আনাড়ি মহিলার উচ্ছৃঙ্খলা (ধারাবাহিক উপন্যাস, একাদশ পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
498

পরের দিন সকালবেলায় ইমলি ব্যাঙ্কে । তখন ব্যাঙ্কের ঘরদোরের ঝাড়পোঁছ শেষ পর্যায়ে । সকাল সাড়ে ৯টা । ইতিমধ্যে ইমলির স্নান সারা । সে ব্যাঙ্কেই স্নান সারে । আলাদা শাড়ির সেট ব্যাঙ্কে রাখা থাকে । স্নানের জন্য বাড়িতে গেলে অনেক দেরী । তাছাড়া বাড়িতে গেলে মেয়ে সহজে ছাড়তে চায় না । বাড়িটাও ব্যাঙ্ক থেকে অনেকটা দূরে । চাইলেও চটজলদি তার পক্ষে বাড়ি যাওয়া সম্ভব না । তাই বাথ রুম পরিষ্কার করার পর ইমলির স্নান করা নিত্যকার অভ্যাস । নতুবা স্নান না করার জন্য সারাদিন তার গা ঘিনঘিন করে । নোংরা নাড়াচাড়া করার জন্য তার শরীরে একটা ঘৃণার জন্ম নেয় । কোথায় যেন একটা অস্বস্তি বোধ । তাই নিজেকে হাল্কা রাখার জন্য বাথ রুম পরিষ্কারের পর তার স্নান করা চিরাচরিত অভ্যাস । তারপর বাকী কাজ থাকলে সেটা সম্পূর্ণ করা । অন্যান্য দিনের মতো স্নান সেরে একটা চেয়ার নিয়ে বাইরের বারান্দায় ইমলি সবেমাত্র বসেছে । উদ্দেশ্য মাথার ভেজা চুল শুকানো ।
হন্তদন্ত হয়ে ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার বাবু ব্যাঙ্কে ঢুকলেন । ইমলিকে দেখতে পেয়ে হাসিমুখে বললেন, “তোমার খবর আছে ।“
“আমার খবর !” বিস্ময়ে হতবাক ইমলি ! পুনরায় ননী বাবুকে বললো, “অভাগা মহিলার আর কি খবর থাকতে পারে ননীদা” ।
খবর আছে বলেই তো বলছি । পার্ট টাইম সুইপারদের ফুল টাইম করার প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে ।
আপনারা বলছিলেন ফুল টাইম সুপার করার প্রক্রিয়া একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চালু হয়েছে ।
এখন শুধুমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই নয়, সর্বত্র চালু হচ্ছে । পার্ট টাইম সুইপার বলে কিছু থাকবে না । ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে সমস্ত পার্ট টাইম সুইপারদের ফুল টাইম সুইপারে উন্নীত করতে হবে । এই মর্মে জাতীয় কমিশনের চাপ ।
জাতীয় কমিশন, ব্যাপারটা বুঝলাম না ।
“সাফাইকর্মচারীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখ-ভালের জন্য নাকি দেশে জাতীয় কমিশন রয়েছে । জাতীয় কমিশনের চেয়ারম্যান এখন কলকাতায় । তবে কলকাতায় জাতীয় কমিশনের কি উদ্দেশ্যে ভিজিট, আমার জানা নেই । শোনা গেছে, দেশের ন্যাশনাল কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনের টীম কলকাতায় আমাদের ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তলব করেছিলেন । আরও শোনা গেছে, তাঁকে পার্ট টাইম সুইপারদের ফুল টাইম করার নির্দেশ দিয়েছেন । সেই মোতাবেক গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই প্রসঙ্গটা ব্যাঙ্কের বোর্ডে তুলবেন । ব্যাঙ্কের বোর্ডের আলোচনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত জানা যাবে । সুতরাং ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত জানার জন্য আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে । বাস্তবে কি ঘটেছে সেই ব্যাপারে আমি অন্ধকারে । তবে জানা গেছে জাতীয় কমিশনের চেয়ারম্যান গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ বাস্তবায়িত করে দিল্লিতে ১৫দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছেন, অন্যথায় কমিশনের আদেশ অবমাননার দায়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ হবেন । তাই ব্যাঙ্ক চাইছে, বোর্ড ডেকে ব্যাপারটার দ্রুত নিষ্পত্তি ।“ ননীবাবু সমস্ত ঘটনা ইমলির সামনে তুলে ধরলো ।
চাকরিটা ফুল টাইম হলে আমার সংসারটার একটা হিল্লে হবে । ননীদা আপনি তো জানেন, প্রবল আর্থিক সঙ্কটতার মধ্যে দিয়ে আমরা সংসার চালাচ্ছি । ইতাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে । তার ইচ্ছা, ব্যবসার একটা স্থায়ী বন্দোবস্থ । এদিকে মেয়ে বড় হচ্ছে । কিছুদিন পর মেয়েকে স্কুলে ভর্তি । মেয়ের জন্য আলাদা লোক রাখতে হয়েছে । খরচা বাড়ছে । সুতরাং এই মুহূর্তে চাকরিটা ফুল টাইম হলে আমাদের সংসারের পক্ষে মঙ্গল ।
আচ্ছা ইমলি ম্যাডাম, আপনাকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছিলাম । সেটা কতদূর এগোলো ?
আমি সোনাইদহ হাই স্কুলের সাথে যোগাযোগ করেছি । স্কুল থেকে আমাকে ভর্তি করে নিয়েছে । ধাপে ধাপে পরীক্ষায় বসতে হবে । পড়ার বই দিয়ে দিয়েছেন । পরীক্ষার নির্ঘন্ট পরে জানা যাবে । যদিও স্কুল থেকে বলে দিয়েছে, তাড়াতাড়ি পরীক্ষায় বসা সম্ভব না । কিছু নিয়ম কানুন আছে । নিয়ম কানুন অনুসারে পরীক্ষার সময়সূচী জানিয়ে দেবেন । তখনই আমি পরীক্ষায় বসতে পারবো ।
অনেকটাই এগিয়ে গেছেন ।
এই ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন, জয়তী মাসি ।
ইতিমধ্যে সমস্ত স্টাফেরা ব্যাঙ্কে ঢুকে গেছেন । এবার তাঁদের জন্য চা বানানোর পালা । সকাল বেলায় বাজার থেকে লেরুয়া বিস্কুট এনেছে । ইমলি চায়ের সাথে লেরুয়া বিস্কুট খাওয়ালো । ইমলি চেষ্টা করে, নিত্য নতুন কিছু একটা খাওয়াতে । যাতে খাওয়ার ব্যাপারে ব্যাঙ্কের স্টাফদের মধ্যে একঘেয়েমি না আসে । নিয়মিত খাওয়ার সামগ্রীর পরিবর্তনে খাবারের প্রতি তৃপ্তিও বাড়ে ।
চা দেওয়ার সময় ম্যানেজার বাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “আজ আমাদের কি খাওয়াচ্ছেন ?”
ছোট চিংড়ি দিয়ে কলার মোচা । সঙ্গে পুঁটি মাছের ঝাল । লাউ দিয়ে মসুরির ডাল ও পাঁপড় ভাজা ।
“নিঃসন্দেহে উৎকৃষ্ট খাবার । ঠিক আছে ম্যাডাম ।“ বলেই ম্যানেজারবাবু মাথা নীচু করে তাঁর কাজে মন দিলেন ।
ইমলি হাসি দিয়ে ম্যানেজারবাবুর চেম্বার থেকে বেরিয়ে সোজা ক্যান্টিনে । ক্যান্টিনে এসে কলার মোচা তৈরিতে মন দিলো । পুঁটি মাছ ড্রেসিংয়ের টাইম এবং কায়িক পরিশ্রম দুটিই আজ বেশী লেগেছে ইমলির । কেননা অনেক গুলি মাছ । চুনো পুঁটি হলেও সাইজে কিছুটা বড় । তবে জ্যান্ত থাকায় পুঁটি মাছ গুলি কাটতে বা আঁশ ছাড়াতে বেশী বেগ পেতে হয়নি । পুঁটি মাছের ঝাল অফিসের বাবুদের খুব পছন্দ । অফিসের বাবুরা জানেন, পুঁটি মাছের ঝাল রান্নাতে ইমলি খুব দক্ষ । তারপর ইমলি ক্যান্টিনের রান্না শেষ করে সব স্টাফদের খেতে ডাকল ।
দুপুরে ক্যান্টিনে খাবার খেয়ে ব্রাঞ্চের সকল স্টাফ খুব খুশী । বিশেষ করে কলার মোচা ও পুঁটি মাছের ঝাল খেয়ে প্রত্যেকে খুশীতে উল্লসিত ।
খেতে বসেছে এমন সময় সুফলের মা আসানকে নিয়ে হাজির । বাড়িতে “মা যাব, মা যাব” করে আসানের নাকি ভীষণ কান্না । ব্যাঙ্কে পৌঁছেই ছুটে মায়ের কোলে । মাকে পেয়ে আসানের শান্তি । মায়ের খাওয়া তখন শিকেয় । মেয়েকে আদর করতে ইমলি ব্যস্ত । তারপর ননী বাবু আসানকে দেখতে পেয়ে দোকান থেকে চকলেট আনালেন । এবার চকলেট আসানের হাতে দিয়ে তাকে কোলে নিয়ে সোজা ক্যাশের খাঁচায় । কারও কোলে উঠলে আসানের ভীষণ আনন্দ । ক্যাশের খাঁচায় ঢুকে ননী বাবুর সাথে আসানের পটর পটর কথা । অনেক কথা । সব কথার উত্তরও ননী বাবুর জানা নেই । ননী বাবু কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর আসানকে ইমলির কাছে রেখে বললো, “আসান এখন ব্যাঙ্কে থাক । আপনি ফেরার সময় তাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন । এখন আমাদের মধ্যে খেলাধুলা করুক । তার মিষ্টি কথা গুলো শুনতে বেশ মজা লাগছে ।“
দাদা, আসান ব্যাঙ্কে থাকলে তার দুষ্টুমি বেড়ে যাবে । সকলের অজান্তে কোনটা ভেঙ্গে কি করবে তার ঠিক নেই, বরং বাড়ি ফিরে যাক ।
আপনি অযথা টেনশন নেবেন না । বাচ্চারা একটু-আধটু খামখেয়ালি হবেই । সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করবেন না । আসান থাকলে আমরা বরং অনেক চনমনে থাকব ।
আসান এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ঘুরে ঘুরে খাতাপত্র উল্টাচ্ছে । কখনও কম্পিউটারের কি-বোর্ডে হাতাহাতি আবার কখনও কলম নিয়ে কাগজের উপর হিজিবিজি লেখালেখি । আসান ব্রাঞ্চে এসে বরং আনন্দে আহ্লাদিত । অনেকগুলি কাকুদের সাথে হৈ-হুল্লোড়ে আমোদিত ।
আসানের পকেটের লজেন্স খাওয়া শেষ । তারপর ক্যান্টিনে গিয়ে বিস্কুটের বয়মে মুখরোচক বিস্কুট খুঁজে বেড়াচ্ছে । ইমলি পছন্দ মতো বিস্কুট দেওয়ার পর তার শান্তি ।
বিকেল ৬টা । ঘরে ফেরার পালা । আসানের বায়না, “মা কোলে যাব” । তিনি এখন হাঁটবেন না । মেয়েকে কোলে নিয়ে অতটা পথ যাওয়া ইমলির কাছে রীতিমতো কষ্টের । কোলে ওঠার অতিরিক্ত বায়না ! তবুও আদরিণী মেয়েকে কোলে নিতেই হল । তারপর মেয়ের মুখে হাসি ।
বাড়ি পৌঁছে দেখে ইতাস বাড়িতে । গালে হাত দিয়ে বসে ভাবনার জগতে নিমজ্জিত । ইমলি বুঝতে পারছে, তার মন খারাপ । সেই কারণে জিজ্ঞাসা করলো কেন মন খারাপ ? কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না । কিছুতেই ইতাস বলতে চাইছে না তার মন খারাপের কারণ কী ? এদিকে মেয়েকে খাওয়ানোর সময় । মেয়ে খাবারের জন্য মাকে পীড়াপীড়ি । ফলে ইতাসের দিকে বেশীক্ষণ ধ্যান দিতে পারলো না । ইমলি মেয়েকে খাওয়াতে বসে গেল । আজকাল বাচ্চাদের খাওয়ানোর খুব ঝামেলা । সহজে তারা খেতে চান না । আসানের ক্ষেত্রেও তদ্রুপ । খাওয়ার সময় তার ছুটে বেড়ানোর স্বভাব । মেয়ের পেছনে ছুটে ছুটে আসানকে ‘বাবা-বাছা’ করে খাওয়াতে হয় । একবার খাওয়াতে শুরু করলে শেষ হতে মোটামুটি একঘন্টার কাছাকাছি । মেয়েকে খাইয়ে দিয়ে ইমলি অন্য কাজে হাত দিলো । মেয়ে যতো বড় হচ্ছে ততোই তার দুষ্টুমি বাড়ছে । চুপচাপ দুদণ্ড বসে থাকার মেয়ে নয় । যতক্ষণ না ঘুমাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার ছটফটানি । এদিকে মেয়ের বয়স দেখতে দেখতে দুই বছর পার হতে চলল । তাই মেয়ের পড়াশুনা নিয়ে ইমলির চিন্তা ঊর্ধ্বগতি । তারপর মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো । অন্যদিকে তারাও দুজন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো । ইতাসের মন খারাপের কারণ ইমলির আর জানা হল না । ইমলি বেমালুম ভুলে গেল । সারা দিন পরিশ্রমের পর অঘোরে তাদের ঘুম ।
পরের দিন অফিসে গিয়ে ইমলি জানতে পারলো, ব্যাঙ্কের বোর্ডে পাশ হয়েছে, সমস্ত পার্ট টাইম সুইপারদের ফুল টাইম সুইপারে পদোন্নতি করা হবে । তবে একটা শর্ত, তিন কিস্তিতে ধাপে ধাপে পদোন্নতি করা হবে । একসঙ্গে করলে নাকি ব্যাঙ্কের লাভের অঙ্কে চাপ পড়বে । তাই ধাপে ধাপে ফুল টাইম করার পদক্ষেপ ।
ইমলি খুব খুশী । ব্যাঙ্কে সে সাব-স্টাফের পদ মর্যাদা পেতে চলেছে ।
প্রথম তালিকায় ইমলির নাম নেই । এমনকি দ্বিতীয় তালিকায় ইমলির নাম নেই । ইমলি ঘাবড়ে গেল । আদৌ কি তাকে ফুল টাইম বানাবে ? ক্যাশিয়ারবাবুকে খোঁজ নিতে বললো । মোটামুটি আশেপাশের সমস্ত ব্রাঞ্চের পার্ট টাইম সুইপারেরা তালিকাভুক্ত হল, অথচ তার বেলায় কোনো সাড়া-শব্দ নেই । কারণটা ননীদাকে অনুসন্ধান করে জানতে বললো । ননীদা হেড অফিসে ফোন করে জানতে পারলেন, ইমলি পার্ট টাইম সুইপার পদে খুব সম্প্রতি যোগদান করেছে । যার জন্য সে অনেক জুনিয়র । তাই তার নাম শেষ তালিকায় উঠবে । হেড অফিস থেকে আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরতে পরামর্শ দিলো ।
বাড়ি ফিরে ইতাসকে দেখে ঘাবড়ে গেল ইমলি । আশঙ্কায় ইমলির মনটা ছ্যাঁত করে উঠলো । তার শরীরে অজানা আতঙ্কের এক শিহরনের অনুভূতি ! তবে কি কোনো বিপদের ঘনঘটা ! আগের দিনের মতো গালে হাত দিয়ে বসে ভাবনার জগতে নিমগ্ন । তার নাকি মনটা ভীষণ খারাপ । ফ্যাকশে মুখে উদাসভাবে উঠোনে বসে হিজিবিজি ভাবছে । এমনকি মেয়ের সাথেও খেলছে না । ইমলি ভয় পেয়ে গেল । তার কৌতুহল, ইতাসের হঠাৎ কিজন্য মন খারাপ ? এত তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করা তার ধাঁচে নেই । রাত্রি ৯টার আগে কোনোদিন বাড়ি ফেরে না । অথচ সন্ধ্যা ৬টার সময় দুদিন ধরে বাড়ি ফিরছে । নিশ্চয় উদ্বেগের কিছু ঘটনার সম্মুখীন । নতুবা ইতাস কাজে ফাঁকি দেওয়ার বান্দা নয় । ইমলি ঘরে ঢুকে ফ্রেস হয়ে ইতাসের পাশে বসলো । তারপর খুব শান্ত গলায় তার জিজ্ঞাসা, “হঠাৎ তুমি এতটা হতাশ কেন ? তোমাকে মনমরা দেখাচ্ছে কেন ?”
ইতাসের চোখ ছল ছল । কথা বলতে তার কান্না পাচ্ছে । জল ভরা চোখে ইতাস ইমলির দিকে তাকিয়ে বললো, “সরকার থেকে বর্তমান বাস স্ট্যান্ড ভেঙ্গে পুনরায় নতুন করে আধুনিক মডেলে কুসুমগ্রাম বাস স্ট্যান্ড তৈরি করছে । বাস স্ট্যান্ডের আশেপাশের দোকানদের সরে যাওয়ার জন্য তিন দিন সময় দিয়েছে । এই মর্মে বাজারের বিভিন্ন জায়গায় নোটিশও টাঙানো । সরকার নতুন বাস স্ট্যান্ড তৈরীর সিদ্ধান্তে অটল । তিন দিনের মধ্যে দোকানদারেরা স্বেচ্ছায় না উঠলে সমস্ত দোকান ভেঙ্গে নতুন করে বাস স্ট্যান্ড পুনর্নির্মাণ শুরু করবে” ।
ইতাসের মুখে বাস স্ট্যান্ড ভাঙ্গার কথা শুনে ইমলির মাথায় বাজ পড়লো ! ইমলি চুপচাপ । তার মুখে কথা বন্ধ । গভীরভাবে ইমলিও চিন্তান্বিত, এবার তাদের উপার্জনের রাস্তা কি হবে ?
আবার ইতাস বলতে লাগলো, “সরকার থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা একটা করেছে । সেটা বাজার ছাড়িয়ে অনেক দূরে । মেমারী থেকে কুসুমগ্রামে ঢোকার মুখে রাস্তার পাশের ফাঁকা জয়গায় দশ-বাই-দশ ঘর বানিয়ে দিচ্ছে । ইতাসের নামেও একটি ঘর অ্যালোটমেন্ট হয়েছে । বড় রাস্তার দিকে মুখ করে ঠিক মাঝখানে । কিন্তু সেখানে লোক বসতি নেই । কোনও বাজার নেই । ফাঁকা জায়গায় ঘর বানিয়ে দোকানদের সেখানে যাওয়ার জন্য নোটিশ দিয়ে দিয়েছে । এমনকি ঘরের অ্যালোটমেন্ট লেটার সকলের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে । যদিও আমার অ্যালোটমেন্ট চিঠিটা পাইনি । পরে দেবে জানিয়ে দিয়েছে । এখন কথা হচ্ছে, আমার চালু চায়ের দোকান । সেখানে গিয়ে চায়ের দোকান খুললে একটাও খরিদ্দার জুটবে না । সেখানে চায়ের দোকানের ব্যবসা একেবারে অসম্ভব ! সুতরাং আমাকে বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে । বিকল্প ব্যবসার ভাবনায় আমি বড্ড ক্লান্ত । কীভাবে কি করবো সেই চিন্তায় অস্থির ।“
এই খবরটা তুমি কি আগে জানতে ?
ইতাস উত্তরে ইমলিকে বললো, “এই খবরটা গোপন ছিল । তবে কানাঘুষো হত, কিন্তু সেভাবে চাউর হয়নি । এখন শুনছি, কুসুমগ্রামের বাস স্ট্যান্ডটি মডেল বাস স্ট্যান্ড হবে । বাস ঢোকা ও বের হওয়া এবং বাস দাঁড়ানোর আধুনিক ব্যবস্থাপনা ছাড়াও অতিথিশালা তৈরি হচ্ছে । অতিথিশালায় থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত থাকছে । এখন বুঝতে পারছি, বাস স্ট্যান্ড ভাঙ্গার পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের । আমরা সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি ।“
এবার কি করবে ঠিক করলে ?
ভাবছি চায়ের দোকান বন্ধ করে দেব । নতুন জায়গায় চায়ের দোকান চালানো কিছুতেই সম্ভব না । এখানে জনবহুল জায়গা থাকার কারণে চায়ের দোকানের বিক্রিবাট্টা ভাল ছিল । সব সময় বাসের প্যাসেঞ্জারের আনাগোনা । বাজারের মানুষের ঘোরাফেরা । বাজার করতে এসেও মানুষের চা খাওয়া । আশেপাশের অফিসে চা পৌঁছে দেওয়া । বিভিন্নভাবে চা বিক্রির সুযোগ ছিল । তাছাড়া পাউরুটি-ঘুগনি, পাউরুটি-কলার বিক্রিও ছিল চোখে পড়ার মতো । নতুন জায়গায় এসবের কিছুই থাকবে না । সুতরাং চায়ের দোকান ধরে রাখলে আখেরে আমরা লোকসানের মুখে পড়বো । তখন সংসার চালানো সমস্যা ? আমাকে বিকল্প ভাবতে হবে । আমি আর হকারি ব্যবসায় ফিরতে চাই না । হকারি ব্যবসায় খেয়ে-দেয়ে বেঁচে থাকা যাবে, কিন্তু বাড়ি ঘর তৈরী করার চিন্তা নৈব-নৈব-চ । এরপর মেয়ে বড় হলে তাকে লেখা পড়া শেখানো সেখানেও খরচা ! সুতরাং বিকল্প উপায়ের রাস্তা আমাদের বাছতেই হবে । নতুবা বেঁচে থাকা কঠিন সমস্যা ?
ইমলি ইতাসকে অযথা টেনশন করতে নিষেধ করলো । ইতাসকে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়তে বললো । আরও বিশদে সকালবেলায় ভাবা যাবে ।
পরের দিন ভোরবেলায় গদাই ছুটতে ছুটতে ইমলিদের বাড়ি হাজির । দ্রুতপদে আসার জন্য গদাই প্রচন্ড হাঁপিয়ে গেছে । গদাই ইতাসকে উদ্দেশ্য করে বললো, “দাদা সর্বনাশ ! জেসিবি’র বুলডোজার সমেত বিশাল পুলিশ বাহিনী বাস স্ট্যান্ডে হাজির । একটু পরেই দোকানপাট ভাঙ্গার কাজ শুরু হবে । মাইকে ঘোষণা হচ্ছে দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য । কিছুক্ষণের মধ্যেই ধ্বংসলীলা শুরু । পুলিশ ছাড়াও প্রায় জনা পঞ্চাশ মিলিটারির আবির্ভাব । তাঁরা লাইন বেঁধে গোটা কুসুমগ্রাম টহল দিচ্ছেন । মন্তেশ্বর থানার পুলিশ ছাড়াও মেমারী, কালনা, কাটোয়া ও বর্দ্ধমান থানা থেকেও বিশাল পুলিশ বাহিনীর জমায়েত । পুলিশের কাছে নাকি খবর গেছে দোকান ঘর ভাঙ্গার দিন বিরাট ঝামেলা হবে । সেই কারণে মিলিটারির আবির্ভাব । তুমি শিগগির চলো । দোকানের মালপত্র সরিয়ে রাখতে হবে । নতুবা বুলডোজার দিয়ে সব গুঁড়িয়ে দেবে ।“
আর স্থির থাকতে না পেরে গদাইয়ের সঙ্গে একরকম ছুটতে শুরু করলো ইতাস । পৌঁছে দেখে বিশাল পুলিশ বাহিনী । চারিদিকে মিলিটারির আনাগোনা । পুলিশের মাইকিং, “দোকান ঘর সরিয়ে নিন । নতুবা সরকারি অভিযানে ভাঙ্গা পড়ে যাবে ।“ পরিস্থিতি দেখে ইতাস হতবাক । হতাশায় মর্মাহত । করুণ দৃষ্টিতে তার দোকানের দিকে তাকিয়ে । ভাবছে, দোকানটার কলেবর কেবলমাত্র বৃদ্ধি শুরু হয়েছিল । সেটা সূত্রপাতেই বিনাশ ! তার ভীষণ কষ্ট । দেশ ভাগের যন্ত্রণার ক্ষত এখনও শুকায়নি, তার পর পরেই এই নিদারূন কষ্টকর অভিজ্ঞতা । তবুও সাতপাঁচ না ভেবে দোকানের হাঁড়ি, কড়াই, কেটলি, গামলা, মাটির ভাঁড়, ইত্যাদি চা জ্বাল দেওয়ার ও ঘুগনি বানানোর সরঞ্জাম রাস্তার উপরে এনে রাখলো । বিস্কুটের বয়ম, চা পাতা, দোকানের অন্যান্য সমস্ত জিনিসপত্র রাস্তার উপর নামিয়ে রাখলো । এমন সময় দুই তিনজন পুলিশ সঙ্গে নিয়ে এক সাহেব ইতাসকে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি কি নতুন জায়গার অ্যালোটমেন্ট লেটার পেয়েছেন ?”
ইতাস উত্তরে জানালো, “আমি শুনেছি, নতুন জায়গায় আমার জন্য একটা দোকান ঘর অ্যালোটমেন্ট হয়েছে । কিন্তু জায়গা ও ঘরের কোনো কাগজপত্র কিছুই পাইনি । তাই অসহায়ের মতো রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার জন্য চোখে সরষে ফুল দেখছি ! আমাদের আর ভাতে মারবেন না স্যার, বরং জীবনে বাঁচান !
কি নাম ?
ইতাস !
অন্য একজন স্টাফকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ইতাসের নামের অ্যালোটমেন্ট চিঠি কোথায় ?“
স্যার, ইতাসের নামে কোনো চিঠি তৈরী হয়নি ।
কেন ? ইতাসের নাম বাদ পড়লো কেন ?
কেননা এলাকার বাসিন্দা হিসাবে তার কোনো নথিপত্র নেই ।
ইতাস সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো, “প্রমান পত্র হিসাবে আমি রেশন কার্ডের কপি জমা দিয়েছি । তাছাড়া এখানকার জনপ্রতিনিধির দেওয়া অরিজিনাল রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জমা নিয়েছিলেন । শুনেছি সেই মোতাবেক আমার নামে ঘর অ্যালোটমেন্ট হয়েছে ।“
স্যার, ইতাস বাবুর কোনো স্থায়ী বাড়ি নেই ।
“এটা কি বলছেন স্যার ? আমার ও আমার স্ত্রীর নামে জমি ও বাড়ি রয়েছে । তার দলিল চাইলে কপি দিতে পারি । এভাবে আমাদের ভিক্ষার পথে ঠেলে দেবেন না স্যার ! আমরা কাজ করে খাচ্ছিলাম এবং শরীর খাটিয়ে পরিশ্রম করে বাঁচতে চাই । আমার চালু চায়ের দকান ভেঙ্গে দিলেন । সকল ব্যবসায়ীরা জমি ও ঘর পেল, অথচ আমাকে বঞ্চিত করলেন । কি অপরাধে বঞ্চিত হলাম, সেটা এখনও অস্পষ্ট । জানি না আমার বাঁচার অধিকার নিয়ে আপনারা তামাসা করছেন কিনা ?” ইতাস নিজের হয়ে নিজেই সওয়াল করলো ।
ইতিমধ্যে বাজারের অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে । ইতাস কেন বাদ পড়লো সেটা জানতে সকলেই উদগ্রীব ! মানুষের মধ্যে গুঞ্জন, ওপার থেকে পালিয়ে আসার জন্য বেচারার এই হাল !
ইতাস উপলব্ধি করতে পারলো, “তার হয়ে সওয়াল করার কেউ নেই । বরং বাজার এলাকার উপস্থিত মানুষেরা ইতাসের চরম দুর্গতি দেখতে আগ্রহান্বিত ।“
পদাধিকারি ভদ্রলোক আশ্বাস দিয়ে বললেন, “আপনি অযথা ভেঙ্গে পড়বেন না । আপনি বরং বাড়ির দলিলের একটা জেরক্স কপি জমা দিন । আজই আমি আপনাকে অ্যালোটমেন্ট লেটার দিয়ে ফিরব ।“
কিছুক্ষণের মধ্যে ইতাস দলিলের কপি নিয়ে হাজির । পদাধিকারি সাহেবকে দলিলের জেরক্স কপি দিয়ে ইতাস বললো, “গরীবকে মারবেন না স্যার !”
আপনি নিজের কাজে মন দিন । বিকেলের মধ্যেই আপনি চিঠি পেয়ে যাবেন ।
ইতাস সমস্ত মালপত্র ভ্যান রিক্সায় তুলে বাড়িতে ফিরলো । ইমলি ব্যাঙ্কের কাজে ব্যস্ত । সুফলের মা আসানকে খাওয়াতে হিমসিম । স্নান খাওয়া দাওয়া শেষ করে পুনরায় বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে ইতাস দেখলো সমস্ত কিছু ওলট পালট । প্রচুর ভাঙ্গার কাজ চলছে । কুসুমগ্রামের মানুষের ঢল । ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের মালপত্র সরাতে নাজেহাল । এমন সময় গদাই ইতাসকে সাহেবদের কাছে নিয়ে গেল । সাহেব ভদ্রলোক ইতাসের পিঠে হাত দিয়ে বললেন, “আপনার রুম নম্বর ৬৯ । আপনার রুমের সামনে বড় রাস্তা এবং আপনার রুমের সামনে বাজারে ঢোকার রাস্তা । সুতরাং রুমটা আপনার ব্যবসার পক্ষে খুবই আকর্ষণীয় । সহজেই খরিদ্দারদের দৃষ্টি পাবেন । এবার নিশ্চয় খুশী ।“
স্যার, খুশী কেন ? বলতে পারেন আপনারা আমাকে মর্যাদা দিলেন । কিন্তু এতে আমার পেটে ভাত জুটবে না । যেখানকার ঘরের অ্যালোটমেন্ট লেটার দিলেন, সেখানে আমার চায়ের দোকান চলবে না । কারণ এখানকার মতো বাসের প্যাসেঞ্জার কোথায় ? বাজারের মানুষের ঢল কোথায় ? সবই আমাদের কপাল ! আমার সংসার কীভাবে চলবে, সেই চিন্তায় আমি অস্থির ?
“আমি সরকারি নিয়ম পালন করছি । অন্যদিকগুলি আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না । ভাল থাকুন । কাজে মন দিন । সাফল্য আসবেই ।“ তারপর সাহেব ভদ্রলোক একটু হেসে সেখান থেকে বিদায় নিলেন ।
কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো ইতাস । কি করবে দিশেহারা ।
হঠাৎ জয়তী মাসির আবির্ভাব ।
শুনলাম বাছা ! তোমার নাকি ঘরের অ্যালোটমেন্ট হয়নি ?
ঠিকই শুনেছো মাসি । সেটা নিয়ে এতক্ষণ বড় সাহেবের সাথে বাগবিতণ্ডা । আমার নাকি স্থায়ী বাড়ি নেই । একমাত্র সেই অজুহাতে সরকারি কর্তৃপক্ষ দোকান ঘরের অ্যালোটমেন্ট থেকে আমাকে বঞ্চিত করছিলেন । তারপর বাড়ির দলিলের জেরক্স কপি জমা দেওয়ার পর অ্যালোটমেন্ট চিঠিটা এইমাত্র হাতে পেলাম মাসি ।
তুমি লেখাপড়া জানা বোঝনদার মানুষ, তাই ঠিকমতো সওয়াল করতে পারলে । আমাদের মতো মুর্খদের এই ধরনের বিপদে কি হত কে জানে ? যাই হোক অবশেষে চিঠিটা পেয়েছো এটাই শান্তি ।
হ্যাঁ মাসি । চিঠি পেয়েছি ঠিক, কিন্তু এখন কি করবো সেই চিন্তায় চিন্তায় রাতের ঘুম উধাও !
তুমি আর বৌমা একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নাও । চায়ের দোকান খুলতে না চাইলে সম্মানজনক বিকল্প ব্যবসার কথা ভাবতে হবে । যে ব্যবসার প্রতি তোমার আস্থা বেশী, সেই ব্যবসার প্রতি ঝুঁকবে । নতুবা আখেরে পস্তাতে হবে ।
আমি নতুন ব্যবসার ব্যাপারে তোমার সাথে এক প্রস্থ কথা বলতে চাই মাসি । শত হলেও তুমি ব্যবসার জগতে অভিজ্ঞ । তা ছাড়া আমরা তোমাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করি । সম্ভব হলে আগামীকাল একটু সময় দেবে । আমি এবং তোমার বৌমা, দুজনে মিলে তোমার সঙ্গে আলোচনায় বসবো । আলোচনার মধ্যে দিয়ে নিশ্চয় সঠিক পথ বেরিয়ে আসবে ।
জয়তী মাসি মাথা নেড়ে তার সম্মতি জানিয়ে বললো, “আগামীকাল ভোরবেলা তোমাদের বাড়ি আমি পৌঁছে যাব । তখন চা খেতে খেতে আলোচনা করা যাবে । আজ আমি আসছি বাছা ।“
ইতিমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে গোলাপ রঙের শাড়ি পরে দীপালির আগমন । সোজা ইতাসের মুখের কাছে এসে বললো, “মুখটা বেজার করে রেখেছেন কেন ?”
আপনার মতো সুন্দরীর দর্শনে এবার আমার মুখে হাসি ফুটবে ।
আরে ! কি হয়েছে বলবেন তো ? আমি শুনলাম আপনাদের দোকান এখান থেকে অর্থাৎ বাস স্ট্যান্ড থেকে তুলে দিয়েছে, কথাটা কি সত্যি ?
ঠিক শুনেছেন ম্যাডাম ।
খবরটা শোনার পর থেকে আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য ছটফট করছি । বিবেকের তাড়নায় অসময়ে আপনার পাশে দাঁড়াবার জন্য আমার ছুটে আসা ।
দীপালি ম্যাডাম ! আপনি অহেতুক মাথা ঘামাচ্ছেন কেন ?
“এত বড় সমস্যার মধ্যে আপনি জর্জরিত, আপনার শুভানুধ্যায়ী মানুষ হিসাবে আমি তো মাথা ঘামাবোই । আমি কিছু টাকা আপনার জন্য এনেছি । আমার অনুরোধ, প্লিজ টাকাটা রাখুন । ভবিষ্যতে আপনার কাজে লাগবে ।“ বলেই তার ব্যাগ থেকে পাঁচ শত টাকার নোটের একটা বান্ডিল ইতাসের হাতের মধ্যে গুঁজে দিলো ।
ইতাস ভাবছে, টাকা গুঁজে দিলে কি হবে ? সে অন্যের সাহায্যের জন্য কখনই লালায়িত নয় । নিজের চেষ্টায় সাফল্যের মুখ দেখাটাই তার জীবনের আদর্শ । তা ছাড়া দীপালি তার ভাল বন্ধু । বন্ধুর কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নেওয়া কখনই কাম্য নয় ।
টাকাটা ফেরত দিয়ে ইতাস দীপালি ম্যাডামকে বললো, “দীপালি ম্যাডাম, আপনি বাড়ি ফিরে যান । যেভাবে দৌড়ঝাঁপ করে কুসুমগ্রামে এসে যথার্থ বন্ধুত্বের পরিচয় দিলেন তার জন্য আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ ।“
টাকাটা ফেরত দেওয়ায় দীপালি ম্যাডাম দৃশ্যতই হতাশ ! তার চোখ দুটি ছল ছল । নিজেকে সামলে নিয়ে দীপালি ম্যাডাম ইতাসকে বললো, “আপনার এই বান্দা আপনার হিতার্থে সবসময় প্রস্তুত ।“
তারপর দীপালি ম্যাডাম বাড়ি ফিরে গেল ।
 ( চলবে )