সব খবর : আপনার লেখার জগতে আসার কথা কিছু শুনতে চাই। লেখা শুরু করলেন কিভাবে? কবে থেকে?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : ছোটবেলায়, প্রায় সবারই, কবিতা লেখার প্রারম্ভে, এক না একজনকে সামনে দাঁড় করিয়ে এগোতে চায়। নারায়ন ঠাকুরের জায়গায় শালগ্রাম শিলা হলেও চলবে, সেইরকম আর কী। আমারও ছিল। তবে রবিঠাকুরের ভক্ত ছিলাম না কোনও দিনই। আমি ছিলাম কাজীসাহেবের অন্ধ ভক্ত। আমার শুরুর দিকের অনেক কবিতা তার প্রভাবে প্রভাবিত ছিল। আর ছিলেন সুকান্ত। আমার আদর্শ। ছিলেন মোহিতলাল, ছিলেন মাইকেল। এলেন সুভাষ মুখার্জী। গল্পে একমেবাদ্বিতীয়ম সমরেশ বসু। তিনি আজও আমার কাছে শ্রেষ্ঠ গল্পকার। নজরুলের প্রভাব বেশ কিছু বছর কাজ করেছিল আমার কবিতায়। তারপরে এসেছিলেন মাইকেল, মোহিতলাল এরা। এদের প্রভাবে আমার কবিতায় কিন্তু সেই মজাটা আর থাকল না। দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা সব ঢেলে দিলাম কবিতায়। তখন আমি প্রাপ্তবয়স্ক হইনি। তারপরেই এলেন জীবনানন্দ, এলেন সমর সেন। বুঝলাম এযাবৎ যা লিখেছি, সব রাবিশ। এইভাবে কবিতা হয় না। তবে লেখাগুলো ফেলিনি। আছে। সেই না-ফেলা একটা কবিতার কিছু উদাহরণ দিচ্ছি,
উৎসবের দিনগুলো, ব্যর্থতার চাবুকে লুটিয়ে পড়ে
প্রখর রৌদ্রতাপে, হলুদ হয়ে আসা একফালি জমিতে।
দুহাতে সমুদ্রকে ছিঁড়ে, পিষে, দলে
(যদিও তা সম্ভব নয়)
আমি খুঁজি ডুবুরী
শুধুমাত্র এককনা মাটি আগুনকে নির্বাপিত করে
উষ্ণ, ধুষর পান্ডুলিপির গুঁড়ো গুঁড়ো ছাই লয়ে আমি জ্বালাই
বাড়বহ্নি!
জ্বলি, পুড়ি, খাক হই।
সব খবর : লেখালেখিতে সব থেকে বেশি উৎসাহ কে দেন?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : একটা জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার পরে সবাই উৎসাহিত করে, লেখা পড়তে চায়। কিন্তু শুরুতে? মানে ছোটবেলায়? কেউ দিতেন না। সবাই অনুৎসাহিতই করতেন। বস্তুত আমি নিজেই নিজের কাছে অনুপ্রেরণা পেয়ে পেয়ে বড় হয়েছি। হাহাহা।
সব খবর : অবসর সময়ে কী করেন?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : অবসর !! আমি তো ভাবি দিনটা ২৬ ঘণ্টার হলে বেশ হত। ঘুমোই চার ঘণ্টারও কম সময়। তাও ছেঁড়া ছেঁড়া। আমার লেখা সারাদিন ধরে চলে। অফিসে, চায়ের দোকানে, গাড়িতে যেতে যেতে, এমনকি টয়লেটেও। প্রতিটি উপন্যাস শেষ করেই ভাবি এবার দিন পনের অবসর যাপন করব, কিন্তু… হয়না।
সব খবর : টিভি দেখেন ?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : হ্যাঁ। রাত্রিকালীন আহার সারতে যতক্ষণ সময় লাগে, ততক্ষণ দেখি বৈকি। নির্দিষ্ট কিছু নয়, ঘরের লোকজন যা দেখে আমিও তাই দেখি। তার বাইরে কিছু নয়। এমনকি নিজের মেয়ের অভিনয়ও দেখা হয় না। তবে বেশি কুটকচালি ভর্তি সিরিয়াল ভালো লাগে না। হাস্যরসমিশ্রিত অনুষ্ঠান হলে খানিক বসে দেখি। তবে নিয়ম করে কোনও নিউজ-চ্যানেল দেখি না।
সব খবর : বাংলা সিরিয়াল অপসংস্কৃতি ছড়াচ্ছে বলে অনেকের ধারণা।
এখানে শিক্ষামূলক বিষয়কে নগন্য করে দেখা হচ্ছে। এ সম্পর্কে আপনার মতামত।
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : এই একটা বেশ হাসির ব্যাপার। লঙ্কা খাব, আবার ঝাল ঝাল বলে চেঁচিয়ে মরব। হাহাহা। বাংলা সিরিয়াল যদি অপসংস্কৃতি ছড়ায়, তবে তা না দেখলেই তো হয়। শিক্ষামুলক অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেগুলো দেখলেই হয়। ব্যাপারটা কী জানেন? লোক দেখছে, দেখতে পছন্দ করছে, তাই ওরা দেখাচ্ছে। কোথাও কোনও মঞ্চে একজন সিরিয়াল আর্টিস্ট উঠে দাঁড়ালে দেখবেন, লাখে লাখে লোক ভেঙে পড়েছে দেখতে। অথচ একজন বৈজ্ঞানিক পার্ক স্ট্রিট ধরে হেঁটে গেলে চারজনও ঘুরে তাকাবে না। কেন? ভাবতে হবে। আরও একটা ব্যাপার। এই প্রফেশন আছে বলেই প্রচুর লোক করে কম্মে খাচ্ছে। শুধু কি অভিনেতা, অভিনেত্রী? শুধু কি ডিরেক্টর, অ্যাসিন্টেন্ট ডিরেক্টর? প্রডিউসার? পাশাপাশি সমানতালে কাজ করে যায় চিত্রনাট্যকার, আবহসঙ্গীত শিল্পী, চিত্রগ্রাহক, সাউন্ড রেকর্ডার, এডিটর, শিল্পনির্দেশক, পোশাক পরিকল্পনাকারী, কার্যনির্বাহী প্রযোজক, প্রোমো অ্যান্ড গ্রাফিক্স ডিজাইনার আরও কত মানুষ। সাথে থাকে প্রচুর বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানি। এই দুনিয়াটা না থাকলে এত লোকের কাজের জোগাড় করতে সরকারের কালঘাম ছুটে যেত না?
সব খবর : আপনার জীবনে সব থেকে আনন্দের মুহূর্ত?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : আমি তো সর্বদাই আনন্দে থাকি। হাহাহা। আসলে সুখ জিনিষটা আমার কাছে আপেক্ষিক। মানে, স্কেল নেই তাই পিঠ চুলকোতে পারছি না গোছের। অর্থাৎ ছোটবেলায় যে সব দিনে একটাও দুঃখের ঘটনা ঘটত না, তার মানেই তো সুখের দিন ছিল সেই সব। রোগা ডিগডিগে ছিলাম। আড্ডা ছিল না। খুব পড়তাম। পড়ার বই, গল্পের বই এমনকি মুড়ির ঠোঙা অবধি। আর সিনেমা দেখতাম। এই গুণটা(!) আমি আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলাম। একসময় আনোয়ার শাহ রোডের নবীনা সিনেমা হলে লঞ্চ হওয়া কোন মুভি বাকি থাকত না। ঘুপচি কাউন্টারের লক্ষীদা আমাকে চিনে ফেলেছিল। এমনকি হলে সিট নাম্বারগুলোও মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল আমার। অনেকদিন অনেক দর্শককে সিট দেখিয়ে দিয়েছি। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের টিকিট কেটেছি সাত ঘণ্টা লাইন দিয়ে। একটা সুখস্মৃতি লিখি। একদিন নন্দনে গেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে। এমন সময় দরজা দিয়ে একটা লোক বেরিয়ে এল। এত লম্বা যে মাথা ঝুঁকিয়ে বেরোতে হল। আমি নিথরপাথর। আমি কে, কেন দাঁড়িয়ে আছি… সব ভুলে গেলাম এক মুহূর্তে। তিনি আমার গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেলেন। সত্যজিৎ রায়। হুঁশ ফিরতে সময় লেগেছিল সেদিন।
সব খবর : সব থেকে কষ্টের কথা কিছু বলবেন?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : বললাম তো আমি তো সর্বদাই আনন্দে থাকি, তাই কোনও কষ্ট নেই। বাবা লোকনাথকে কিছু লোক গালি দিয়েছিল। দিয়ে চলে গেলে তার ভক্তরা এসে বলল, ‘ঐ লোকগুলো আপনাকে গালি দিল, আপনি কিছু বললেন না? বাবা বলেছিলেন, ‘দিল বুঝি? আমি তো নিলাম না।’ আসলে কষ্টকে কষ্ট ভাবলেই কষ্ট।
সব খবর : কবি/সাহিত্যিকদের সামাজিক দায়িত্ব আছে বলে মনে করেন?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : কবি/সাহিত্যিকদের চোখ থাকবে বর্তমান সময়কালের দিকে আর কান থাকবে খোলা আর তাদের রচিত সাহিত্য হবে একটি বেলজিয়াম গ্লাসের আয়না। সে সামাজিক বা রাজনৈতিক বা ধার্মিক যাই হোক না কেন। এই মুহূর্তে যা চলছে এবং যা চলা উচিৎ তার সাথে কাঁধে কাঁধ মেলানোটাই সাহিত্যিকের ধর্ম। নৈতিকতাবোধ, স্বচ্ছ চিন্তাশক্তি, মানবতাবোধ, ন্যায়-অন্যায়ের অধিকারে জাগ্রত থাকতে পারেন যিনি, তিনিই একজন সাহিত্যিক। এক্ষেত্রে সমাজ অথবা রাজনীতি – এই দুটোর সাথে সাহিত্যের সরাসরি যোগসূত্র আছে কী না তার চেয়েও বড় কথা সাহিত্য সবকিছু ধারণ করবে। সেটা সমাজ হোক বা রাজনীতি বা অর্থনীতি অথবা আর্থ-সামাজিক পরিবেশ হোক, দেশ, কাল ইত্যাদি সবকিছুই সাহিত্যের আঙিনায় খেলা করে স্বচ্ছ জলে। শর্ত একটাই। তা রসোত্তীর্ণ এবং শিল্পোত্তীর্ণ হতে হবে।
সব খবর : কবি/লেখকের চরিত্রটি সমাজের চোখে ‘রহস্যময়’ বলে বিবেচিত । এই রহস্যময়তাই কী কবি/লেখকের ধর্ম?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : কবি অথবা গদ্যকার – তাদের যে কোনও সৃষ্টিটাই একটা আপাদমস্তক রহস্য। আমি তো লেখকের পাশাপাশি একজন পাঠকও। যখন পাঠক হয়ে যাই, তখন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় অথবা সমরেশ মজুমদার অথবা ভাস্কর চক্রবর্তী, দেবারতি মিত্রের যে কোনও লেখাই আমার কাছে ভারি রহস্যময় হয়ে ওঠে। পড়তে পড়তে এমনকি পড়ার শেষেও গালে হাত দিয়ে ভাবি, কী করে লিখলেন! নিজে যখন লিখতে বসি তখনও কিন্তু একটা রহস্যময়তা কাজ করে নিজের ভেতরে ভেতরে। তবে আমি মানুষটা একেবারেই নিজেকে কোনও রহস্যের আড়ালে রাখতে চাই না। আমি খুব সহজেই মানুষের সঙ্গে মিশে যাই, তাদের কথা শুনি, আবার তাদের মধ্য থেকেই আমি আমার উপন্যাসের রসদ খুঁজে নিই। আর রইল নারীর প্রসঙ্গ। যে কোনও কবি অথবা লেখকের কাছে নারী এক রহস্য। যুগে যুগে কবি/লেখকেরা সে রহস্যকে উদ্ঘাটন করবার প্রয়াস চালিয়ে গেছেন। আমার কাছে কবিতা সেই নারীর মত। আর যদি নারীর প্রসঙ্গই আসে, তাহলে লিখি, নারী অথবা কবিতা আমার কাছে আজও রহস্যে মোড়া, আমার মনে হয় নারী অথবা কবিতা আমার গভীর মননের শাশ্বত চেতনা। সেই চেতনাকে আমি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করি। শব্দের মাঝে যখন নান্দনিকতা বা শিল্পের ছোঁয়া থাকে তখন তা প্রকাশ নয়, হয় বিকশিত আর এই বিকশিত হওয়াই আমার কাছে কবিতা, আমার কাছে নারী। আমি যদি একটা উদাহরণ দিই তাহলে হয়তো বোঝাতে পারবো। আমি যদি বলি, কী সুন্দর সূর্য উঠেছে! দেখো কী সুন্দর পাখীরা উড়ছে! খুব ভালো লাগছে। এটা হল একটি ভালোলাগার প্রকাশ। আর যদি বলি “আজই এ প্রভাতে রবির কর, কেমনে পশিল প্রাণের পর, কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাত পাখীর রব”। এটা হল কবিতা, এই হল নারী। যা প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তি। দৈন্দন্দিন জীবনে যেসব নারীকে দেখি, চিনি কি চিনি না সেটা বড় কথা নয়, আমার কলমে কবিতা হয়ে আসে।
সব খবর : কবি/লেখকের সামাজিক স্বীকৃতি কী দরকার বলে মনে করেন?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : সামাজিক স্বীকৃতি মানে যদি পাঠকের কাছে স্বীকৃতি হয় তবে আমি সমর্থন করব। আর যদি রাজনৈতিক বা সরকারী স্বীকৃতির প্রসঙ্গ আসে, তবে বলব, স্বীকৃতির খুব একটা প্রয়োজন একজন কবি অথবা লেখকের দরকার নেই। কবির সামনে টুপি খুলে দাঁড়াতে হয়, কবি কারও সামনে টুপি খোলে না। আমি প্রায় চৌত্রিশ বছরের উপরে লেখালেখি করছি। এখনও সরকারী খাতায় আমার নাম নেই, মানে কবিতা অ্যাকাডেমিতে আমায় ডাকে না। তো ডাকে না তো ডাকে না। আমি যদি নন্দন চত্বরে গিয়ে দাঁড়াই আর জনা পাঁচেক ছেলে মেয়ে আসে ‘অজিতেশদা তুমি কেমন আছ?’ বলে পাশে আসে, সেটাই আমার কাছে সামাজিক স্বীকৃতি। এটার দরকার আছে আমার বৈকি।
সব খবর : অন্যান্য শিল্পীর থেকে একজন কবি/লেখকের পার্থক্য মূলত কোথায়?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : খুব একটা কিছু না। শিল্পী ছবি লেখেন আর কবি/লেখক গল্প, কবিতা আঁকেন। শিল্পী যেমন তুলির ছোঁয়ায় দেশ ও জাতির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন, তেমনিভাবে একজন সাহিত্যকর্মী সাহিত্যের ভাষায় একটি সাধারণ বিষয়কে সাহিত্যে রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। লেখকের সৃষ্টিকৃত সেই সাহিত্যই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। সাহিত্যিকরা জাতীয় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতি, শালীনতা, সেবা, আনুগত্য, ন্যায় -অন্যায়, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যবান কথা রচনা করেন, যা প্রতিটি মানুষের জানা উচিৎ।
সব খবর : সমাজের উদ্দেশ্যে কিছু বার্তা দিতে চান?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : কবিরা তো আর মঙ্গলগ্রহ থেকে নেমে আসা প্রাণী নন। তারা যখন যে সমাজে অবস্থান করেন, তাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতেই হয়। এটা তাদের ধর্ম। তবে সবটাই চোখ আর কান খোলা রেখে। সে দুটো ইন্দ্রিয় বন্ধ হয়ে গেলে একজন সাহিত্যিকের সঙ্গে একজন দল-দাশের কোন ফারাক থাকে না। যুগে যুগে রাজনৈতিক চাপের বলয় ভেঙে ভেঙে সাহিত্যিকরাই একমাত্র এগোতে পেরেছেন। তাদের কলম বহু চরিত্রহীনতাকে মাথা নিচু করতে বাধ্য করেছে। এক কথায় কবি অথবা লেখক হবেন একজন সচেতন নাগরিক, যে বিপদের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়াতে শেখেনি। কবি যে ফুল ফোটায়, সেই ফুলের সুগন্ধে মানবতার পরিধি বিস্তারিত হয়, সমাজ সংস্কার হয়।
সব খবর : বর্তমান কবি/লেখকদের লেখা পড়ে কী মনে হয় আপনার? সমসাময়িক কবি/লেখকদেরকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : সমসাময়িক লেখক মানে কি আমার বয়সী লেখক? নাকি এই সময়ে লিখে চলা যে কোনও লেখক? একটা কথা বলি। গত পাঁচ বছর ধরে আমার চাইতে বেশি বয়সের লেখকদের লেখা আমি পড়া থামিয়ে দিয়েছি। তার চাইতে তরুণদের লেখা পড়তে ভালোবাসি। তারা তাজা রক্ত, সেই রক্তের ঝাঁজ আমাকে ‘জল-পড়ে-পাতা-নড়ে’র যুগ পেরিয়ে আজকের কবিতা লিখতে, ভবিষ্যতের উপন্যাস লিখতে সাহায্য করে। কী লিখছে আজকালকার তরুণ কবিরা/গদ্যকারেরা! পড়তে পড়তে থমকে গিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবতে হয়, কত নতুন ধরণের চিন্তাভাবনা নিয়ে খেলা করতে পছন্দ করছে আজকের তরুণ প্রজন্ম। আবার কষ্টও হয়, যখন দেখি ছন্দ-না-শিখে কবিতা লিখে চলেছে কেউ কেউ। একবার একটা সভাঘরে একজনকে বলেছিলাম ‘তুমি এই কবিতাটা স্বরবৃত্তে লেখ।’ সে অবাক হয়ে বলেছিল, ‘স্বরবৃত্ত মানে!’ সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে আমি সেইসব জ্ঞানী ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের মত বলব না যে, আজকাল সবাই খাজা লিখছে, গল্প উপন্যাসের নামে গাদা গাদা ছাই উড়ছে। নাহ। আর যদি তাই হয়, আমাদের কাজ হবে তাদেরকে সঠিক মার্গদর্শন করানো। শুধু নিন্দেতে কারও ভাল হয় না।
সব খবর : আধুনিক কবিতা বলতে বর্তমানে একশ্রেণীর কবি শব্দের জটিলতাকে প্রাধান্য দেয়। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : আমি বলি, যারা নাচতে জানে, তাদের কাছে উঠোনের চেয়ে ভাল মঞ্চ কিছুই হয় না। আসল হচ্ছে জেনে লেখা। শব্দের জটিলতা নতুন কিছু না, কারণ সেটা অভিধানসম্মত। তেমনই অশ্লীল শব্দের ব্যবহার। আসলে কবিতা লিখতে জানাটা একটা শেখার বিষয়। না জানলে বাঁদরের হাতে সোনার কলম হবে। কবিতার ক্ষেত্রে নিয়মাবলীগত শিক্ষা খুব প্রয়োজন এবং অত্যন্ত জরুরী। যা মনে আবেগ এল তাকে লাইনের পর লাইনের নামিয়ে দেওয়া কবিতা নয়। আবার অন্ত্যমিল কবিতা মানেই কবিতা নয়। অন্ত্যমিল অথবা না-মিল যাই লেখা হোক না কেন ছন্দ তাতে থাকবেই। বাজারে প্রচুর ছন্দের উপর বই আছে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘কবিতার ক্লাস’ আছে তো হাতের সামনে। সবটাই আসলে নান্দনিক ভাবনা, উপযুক্ত শব্দচয়ন আর তাকে পরিবেশনের কৌশল। এটা শেখার বিষয়। আসলে সাহিত্যের কোন শাখাই খুব সহজলভ্য নয়। পরিশ্রম, পরিশ্রম আর পরিশ্রম। প্রতিটা রাগের যেমন একটি রূপাবয়ব আছে, কবিতাও কবির কাছে তেমনি রূপবান এক ভাববস্তু। রূপ একটি নির্মাণ, ভিতর থেকে ঠেলে ওঠা একটি প্রকাশ। এটা শিখতে হবে। পরা, পশ্যন্তি, বৈখরি, মধ্যমা – এগুলো কী জানতে হবে। তবেই তো।
আরেকটা কথা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন লিখেছিলেন ‘জানলার পাশে জ্বলন্ত জিরাফ’ তখন সেটা দুর্বোধ্য ছিল নাকি? আসল কথাটা হচ্ছে কবিতা সবার জন্য নয়। যেমন একটা বহুল প্রচলিত কথা আছে সবাই কবি নয় কেউ কেউ কবি, তেমনি কবিতাও সব পাঠকের জন্য নয়। কবিতা বোঝার জন্য যে মনের গভীরতা দরকার সেটা প্রথমে প্রয়োজন। আমি যদি আইনস্টাইনের ফর্মুলা না বুঝি তাহলে দোষটা আইনস্টাইনকে দেওয়া যায় কি? একটা উদাহরণ দিই। সুধীর দত্তের কবিতা। আনন্দ পুরস্কার পাওয়া এই কবির যে কোন কবিতাই তুলে ধরলে তার সিংহভাগ দুর্বোধ্য লাগতে পারে কারণ সুধীর দত্তের আছে উপনিষদ, বেদ ও পুরানের উপর প্রচুর পড়াশোনা। তাই সেই সব শব্দ কেউ ধারণ করতে গেলে যে মেধার প্রয়োজন তা যদি না থাকে তাহলে সব শব্দগুচ্ছ বা পুরো কবিতাটিই দুর্বোধ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হয়। আগের প্রশ্নের উত্তরে আমি যেরকম বলেছি, কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বোধ্য শব্দ ঢুকিয়ে দেয় কবিতাটিকে একটি মাত্রা দেওয়ার জন্য। ফলে সব মিলিয়ে কিছুই দাঁড়ায় না। সেটা অবশ্য একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
সব খবর : আপনার প্রিয় কবি এবং লেখক কারা? খুব বিশেষ কেউ কি আছেন যার প্রভাব আপনার লেখায় পড়েছে ?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : যুগে যুগে পছন্দ বদলায়। আমি আদতে কবিতাপ্রেমী এবং একই সঙ্গে গল্পপ্রেমী আর তেমন উপন্যাস পেলে তো কথাই নেই। আমি নিজে সর্বভুক। তাই সব কবিতা গল্পই আমার কাছে ভীষণ আদরের। তবে সব মানুষেরই একজন বিশেষ পছন্দের সাহিত্যিক থাকে। আমার যেমন সমরেশ বসু। পরবর্তীকালে সমরেশ মজুমদার। সুনীল গাঙ্গুলি, প্রচেত গুপ্তর গল্প বিশেষ পছন্দের। আর পছন্দের কবি প্রচুর। আমার লেখায় তেমন কেউ প্রভাব বিস্তার করেনি। আমি চেষ্টা করেছি একটা স্বতন্ত্র ফর্ম আনতে। যেমন আমার সব কবিতাতেই একটা গল্প থাকে। অ্যাবস্ট্র্যাক্ট লেখা আমার আসে না। উপন্যাসের ক্ষেত্রে আগে কমফর্ট জোনে লিখতাম, এখন এমন সব বিষয় বাছি, যা লিখতে আমার কালঘাম ছুটে যাবে। হাহাহা।
সব খবর : আপনি কি মনে করেন বাংলা সাহিত্যে পাঠকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : তা কমেছে। অনেকে এর জন্য দায়ী করেন কবিতার মান’কে। আমি করি না। আসলে চাহিদার সাথে সরবরাহের একটা তালমিল থাকা চাই। আগেকার কবির সংখ্যার চাইতে এখনকার সংখ্যা মিলিয়ে দেখুন। পাঠক কত পড়বে? আরও আছে। দুর্দান্ত কিছু লেখবার আশায় দুর্বোধ্য কবিতার জন্ম হচ্ছে পলে পলে। আরও আছে। একটা ছত্রছায়ায় যেন কাউকে থাকতেই হবে। সেই করতে গিয়ে কবিদের আন্দোলন-প্রবণ মনটা হারিয়ে যাচ্ছে। যারা পুরোদমে সাহিত্যকে পেশা করেছেন, তারা তো বটেই, যারা করেননি, তারাও চান পাঠকদের কাছে পৌঁছতে। সাহিত্যিক যদি একটি উপন্যাস লেখেন, এবং সেটা সেই অর্থে দুর্দান্ত হয়, তাহলেই বা লাভ কী যদি পাঠকের হাতেই সে বই না পৌঁছয়? আর এইভাবে কোন দল বা গ্রুপের ছত্রছায়া না পাওয়ার ফলে সেই বই রাশি রাশি সংখ্যায় খাটের নিচে মাকড়শা’র জাল বিস্তারে সাহায্য করে। শুধু লেখক কেন, যে মহান ব্রতে ব্রতী হয়ে সবুজপত্রগুলো প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে পা রেখেছিল বাংলা সাহিত্যের আঙিনায়, তাদেরও অধিকাংশ কর্পোরেট দাসবৃত্তি অবলম্বন করেছে। হয়ত মনে মনে সেই প্রতিষ্ঠানকে নিন্দার চোখেই দেখে, তবুও নিজের জায়গা হারাবার ভয়ে সাহিত্যিকরা বাধ্য হচ্ছেন বিভিন্ন হাউসের শরণাপন্ন হতে। আর গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন? এখন যে নিরপেক্ষ হলেই আর গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। যেন কোনও একটা রঙ আপনাকে বেছে নিতে হবেই। আমি এই চৌত্রিশ বছরে এমন কবিদের চিনি, নাম নিচ্ছি না, যারা আজও লিখে যাচ্ছেন এবং চমৎকারভাবে, কিন্তু প্রচার পাচ্ছেন না অথবা তাদের অমূল্য লেখা এক শতাংশের চোখে আসছে মাত্র। গ্রাম গ্রামান্তর থেকে প্রকাশিত বহু সবুজপত্রে এমন সব প্রবন্ধ পড়েছি, যা নামজাদা সাহিত্যিকরা লিখতে পারলে হইহই পড়ে যেত। একসময় হাংরি জেনারেশনের উৎপত্তিই হয়েছিল এই প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে। তাদের চোখে ছিল স্থিতাবস্থা ভাঙার স্বপ্ন। উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ডিসকোর্সের সংকরায়ণকে স্বীকৃতি দেয়া তাঁদের কর্মকাণ্ডের অংশ ছিল। তারা হারিয়ে গেল। একসময় কবিতা লেখার প্রথম শর্তই ছিল সাহিত্য নিয়ে ব্যবসার বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা। আজ কোথায় তারা? ১৯৩০ থেকে আজ অবধি, খুব কৌশলে একজন সাহিত্যিকের একলা চলার ব্যাপারটাকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে বাণিজ্যিক পত্রে কবিতা ছাপা হয়, এই কারণে নয় যে পত্রিকাটির কবিতা প্রয়োজন আছে। এই কারণেই যে প্রতিষ্ঠান তার সুবিধাজনক কবিতাগুলোকে প্রকাশ করে যাতে কবিতার দ্রোহ এবং কবির আগুন জনসাধারণের চোখে এসে না পড়ে। একজন সাহিত্যিক কোনও প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী হবেন না। তিনি হবে আত্মপ্রতিষ্ঠ। যিনি তার লেখাটিকে জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার দায় নিজেই নেবেন। কিন্তু বাস্তবে? প্রথম প্রথম সাহিত্যিকরা অনমনীয় মনোভাব দেখালেও মধ্যচল্লিশে তারাও বাধ্য হচ্ছেন ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়’ এই শব্দ কটি উচ্চারণ করতে। একটা ভয়, একটা ভয়ের আবরণ।
সব খবর : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : তেমন পরিকল্পনা করে কিছু করতে পারি না। পরিকল্পনা করলেই তা আমার জীবনে ঘটে না। এটা একটা ডেস্টিনি বলতে পারেন। তাই পরিকল্পনা করি না। জীবন যেমন আসছে, তেমনই আসুক। আর আমাকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই একটা কুলমার্তণ্ড হয়ে উঠতে হবে এমন ভাবনাও তো নেই। তাই লিখে যাই, যেমন খুশী, যখন সময় পাই। লেখাটা প্যাশন, লিখে যাব। কিন্তু কেন লিখি জানেন? বিশ্বাস করুন, আগের কথা মনে নেই, তবে এখন একটা নেশা ধরে গেছে। কয়েকদিন আগেই ফেসবুকে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। উপন্যাস নিয়ে। লিখতে ভারি ঝকমারি লাগে, কিন্তু ছাড়তে পারি না। মনটা উশখুস করে। ড্রাগের নেশার চেয়ে কম নয়। আর আগের কথা? শুরুতে প্রচুর পড়তাম। দিনের মধ্যে আঠার ঘণ্টা। পড়ার বই হয়ত ৫/৬ ঘণ্টা। বাকিটা গল্পের বই। বিনা পয়সায় পড়ব বলে একটা স্টুডেন্ট হোমে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানে সপ্তাহে চারদিন ১২ ঘণ্টা করে কাটাতাম। তার মধ্যে ৬/৭ ঘণ্টাই গল্পের বই। হেমেন্দ্রকুমার, জীবনানন্দ, শার্লক হোমস – সব শেষ করেছি পড়ে পড়ে। পড়তাম আর ভাবতাম এরা যদি পারে, আমি কেন নই? ঐ থেকে লেখার শুরু। অন্য মাধ্যম। ভালো লাগে, কিন্তু যে বয়সে মানুষ এইসব শিল্পকলা শেখাশেখি করে, আমি তখন দুটো রুটির সন্ধানে দৌড়চ্ছি। শিখিনি তবে আঁকতে খুব পছন্দ করতাম, গান গাইতাম হেঁড়ে গলায়, ভয়েস মডিলিউশন করে আমার লেখা গল্প পাঠ করেছি। ইউটিউবে পেতে পারেন। তবে লেখার মধ্যে যে আনন্দ সেটা আর কোথাও পেলাম না।
সব খবর : সব শেষে লিটিল ম্যাগাজিন সম্পর্কে কিছু কথা শুনতে চাই। আপনার কিছু পরামর্শ।
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ : এই যে এত পুরস্কার পেয়েছি, সে তো সবুজপত্রদের ভালোবেসেই। আমি লিটল ম্যাগাজিন বলি না। বলি সবুজপত্র। আসলে ওরা সব ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। ওদের কাছ থেকে আমি বার্তা পাই – ‘দাদা তুমি আমাদের পাশে থেকো’। তাই আমি সবুজপত্রের সঙ্গে থাকি। কেন থাকি? লিটল ম্যাগ বা আমি যাকে বলি সবুজপত্র, সেই প্রসঙ্গে এক লেখক বলেছিলেন একবার, প্রকাশন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় এখানকার কবি-সাহিত্যিকরা লিটল ম্যাগাজিন-নির্ভর হয়ে আছেন। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। এই মুহূর্তে বাংলায় শক্তিশালী লেখকগোষ্ঠীর মধ্যে হাতে গুণে দু-তিনজন আছেন, যারা প্রথমেই উঁচু ধাপে পা রেখেছিলেন। তবে সিংহতম ভাগের উৎপত্তি সবুজপত্রের হাত ধরেই। দেশ বিদেশে বরেণ্য অনেক সাহিত্যিকের লেখায় হাতেখড়ি হয় স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত সবুজপত্রে। শুধু লেখক নয়, বিদেশে খ্যাতি পেয়েছে, এমন অনেক পত্রিকার শুরু ছিল সবুজপত্র হিসেবেও। যেমন লন্ডনের দ্য মিরর। গর্বের কথা আমাদের দেশে সবুজপত্রের যাত্রা শুরু অনেক আগে। এক সময়ে বিপ্লবীরা লিখতেন সবুজপত্রে। সেইসময় ইংরেজ সরকার যত না ভয় পত্রপত্রিকা অথবা সাময়িকীকে, তার চেয়ে ঢের বেশি ভয় পেতেন সবুজপত্রগুলোকে। সবুজপত্রে যাত্রা শুরু করে এক সময়ে বিশাল জায়গায় পৌঁছে গেছেন, এমন অগুণতি লেখক কবি আছেন। অথচ যখন তারা প্রতিষ্ঠিত তখন তাদের বৃহদাংশ সবুজপত্রের নামে নাক সিঁটকান, এ আমি নিজের তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। তাই এমনও হয়েছে অনেক সবুজপত্রকে দু একটি সংখ্যার পরেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। হয়ত আর্থিক দৌর্বল্যের কারণে। খুবই দুঃখের কথা। তাই এই আঁতুড়ঘরকে নিরাপদ রাখা শুধু সবুজপত্রের সম্পাদকের দায়িত্ব নয়, আমাদেরও দায়িত্ব কিছু কম নয়। আমাকে যারা চেনেন, তারা জানেন বাণিজ্যিক পত্রিকার চাইতে সবুজপত্রে লিখতে আমি বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি, প্রচুর তরুণ সম্পাদকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি, সৌজন্য সংখ্যা দেওয়ার বিরোধিতা করি। কেন? কারণ সবুজপত্রের কাছে আমার ঋণ অসীম। সবুজপত্র হল এমন মাধ্যম যারা লেখার মানে বিশ্বাস রাখে, লেখকের নামে নয়। এটা কিন্তু একটা আত্মশ্লাঘার জায়গা। এর ভাগীদার আমি হব না? লোভী মানুষ যে আমি। হাহাহাহা।
সব খবর : আপনার অমূল্য সময় থেকে কিছুটা ভাগ নিলাম। আপনার বক্তব্য আমাদের সমৃদ্ধ করবে। আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা। ভালো থাকবেন।
সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ :
আপনিও ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।