নগ্ন চেহারা : নাসিফা খান।

0
702

আগামীকাল বিকালের মধ্যে চল্লিশ হাজার টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়, কিন্তু টাকা না দিতে পারলে রাকেশের ধমকি অনুযায়ী কলির ব্যক্তিগত জীবন ও নগ্ন শরীর প্রকাশ্যে আসতে একটা আপলোডই যথেষ্ট। কলির চিন্তা বাড়তে লাগলো…

বছর খানেক আগে রাকেশের সাথে ফেসবুকে তার আলাপ, তারপর বন্ধুত্ব থেকে প্রেম! রাকেশ বড়লোক বাপের বখাটে ছেলে, সারাদিন বন্ধু-বান্ধব, বার,মদ-জুয়া থেকে মহিলা সবক্ষেত্রেই সে দক্ষ। তিনবার উচ্চমাধ্যমিকে ফেল করার পর পড়াশুনাকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে, বর্তমানে বাবার দৌলতে পাওয়া একটা কোম্পানিতে হিসাবনিকেশের কাজ করে। তার বয়স যখন তিন তখন তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে, তারপর দেবিকা সেন অর্থাৎ রাকেশের মায়ের বিবাহ হয় বিমল করের সাথে, বিমলের প্রথম স্ত্রী সুধা মারা যায় এক পথ দুর্ঘটনায় তার ছয় বছরের মেয়ে মিতাকে রেখে।

বিমলবাবু এলাকার একজন নেহাত ভদ্র ও সন্মানীয় ব্যক্তি। সে সন্তানদের মধ্যে কোনোদিনই কোনো বিভাজন করেনি, দেবিকাও সেই পথ অনুসরণ করেছে, তারা সন্তানদের সঠিকভাবে মানুষ করার জন্য সমস্ত পন্থাই অবলম্বন সত্ত্বেও কোথাও যেন সম্পর্কের ফাটল বরাবরই কাঁটারাতের মতো রয়ে গেছে রাকেশ আর তার সৎ বাবার মধ্যে।

মধ্যবিত্ত ও রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে কলি ছোটো থেকেই ডেসপারেট ও অবাধ্য, বেশ কয়েকবার কলেজ পালিয়ে সে রাকেশের সাথে ভিক্টরিয়া, ইকো পার্ক, সিটি সেন্টারে গিয়েছে। হঠাৎ একদিন রাকেশ তাকে একবন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যায়। আর সেখানেই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে শারীরিক সম্পর্ক। কলি প্রথম প্রথম আপত্তি জানালেও শেষমেষ পারেনি। তারপর, নিয়মিত লেনদেন বাড়তে লাগে।

সুন্দরী চেহারার মেয়েটির অবশ্য রাকেশের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল। কিন্তু রাকেশের জীবনে কলির সংখ্যা নেহাত কম ছিল না, তার সুন্দর ও সুঠাম চেহারা ব্যবহার করে সহজেই পটিয়ে ফেলতো তাদের, তার কাছে মেয়েরা শুধু মাত্র উপভোগের বস্তুমাত্র। শুধু তাই নয়, মেয়েদের নগ্ন ছবি সংগ্রহ করা এবং সেগুলি দেখিয়ে ব্লাকমেল করে টাকা আদায়েও সে ভালো দক্ষ।

সে মাঝে-মধ্যেই ফন্দি-ফিকির করে কলির কাছ থেকে টাকা-পয়সা বাগিয়ে নিত। প্রথমদিকে কলি বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিলেও, বারংবার টাকা চাওয়া স্বভাব তার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

হঠাৎ, এক রবিবারের সকালে রাকেশ মোবাইল মারফৎ তার কাছে হাজার তিনেক টাকা চায়। কলির কাছে সেই মুহূর্তে টাকা ছিল না। সে কয়েকদিন সময় চায়। কিন্তু, রাকেশ নাছোড় বান্দা। সে কলির উপর চাপ সৃষ্টি করে…
–দেখো সোনা, আমার ভীষণ দরকার, একটু চেষ্টা করো, তোমার… তোমার সব টাকা সময় মতো আমি পরিশোধ করে দেবো।
–কিন্তু, আমার কাছে এই মুহূর্তে টাকা নেই।
–ও, বুঝলাম, এই তোমার ভালোবাসা? ঠিক আছে দিতে হবে না।
রাকেশ ফোনটা কেটে দেওয়ার সাথে সাথে কলি উত্তেজিত হয়ে বারংবার কল করল, সে রিসিভ করছে না বুঝে কলি মায়ের ফোন থেকে জিঞ্জাসা করল,
–তোমার কবে লাগবে?
–কাল সকালে।
–ঠিক আছে আমি ফোন-পে করে দেবো, কথা দাও আর এভাবে রাগ করবে না!
–ওকে, করবো না, তুমি পাঠিয়ে একটা কল করে দিও।
–আচ্ছা !

এই ঘটনার দিন পনেরো বাদে সে পুনরায় কলির কাছে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ চায়। কলির কাছে রাকেশের চরিত্র এতো দিনে বেশ পরিষ্কার হয়ে এসেছে। কিন্তু,ভালো খারাপ মিলিয়ে মানুষ। সে রাকেশকে বোঝানোর চেষ্টা করল, এভাবে বারংবার টাকা দেওয়াটা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সোনার ডিম পাড়া হাঁস ঘুরে বসেছে…. অমনি রাকেশের মাথা গরম হয়ে গেল, সে অপমানজনক মন্তব্য করতে শুরু করল–
–ও অন্য কাউকে ভালো লাগতে শুরু হয়েছে বুঝি।
–কি বলছো তুমি?
–ঠিকই বলছি, বেশ্যা মেয়েছেলে।
–রাকেশ মুখ সামলে কথা বলো! এভাবে তুমি বলতে পারো না।
–আলবৎ পারি, তুই একটা বাজারি।
–লম্পট নিজের দিকে তাকা তুই কি!
–এই খা…ন…..
কলি ফোনটা কাটতেই হোয়াট্সঅ্যাপে ম্যাসেজ,
রাকেশ এতো নীচে নামতে পারে তার ধারণার বাইরে। তারপর, নিন্তাত বাধ্য হয়েই পাঁচ হাজার টাকা রাকেশকে দিল, কলির মনে এখনও মৃদু প্রত্যশা ভর করে আছে, আশা নিয়ে সে বলল রাকেশ তুমি এতো নীচে নামতে পারলে!
–বেশি ন্যাকামো করিসনে, চল, চল।
–প্লিজ ছবিগুলো ডিলিট করে দাও।
–আরে বললাম দেবো, যা,যা, আগে বাড়, আগে বাড়।

সেদিনের পর, কলির মধ্যে জীবিত ছিল শুধুই একরাশ ঘৃণা, সেগুলো নিয়েই সে ঘরে ফিরলো এবং নিজেকে পরিবতর্নের যথাসাধ্য চেষ্টা করলো। কিন্তু, জীবন নেহাত সাজানো গল্প নয় কলি বুঝতে পারল মাস দুয়েক পর, হঠাৎ রাকেশের ফোন ,নম্বর’টা ভিন্ন হওয়ায় কলি সেটা রিভিস করতেই তরঙ্গের সাথে ভেসে এল,
–কি ব্যাপার, পুরো ভুলে গিয়েছো দেখছি!
–কে, কে বলছেন?
–ও আওয়াজটাও চিনতে অসুবিধা!
বটে, বটে আমি কিন্তু ভুলিনি নির্জন ফ্লাটের উষ্ম বিছানা!
–কি আজেবাজে বকছো, আমি তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই।
–আমি তো চাই, কথা বলবো…বলবো।
আমি তো ভুলিনি তোমার গোলাপি ঠোঁট দুটো… তুলোর মতো গাল..আর..আর….হা হা হা হা হা
–ফালতু কথা বলার সময় আমার নেই।
–এই তো, এই তো, অনেকটা এসেছো, আর একটু… আর একটু… হা হা হা হা… আর একটু।
–মানে!
–একদম পারফেক্ট!
–আমি এক টাকাও তোমাকে দেবো না, যা করার করে নিও।
–তাই… তাই… তোমার লজ্জা লাগবে না যখন তোমার বাবা-মা, ভাই ,পাড়া -প্রতিবেশীরা নগ্ন শরীর দেখবে?
–তুমি ,ছবিগুলো!
–ডিলিট করিনি,আবার করেছিলাম… তোমার মতো কতো মেয়েদের শরীর আর শরীর আমার ল্যাপটপ জুড়ে আছে..
পাঠাবো..পাঠাবো..পাঠাচ্ছি।

কলি সামনে একাধিক উপায় থাকার সত্ত্বেও লোকলজ্জায় ভয়ে টাকা দিতে রাজি হল, কিন্তু এতোগুলো টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, ইতিপূর্বে পাঁচ হাজার টাকা চুরির অপরাধে তাকে মায়ের কাছে যথেষ্ট হেনস্তা হতে হয়েছে।
সারারাত অস্থিরতায় সে ঘুমাতে পারলো না।
বাথরুমে গিয়ে অ্যাসিডের দিকে কিছুক্ষণ তাকানোর পর তার ইচ্ছা হল কয়েক ঢোক গিলে নেওয়া! হাত বাড়াতে যাবে এমন সময় তার মাথায় স্ট্রাইক করল, সে তো কোনো অন্যায় করিনি, সে ভালোবেসেছিল সরল বিশ্বাসে,
–না না যে করেই হোক বিষয়টার স্থায়ী সমাধান করতে হবে, এভাবে আর সম্ভব না।
ভোরে আলো না ফুটতেই আবার ফোন। তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে, সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। তারপর, সে স্নান সেরে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। পথেই দেখা তার শৈশবের বন্ধু এম.এল.এ পুত্র রনির সাথে, সে কলিকে লিফ্ট দিল।
এক মাস হবে দুজনার সম্পর্কে একটু ভিন্ন তড়কা লেগেছে। কলির ইতস্ততঃভাব তার চোখকে ফাঁকি দিতে পারল না। কিন্তু,ইঞ্জিয়ারিং বিভাগে টেস্ট শুরু হয়েছে 29শে জুন থেকে। সে কলিকে ফার্মেসী বিভাগে নামিয়ে রওনা দিল।পরীক্ষা শেষ হতেই দীর্ঘ সময়ের সুপ্ত কৌতূহল উগরে কলির কাছে জানতে চাইলো,
–কি হয়েছে তোর বলতো, অন্যদিনের থেকে কেমন আলাদা আলাদা লাগছে।
–না, তেমন কিছু না।
–দেখ, বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি তোকে, আমার থেকে গোপন করিস না।

কলি সবটাই খুলে বলল রনিকে। সব কিছু শোনার পর সে কলির হাতের উপর হাত রেখে তাকে আশ্বস্ত করার জন্য বলল আমি সবসময় তোর সাথে আছি, বিষয়টা আমার উপর ছেড়ে দে। রনি রাকেশের মতো সুন্দর না হলেও তার চেহারাটা বেশ ইন্টেলেকচুয়াল এবং সে ডিপার্টমেন্টের টপার ছিল। কলির বেলাল্লাপনা মনোভাব শৈশব থেকেই তাকে আর্কষণ করত। যাইহোক, সে বন্ধুদেরকে ডেকে একটা পরিকল্পনা সেরে নিল রাকেশকে ট্রাপে ফেলার আগে, পরিকল্পনানুযায়ী কলি রাকেশকে ফোন করল, হ্যালো, হ্যালো….
–সোনা হ্যালো, টাকা রেডি সোনা?
–হুম।
–ফোন পে করে দাও।
–সরি, আমার অ্যাকাউন্ট নেই।
–নেট ব্যাকিং করে দাও।
–আমার ব্যাংকে এসব সুযোগ নেই আপাতত।
–চালাকি করছো? চালাক হওয়ার চেষ্টা করছো? ঠিক আছে, আমার আগে যেখানে দেখা করতাম সেখানে তো আসতে পারবে?
–পারবো।
–বিকাল চারটে নাগাদ এসো।

গ্রীষ্মের প্রখর তাপ তখনও বিরাজমান, রনি, কলির সাথে তার দলবল নিয়ে অপেক্ষা করছে। নির্ধারিত সময়ে রাকেশ এসে হাজির। টাকা পাওয়ার আনন্দে বেশ মাদকীয় মেজাজে সে জানতে চাইলো পুরোটাই জোগাড় হয়েছে কিনা। কলি জানালো, হ্যাঁ পুরোটাই আছে।
টাকা নেওয়ার জন্য সে হাত বাড়াতেই রনি ও তার বন্ধুরা পিছন থেকে এসে তাকে ধরে দুমদাম মারের পর মোবাইলটাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিল।
কলিও সুযোগ পেয়ে তাকে দু’চার ঘা দিল।

কিন্তু,কলি ঠিক চিন্তা মুক্ত হতে পারল না ল্যাপটপের ব্যাপারটা তার মাথায় ঘুরতে লাগলো।
রনি পাশে এসে বলল, ওটার ব্যবস্থাও করেছি।
–কোনটার?
–যেটা নিয়ে তুই ভাবছিস। দেবেনকে পাঠিয়েছি রাকেশেদের বাড়ি, আমার মনে হয় এতক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে।

কলি বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো রনির দিকে,পরিস্থিতির ছন্দে তাদের সম্পর্কও একটু একটু পরিণত রূপ লাভ করছিল। কলি ভাবতে লাগলো চোখের সামনে থাকতেও মানুষটাকে এতোদিন দেখতে পায়নি কেন সে…

রনি তার কানের কাছে এসে আস্তে আস্তে বলল এখনও দেরী হয়নি!

# # # # #

ওদিকে দেবেন রাস্তায় জ্যামে পড়ে যায়,জানযট কাটিয়ে রাকেশদের বাড়ি সে রাত নয়টা নাগাদ গিয়ে উপস্থিতি হল, বেল বাজাতেই বার হয়ে এলো তার দিদি, আপনি?
–আমি Hp কোম্পানি থেকে এসেছি, ল্যাপটপ সার্ভিসের জন্য, জ্যামের জন্য একটু লেট হয়ে গিয়েছে।
–কে ফোন করেছিল?
–রাকেশ কর।
–আচ্ছা বেশ, ভিতরে এসে বসুন।
মিতা ভিতরে গিয়ে তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর বাইরে এসে জানালো ল্যাপটপটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আপনি অন্য একদিন আসুন।
–ঠিক আছে আমি অফিসে কথা বলার পর আপনাকে জানাচ্ছি।
–ওকে।
দেবেন রনির কাছে জানাতে চাইলো সে কি পদক্ষেপ নেবে। রনি বলল, ঠিক আছে তুই চলে আয়, দেখছি কি করা যায়।

পরেরদিন সকাল না হতেই হঠাৎ পুলিশ এসে হাজির কলিদের বাড়িতে। কলির মা দরজা খুলতেই অফিসার বলল, আপনার মেয়ে কাকলি রায়?
–হুম, কিন্তু কেন?
-ডাকুন ওকে, ওর নামে ওয়ারেন্ট আছে।
–কিন্তু, ওর অপরাধ কী?
–ও খুন করেছে।
–খুন! কাকে?
–রাকেশ কর নামে এক ব্যক্তিকে।
বাড়ির সকলের মাঝ থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল পুলিশ, সে চিৎকার করতে লাগলো, আমি খুন করিনি, বিশ্বাস করুন অফিসার, আমি খুন করিনি!
–যা বলার থানায় গিয়ে বলবেন।
মেয়ের গতিবিধি, চাল-চলনে বরাবরই অসন্তুষ্ট ছিল বাদশা ও স্ত্রী রুবী, কিন্তু এধরণের পরিণতির কথা তারা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। ইচ্ছা না থাকলেও তারা আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে থানায় হাজির হল।

কিন্তু, তাদের পৌঁছনোর আগেই কলিকে ব্যক্তিগত বন্ডে মুক্ত করা হয়, কলি ও তার বাবা-মায়ের কাছে বিষয়টা ধোঁয়াশার মতো মনে হচ্ছিল। ধোঁয়াশা মুক্ত হওয়ার পর তারা জানতে পারে রনির বাবার সুপারিশে মেয়ে ছাড়া পেয়েছে, উপরন্তু তার নামটাও কেস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু, কোনো এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির উস্কানির কারণে বিষয়টি সোস্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয় বিকৃতভাবে।
“ত্রিকোণ প্রেমে পুরানো প্রেমিককে খুন করল কলেজ পড়ুয়া তরুণী”।

পুলিশের উপর চাপ বাড়ছে, খুনিকে এরেস্ট করতেই হবে যত দ্রুত সম্ভব। তদন্তকারী অফিসার অনিমেষ দাশ পুনরায় কলি ও রনিকে ডেকে পাঠালো তদন্তের স্বার্থে। সাক্ষী ও প্রমাণ, সব কিছুই একটাই ইঙ্গিত করছে।—কিন্তু, দু’জনেই বারবার বলছে ওরা খুন করেনি।
–ধোঁয়াশা, ধোঁয়াশা, বুঝলেন রমেনবাবু, দুুজন যেভাবে বলছে তাতে পরিষ্কার যে ওরা খুন করেনি। কিন্তু সাক্ষী-সাবুদ সবই ওদের বিরুদ্ধে। মোবাইলটা ঠিক হল?
–না স্যার, ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
–সি সি টিভি ফুটেজ গুলো রেডি?
–আজ্ঞে।
–দেখি চালু করুন।

কলেজ চত্বর থেকে শুরু করে পাশ্ববর্তী এলাকার ফুটেজ চেক করেও বিশেষ কিছু প্রমাণ পাওয়া গেল না।
–না, কিছুই দেখতে পেলাম না।
–রমেনবাবু আপনি ওর বাড়ির চারপাশের ফুটেজটা রেডি করুন।
ফুটেজ…. রাত সাড়ে আটটা নাগাদ রাকেশ হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে। তারপর, রাত ন’টায় দেবেনের প্রবেশ… রাত দশটা… রাত এগারোটা… রাত বারোটা…
বাড়ি থেকে কেউ বার হল না, রাত একটা… রাত দুটো… রাত তিনটে নাগাদ বাড়ির সদর দরজা খুলে রাকেশের বাবা ও দিদি চতুর্দিক সযত্নে পর্যবেক্ষণের পর, একটা বড়ো বাক্স টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে, অফিসার বলল- দাঁড়ান দাঁড়ান, ভিডিওটা পজ করুন… মনে হচ্ছে খুনি ধরা পড়েছে।
–রমেনবাবু গাড়ি বার করুন।
–আজ্ঞে স্যার।
অবশেষে, রাকেশের বাবা ও দিদিকে গ্রেপ্তার হল। কিন্তু, অন্য এক কনফেশন উঠে এল মিতার কন্ঠে…
চরিত্রগত ভাবে ভাই বরাবরই ধর্তব্যের বাইরে…
সেদিন, ও বাথরুমে ছিল, আমি চা দিতে ওর ঘরে প্রবেশ করতেই ল্যাপটপের উপর আমার চোখ পড়ে, আমি সেটা বন্ধ করার চেষ্টায় স্পর্শ করতেই ভেসে ওঠে মেয়েদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও। বেশ কয়েকটা ছবির পর চোখে পড়ে আমারও কিছু নগ্ন চিত্র, বামরুম ও ড্রেস চেঞ্জ করার। আমি হতবম্ভ হয়ে সেগুলো ডিলিট করার চেষ্টা করি, ও বার হতেই আমাকে ধাক্কা দেয়। তারপর, দুজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু, শেষেমেষ আমি না পেরে সজোরে ওকে ঠেলে দিই, ও গিয়ে পড়ে টেবিলের কর্ণারে, মাথায় রক্তক্ষরণের কারণে সাথে সাথেই মারা যায়।
–ল্যাপটপটা কোথায়?
–ওটা আমি ভেঙ্গে দিয়েছি।

বছর দুই বাদে…

কলি বর্তমানে রনির বিবাহিত স্ত্রী। প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী রনি সকাল উঠে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে, কলি রান্না ঘরে ব্যস্ত…
হঠাৎ কলিংয়ের ঘন্টাটা বেজে উঠল,
রিং…রিং…রিং…
আসছি, আসছি, দরজা খুলে সে একটা প্রাণীরও দর্শন পেল না।
–কেউ তো নেই, কে বেল বাজালো! সে বিরক্ত হয়ে দরজা বন্ধ করতে যাবে, হঠাৎ তার নজর পড়ল দরজার সামনে পড়ে থাকা খামটার দিকে,
এটা আবার কি?
খুলতেই সে হতবাক… এই ছবি গুলো এখানে কি করে এল!