আনাড়ি মহিলার উচ্ছৃঙ্খলতা (ধারাবাহিক উপন্যাস, দ্বাদশ পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
504

জয়তী মাসির অভিমত, বাড়িতেই যে কোনো ব্যবসা খুলুক ইতাস । মাসি ভেবে দেখার জন্য ব্যবসার খোলার উপর দুটি প্রস্তাব দিলো । যেহেতু ইতাস দীর্ঘ দিন হকারি করেছে, সেই ক্ষেত্রে সে চানাচুর, বাদাম, ডালমুট ভাজার কারখানা খুলতে পারে । আর দ্বিতীয় প্রস্তাব যেহেতু কুসুমগ্রাম গাঁ-গঞ্জে ঘেরা এবং কুসুমগ্রামে কোনো আইসক্রিম ফ্যাক্টরি নেই, সুতরাং আইসক্রীম কারখানা সে খুলতে পারে ।
মাসির প্রস্তাব শুনে ইতাস নড়েচড়ে বসলো । ভবিষ্যতে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে মাসির দুটি প্রস্তাব মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ । অনেক দিন থেকেই ইতাসের মনের সুপ্ত বাসনা আইসক্রিম কারখানা খোলার । পুঁজির জন্য তার পিছিয়ে থাকা । চায়ের দোকান ভাল চালানোর জন্য অদ্যাবধি যা টাকা জমেছে তাতে নতুন আইসক্রিম মেশিন অনায়াসে কিনতে পারবে । কিন্তু আনুষঙ্গিক গ্যাস, আইসক্রিম তৈরীর ফ্রেম, হকারদের জন্য আইসক্রিম বাক্স (কাঠের), মেসিন বসানোর জায়গা, এই গুলি নিয়ে বড় সমস্যা । অন্যদিকে ইতাসের আবার আইসক্রিম ফ্যাক্টরি বা আইসক্রিম বানানোর মিশ্রণ সম্বন্ধে যথেষ্ট ধারণা রয়েছে । এটা শিখেছিল ছোটবেলায় তার বন্ধু নয়নদের বাড়ি থেকে । নয়নের বাবার বড় আইসক্রিম ফ্যাক্টরি । সেই ফ্যাক্টরির তারা দুজন নিয়মিত খরিদ্দার । তখনই সে বুঝেছে, আইসক্রিম একটি দুগ্ধজাত খাদ্য । উপযুক্ত উপাদানের পাস্তরিক মিশ্রণে আইসক্রিম জমাতে হয় । আইসক্রিম তৈরীর মূল উপাদান গুলোকে একত্রে মিশিয়ে মিশ্রণ বানাতে হয় । আইসক্রিমের মধ্যে দুগ্ধের উপাদান ছাড়াও জল, অন্যান্য সুস্বাদু বস্তু যেমন চকোলেট, ভ্যানিলা,বাদাম, ফলের রস, ইত্যাদি দিয়ে মিশ্রণ তৈরী হয় । অনেক সময় পাকা বেল দিয়েও আইসক্রিম তৈরী হয় । নয়নদের বাড়িতে যাতায়াতের কারণে ইতাস এই সব খবর জেনেছিল । সেই সময় নয়নদের বাড়ি যাতায়াতের সূত্রে ইতাস আইসক্রিম বানানোর রসায়নটা মোটামুটিভাবে শিখেছিল । যদিও এই মিশ্রণ শেখানোর ব্যাপারটা কোনো কারখানার মালিক কাউকে শেখাতে চান না । নয়নকে শেখানোর সময় ইতাস তার পাশে বসে থেকে ফর্মূলাটা শিখেছিল । সে তখন কস্মিনকালেও ভাবেনি, তাকে ভবিষ্যতে আইসক্রিম ফ্যাক্টরি খুলতে হবে । সে যদি জানত তাকে ভবিষ্যতে আইসক্রিম কারখানা খুলতে হবে, তাহলে আইসক্রিম বানানোর পদ্ধতি আরও ভাল করে শিখে নিতে পারত । এখন সেই স্মৃতি ইতিহাস । তবে তার স্মৃতিতে আইসক্রীম বানানোর ফর্মূলা এখনও পরিষ্কার ।
ইতাস জয়তী মাসির প্রস্তাব শুনে তার মতামত চাইলো, “আইসক্রিম কারখানা খুললে কেমন হয় ?”
খুব ভাল হয় । কুসুমগ্রামে কোনো আইসক্রিম ফ্যাক্টরি নেই । কুসুমগ্রামের আশেপাশে যতদূর চোখ যায় শুধু গ্রাম আর গ্রাম । সুতরাং এখানে আইসক্রিম কারখানা খুললে খুব ভাল চলবে । মন্তেশ্বরে একটা কারখানা আছে বটে, আসল মালিক মারা যাওয়ার পর কারখানাটা ধুকধুক করে টিকে আছে । শুনছি কারখানার মেশিনপত্র বিক্রি করে দেবে । মালিকের ছেলের আইসক্রিম কারখানার প্রতি আকর্ষণ নেই । এবার ইতাসের দিকে তাকিয়ে জয়তী মাসি আবার বললো, “তুমি চাইলে আমি তোমাকে নিয়ে সেই মেশিন দেখাতে পারি । তোমার কাজে লাগবে কিনা মেশিন দেখলেই বুঝতে পারবে । মেশিনের স্থিতি ভাল থাকলে আপাতত ঐ মেশিন দিয়ে তুমি তোমার আইসক্রিম তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পার । পরবর্তীতে পয়সার মুখ দেখলে নতুন আর একটা মেশিন কিনে নেবে । তুমি নিশ্চয় আইসক্রিম তৈরীর মেশিন সম্বন্ধে অবগত । যদি তুমি মনে কর নিজের উপর আস্থা কম, তাহলে আমি একজন আইসক্রিম মেশিন সারানোর অভিজ্ঞ মেকানিককে তোমার সাথে পাঠাতে পারি । দুইজনে মিলে ভালভাবে মেশিনটার হালহকিকৎ বুঝে নিতে পারবে এবং কিনতে পরবে । এতে ঠকার ভয় থাকবে না । মেকানিককে একদিনের মজুরি দিলেই সে সন্তুষ্ট ।
“জয়তী মাসি ইতাসদের জীবনের মুশকিল আসান” এই কথাটা বারংবার ইমলি উচ্চারণ করে । যে কোনো সমস্যার সমাধানে ইমলিরা জয়তী মাসিকে ডাকে ।
মাসির পরামর্শ মতো মন্তেশ্বরে আইসক্রিম মেশিন দেখতে যাওয়ার মনস্থির করলো ইতাস । সঙ্গে মিস্ত্রিকে নিয়ে যাবে । পুরানো মেশিন কাজে লাগলে সে অল্প পুঁজিতে তার ব্যবসা শুরু করতে পারবে । সেই ক্ষেত্রে জমানো টাকাতেই মেশিন ইন্সটলেশন সম্ভব । শুধুমাত্র দরকার একখানা ইটের দালান ঘর । তাদের বাড়িতে যতটুকু জায়গা, তাতে আইসক্রিম মেশিন চালানোর পক্ষে আদর্শ ।
জয়তী মাসি ইতাস ও মিস্ত্রিকে নিয়ে মন্তেশ্বরের আইসক্রিমের কারখানায় সরাসরি হাজির । যেহেতু আগে জানিয়ে জয়তী মাসির আগমন, তাই ধরণী কয়াল বাড়িতেই ছিলেন । ধরণী কয়াল আইসক্রিম কারখানার বর্তমান মালিক । ইতাস কয়ালবাবুকে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি আপনাদের বহুদিনের পারিবারিক ব্যবসা হঠাৎ বন্ধ করে দিচ্ছেন কেন ?”
“কি করব । আমার নিজের কাপড়ের ব্যবসা । মন্তেশ্বরের বাজারে গোডাউন সমেত কাপড়ের বড় শোরুম । সেটা চালাতেই আমার হিমসিম । তার উপর আইসক্রিম কারখানা চালানো সম্ভব হচ্ছে না । ভাল কর্মচারী পাওয়া দুষ্কর । আইসক্রিম বিক্রির পুরানো হকারেরা বিভিন্ন জায়গায় নতুন ধরনের সস্তায় আইসক্রিম পাওয়ায় আমাদের কারখানা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় আমাদের কারখানার অবস্থা সঙ্গীন । এই বছরে কারখানা চালানোর জন্য কোনো ভাল কর্মচারী পাওয়া যায়নি । যার জন্য মেশিন বেচে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।“ কয়ালবাবু দোকান বিক্রির প্রেক্ষাপট শোনালেন ।
ইতাস যতটা বুঝতে পারলো মেশিন পুরানো হলেও এখনও কাজ চলার পক্ষে যথেষ্ট মজবুত । সঙ্গে যে মেকানিক গেছে, তারও অভিমত মেশিনটা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য ও টেকসই । তারপর ইতাস ঘুরে ঘুরে দেখলো, হকারদের জন্য আইসক্রিমের বাক্স অনেকগুলি অক্ষত অবস্থায় ঘরে মজুত । টুকটাক সারালেই বাক্সগুলি কাজে লাগানো যাবে । মেশিন চালু অবস্থায় ঠান্ডা জলের ভিতর রেখে বাঁশের ‘কাঠি লাগানো আইসক্রিম’ তৈরীর ফ্রেমগুলিও অক্ষত । কোনোটাই নষ্ট হয়নি । সবগুলি ফ্রেম দামী টিনের । পুনরায় বাঁশের ‘কাঠি লাগানো আইসক্রিম’ বানাতে কাজে লাগবে । মোটামুটি কয়ালবাবুর কারখানায় বাঁশের কাঠি লাগানো আইসক্রিম তৈরীর নানান সরঞ্জাম এখনও আগের মতোই ঠিকঠাক । তাতে কারখানা খোলার পক্ষে যথেষ্ট । গ্রাম বাংলার গ্রামাঞ্চলে বাঁশের ‘কাঠি লাগানো আইসক্রিমের’ কদর খুবই ইতিবাচক । সুতরাং প্রথমাবস্থায় ‘কাঠি লাগানো আইসক্রিম’ দিয়েই যাত্রা শুরু করতে চায় ইতাস ।
মেশিন সমেত আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের দাম জানতে চাইলো জয়তী মাসি ।
ধরণী কয়াল আমতা আমতা করতে থাকলেন । কি দাম চাওয়া যায় ভেবে স্থির করতে পারছেন না । তিনি দাম বলতে গিয়ে রীতিমতো ঘামছেন ।
জয়তী মাসি কয়ালবাবুর নার্ভাস অবস্থা অবলোকন করে বললো, “দাদা, আমাদের ইতাসের ঘর বাড়ি কিচ্ছু নেই । বাড়ির জায়গাটুকুই সম্বল । তা ছাড়া বাস স্ট্যান্ডের উপর চালু চায়ের দোকান-ঘর ভাঙ্গবার জন্য ইতাসের এখন পথে বসার জোগাড় । আপনার পুরানো মেশিন থেকে উপার্জন নেই বললেই চলে । সুতরাং বিক্রি করে দেওয়াই বাঞ্ছনীয় । ছেলেটা অনেক আশা নিয়ে এসেছে । আপনি একটু মুখ তুলে চাইলে ইতাস মেশিনটা কিনতে পারবে । বুঝতেই পারছেন ছেলেটার সামর্থ ও সাধ্যের বড্ড অভাব । আপনি ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে একটা দাম বলুন যাতে ইতাস মেশিনটা কিনতে পারে ।
ধরণী কয়াল তখন জয়তী মাসিকে বললেন, “আগে আমি ইতাসবাবুর মেশিন বসানোর জায়গাটা দেখে আসি । স্পটে গেলে আমি বুঝতে পারবো তার বাড়ির জায়গাটা মেশিন ইন্সটলেশনের পক্ষে উপযুক্ত কিনা ? মেশিন কিনে চালাতে না পারলে আখেরে ইতাসবাবুর লোকসান । সেটা আমি কখনও চাই না ।
সঙ্গে সঙ্গে জয়তী মাসি বললো, “এটা উত্তম প্রস্তাব । আগামীকাল কুসুমগ্রামে চলুন । ব্যবসার জায়গাটা নিজের চোখে দেখলে ভবিষ্যতে ব্যবসা চালানো সম্বন্ধে আপনার একটা স্বচ্ছ ধারণা জন্মাবে । শত হলেও আপনারা ব্যবসায়ী মানুষ !”
আগামীকাল যাওয়া হবে না । সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার আমাদের দোকান বন্ধ থাকে । আমি সেইদিন কুসুমগ্রামে যাচ্ছি । বাস স্ট্যান্ডে থাকবেন, নতুবা আমি চিনতে পারব না ।
“কখন যাবেন কয়ালবাবু ?” জিজ্ঞাসা করলো ইতাস ।
বিকেল তিনটে নাগাদ ।
ঠিক আছে কয়ালবাবু । আমি বাস স্ট্যান্ডে থাকব ।
তারপর সকলের বাড়ি ফেরা । জয়তী মাসি ও মেকানিক, দুজনে সেখান থেকে সোজা তাদের নিজের নিজের বাড়ি, আর ইতাস ফিরলো কুসুমগ্রামে ।
ইমলি অফিসে খোঁজ নিয়ে জেনেছে সে বাড়ি করার জন্য লোন পাবে । তবে পরিমাণে কম । যেহেতু সে পার্ট টাইম সুইপার, সেই কারণে বেতনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ির লোনের পরিমাণ নির্ধারিত হবে । হিসাব কষে আনুমানিক যেটা জানা গেছে তাতে তাদের একখানা ঘর সমেত বাথরুম ও মেশিনের জন্য নির্মাণ সম্ভব । ভবিষ্যতে যতদিন তাদের আর একটা ঘর না উঠছে, ততদিন তাদের কষ্ট করে একটা ঘরেই বসবাস করতে হবে । লোনের খবরটা পেয়ে ইতাস কিছুটা আত্মবিশ্বাসী , তার দ্বারা আইসক্রিম কারখানা খোলা সম্ভব ।
বৃহস্পতিবার ধরণী কয়াল যথা সময়ে কুসুমগ্রামে উপস্থিত । বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় ছিল ইতাস । কয়ালবাবুকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছালো ইতাস । অফিসের অনুমতি নিয়ে ইমলি আগেই বাড়িতে পৌঁছে অপেক্ষায় ছিল । ইতাসদের হা-ভাতে ঘর বাড়ি দেখে তিনি দৃশ্যতই অবাক ! তিনি মনে মনে ভাবছেন, “জয়তী মাসির কথাই ঠিক । ইতাসবাবুরা খুব গরীব ।“
ইতাসের দিকে তাকিয়ে কয়ালবাবুর জিজ্ঞাসা, “আপনাদের পরিবারের এই অবস্থা কেন ? তবে কি আপনারা ওপার বাংলা থেকে আগত ?”
হঠাৎ দাদা, এই ধরনের প্রশ্ন কেন ?
প্রশ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক । আমাদের দেশের মানুষ হলে ভিটে মাটি ছেড়ে কেউ এইভাবে নির্বাসনে থাকতেন না । অন্তত ভাড়া বাড়িতে জীবন যাপন করতেন । এই ধরনের জীবন যাপনের অনেক উদাহরণ আছে । যেমন ছেলে-মেয়ে বাড়ির অমতে বিয়ে করে পালিয়ে এসে সংসার বেঁধেছে । তা ছাড়া হিন্দুর মেয়ে আর মুসলমানের ছেলে, বিয়ে করার জন্য সমাজ থেকে লাঠি ঝাঁটা খেয়ে অন্যত্র ঘর বেঁধেছে । কিন্তু তারা আপনাদের মতো ভাঙাচোরা ঘরে বাস করেননি । সেই জন্যই আমার মনে সন্দেহ, আপনারা ওপার থেকে বিতাড়িত হয়ে এপারে আশ্রয় নিয়েছেন । জানি না আমার অনুমান ঠিক কিনা ?
আপনি ঠিক ধরেছেন কয়ালবাবু । সেই জন্যেই আপনার কাছে আমাদের অনুনয় বিনয়, “মেশিনটার অল্প কিছু দাম নিয়ে আমাদের বাঁচার সুযোগ করে দিন । তাহলে আমরা আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব ।“
চিন্তা করবেন না ইতাসবাবু । মেশিন আপনি পাবেন । কিন্তু আপনি জানেন, আমার মেশিন খুব পুরানো । সেটা ঠিকঠাক করতে বেশ কিছু খরচা আছে । তার উপর ইন্সটলেশনের জন্য খরচা ! পাকা দালান না উঠালে মেশিন বসাবেন কোথায়, তার দুশ্চিন্তা ? তারপর চাই জলের চৌবাচ্চা । আইসক্রিম তৈরী করার মেশিন বসানোর আগে ইলেক্ট্রিক অফিস থেকে চাই ইলেক্ট্রিক কানেকশন । মেশিন চালু করতে মনস্থির করলে বৈদ্যুতিন সংযোগ আগে দরকার । সুতরাং আপনি চাইলেও এখন মেশিন বসাতে পারবেন না । আপনি ঘরদোর ঠিক করুন । আমি আপনার সঙ্গে আছি । প্রয়োজনে মেশিনের টাকা পরেও মেটাতে পারবেন । ঘর তোলা হয়ে গেলেই আপনি আমার কাছ থেকে আইসক্রিম মেশিন নিয়ে আসবেন, তাতে আপনার পকেটে টাকা থাক বা না-থাক !
আদাজল খেয়ে ইতাস ইটের ঘর তোলার কাজে নেমে পড়লো । জমানো টাকা দিয়েই একখানা ঘর নির্মাণের তার মরিয়া প্রয়াস । অন্যদিকে ইমলিও খুব চেষ্টা করছে, লোনটা পাওয়ার জন্য । রিতমবাবুর লোন গ্র্যান্টের ব্যাপারে যথেষ্ট প্রয়াস । যদিও লোনটা গ্র্যান্ট হবে হেড অফিস থেকে । সেই জন্য কয়েকটা দিন সময় নিচ্ছে ।
মাঝখানে ইতাস ধরণী কয়ালের বাড়িতে গিয়ে হকারদের জন্য কাঠি আইসক্রিমের বাক্সগুলি এবং আইসক্রিম বানানোর টিনের ফ্রেম নিয়ে এসেছে । কাঠের ছুতোর মিস্ত্রি বাক্সগুলি মেরামতের জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে । অন্যদিকে ঠান্ডা জলে আইসক্রিম জমার জন্য ফ্রেম সারাইয়ের কাজও সমানে চলছে । কারখানা খোলার অভিপ্রায়ে ইতাসের রাতদিন খাটাখাটুনি । ইতিমধ্যে দু-বার কয়ালবাবুর বাড়ি গিয়ে আইসক্রিম বানানোর ফর্মূলা জানার চেষ্টা করে এসেছে ইতাস । কয়ালবাবু যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন ইতাসকে, কিন্তু ফর্মূলা বোঝানোর ব্যাপারে কিছুটা রয়েসয়ে এগোচ্ছেন । সেখানে বলা চলে তিনি কৃপণ ।
আইসক্রিম মেশিন চালাতে প্রয়োজনীয় গ্যাসের ব্যবস্থা পাকা । বাঁশের কাঠির আইসক্রিম তৈরীর জন্য স্বাস্থ্যকর জলের জারের বন্দোবস্ত ইতিমধ্যে শেষ । বাঁশের কাঠি কোথায় পাওয়া যায় সে খবর ইতাস জোগাড় করেছে । সুতরাং আইসক্রিম মেশিন চালু করার সমস্ত দিক খুঁটিনাটিভাবে আটঘাট বেঁধে এগোচ্ছে ইতাস ।
ঘরের ছাদ ঢালাইয়ের সময় টাকার সমস্যায় পড়লো ইতাস । তখনও ইমলির লোন গ্র্যান্ট হয়নি । মহা ফাঁপড়ে পড়ে ইতাসের হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা । ঘরের ছাদ ঢালাই না হলে মেশিন বসাতে পারবে না । তার ব্যতিব্যস্ততা মেশিন চালু করা নিয়ে । অথচ মেশিন চালু করতে পদে পদে বাঁধা । ইতাস ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছে না, সে এখন কি করবে ? অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই ।
হঠাৎ ইমলি খবর পেলো, তার ফুল টাইম সুইপারের পদোন্নতির সুযোগ দোরগোড়ায় । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাকে নিকটবর্তী অন্য শাখায় বদলী করার প্রক্রিয়া জোরকদমে চলছে । এটা শুনেই ইমলির থরহরিকম্প অবস্থা । বদলী হলে আরও একটা ঝামেলা । অথচ তাদের কুসুমগ্রাম শাখায় ভ্যাকান্সি রয়েছে ।
তার বদলী হওয়ার কারণ রিতমবাবু সরেজমিনে জেনেছেন, মেমারী শাখার সুইপার আপ্রাণ চেষ্টা করছে কুসুমগ্রামে বদলী হতে । যার জন্য ইমলির বদলীর জন্য চাপ । যেহেতু ইমলি ব্যাঙ্কের নতুন কর্মী, তাই তাকে সরাবার প্রক্রিয়া তুঙ্গে । অগত্যা মুশকিল আসান ননীদা, তাই ট্রান্সফার রুখতে ইমলি ধরলো ননীদাকে । ইমলি ননীদাকে বললো, “তার বাচ্চা অনেক ছোটো । তাকে এই মুহূর্তে অন্যত্র বদলী করলে তার পক্ষে বাচ্চা সামলানো বিষম বিপদ !”
ছুটি নিয়ে ননীদা ছুটলো হেড অফিসে । সোজা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে হাত জোড় করে ননীদা বললেন, “ইমলি ম্যাডামকে অন্যত্র বদলী করবেন না প্লিজ । কেননা তার মেয়ে অনেক ছোটো । বাচ্চা হওয়ার সময় সে দীর্ঘদিন ম্যাটারনিটি লিভে ছিল । ব্যাঙ্কের খাতায় তার নোটিং রয়েছে । এমতাবস্থায় তাকে বদলী করলে তার পক্ষে বাচ্চা সামলানো কঠিন হবে স্যার । তা ছাড়া তাদের অভাবের সংসার । তার স্বামীর স্থায়ী উপায়ের বন্দোবস্ত নেই । সংসার চালানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় তার নিরলস প্রচুর পরিশ্রম । কোনোরকমে তাদের দিনাতিপাত । এমতাবস্থায় আমাদের বিনীত অনুরোধ, ইমলি ম্যাডামকে অন্যত্র বদলী করবেন না স্যার ।“
ননীদার অনুরোধে কাজ হল । সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইমলিকে বদলী করা থেকে বিরত রইলেন ।
তবে যেহেতু ইমলির পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে, সেই কারণে তার পদোন্নতির পরে গ্র্যান্ট হবে । যদিও ইমলিদের তালিকার সমস্ত পার্ট টাইম সুপারের ফুল টাইম হওয়ার প্রক্রিয়ার সময়টা একটু বেশী নেবে । ফলে ইতাসের গালে হাত দিয়ে দুশ্চিন্তা করা ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই ।
বিকেলে বেলায় মালডাঙাগামী বাসে উঠে পড়লো ইতাস ।
মনটা খুব বিষন্ন । “টাকার অভাবে তার আইসক্রিম কারখানা খোলার স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে” এই কথাটা ভাবতেই তার গা শিউরে উঠছে । তবে কি তার দ্বারা কারখানা খোলা সম্ভব হবে না । হাল ছাড়তে নারাজ ইতাস । তাই গুটি গুটি পায়ে মালডাঙার দীপালির বাড়ি উপস্থিত । অসময়ে টাকা জোগাড়ের মুশকিল আসান একমাত্র দীপালি । ইতিপূর্বে বহুবার দীপালি ইতাসকে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল । কিন্তু ইতাস খুব সন্তর্পণে দীপালির সেই সহযোগিতার হাত প্রত্যাখান করেছিল । ইতাস সব সময় বন্ধুত্বের সম্পর্ক মজবুত চায় । সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে কোনো সুবিধা নেওয়াটা ইতাস মনে করে “একটা গর্হিত কাজ” ।
আজ সে নিরুপায় । ইতাস চাইছে, শর্তভিত্তিক কিছু আর্থিক সহযোগিতা । দীপালির কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিলে যদি তার কারখানা চালু করা যায় তাহলে কারখানার আয় থেকে দীপালির ঋন শোধ করা সহজ হবে । এতে অন্যায় কিছু নেই । বাজারে খোঁজ নিয়ে জেনেছে ইতাস, সুদখোর মহাজনেরা টাকা ধার দেয় বটে বিনিময়ে প্রচুর টাকা সুদ হিসাবে দাবি করে । ব্যাঙ্ক থেকে লোন তোলার কথা ইতাস কখনও ভাবে না । গিন্নি যেহেতু ব্যাঙ্কের স্থায়ী কর্মচারী, সুতরাং ব্যাঙ্ক থেকে লোন, নৈবচ ।
“আরে ইতাসবাবু ! আপনি স্বয়ং গরীবের বাড়ি ? আমি স্বপ্নেও ভাবিনি, গরীবের বাড়িতে আপনার পদধুলি পড়বে ।“ ইতাসকে দেখে উচ্ছ্বসিত দীপালি ।
গরীবের বাড়ি নয়, বলুন বড় হৃদয়ের মানুষের বাড়িতে আমি আসতে পারায় আমি নিজে ধন্য ।
হেয়ালী ছাড়ুন । এবার বলুন, কি খাবেন ?
মুড়ি ও চা ।
মুড়ি ও চায়ের কথা শুনে দীপালির খুব হাসি । তারপর বললো, “ঠিক আছে । আমি মুড়ি ও চা নিয়ে আসছি ।“
চায়ে চুমুক দিয়ে ইতাস করুন চোখে দীপালির দিকে তাকালো !
দীপালি ইতাসের তাকানো দেখে কৌতুহলি দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনার চোখ মুখ বলছে, আপনি নির্ঘাত কোনো সমস্যায় ভূগছেন ?”
হ্যাঁ ম্যাডাম ।
“কতোবার বলেছি “ম্যাডাম” নয়, শুধুমাত্র দীপালি । অথচ বলে বলে আপনাকে ঠিক করতে পারলাম না । শুনুন, এরপর আপনি ম্যাডাম বললে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলবো না ।“ খুব গম্ভীরভাবে কথাটা বললো দীপালি ।
ঠিক আছে । আর কথা শোনাতে হবে না ।
এবার ঝেড়ে কেঁসে বলুন তো, “কি সমস্যায় ভূগছেন । আমার মন বলছে, আপনি খুব মানসিক কষ্টে আছেন ?”
মানসিক কষ্ট ঠিক নয় । আমি জোর করে আইসক্রিম কারখানা খোলার মনস্থ করেছি । কিন্তু আইসক্রিমের মেশিন বসাতে গিয়ে এই মুহূর্তে আমার আর্থিক অবস্থা তথৈ-ব-চ । সেই জন্য আপনার স্মরণাপন্ন হয়েছি ।
এটা কোনো সমস্যা ! আমি ভয় পাচ্ছিলাম, অন্য কোনো বড় পারিবারিক সমস্যা কিনা ? আপনার প্রিয় বান্ধবী থাকতে, টাকা নিয়ে কখনই ভাববেন না । এখন বলুন, “আপনার কত টাকা দরকার ? ঘরে যেটুকু আছে, তাতে না হলে আগামীকাল আরও একবার আসতে হবে । ব্যাঙ্ক থেকে তুলে দিতে হবে ।“
আমার অল্প কিছু অর্থাৎ বিশ হাজার টাকা দিলেই আপাতত মেশিন চালু করে দিতে পারব । তবে একটা কথা …?
আবার কি কথা ?
টাকাটা ফেরত দিতে দেরী হতে পারে ।
আপনার কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার প্রশ্ন আসছে না । বন্ধুর অসময়ে পাশে দাঁড়াতে পারছি এটাই আমার কাছে বড় সান্ত্বনা । টাকা ঘরেই আছে, এখনি দিয়ে দিচ্ছি ।
তারপর ঘর থেকে পাঁচ শত টাকার পঞ্চাশটি নোট ইতাসের হাতে দিয়ে দীপালি বললো, “এতে পচিশ হাজার টাকা রয়েছে । আরও লাগলে আমাকে বলতে এতটুকু দ্বিধা করবেন না ।“
আবার পচিশ কেন ?
আমার ধারণা, এই মুহূর্তে আপনার অনেক টাকার দরকার । যেটা দিয়েছি, নির্দ্বিধায় নিয়ে যান । আগামিদিনে প্রয়োজনে টাকা চাইতে এতটুকু ইতস্তত করবেন না । জানবেন, আপনার পাশে আমি সর্বদা আছি ।
তারপর ছাদ ঢালাই হয়ে গেল ।
চটজলদি ছাদ ঢালাই হওয়ার জন্য ইমলির সন্দেহ ! তাই ইমলি ইতাসের কাছে খোঁজ নিলো, “তুমি এতগুলি টাকার সংস্থান কীভাবে করলে ?”
বালি-সিমেন্টের দোকান থেকে ধারে মাল তোলা । ছাদের কাজ সম্পূর্ণ । সুতরাং ছাদের জল সরানোর পরেই আমি আইসক্রিম মেশিন বসিয়ে কারখানা চালু করে দেব । একবার কারখানা থেকে আইসক্রিমের বাক্স বাইরে বের হলে মেশিন যেমন রমরমিয়ে চলবে তেমনি বাঁশের ‘কাঠি লাগানো আইসক্রিম’ বিক্রি করে উপার্জনের মুখ দেখা যাবে ।
একথা শোনার পর ইমলি আর অহেতুক কোয়ারি করেনি ।
আদাজল খেয়ে লেগে পড়লো ইতাস । কয়ালবাবু নিজে এসে মেশিন বসিয়ে দিয়ে গেলেন । মেশিন বাবদ একটি টাকাও নিলেন না । বরং তিনি ইতাসকে অভয় দিয়ে বললেন, “মেশিন চালু হওয়ার পর বিক্রিবাট্টার দিকে নজর দিতে হবে । সুতরাং বিক্রি বাড়লে, তখন টাকা পেমেন্টের প্রশ্ন ?”
কয়ালবাবু ইতাসকে আইসক্রিম বানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিলেন । তবে মিক্সিংয়ের সূত্র খুলে বললেন না । প্রথমদিন কয়ালবাবু সারাদিন ইতাসের সঙ্গে থেকে মেশিন চালানোর খুঁটিনাটি শিখিয়ে দিলেন । বিশেষ করে জল কীভাবে ঠান্ডা হবে, আইসক্রিমের ফর্মা বসানোর পর কতক্ষণ ঠান্ডা জলে অপেক্ষায় থাকবে, ঠিক কোন্‌ মুহূর্তে বাঁশের কাঠি লাগাতে হবে, আইসক্রিম জমে গেলে নামিয়ে কীভাবে ফ্রিজে রাখতে হবে, সমস্ত কিছু শিখিয়ে দিলেন । প্রথম দিন প্রথম দিকে ফর্মায় ঠিক মতো আইসক্রিম জমলো না । হতাশ হয়ে পড়লেন কয়ালবাবু ।
তারপরের দিন ধরণী কয়াল পুনরায় এলেন । তিনি তাঁদের অনেকদিনের পরিচিত ও বিশ্বস্থ আইসক্রিম কলের মিস্ত্রিকে সঙ্গে নিয়ে এলেন । খোঁজার পর দেখা গেল গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে সমস্যা । সেটা ঠিক করতে প্রায় সারাদিন । দুদিন আগে ইলেক্ট্রিক মিটার বসিয়ে দিয়ে গেছে । মিস্ত্রি বললেন, ইলেক্ট্রিক অফিসে একবার খবর দিতে হবে । পাওয়ারটা আরও বেশী লোড করা প্রয়োজন । ইতাস ইলেক্ট্রিক অফিসে দরখাস্ত জমা দিলো । সেই মতো ইলেক্ট্রিক অফিসের বাবুরা এসে মিটার ঠিক করে দিয়ে গেলেন । আইসক্রিম কলের মিস্ত্রি পুনরায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে কয়ালবাবুকে বললেন, “মেশিন স্টার্ট দিতে । ঠিক এক ঘন্টার মাথায় ফর্মার বরফ জমলো । তারপর কয়ালবাবু কি খুশী ! ইতাস চোখ বড় বড় দেখছে তাদের আইসক্রিম কারখানায় প্রথম সাদা রঙের আইসক্রিমের উৎপাদন ।“
পরেরদিন বাঁশের কাঠি লাগানো সাদা, হলুদ, কমলা রঙের আইসক্রিম প্রথম তৈরী হল । ইমলি ও ইতাস খুব খুশী । অন্যদিকে আইসক্রিম নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে “আসান”এর ভীষণ দৌড়াদৌড়ি । নিজের কারখানায় প্রথম আইসক্রিম উৎপাদন হওয়ায় ইতাস ও ইমলি কালী মাতার মন্দিরে গিয়ে পূজো দিয়ে ফিরলো । শুরু হল তাদের আইসক্রিম ফ্যাক্টরির পথ চলা ।
পরেরদিন পাঁচ জন হকার পাঁচ বাক্স কাঠি লাগানো আইসক্রিম নিয়ে বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়লো । মেয়ের নামে ইতাসদের কারখানার নামকরণ হল “আসান আইস ফ্যাক্টরি” । প্রতিটা বাক্সের গায়ে কারখানার নাম বড় বড় করে লেখা । আইসক্রিমের বাক্সে নাম দেখে কুসুমগ্রাম বাজারের মানুষের মধ্যে গুঞ্জন । আইসক্রিম কারখানা খুললো কে ? মহাজনের নাম কি ?
আইসক্রিম যারাই খাচ্ছেন তারাই আইসক্রিমের কোয়ালিটির তারিফ করছেন । অল্প কিছুদিনের মধ্যে “আসান আইস ফ্যাক্টরি”র সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো । দুই মাসের মধ্যে হকারের সংখ্যা আঠারোজন । রাত দিন ইতাসের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি । সেই সঙ্গে ইমলির পরিশ্রম আরও বাড়লো । কাঠি লাগানো আইসক্রিম ছাড়াও দুধ দিয়ে তৈরী করলো পেপসি আইসক্রিম । ইতাসের সততা ষোলোআনা । দোকান থেকে আইসক্রিম বানানোর সমস্ত উপাদান ইতাস নিজে কিনে তবেই মিশ্রন করে । যার জন্য তার আইসক্রিমের গুণগত মান সন্তোষজনক । পেপসি আইসক্রিম অচিরেই জনপ্রিয়তা পেল । ইমলির সারাদিন ব্যাঙ্কের কাজকর্ম সেরে রাত্রিতে পেপসি আইসক্রিম তৈরীতে তার মনোনিবেশ ও খাটাখাটুনি । পেপসি আইসক্রিম তৈরীর জন্য পাইপ মেশিন রয়েছে । মেশিনের সাহায্যে প্যাকেটিংয়ের কাজ মূলত সবটাই ইমলি করে । তারপর সেগুলো ফ্রিজিংয়ে যায় । পরের দিন হকারেরা সেগুলো বিক্রির জন্য বাজারে, গাঁয়ে গঞ্জে ঘোরাঘুরি করে । উন্নত মানের কোয়ালিটির জন্য নিমেষেই “আসান আইস ফ্যাক্টরি”র আইসক্রিম মানুষের মন জয় করে নিলো ।
 ( চলবে )