কাটোয়াবাসীর প্রতি মহাপ্রভুর অত্যদ্ভুত কৃপা : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

0
922

নীলাচল থেকে বৃন্দাবন যাত্রার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পথে শ্রীমন্ মহাপ্রভু আসেন গৌড়ভূমিতে । উদ্দেশ্য গমন পথে জননীকে প্রণাম ও মা জাহ্নবীতে স্নান। গমন পথে কাটোয়া নগরে তিনি এলেন শ্রীরাম আচার্য্যের ভবনে। এ সংবাদ প্রচার হতেই কাটোয়ার জনগণ আনন্দের জোয়ারে ভাসলেন । সকলে দর্শন করতে এলেন মহাপ্রভুর শ্রীচরণ। আর এদিকে, পুলকিত হৃদয়ে রাম আচার্য্য তাঁর প্রাণসুন্দর প্রভুর প্রগাঢ় প্রেমসেবায় প্রচেষ্ট হলেন।

রাম আচার্যের গৃহে সেদিন ভোজন করে পরম পরিতৃপ্ত হলেন মহাপ্রভু । রঙ্গ করে বললেন তাঁকে, “আচ্ছা রাম! তুমি তো ‘রাম’ নাম ধারণ করেছো । এবার বলো তো , কোন বাণের দ্বারা তুমি রাবণের মতো মহাপরাক্রমীকে বধ করেছিলে সেদিন ?” প্রভুর এমন রঙ্গোক্তি শ্রবণ করে , শ্রীরাম হেসে ফেললেন । তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন – “বাহ ! আপনি নিজে রাবণকে নাশ করে , এখন সন্ন্যাসী সেজে প্রশ্ন করছেন বাণের কথা ! কংসকে নিধন করেছেন যে মুরারী , তিনিই এখন দন্ডধারী হয়ে কলিতে বিরাজ করছেন। সে জনও তো আপনিই প্রভু। রাজা বলিকে বামন অবতারে পাতালে পাঠালেন , আর এখন যেচে যেচে সকলকে প্রেমদান করছেনও আপনিই। যে জন মৎসরূপে বেদ উদ্ধার করেছেন, তিনিই এখন সন্ন্যাসীবেশ ধারণ করেছেন । সে জনও তো আপনিই। সন্ন্যাসীবেশে নিজেকে আপনি গোপন করতে পারবেন না কোনমতেই । তাই রাবণ নাশের বাণের কথা আপনারই জানা আছে । আজ আমার মতো অধমের অভাবনীয় ভাগ্যোদয় হয়েছে, তাইতো আপনাকে আমি এমন করে পেলাম এই গৃহে ।”
রামের বাক্যে স্মিত হেসে মহাপ্রভু তাঁকে হাতে ধরে বসালেন। প্রভুর পরশ পেয়ে রাম আচার্য্য কৃষ্ণপ্রেমেভক্তির ভান্ডার প্রাপ্ত হলেন। তখন রাম বিনয় বচনে মহাপ্রভুর কাছে নিবেদন করলেন শ্রীশ্রীরাধাকান্ত ঠাকুরকে কীর্তন শোনাবার জন্য। প্রভু বললেন – “আমার সম্প্রদায় তো সঙ্গে নেই এখন ! কি ভাবে তোমার মনোবাসনা পূরণ করি বলো তো ! আচ্ছা দাঁড়াও , ধৈর্য্য ধরো ।” এই বলে তিনি এক অপূর্ব লীলা করলেন। হরিধ্বনি দিয়ে হুঙ্কার করলেন। আর , তৎক্ষণাৎ শ্রীনারদ ও তম্বুর উভয়ে সাক্ষাৎ এসে হাজির হলেন। প্রভু আজ্ঞা দিলেন কৃষ্ণনাম গান করতে তাঁদের ।

বীণা , মৃদঙ্গ , পাখোয়াজ , করতালের দিব্য ধ্বনিতে চতুর্দিক ভরে উঠল । সুমধুর সুরে কৃষ্ণকীর্তন শুরু হল। বড়ই রসাল সে সংকীর্তন। শ্রবণ করে সকলে প্রেমে মত্ত হলেন। মূর্চ্ছা গেলেন । কিন্তু , কারা যে অমন দিব্য কীর্তন করছেন , তা বোঝা গেল না। কেউ তা দেখতেও পেলেন না চোখে ।রাম আচার্য্য অনুধাবন করলেন যে, এ ঘটনা মহাপ্রভুরই মায়াশক্তির ইঙ্গিতে ঘটছে। এভাবে কৃপা করে , রাম সহ কাটোয়াবাসীকে দিব্য কীর্তন শ্রবণ করিয়ে ধন্য করলেন মহাপ্রভু । লীলা করে করুণা করলেন রাম আচার্য্যকে ।
গৌরাঙ্গ পার্ষদ শ্রীরাম আচার্য্য সহ সেদিনের কাটোয়াবাসীদের চরণে শরণ নিয়ে নিষ্ঠা পরায়ণ গৌরসেবা প্রার্থনা করি আমার মত জীবাধমার জন্য।

ভক্তকৃপা-ভিখারিণী
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক