বলতো বৈশাখী , ঠিক কেমন অনুভূতি নিয়ে আছি বেঁচে? : তন্ময় সিংহ রায়।

0
581

কোনো রাজনৈতিক দলকে পছন্দ কিংবা সমর্থন করার পিছনে যেমন থাকে কারণ বা উদ্দেশ্য , তেমন’ই অসমর্থন বা অপছন্দের পিছনেও থাকে বা থাকা উচিৎ যুক্তি।
তবে এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভালো যে , এই পছন্দ-অপছন্দ ব্যাপারটা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে সেই ব্যক্তির রাজনীতি বা দল বিষয়ক ইতিহাস ও বর্তমানের জ্ঞানের পরিধির উপরে কেন্দ্র করে , আর পাশাপাশি ঠিক সেই মুহূর্তেই উদ্দেশ্যে , কারণ বা যুক্তিগুলোও স্বাভাবিকভাবেই ওঠে অপেক্ষাকৃত আরো বেশি মজবুত হয়ে।
সবাই যে রাজনীতি বোঝেন বা বেশ ভালোই বোঝেন , এমন কিন্তু নয় , কিন্তু অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ভাবমূর্তি বোধ করি থাকে এমন যে সবাই তা বোঝেন বেশ ভালোই।
আসলে বিষয়টা হল এমনই যে , Excellent , Good , Somehow , Poor in politics.

দুর্নীতি ও ক্ষমতা ভোগের মাধ্যমে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখা এবং যথাসাধ্য আখের না গোছানো এমন স্বার্থহীন রাজনৈতিক কোনো দল সত্যিই আছে বা কোনোদিনও আদৌ ছিল বা ভবিষ্যতেও আসতে পারে কিনা , তা আমার জানার বাইরে।
বলাবাহুল্য রাজনীতিটা কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি বরাবর’ই বুঝি বেশ কম , বিশেষত এখন তো বুঝতে চাইও আরো বেশ কম , তবে হ্যাঁ টুকিটাকি খোঁজ-খবর রাখাটা অবশ্যই আমার স্বভাব বিরুদ্ধ নয়।
উপলব্ধি করেছি , ধনীরা কিভাবে বা কোন
কোন প্রক্রিয়ায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম , আমৃত্যু নির্ধন-এর জীবন শোষণ করে , আর এর মতই জীবনের কিছু বিষয়
আছে , যেগুলো যত বোঝা না যায় ততই মঙ্গল , অর্থাৎ অশিক্ষিত
না হলেও , প্রায় অশিক্ষিত থাকাটাই শ্রেয়।
কারণ ক্রমাগত শিক্ষিত হতে থাকলেই জানতে ও বুঝতে পারবো , আর ঠিক তখন’ই তো আবার শুরু হবে বিভিন্ন ধরণের মানসিক জ্বালা-যন্ত্রণা , দুঃখ , বেদনা!
সুপ্ত আগ্নেয়গিরি থেকে জেগে উঠবে সমাজ ভাবনা ও সর্বোপরি দেশপ্রেমের উত্তপ্ত ও গলিত লাভা , বিপর্যস্ত হবে নিজেরই স্বাভাবিক রঙিন ও সাধারণ জীবন!
আসলে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে
যুগযুগ ধরে পুনর্জন্মের নানা সত‍্যকাহিনী সমগ্র পৃথিবীব্যাপী প্রচলিত থাকলেও , বিশ্বের বিভিন্ন গবেষকগণের গবেষণা থেকে আজ পর্যন্ত এটা বৈজ্ঞানিকভাবে একেবারে নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়নি , তাই আপাতত আমার জীবনও একটাই ,
আর অন্যদের মতই আমিও চাই নির্ঝঞ্ঝাট , শান্তি ও সম্মানপূর্ণ একটা জীবন।
আর একজন সাধারণ ভারতীয় বাঙালি নাগরিক হয়ে দীর্ঘদিনের এতবড় এক গণতান্ত্রিক সিস্টেমের ফাঁক-ফোকড় খুঁজে খুঁজে বের করে উঁকি দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলাম মানেই , রাতারাতি সমাজটা বদলে গেল আর আমি হলাম ধন্য ধন্য এমন তো আর নয় , তাহলে নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রমের প্রভাবে বৃদ্ধাশ্রমগুলো আজ থাকতো কমসে কম প্রায় শূন্য , কিংবা তসলিমা নাসরিনকে পুজো করা না হলেও , পেতেন যথাযোগ্য সম্মান , তাঁর নিজ বাসস্থান ও সুখ-শান্তিপূর্ণ একটা জীবন।
তা তো নয়ই , বরং উল্টো রাজার দেশে ক্রমাগত হয়ে চলেছে বা হয় তার উল্টোটাই!
এখানে সবচেয়ে বড় আত্মস্বার্থ।
আমি পারবো না হতে বিরসা মুন্ডা ,
কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের সিংভাগ ,
শতাব্দীর পর শতাব্দী মৃত্যুবরণ করে মর্মান্তিকভাবে!
জীবন যন্ত্রণার আগুনে প্রতিদিন তাঁরা পুড়ে পরিণত হয় বা হয়েছে লক্ষ-কোটি কার্বন কণায় , যেখানে সম্মান তো আলোকবর্ষ দূরে!
বর্তমানে আদর্শ বেশি তো নিতান্তই বোকাদের।

যুগের পর যুগ ধরে জিভাগ্রে মধু মাখিয়ে এবং গুচ্ছখানেক আশ্বাসবাণী শুনিয়ে সরকারের পাখির চোখ যদি হয় শুধুমাত্র যথাসম্ভব ভোট সংগ্রহ ও ক্ষমতার পুষ্টিরস আস্বাদনের মাধ্যমে বিত্তবান হওয়া , যেখানে মুষ্টিমেয় কিছু শাসকের উপরে নির্ভর করে সমগ্র রাজ্য বা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন-মৃত্যু , সেখানে সাধারণ একজন মানুষ হয়ে আমাকেই বা কেন হতে হবে প্রতিবাদী?
আর তাতে আমার লাভটাই বা কোথায়?
লাভ খোঁজে তো সবাই , কেউ প্রত্যক্ষ , কেউ বা আবার পরোক্ষভাবে।
এসব দেখে , শুনে , বুঝে মনে হয় কি লাভ সুখে থাকতে ভূতে কিলিয়ে?
আমিও থাকবো আত্মকেন্দ্রিক হয়েই।

রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কোনো নিম্নমানের চাকরির ক্ষেত্রেও দিতে হয় যে যোগ্যতার পরিচয় , তা আমার কাছে হাস্যকর , সেখানে প্রার্থী নির্বাচনে দিতে হয় না কোন পরীক্ষাই।
যেন প্রার্থী হয় যাঁরাই , সবাই একেবারে ভীষণ যোগ্য , আর তাঁরা এসব পরীক্ষার অনেক উর্দ্ধে।
৬০ বছর সরকারের চাকরী করেও যেখানে বেমালুম আটকে যাচ্ছে পেনশন , বা ন্যায্য পেনশন চালু করতে গেলেও লাগে ঘুষ ,
সেখানে একবার এম এল এ বা এম পি হতে পারলেই ব্যাস , কেল্লা ফতে!
স্বল্প কিছু সংখ্যক বিশিষ্ট মানুষ এ দেশের বাকি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে গোটা রাজ্য বা দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করবে মানে তাঁদের পুঁথিগত যোগ্যতা ঠিক কতটুকু হওয়া আবশ্যক?
History , Economics , Political Science ও Indian Constitution ইত্যাদি সম্পর্কে কমপক্ষে জ্ঞান তো প্রার্থীর থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজন?
কেমন’ই বা হওয়া উচিৎ তাঁদের মানসিক গঠন বা আচার-ব্যবহার , কথা-বার্তা বা চিন্তাধারা?
আমি হাজার লিখলে বা চিৎকার করলেও দীর্ঘদিনের গতানুগতিক এ সিস্টেম পরিবর্তন তো হবেই না , উপরন্তু আমি বা হয়তো হব চক্ষুশূল!

‘ফুল’ শব্দচ্চারণে মনের মধ্যে যে অনুভূতি তৈরি হয় , ঠিক তার বিপরীত অনুভূতি তৈরি হয় ‘কাঁটা’ শব্দ উচ্চারণে।
এখন বিশেষত বর্তমানের রাজনীতি আমার ভিতরে ‘কাঁটা’-এর মতই অনুভূতি’র সঞ্চার করে , আর এর জন্যে দোষী নিশ্চই আমি নই , বা জোর করে এই অনুভূতি আমার মনের জরায়ুতে জন্ম যে আমি নিজেই দিয়েছি , এমনটাও কিন্তু আদৌ নয়।
কোথাও এমনকি এসব আলোচনা কানে ঢুকলেও আমার মনে হয় , গেল পুরো আমার জীবন দর্শনটাই ভেঙ্গে-চুরে বা দুমড়ে-মুচড়ে!
গেল বুঝি আমার আদর্শ , মনুষ্যত্ব , শিক্ষা-সংস্কৃতি , সুস্থ-সবল চিন্তা-চেতনা
ইত্যাদি কবরে!
অনেক চেষ্টা করেছি , ফুলের মতন অনুভূতিতে আমি আজও ব্যর্থ!
আমি স্বীকারও করছি দ্বিধাহীনভাবে যে এটা আমার’ই অক্ষমতা!

কি শিখছে হর্তা কর্তা বিধাতাদের কাছ থেকে সমগ্র রাজ্য ও দেশবাসী , বিশেষত নবপ্রজন্ম?
অশ্লীল ভাষা , হিংসাত্মক মনোভাব , মানুষে মানুষে , ধর্মে ধর্মে , জাতে জাতে বিভাজন , প্রয়োজনে ব্যবহার , নচেৎ ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া , দুর্নীতি , খুন , ধর্ষণ , জালিয়াতি ইত্যাদি?
সমাজের একটা ভালো হয় , তো খারাপ হয় ন’টা অর্থাৎ ভালো ও মন্দের অনুপাতটা আজ ১:৯।
সহস্র বছর ধরে বিশ্বাস করে করে জনগণ যেন আজ ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত , যাকেই ফুল-চন্দনের ফোঁটায় বরণ করে আনা হচ্ছে ঘরে , সেই পুড়িয়ে ছারখার করছে সমাজের সত্তাকে!

সমাজের ভালো করার অধিকার কার বেশি?
আর তা করতে গিয়ে , কোন দলের’ই বা অর্জন করা উচিৎ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা?
এই প্রমাণ করতে বিশেষত ভোটের সময় দিবারাত্র প্রচার বৈচিত্রতার মধ্যে দিয়ে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে বড় এবং বহুমূল্যবান শব্দের
গুলি ছুঁড়তে যেমন ভীষণ ব্যস্ত সম্মানীয় /য়া নেতা-মন্ত্রীরা , ঠিক তেমন’ই বিরোধী পক্ষের ইমেজকে যথাসম্ভব অন্ধকার ও নিষিদ্ধ জগতে তাচ্ছিল্যে ছুঁড়ে ফেলতেও সমান ব্যস্ততার জঙ্গলে মরিয়া তাঁরা।
বলাবাহুল্য এই আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের জোয়ারে প্রায় প্রতিটা দলের ভিতরেই বারে বারে ভেসে উঠছে দুর্নীতি , দুর্বলতা ও ব্যর্থতার কদর্য সেই দেহগুলো ,
যা আপামর জনসাধারণের দৃষ্টির মাধ্যার্ষণে ধরা পড়ছে প্রত্যেকবারেই!
আদি-অনন্তকাল থেকেই এ যেন আজ পরিণত হয়েছে গতানুগতিক এক System-এ , আর যুগের পর যুগ ধরে দু’চোখের পাতায় রঙিন স্বপ্নগুলোকে যত্নে সাজিয়ে সাধারণ মানুষগুলো গুনতে থাকে শুধু অপেক্ষার প্রহর , ‘এবারে বুঝি হবে আমাদের ভালো , এই বুঝি পেলাম দেখতে সুখের সুশ্রী বদন’খানা!’
হঠাৎ’ই এক Tornado মুহুর্তেই নির্দ্বিধায় ও নৃশংসভাবে যেন থেঁতলে দিয়ে যায় সেই তিলে তিলে সাজানো স্বপ্নগুলোকেই!
তাঁরা আবার সাজায় স্বপ্ন , আবার তা
ভাঙে , আবার দেয় জন্ম , আবারও সেই ঘুর্ণিঝড়!
আর এভাবেই জীবন যেন তাঁদের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে আছে শ্যাওলা ও আবর্জনা পড়ে থাকা এই System -এর গোড়াতেই!
এখন মনের জরায়ুতে সদ্যজাত যে প্রশ্ন তা হল এই যে , সমাজ ও সামাজিক জীবরূপে সাধারণ মানুষের দিনের পর দিন ধরে প্রকৃত ভালো হচ্ছে ঠিক কতটুকু?
বিশ্বাসের মূলে বারংবার কুঠারাঘাতের পরিণাম হিসেবে কোনো একদিন সংঘবদ্ধ জনগণ যদি করে বসে প্রশ্ন যে , ‘আমাদের রাজ্য বা রাষ্ট্রে ও বৈদেশিক লেন-দেনে ব্যবহৃত সমস্ত অর্থের খতিয়ান প্রতিবছর আমরা চাই , প্রার্থী নির্বাচিত হতে গেলে সাধারণ মানুষের মতন তাঁদেরকেও দিতে হবে Preliminary , Main ও Interview অথবা অন্য আরো কিছু?’
জনগণের গণতন্ত্রের প্রতিনিধি হয়ে ঠিক কি চিত্রটা উঠবে প্রকট হয়ে ভেসে সমাজের সেই Canvas -এ?

একদিকে পুঁজিপতিরা ক্রমশই স্পর্শ করতে চলেছে হিমালয়ের চূড়া , আর অপরদিকে বেকারত্বের জ্বালা’র স্ফুলিঙ্গ আজ দাবানলে রূপান্তরিত হয়ে দাউ দাউ করে ঝলসে চলেছে লক্ষ-লক্ষ ঘরের অসহায় ও নির্দোষ শরীরগুলো!
এদিকে ‘মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা’-এর মতন করোনা অতিমারিতে দেশের আর্থিক অবস্থা তায় আবার রাজপথে দুমড়ে-মুষড়ে একেবারে পড়েছে মুখ থুবড়ে!
চতুর্দিকে কর্মহীনদের হাহাকার আকাশে বাতাসে হচ্ছে প্রতিধ্বনিত , তবুও লক্ষ-কোটি টাকা অপচয় করে নির্বাচনী প্রচার ছুটে চলেছে বিদ্যুৎ গতিতে , আর অন্য অন্যগুলো না হয় আজ থাক।
এসব দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই যে , রাজ্য বা দেশের আর্থিক অবস্থাটা আজ I C U-তে!

বিশেষত ‘West Bengal Board of Primary Education’ , ‘পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ’ ও ‘West Bengal Board Of Higher Secondary Education’ এর শিক্ষাব্যবস্থায় এ প্রকারের আধুনিকিকরনে বর্তমানে খেটে খাওয়া সাধারণ
মানুষের ছাত্র-ছাত্রীরূপী ছেলেমেয়েগুলো উপকৃত হচ্ছে তো ঠিকই , কিন্তু কতটা?
বা আদৌ পাচ্ছে তাঁরা কতটুকু মানসিক ও বৌদ্ধিক পুষ্টি?
এদিকে শিক্ষাদানের এ হেন পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে কেমন হচ্ছে তৈরি ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ জীবনের ক্যারিয়ারের ভিত , কিংবা
ছাত্র-ছাত্রীরা কি শুধুই অর্জন করছে
ডিগ্রি , না হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষিতও?
নোটবন্দী ছেলেমেয়েদের জ্ঞানের পরিধিও ক্রমশঃ যেন পরিণত হচ্ছে আজ বিন্দুতে!
পাশ-ফেল প্রথার মৃত্যুতে সমাজে প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে লাখো-লাখো অশিক্ষিত গ্র‍্যাজুয়েট!
মাটি যখন নরম থাকে , কব্জি অথবা আঙুলের চাপে সেটাকে তথাকথিত বোকা বা মূর্খ চতুষ্পদী গাধা নামক প্রাণীকে যেমন তৈরি করা যায় , আবার বানানো সম্ভব কোনো বিজ্ঞানীর অবয়বও।
এখন দিনের পর দিন ধরে সিংহভাগ বিশ্বাসী রাজ-কারিগরদের (শিক্ষক-শিক্ষিকা) পাখির চোখ যদি হয় শুধু কতকগুলো কাগুজে গান্ধীজির অবিরাম গৃহপ্রবেশ-এর স্বপ্নে বিভোর
থাকা , আর সাথে যুক্ত হয় ‘No proper inspection’ নামক তিনটে ইংরিজি শব্দ ,
তো সোনায় সোহাগা তো শুধুমাত্র কারিগরেরই , সেখানে না রাজ্যের অধিকাংশ দরিদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের ছেলেমেয়েদের , আর না রাজ্যসরকারের আছে কোনো লাভই , বরং সেক্ষেত্রে উল্টে ক্ষতির কর্তৃত্বটাই ওঠে হয়ে মূখ্য!
এই বিষয়টার মর্মান্তিক ভবিষ্যৎ পরিণামের প্রতিবিম্ব , কর্তৃপক্ষের রেটিনায় দুর্ভাগ্যবশতঃ যথাশীঘ্র যদি গঠন না’ই হয় , তো ভবিষ্যতে এ হেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে ভেজাল তৈরির আদর্শ কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জন যে করবেনা’ই , তা নিশ্চিত করে বলা বোধহয় সম্ভব নয়।
আর বলাবাহুল্য , রাজ্য সরকারের সমস্ত Primary , Upper Primary ও Higher Secondary -র শিক্ষক-শিক্ষিকা অপেক্ষা সাধারণ মানুষের ভোটগুলোও তো সেখানে থাকে বসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ঝলমলে আসনে।

সরকারী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজেদের স্কুলের প্রতিই নেই কোনো আস্থা বা আশা-ভরসা , ওনাদের ছেলেমেয়েদের সিংহভাগই পড়া-লেখা করে Private school -এ , আর বিষয়টা যেন আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন যে , এই School গুলোতে পড়ে থাকে শুধুমাত্র অসহায় এবং দরিদ্র সম্প্রদায়ের মানুষের বাধ্য ছেলেমেয়েগুলো!
এদিকে কষ্ট করে একবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই , এই আরামদায়ক পরিবেশে নেচে-গেয়ে বা ঘুমিয়ে এবং প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ প্রাপ্তিতে কারিগরেরা ক্রমশই উঠবে বা উঠছে প্রায় কর্মহীন প্রতিবন্ধী ও ভোগী হয়ে , আর পরীক্ষা না দিয়েই কোনোভাবে যদি হয়ে যায় চাকরি , তো সে ক্ষেত্রেও বিষয়টা হয়ে দাঁড়ায় একই!
বিশেষত প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত এ হেন শিক্ষাদানের গতিশীলতায় ২০২১-এর শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য সরকার নির্ধারিত Basic Salary যদি ২৮ , ৯০০ অর্থাৎ প্রায় ৩০ , ০০০ টাকার কাছে হয় , তো বছরের পর বছর লক্ষ-কোটি পরীক্ষার্থী তো হুমড়ি খাবেই।
মানসিক ও দৈহিক পরিশ্রম ছাড়া বা আদৌ না খেটে ওজনে বেশ ভারী অঙ্কের এই অকল্পনীয় ও সুস্বাদু কাগজের টুকরোগুলো পাকস্থলীর কোনো যান্ত্রিক গোলোযোগ ছাড়াই আজ হজম করতে কে না চায় , আর তা যদি আবার হয় একেবারে নিশ্চিত জীবন সুরক্ষার মতন ব্যাপার।

নবম ও দশম শ্রেণীর ইতিহাস শুরু ইউরোপীয় ইতিহাসের চাষ দিয়ে।
যেটা অন্তত আমার কাছে নিতান্তই অযৌক্তিক।
ভারতীয় বিশেষত বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীরা , ভারতের যথাসম্ভব ইতিহাস জানতে পারবে না তা কেমনভাবে সম্ভব?
সেখানে এই সমস্ত ক্লাস থেকেই ইউরোপের ইতিহাসকে এত প্রাধান্য দেওয়ার পিছনে রহস্যটাই বা কি?
আর এই সমস্ত শ্রেণীর মানুষদের ছেলে-মেয়েদের বেশিরভাগই , নানান কারণবশত বোধকরি পারেওনা যেতে ইতিহাসের সেই উচ্চতায় , ফলতঃ প্রায় আজীবন’ই ভারতীয় ইতিহাসের আসল-নকলটা চাপা পড়ে থাকে অন্ধকার কালকুঠুরিতে , আর কবর দেওয়া ইতিহাস তো দিলাম ছেড়েই।
একজন ভারতীয় শিক্ষিত নাগরিক হয়ে , সম্পূর্ণ না হলেও , অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি কমপক্ষে ভারতের ইতিহাসটা ভালোভাবে জানাটা বোধহয় বেশ জরুরী।
পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা না থাকার ভিত নিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে গিয়ে নন্দলাল বসু’র ‘The Place of Art in Education’ ও রাশিয়ান লেখক Leo Tolstoy-এর The ‘Three Questions’ অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেই যেন এক অকারণ শাস্তি হিসেবে প্রতিপন্ন!
তাহলে এ ধরণের Education System -এর জোয়ারে ভেসে সিংহভাগ সরকারী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কি Black Hole -এ?

সংবিধানের সংশোধন বা সংযোজন হতে পারলে , এও বোধহয় সম্ভব যে , রাজ্য ও সর্বোপরি কেন্দ্রের মান্যবর সমাজসেবীরা শপথগ্রহণে সাধারণ জনগণের দুঃখ-সুখে যথাসাধ্য পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতি বর্ষণ করেন , সেসব গুরুমস্তিষ্কে রেখেই আর্থিক অবস্থা মন্দার কারণে লক্ষ-কোটি বেকারদের চাকরি দিতে না পারার কারণে তাঁরা যদি হন একান্তই চিন্তিত , তো বিশেষত উঁচু সরকারি চাকরিজীবী ও বিশেষতঃ নিজেদের প্রতি মাসের বেতন থেকে কম করে হাজার দুই টাকা গ্রহণ না করে সেই টাকাগুলোর সংযোজনে অন্তত সমাজের কমপক্ষে কিছুজনের হলেও চাকরির অবিলম্বে ব্যবস্থা করে ফেলার আন্তরিক প্রচেষ্টায় রত হোক তাঁরা?
প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থ মানেই তো বিলাসপূর্ণ এক জীবন , সেখানে বিলাস-ব্যসন আগে ,
না আগে হওয়া উচিৎ তাঁদের নিজেদের রাজ্য ও দেশের প্রজাদের জীবন-মৃত্যু সমস্যার সমাধান?
আর ভোট দিয়ে রাজা বানায় বা ভবিষ্যতে বানাবে তো তাঁরাই?
এক্ষেত্রে শিল্পপতি ও ধনী ব্যবসায়ীদের নয় রাখা যাক ব্র‍্যাকেটেই।

অগত্যা একপ্রকার বাধ্য হয়েই , এই তো কাল-বৈশাখী’র কানে কত করে ঢেলে দিলুম বেশ কিছু অনুরোধ!
বললুম ‘অনেক তো হল , এবারে না হয় তুমি’ই ঘটাও প্রতিবাদের আগ্নেয়গিরি’র বিস্ফোরণ?
সোচ্চার হও অন্যায়ের বিরুদ্ধে?
তুমি’ই না হয় ওঠো মনুষ্যত্বের একমাত্র প্রতীক হয়ে?
এ দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদে আছে ভাঙাচোরা , কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধ ও শাস্তি!
হাজারে হাজারে প্রতিবাদী’র অতৃপ্ত ও অশরীরী
আত্মা আজও ছটফট করছে এ দেশের গর্ভেই!
আত্মস্বার্থ চরিতার্থের একান্ত উদ্দ্যেশ্যে সিংহভাগ ভীত ও আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলো তো আজ পর্যবসিত প্রায় যন্ত্রমানবে!
এ ক্ষেত্রে তাঁরা আজ দৃষ্টিহীন , মূক ও বধির!
তুমি কি পারোনা , দুর্নীতি নামক ভ্যাকিউম ক্লিনারের মাধ্যমে সমাজ থেকে যাঁরা টেনে নিচ্ছে রাশি রাশি টাকাকড়ি , তাঁদের অবৈধ সেইসব অর্থকে অবৈধভাবে’ই হঠাৎ একদিন উড়িয়ে নিয়ে গেয়ে ফেলতে বঙ্গোপসাগর গর্ভে?
বুঝুক তবে সেইসব অর্থললুপ নেকড়েরা ,
রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে পরিশ্রমের বিনিময়ে তিলে তিলে সৎ পথে উপার্জিত অর্থ কষ্টের ওজনটা ঠিক কত কুইন্টাল?
প্রতি মুহুর্তে দিতে বা হয় কি ধরণের যোগ্যতার পরিচয়?
তুমি কি পারোনা তোমার গতি পরিবর্তন করে দু’একটা ভারী কাগুজে গান্ধীজি’কে প্রকৃত অসহায় ও হতদরিদ্রগুলোর বিছানায় যত্নে দিয়ে আসতে শুইয়ে?
তুমি কি জানো আমাদের দেশের রিমোট কন্ট্রোলের নাম ধণতন্ত্র?
তুমি কি বুঝতে পারো জন্মের পরেই ধনী
সম্প্রদায়ের সামাজিক চতুষ্পদীগুলো নিম্নমধ্যবিত্তদের সমগ্র শরীরে’র চামড়া ফুটো করে ইন্সটল করে দেয় অসংখ্য প্লাস্টিক পাইপ , এরপর সেই সমস্ত নলের মাধ্যমে আ-মৃত্যু নানানভাবে চলতে থাকে তাঁদের লোহিত তরল শুষে খাওয়ার এক জৈবিক প্রক্রিয়া?
তুমি বোধ হয় জানোনা কিছুই যে , ভারতীয় রাজনীতিতে আই এ এস ও আই পি এস’রা থাকে অধিকাংশ অপেক্ষাকৃত বহু কম
শিক্ষিতদের পিছনে!
তুমি এও জানোনা , খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলোই করে প্রকৃত ‘অস্তিত্বের জন্যে সংগ্রাম’ আর বাকিরা করে ‘বিলাসিতার জন্যে সংগ্রাম!’
আজীবন অর্থের কৃতদাস হয়ে জীবনধারণ করা মানুষগুলো কিভাবে তাঁদের মনুষ্যত্বের অদৃশ্য দোকান রেখেছে খুলে , তুমি কি আজও পাওনি দেখতে সেসব?
তৈমুর লং , সুলতান মাহমুদ ও আলেকজান্ডারের পরে আজও ঘরের মানুষ দ্বারাই অবাধে লুটপাট হয় এদেশের ধনসম্পদ , তুমি সত্যিই কি জানোনা?
তুমি কি বিদ্রোহ করবে না জেনেও যে ,
এ দেশে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি , স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি , খাদ্য নিয়ে রাজনীতি , পোশাক নিয়ে রাজনীতি , মানুষ নিয়ে রাজনীতি , বলতেই পারো জলে , স্থলে ও অন্তরীক্ষে
রাজনীতি হয় নির্দ্বিধায় ও নির্বিঘ্নে?
তুমি কেন জানোনা আজও যে , ধর্ম ও রাজনীতির প্রভাবে এ দেশের রূপ আজও ঠিক কতটা কদর্য?
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও ডঃ বি আর আম্বেদকরের মতন মানুষরা জীবন দিয়ে দেশ সাজায় আর সেই সাজানো বাগান তছনছ করে আর এক শ্রেনীর মানুষ।
আবার কেউ সাজায় , আবার কেউ করে লন্ডভন্ড!

কেমন লাগে ভেবে তোমার যে , অর্থ নামক আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ঘর্ষনে এদেশে পুঁথিগত ও মানসিক অশিক্ষিতরাও ওঠে হয়ে সক্রেটিস , আর প্রকৃত জ্ঞানী ও শিক্ষিতরাও হয়ে যায় দামে সস্তা বা ব্রাত্য?
ভারতীয় সংস্কৃতি’র পোশাকের দৈর্ঘ্য কমতে কমতে আজ নগ্নপ্রায়!
উন্নত বিজ্ঞান-প্রযুক্তি’র বুকে দাঁড়িয়ে আজও নির্দ্বিধায় ও বেমালুম উল্লাসে নৃত্য করছে এ দেশে জাত-ধর্ম ও কু সব সংষ্কার!
দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ অপেক্ষাকৃত উঁচু জাতের চেয়ারে সাময়িক বসলেও , তাঁকে পেতে হয় অমানুষিক নির্যাতন উপহার , আর মেয়েরা তো সেখানে অতি সাধারণভাবেই এক ভোগ্য ও অবহেলিত বস্তু!

তুমি দেখো ভেবে , লাল শাক থেকে মনুষ্যত্ব ইত্যাদি , এ দেশের প্রায় সব কিছুই বিক্রয়যোগ্য , শুধু মূল্যটা হওয়া চাই ঠিকঠাক।
এ দেশের সমাজসেবীরূপী রাজনীতিবিদ’রা জিভের লম্ফঝম্পতে মারে অ্যানাকোন্ডা ও হায়না ,
আর যুগ যুগ ধরে প্রকৃত উন্নতি করে বহু কম , তবুও আজও জনগণ নাগরিকত্ব প্রদর্শনে পিঁপড়ের মতন সারিবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগকে কাঁধে ও দু’চোখের পাতায় স্বপ্ন জড়িয়ে নিয়ে!
বলতো বৈশাখী , ঠিক কেমন অনুভূতি হয় একজন আদর্শ নাগরিক হয়ে এ সমস্ত ভেবে?
দুঃখ-যন্ত্রণা ও বিতৃষ্ণায় গুটিকয়েক প্রকৃত যে ভালো মানুষগুলো ধুঁকছে , অবিরত তাঁরা আজ খুঁজে চলেছে এক অন্য পৃথিবী!

বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিটা ইঁট আজ যন্ত্রণায় কাতর!
পারলে তুমি বয়ে নিয়ে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ো তো তাঁদের বুকে , সন্তান পাশে পাওয়ার সেই সুখানুভূতি?
যে নিঃস্ব , অসহায় মা’টা বৃদ্ধা বয়েসে রাস্তায় হাত পেতে শান্ত করে তাঁর
পাকস্থলী , তুমি তাঁকে দিতে কি একদম’ই পারোনা মুঠো দুয়েক ভাত , অথবা রাস্তায় বর্জ্যের মতন পড়ে থাকে যে অসহায়
বৃদ্ধটা , তাঁকে কি পারোনা তোমার বলিষ্ঠ দু’বাহুতে তুলে নিয়ে গিয়ে আলতো করে রেখে দিতে একটা ভাঙা ঘরে?
জানো কি তুমি , এ দেশের সমাজের বুদ্ধিজীবীরা গাছ লাগায় কম আর , পরামর্শ ও নির্দেশ দেয় বেশি।
সরকারি স্কুল , সরকারি হস্পিটাল ইত্যাদি নামটুকু শুনলেই বিশেষত ধনী সম্প্রদায় আজও নাকের দরজায় দেয় রুমাল , যেন সঠিক শিক্ষা ও সঠিক চিকিৎসা সেখানে পচা-গলা লাশ!
পশ্চিমবঙ্গ ধরেই করা যাক বিশ্লেষণ , সেখানে যত সরকারি স্কুলের মোট বিবাহিত বা বিবাহিতা শিক্ষক-শিক্ষিকারা আছেন , তাঁদের প্রায় সবারই ছেলে-মেয়েরা পড়া-লেখা করে কোন না কোন প্রাইভেট স্কুলে।
তাহলে কি তাঁদের নিজেদেরই কোনো আস্থা নেই তাঁদের স্কুলের প্রতি?
ওগুলো কি শুধুই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ছেলেমেয়েদের জন্যেই?
তুমি কি ভেবে দেখেছো তা বৈশাখী?
তুমি তো অসীম সাহসী ও বলবান , তাঁদের জন্যে অন্তত তুমি কি পারো না দুর্বিনীত হতে? সব তছনছ করে জন্ম দিতে এক নতুন সৃষ্টি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here