস্বীকার্য যে বর্তমান বিশ্বে সেনা শক্তি প্রদর্শন কোন একটি দেশের প্রতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সম্ভ্রম গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
তাছাড়া প্রতি বছর সরকারিভাবে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের সময় কোন একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো এবং তার আগমন আন্তর্জাতিক বিশ্বের দরবারে ভারতের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে।
।।সংগৃহীত।।