আব্দুল হাই, বাঁকুড়াঃ – লক্ষী সেহগল আপোষহীন এক সংগ্রামী জীবন।আপামর নারী সমাজের নিকট এক অনুপ্রেরণার নাম ক্যাপ্টেন লক্ষী সেহগল।
প্রথম জীবনে ছিলেন একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে সিঙ্গাপুরে অবস্থানকালে লোভনীয় কর্মজীবন পরিত্যাগ করে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ‘আজাদ হিন্দ ফৌজের’ ‘ঝাঁসির রানী রেজিমেন্টে’ একজন স্বাধীনতার সেনানী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। নেতাজী ১৯৪৩ সালের ২রা জুলাই সিঙ্গাপুরে গমন করেন।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহনের জন্যে
তিনি নারী রেজিমেন্ট গঠন করেন। যা পরবর্তীতে ‘ঝাঁসির রানী রেজিমেন্টে’ নামে পরিচিতি লাভ করে। নেতাজীর উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে লক্ষী সেহগল এই মহিলা রেজিমেন্টে যোগদান করেন।
এই ‘ঝাঁসির রানী রেজিমেন্টে’র দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। এশিয়া মহাদেশে এই ধরণের নারী রেজিমেন্ট ছিল সর্বপ্রথম ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। লক্ষী সেহগল ‘আজাদ হিন্দ ফৌজের’ নারী সংগঠন বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন।তখন তিনি ক্যাপ্টেন উপাধি লাভ করেন।
১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বার্মার কারাগারে তিনি বন্দী ছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁতে সে সময়ে এসেছিলেন ও উদ্বাস্তু শিবিরে বাংলাদেশী স্মরণার্থীদেরকে চিকিৎসা প্রদাণের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাঃ)’র সদস্যপদ গ্রহণ করেন। রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন।
নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর কর্মসংস্থান, নারীর সমানাধিকার,নারীর প্রতি সামাজিক বৈষম্য দূর করা, জাতীয় সংহতি প্রভৃতি ১৮দফা প্রস্তাবকে সামনে রেখে ১৯৮১ সালে মাদ্রাজে ১০-১২ই মার্চ সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির (AIDWA) প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।তিনি ছিলেন সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা নেত্রী। প্রথম সম্মেলন থেকে কমঃ লক্ষী সেহগল সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত হন। আমৃত্যু বামপন্থার আদর্শে তিনি অবিচল ছিলেন।
১৯৯৮ সালে ভারতসরকার তাঁকে ‘পদ্মভুষণ’ প্রদান করেন।৯২ বছর বয়স পর্যন্ত কানপুরে নিজের চেম্বারে তিনি চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে গেছেন।২০১২ সালের ২৩ শে জুলাই ৯৭ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে তাঁর দেহ কানপুর মেডিকেল কলেজে দান করা হয় তাঁর ইচ্ছায়।আজ ভারতীয় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির উদ্যোগে বাঁকুড়ায় ক্যাপ্টেন লক্ষী সেহগল এর প্রয়াণ দিবস উদযাপন করা হয়। প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ডি ওয়াই এফ আই এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখোপাধ্যায়, সুদীপা ব্যানার্জি, মুক্তি মুখার্জি সহ অন্যান্য নেতৃত্ব ।