সেই যে কবে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি
বছর গুলো কিভাবে যেন হারিয়ে যাচ্ছে নিভে যাওয়া সন্ধেবেলাগুলোর মতন
সময় ফুরিয়ে আসছে মান্থলি টিকিটের মতন
নিজের বাড়িটা ঠিক কোথাও নিজেও কি জানি ?
বাউন্ডুলেদের আবার বাড়ি ঘর থাকতে আছে নাকি ? শিকড় থেকেও যেন শিকড়হীন এক অস্তিত্ব
এক বিমানবন্দর থেকে আরেক, এক শহর থেকে আরেক অজানা শহর , দেশ মহাদেশ, সাগর মহাসাগর , বিশ্বায়ন সব বাবার (দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ) নাটকের ভাষায় ১০০ মিটার রেসে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে । আমি দাঁড়িয়ে দেখছি, শিখছি, দেখছিনা আবার শিখছিও না ।
টুরিস্ট হতে চাইনি , ট্রাভেলার হতে চেয়েছি। ছোটবেলায় ডেভিড লিভিংস্টোন বা রবিনসন ক্রুসো পড়ার ফল ।
অবসাদ পাশে ছিল প্রভুভক্ত ডায়েরির মতন ।
একসময় সব ছেড়ে দিয়ে গুরুর খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিলাম । বেশ কিছুটা সময় কেটেছিল ইতালির নানান প্রান্তে । তারপর হঠাৎ একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যে গুরুকে খুঁজছিলাম তাঁকে পেয়ে গেলাম ।
শুরু হল আরেকটা জার্নি ।
জীবনে অনেককিছু দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে ।
চুড়ান্ত দুঃসময়টা আমার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি ।
নিজেকে না হারালে নিজেকে চিনবো কি করে ?
দিন রাতের মতন কত মানুষ এলেন গেলেন পরাজিত করলেন আমাকে । সমৃদ্ধও করেছেন ।
পরিচয় হয়েছে কত মানুষের সঙ্গে , অনেকের কাজ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে অন্ধকারের সকাল সন্ধ্যেয়
অনেকে শিখিয়েছেন কি চতুর এই বেঁচে থাকা । কতটা কঠিন কবিতা , থিয়েটার ও সিনেমা নিয়ে বেঁচে থাকা ।
আরও কঠিন এই সব কিছু নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা । তবুও দিনের শেষে একটা কবিতা লিখলে , ফিল্ম ও থিয়েটার করলে সব ক্লান্তি নিমেষে দূর হয়ে যায় ।
চারিদিকে বিষ । ক্ষতিক্ষরক রেডিয়েশন ক্রমাগত আক্রমণ করেই যাচ্ছে আমাদের । আমরা বিপন্ন । ভয়ঙ্কর বিপন্ন ।
আসে পাশে একটা খেলা শুরু হয়ে গেছে সে কবে থেকে । এই খেলা শুধু ক্রিকেট বা ফুটবল মাঠে হয়না । খেলাটা শুরু হয় মানুষের মাথায় ।
কিন্তু সবাই কি খেলতে পারে ? সবাইকে কি খেলতেই হবে ?
যে গাছে ফুল ফোটেনা বা যে গাছ ফল দেয়না আমাদের তাঁদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই ?
প্রান্তিক মানুষে ভরে গেছে এই গ্রহটা । খেলতে না চাইলেও এই খেলাটায় তাঁদের অংশগ্রহন না করা ছাড়া কোনো উপায় নেই । কেউ শুয়ে আছেন এথেন্সের সিন্তাগ্মার বেঞ্চে, পার্কে , রাস্তায় । কেউ ছত্তিসগড়ের জঙ্গলে , কেউ বা আফ্রিকার উষ্ণতম দিনে রেফিউজি ক্যাম্পকে বিদায় জানিয়ে সাহারা মরুভূমি পেরিয়ে নতুন জীবনের সন্ধানের বেরিয়ে পরেছেন |
এই দেখা, না দেখা, শেখা না শেখা আর এই সব মানুষদের অস্তিত্ব বা মৃত্যু নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই ।
এদের আমরা কম্পিউটারের ভাইরাসের মতন ডিলিট করে বেঁচে আছি ।
আসলে ভাইরাস তা এই সিস্টেমটা ।
আসল অণুজীব আমাদের লোভ , ক্ষমতার , অর্থের , প্রভাবের । করোনা চলে যাবে কিন্তু how will the other half survive ?
মানবিকতা ফেইসবুক ও টুইটের মধ্যে খাঁচা বন্দি ।
আসল মন্ত্র হল নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো আর মজা দেখো স্টেডিয়ামে গিয়ে । কি ভাবে বাকিরা মরছে , পচছে ।
মানবিকতা এক ডাইনোসর যে সাড়ে ছ কোটি বছর আগে এই গ্রহ ছেড়ে বিদায় নিয়েছিল ।
এথেন্স এর ব্যস্ত এলাকা সিন্ট্যাগমা । সেখানের পার্কে কবরের মতন স্লিপিং ব্যাগে শয়ে শয়ে শুয়ে আছে এলিয়েনরা । থুড়ি শরণার্থীরা ।
সে ছবি পোস্ট করবোনা ।
ওদের স্লিপিং ব্যাগের মতোই খাঁচায় বন্দি করে রেখেছি আমার মানবিকতা । বা এভাবে বলা যেতে পারে আসলে আমি কেউ না । একজন প্রিভিলেজড কেউ না ।
শো আছে , হলের দিকে এগোচ্ছি | যেতে যেতে ভাস্করদার দুটো লাইন মনে পড়লো
” মানুষ যেমন জ্যান্ত পুড়ে যায় সেরকম মৃত কোনো চিতায়ও পোড়ে না ”
__________________________________
©️ রাজাদিত্য ব্যানার্জী
ছবি । এথেন্সে রাজাদিত্য ব্যানার্জী |
খিচিক : কাইকু নেনা গ্রেসা
নিউ ইয়র্ক | সন্ধ্যে ১৯.০৩
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
০২ জুলাই ২০১৫