৪
প্রায় পঞ্চাশ একর জায়গা জুড়ে বিশাল রিসর্ট।মাঝে একটা বড়ো পুকুর,তাতে টলমল করছে কালো জল,পুকুরের দুপাশে সারি সারি নারকেল গাছ।সামনে মাচা বেঁধে বসার ব্যবস্থা। একপাশে ছোট ছোট কুটিরে থাকার ব্যবস্থা অবশ্য নামেই কুটির,ভিতরে সমস্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা। আর একপাশে খোলামেলা প্রাঙ্গনে পার্টির আয়োজন করা হয়।
বিনয়বাবুর কথা অনুযায়ী সেদিন রাতেও সেই আয়োজন চলছিল ওখানে।তার আগেই…
ওনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অমিতবাবুর স্ত্রীই প্রথম ওনার মৃতদেহ আবিষ্কার করেন।অহনাদেবীর চিৎকারে বাকি সবাই ছুটে আসে।
অহনাদেবীর সঙ্গে বা কারোর সঙ্গেই এখনো কথা বলার সুযোগ পায়নি সুরুচি।অমিতবাবুর মৃতদেহ দেখে আপাতভাবে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি ওর।যতক্ষণ না পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসছে কিছু জানা যাবে না।রিসর্টের একপ্রান্তে খাবার জায়গায় বসে ও চা খাচ্ছিল।এখানে রিসর্টের লোকেরা ছাড়াও বাইরের লোকেরাও খেতে আসে।তাই দুপুরবেলার সময়ে ভীড় একটু বেশীই।বিনয়বাবু ওকে এখানে বসিয়ে ওদিকে গেছেন কিছু পুলিশি ঝামেলা সারতে।বসে বসে চা খাওয়া ছাড়া সুরুচির এখন কিছুই করার নেই।
অহনাদেবীর সঙ্গে এখন কথা বলা সম্ভব নয়।এখানের কর্মচারীদের সঙ্গেও কথা বলা দরকার কিন্তু এইসময় সবাই যা ব্যস্ত তাতে তা সম্ভব নয়।অগত্যা নিজের চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে ও উঠে দাঁড়ালো। ওর চোখে পড়লো দূর থেকে বিনয়বাবু এদিকেই আসছেন।সঙ্গে লোকাল থানার কোন অফিসার সম্ভবত।মনে হলো ওর দিকেই আসছেন ওনারা।
“স্যার,উনি সুরুচি দত্ত,আমাদের একজন অংশীদারের আত্মীয়া।উনি আজ সকালেই এখানে এসেছেন।একটু লেখালেখি করেন,তাই কয়েকদিন এখানে কাটাবেন।”
“তা বেশ,কাটান না,ভালো তো,আমাদের তরফ থেকে কোন অসুবিধা নেই।অকারনে আমরা কাউকে বিরক্ত করি না।”
বলতে বলতে সুরুচির দিকে তাকিয়ে উনি মৃদু হাসলেন।সৌজন্যবশত,সুরুচিও মৃদু হাসি উপহার দিলো।
“আমি তাহলে চলি বিনয়বাবু।দরকারে আবার আসা যাবে।”
“আপনার যখন খুশি স্যার।”
বলতে বলতে বিনয়বাবু এগিয়ে গেলেন ওনার সঙ্গে।
পুলিশের ভ্যানটা বেরিয়ে গেলো।কিছুক্ষন আগেই অমিত মিত্রের বডিও রওনা দিয়েছে মর্গের দিকে।
নিশ্চিতভাবেই এখন অহনাদেবীকে ফাঁকা পাওয়া যাবে ওনার ঘরে।
সেই দিকেই এগিয়ে গেলো সুরুচি।
“একটু বসতে পারি?”
কিছুটা যেন চমকেই তাকালেন অহনাদেবী।
সকালবেলা যেভাবে ওনাকে দেখেছিল সুরুচি,এখন তার থেকে অনেকটা অন্যরকম লাগছে।বোঝাই যাচ্ছে ফ্রেশ হয়ে এসেছেন।সাদা শাড়িটা ছেড়ে একটা সালোয়ার কামিজ পরেছেন।মুখ প্রসাধনহীন।বলতেই হবে অহনাদেবী সত্যিই সুন্দরী।এই অবস্থাতেও তাঁর সৌন্দর্য এতটুকু কমেনি।একটু উদাস হয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে বসেছিলেন, সুরুচির কথায় চমকে তাকালেন।
5
“আপনাকে ঠিক চিনলাম না ?”
“আমি কিন্তু তোমাকে চিনেছি টুনাদি।”
“টুনাদি?…তু…মি মানে আপনি ?”
“ভালো করে দেখো ,চিনতে পারবে।”
আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো টুনাদি ওরফে অহনা মিত্র।আমিও ভাবিনি এখানে এভাবে আবার টুনাদির দেখা পাবো।প্রথম দেখাতেই টুনাদিকে দেখে তাই চমকে উঠেছিলাম,তখনই কেমন চেনা চেনা লেগেছিল,তবে এখন প্রসাধনবিহীন অহনা মিত্রকে দেখে আমার আর কোন সন্দেহই রইলো না যে এই সেই টুনাদি।টুনাদি অবশ্য এখনো আমাকে চিনতে পারেনি।খুব স্বাভাবিক এমনিতেই এখন ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত,তাই আর ওকে আর বিভ্রান্ত না করে বললাম,
“মনে পড়ছে না ?আমি সুরুচি,বর্নালীর বোন…সেই যে…”
বলতে বলতেই আমার হাত চেপে ধরলো টুনাদি ,
“সুচি ?তুই এইখানে ?কি কান্ড।”
হুম,টুনাদি আমায় সুচি বলে ডাকতো।আমি মৃদু হাসলাম,টুনাদিও।তারপর আমার হাত ছেড়ে বললো ,”কি থেকে যে কি হয়ে গেলো।”
আমি কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম,টুনাদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“তুই এখানে কি করছিস ? তখন দেখলাম তোকে, একবার এলি না আমাদের ঘরে ?”
আমি মাথা নাড়লাম।টুনাদিকে আমার আসল পরিচয়টা দেওয়াই যায়।
তাই বললাম সব কথা,আমাকে ডাকার কথা,পুলিশকে দেওয়া মিথ্যে পরিচয়ের কথা সবই।সব শুনে টুনাদি ভারী অদ্ভুত ভাবে একটু হেসে বলল,
“দ্যাখ,যদি পারিস ।”
তারপর একটু থেমে বলল,”তোর কি মনে হয় তোর টুনাদি খুন করতে পারে ?”
আমি কিছু উত্তর দিলাম না,বললাম না,আমার ভাবায় আসলে কিছুই যায় আসে না।টুনাদি আশ্চর্যভাবে বলে উঠলো
“,অবশ্য তোর ভাবায় কিছু যায় আসে না,কারন বাকি সবাই তাই ভাববে ইনফ্যাক্ট পুলিশও তাই ভাবছে।”
“কেন?হঠাত এরকম ভাবার কারন?”
টুনাদি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো,আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই তো এখন গোয়েন্দা হয়েছিস,দেখি না কারনটা তুই খুঁজে পাস কি না ?”
বলেই হঠাত করে উঠে ঘরের মধ্যে চলে গেলো।যেতে যেতে আমার দিকে ফিরে বলল,”মাথাটা খুব যন্ত্রনা হচ্ছেরে,একটু রেস্ট নিই।”
আমি আস্তে আস্তে উঠে এলাম।বাগানের দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে যেতে আমার অনেক কিছু মনে পড়ে যাচ্ছিল,অনেক কিছু।