আনাড়ি মহিলার উচ্ছৃঙ্খলতা (ধারাবাহিক উপন্যাস, ষষ্ঠদশ পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
536

তারপর নবারুন সৈকতের হাত তাকে ধরে ডাঙ্গায় তুললো । ভিজে গেছে বেচারা । নবারুনের ডিঙি নৌকা পাশেই বাঁধা । নবারুন নিজের গামছা এগিয়ে দিয়ে বললো, “স্যার, আপনি ভেজা কাপড় ছেড়ে গা মুছুন । নতুবা জলে ভেজার জন্য ঠান্ডা লেগে যাবে ।“ ইতিমধ্যে আসানের পরামর্শ মতো নবারুন দাঁইহাট বাজারে ছুটলো সাহেবের জন্য পায়জামা ও পাঞ্জাবী কিনতে ।
হঠাৎ জলে পড়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবেনি সৈকত । প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল । ভয়ানক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটের বিমুগদ্ধতায় তখনও সৈকত বিভোর । যার জন্য তার মন থেকে ভয়ার্তভাব তখনও কাটেনি । বারংবার আসানের দিকে তাকাচ্ছে । চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ । আতঙ্কের বিহ্বলতা তার চোখে মুখে ফুটে উঠছে । অন্যদিকে আসান সৈকতকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, “ভয় কেটে গেছে । তুমি জামা কাপড় ছাড়লেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে । নবারুন ফিরলেই চা খাওয়ার পালা ।“
নবারুন বাজার থেকে নতুন পায়জামা ও পাঞ্জাবী নিয়ে হাজির । বাইকে চেপে বাজারে যাওয়ার জন্য নবারুনের পক্ষে চটজলদি ফেরা সম্ভব হয়েছে । তারপর সৈকত সেগুলি পরে নিলো । এবার তিনজনে বসে চা খাওয়া । চা খেতে খেতে নবারুন সৈকতকে জিজ্ঞাসা করলো, “স্যার, আপনি মোটর বাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন কী ?”
হ্যাঁ, নিশ্চয় পারবো । এখন অনেকটা হাল্কা ।
আসান সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললো, “চা খেয়ে আমাদের বাড়ি ফেরা যাক । কেননা সূর্য অস্ত গেছে । শীঘ্র অন্ধকার নামবে । অনেকটা পথ । সুতরাং বেশী সময় নষ্ট করা যাবে না ।“
সৈকত ও আসান বাইকে উঠতে যাবে এমন সময় নবারুন জোড় হাত করে সৈকত ও আসানকে বললো, “আপনারা আর একদিন সময় নিয়ে দিনের বেলা আসবেন, আমি দায়িত্ব সহকারে আপনাদের ডিঙি নৌকায় ঘুরিয়ে দেবো ।“
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো সৈকত ও আসান ।
দাঁইহাট চৌরাস্তা পার হয়ে মালডাঙা পৌঁছাতে অনেক দেরী । ফাঁকা রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ মেঘের গর্জন । তারপর টিপটিপ বৃষ্টি । সেই বৃষ্টি শুরু হল মুষল ধারে । বাইক থামালো না । বৃষ্টিতে ভিজে তারা এগিয়ে চললো । অগত্যা একরকম বাধ্য হয়ে আসানকে সৈকতদের বাড়ি ঢুকতে হল । নতুবা বৃষ্টিতে ভেজা অবস্থায় আসানের জ্বর আসার সম্ভাবনা ছিল । সৈকতদের বাড়ি ঢুকে দুইজনে ফ্রেস হয়ে নিলো । তারপর সৈকতের মায়ের শাড়ি পরে আসান দীপালিকে প্রণাম করলো । ভাবী শাশুড়ি তার বৌমাকে কাছে পেয়ে আনন্দে আহ্লাদিত । দীপালি আসানকে আশীর্বাদ করে বললো, “সুখী হও ।“
আসানকে কাছে পেয়ে দীপালি আবেগপূর্ণ । এত সুন্দর একটি মেয়ের সঙ্গে সৈকত মেশে ঘুণাক্ষরেও তাকে কিছু জানায়নি । অথচ আচমকা হাজির হওয়ার কারণে ভাবী বৌমার যত্নাদি কিছুই করতে পারলো না । তবে দীপালি আন্দাজ করেছিল, তার ছেলে কাউকে ভালবাসে । কেননা বিয়ের কথা বললেই, সে এড়িয়ে যেতো । দীপালির চাপে পড়ে একদিন সৈকত তার মাকে বলতে বাধ্য হয়েছিল, “সময় হলে তোমাকে আমি সব বলবো ।“
দুজনের জন্য দুই গ্লাস গরম দুধ রেডি ।
এবার আসানের বাড়ি ফেরার পালা । আসানের মোবাইলে ব্যাটারির চার্জ শেষ । বাড়িতে খবর দিতে পারেনি । ফলে বাড়ি ফেরার জন্য আসানের খুব উদ্বিগ্নতা । বাড়িতে নিশ্চয় দাদু ঠাম্মি সকলে চিন্তায় অস্থির !
মালডাঙা থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে আসানকে বড়িতে পৌঁছে দিলো সৈকত ।
তারপর বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ণশিপ ।
বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর আসানের দাদু ইতাসকে ডাকলেন । ডেকে তিনি বললেন, “আমার বয়স হয়েছে । শরীরটা ভাল যাচ্ছে না । এদেশে এসে আমি আমার ছেলের মুখ দেখতে পাবো কোনোদিন কল্পনা করতে পেরেছিলাম না । ঈশ্বরের অশেষ করুণায় সেটা সম্ভব হয়েছে । আজ আমি ছেলে, বৌমা ও নাতনীকে ফিরে পেয়েছি । এটা কত বড় আনন্দের কাউকে বোঝানো যাবে না । এটা আমার বুকের ভিতর বড় শান্তির । তুই আমার শেষ ইচ্ছাটা এবার পূরণ করলে আমি শান্তিতে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারি ।“
বাবা, তুমি কী বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । তুমি যেমন আমাদের মাথার উপরে রয়েছো তেমনিই থাকবে ।
অনেক বয়স হয়েছে । আমি আর কতদিন থাকবো ?
তুমি কী চাইছো, খুলে বলবে কী ?
এবার তিনি একটু হেসে বললেন, “তুই আমার মনের ইচ্ছাটা বুঝতে পারলি না তো ? তাহলে খুলেই বলি ।“
এমন সময় ইতাসের মা উপস্থিত । তিনি ইতাসের মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “আমরা নাতনীর বিয়ে দেখতে চাই । আমাদের নাত জামাই চাই ?”
ইতাসের এবার উচ্ছ্‌সিত হাসি । তার হাসি থামানোই এখন সমস্যা ।
ইতাসের মা ধমক দিয়ে বললেন, “খোকা, তোর হাসি থামা !”
হাসি থামিয়ে ইতাস বললো, “মা, তোমাদের নাতনী একজন পাশ করা ডাক্তার । আমি তাকে বিয়ের কথা বললে সে কী আমার কথা শুনবে ?”
নাতনীকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমাদের । তোরা মেয়েকে প্রস্তাব জানালে আমরা নাতনীকে ঠিক রাজি করাতে পারবো ।
আসান সামনের শনিবার বাড়ি ফিরুক । তারপর একসঙ্গে বসে আলোচনা করা যাবে । তারপর বিয়ের সিদ্ধান্ত ।
কিন্তু শনিবার আসান বাড়ি ফিরলো না । সৈকতের সাথে শুশুনিয়া পাহাড় বেড়াতে গেল । অনেক দিন থেকে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে যাওয়ার ইচ্ছা দুইজনের । বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়া যাওয়ার পথে শুশুনিয়া পাহাড় । বাঁকুড়া শহর থেকে ঠিক ১৩ কিলোমিটার দূরে এই পাহাড়টি অবস্থিত । লাল মাটির দেশের মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহাড় । উচ্চতায় প্রায় ১৪০০ ফুট । কিন্তু শুশুনিয়া পাহাড় দেখতে যাওয়ার সময় হচ্ছিলো না । দুই দিনের জন্য হোটেল বুকিং আগেই করা ছিল । মেলামেশার জীবনে সৈকত ও আসানের প্রথম একসঙ্গে থাকা । হোটেলে একসঙ্গে থাকা নিয়ে আসানের কিছুটা আপত্তি ছিল । কিন্তু সৈকতের প্রবল ইচ্ছার বিরুদ্ধে আসানের ওজর আপত্তি ধোপে টেকেনি ।
পরের সপ্তাহে মেয়েকে ডেকে নিয়ে বাড়ির সবাই মিলে ইমলি আলোচনায় বসলো । সৈকতের সাথে বিয়ের প্রস্তাবে আসান আপত্তি জানালো না । বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় থেকে ফিরে এসে আসান মনেপ্রাণে চাইছিলো, সৈকতের সাথে বিয়ের কথা পাকা হোক । তা ছাড়া মনে মনে ভেবেছিল, বাড়ি থেকে প্রস্তাব না দিলে বরং উপযাজক হয়ে আসান নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিজেই মায়ের কাছে দেবে । যদিও তাদের ভালবাসার সম্পর্কের মেলবন্ধন এখন অনেক দৃঢ় । তবুও আসান ঝুঁকি নিতে নারাজ । তাই বাড়িতে জানিয়ে দিলো, সৈকতের সাথে বিয়েতে তার আপত্তি নেই ।
তারপর ইতাস মালডাঙার বাসে উঠে বসে বসলো । টার্গেট, দীপালিদের বাড়ি ।
তারপর বাড়িতে হঠাৎ ইতাসকে দেখে দীপালি অবাক !
“হঠাৎ আপনি ?” বিস্ময়ে হতবাক দীপালি, জিজ্ঞাসা করলো ।
কাউকে না জানিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম ।
“কী সমস্যা ? দয়া করে আমাকে খুলে বলুন ?” দীপালি উদ্বিগ্নভাবে ইতাসের কাছে জানতে চাইলো ।
দাঁড়ান ! একটু জিরিয়ে নিই । আর একটি কথা ।
আবার কী কথা ?
অনেক দিন বলেছি তোমার মুখে “তুমি” কথাটা মিষ্টি শোনায় । “আপনি” বললে এবার আপনাকে ফাইন দিতে হবে ।
আমি ফাইন দিতে রাজি ।
আমি ফাইন হিসাবে যা চাইবো তুমি দিতে পারবে তো ?
চেয়ে দেখুন না । দরকার হলে আমি নিজেকে পর্যন্ত দিয়ে দিতে রাজি ।
“সেটার দরকার হবে না । ফাইন হিসাবে শুধুমাত্র তোমার আদরের ছেলেকে দিলেই হবে ।“ বলেই ইতাস দীপালির দিকে তাকিয়ে রইলো ।
ঢঙ না করে আসল রহস্য খুলে বললে কৃতার্থ হই ।
তোমার ছেলে, সৈকত আমার মেয়ে আসানকে ভালবাসে ।
সর্বনাশ ! আসান আপনার মেয়ে আগে জানলে আমিই আপনার বাড়ি হাজির হতাম । এতদিন ভাবছি, আপনাকে সঙ্গে নিয়ে কুসুমগ্রামে আসানদের বাড়ি যাবো ।
এবার আমার কথাটা শুনতে হবে । “ইমলির সামনে তোমাকে আমি চিনি না এবং তুমিও আমাকে চেনো না” এই কথাটা মাথায় রেখো । আবেগে সব বলে দিলে আমার অবস্থা ভীষণ খারাপ হবে । অহেতুক ইমলির জেরার কাঠগড়ায় আমাকে দাঁড়াতে হবে । এটা বলতেই তোমার কাছে ছুটে আসা ।
পরের রবিবার ইতাস ট্যাক্সি ভাড়া করলো । তার বাবা, মা ও ইমলিকে নিয়ে মালডাঙায় সৈকতদের বাড়ি । সৈকত ও আসান আলাদাভাবে এসে পৌঁছালো ।
দীপালি খুশীতে ভরপুর । কয়েকবার আড় চোখে ইতাসের দিকে তাকালো । দীপালি ইতাসকে দেখলে একটা আলাদা অনুভূতি অনুভব করে । যে অনুভূতিটা ইতাসকে কোনোদিন বোঝাতে পারেনি । ছেলের বিয়ের কথাবার্তার মধ্যেও দীপালির গহন গাঙে ইতাসের মুখের ছবিটা ভাসছে । যার জন্য আলাপ আলোচনার মাঝেও তাকে উদাস মনে হচ্ছে ।
অনেক হাসি ঠাট্টা, আলাপ আলোচনার পর ইতাসের বাবা দীপালির উদ্দেশে বললো, “আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি আপনার আত্মীয় স্বজন নিয়ে আমাদের বাড়ি আসুন । সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের দিন চূড়ান্ত হবে ।“
সৈকত কিছুদিন সময় চাইলো । সে বিয়ের আগে বাড়ি ঘর ঠিক করতে চায় । পুরো বাড়িটা রিপেয়ারিং করার পর রং করার ইচ্ছা । বাড়িতে নতুন বৌ আসছে । তার আগে বাড়ি ঘর সাজাতে কয়েকদিন সময় চাইলো ।
আসানের দাদুর ইচ্ছা, বাড়ি ঘরের রিপেয়ারিং, রং করার কাজ চলুক । সাথে সাথে বিয়ের কথাবার্তা এগোতে থাক ।
তখনই দীপালি পরের রবিবার ইতাসদের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তাব দিলো ।
তারপর পরের রবিবার দীপালি আত্মীয় স্বজন মোট আটজন মিলে আসানদের বাড়ি উপস্থিত । বাড়িতে অতিথি আগমনের কারণে আগে থেকেই দোতলাটা ভাল করে সাজানো গোছানো । ইতাস ও ইমলি আপ্যায়ন করে তাঁদের উপরের ড্রয়িং রুমে বসালো । আসানদের বাড়ি গাঁয়ের শেষ মাথায় থাকার কারণে ঘরগুলো খোলামেলা । অফুরন্ত প্রাকৃতিক বাতাস । ড্রয়িং রুমে বসে দীপালির আলাদা অনুভূতি । দীপালি জেনেবুঝে ইতাসের পাশের চেয়ারটায় বসলো । যাতে প্রয়োজনে তার সঙ্গে কথা বলা যায় ।
সৈকত ও আসান গেছে বাজারে । সকালের ব্রেকফাস্ট ও দুপুরের খাবারের কিছু কেনেকাটা বাকী । ইমলি অতিথিদের সাথে আলাপ চারিতায় ব্যস্ত । ইমলি ভাল শাড়ি পরে এমনভাবে ঘোরাঘুরি করছে তাতে ইতাসের মনে হচ্ছে, বিয়েটা আসানের নয় তার প্রাণপ্রিয় গিন্নী ইমলির । অন্যদিকে দীপালিরও সাজ পোশাক নজরকাড়া । তার মুখে সর্বদাই হাসি । হাসি মুখে থাকাটা দীপালির আগাগোড়াই অভ্যাস । ইতাসের চোখে দীপালিকেও প্রাণচঞ্চল লাগছে ।
দীপালির মামা এসেছেন । তিনিই সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন । ইতিমধ্যে ইমলি কফি নিয়ে হাজির । দীপালির মামা ইমলিকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, “আমরা যার জন্য এসেছি তিনি কোথায় ?”
“মেয়ে ও সৈকত দুজনে মিলে বাজারে গেছে । এক্ষুণি এসে যাবে ।“ ইমলির উত্তর ।
আবার বাজারে কেন ? আজ তাদের বিয়ের পাকা কথা । অথচ তারা দুজনে বাজারে ঘুরছে । এদিকে আমরা তাদের ছাড়াই কফি খাচ্ছি ।
“পরের ব্রেকফাস্টের সময় অবশ্যই থাকবে ।“ ইমলি বিনয়ের সঙ্গে সকলের উদ্দেশে জানিয়ে দিলো ।
ইতাস দীপালির মামাকে জিজ্ঞাসা করলো, “জলখাবার খেয়ে কী বিয়ের দিন তারিখ নিয়ে কথা বলবেন ?”
বিয়ের দিন তারিখ শুধুমাত্র বাকী । আর সবকিছু মোটামুটি চূড়ান্ত । সেটা নিয়ে এত ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই । দুর্গা পুজোর পরে সেই অগ্রহায়ণ মাস ছাড়া বিয়ের দিন নেই । সুতরাং তাড়াহুড়ো করার কিচ্ছু নেই । ইতাসকে তিনি শান্ত হয়ে বসতে বললেন । দীপালির মামা ইতাসকে আরও বললেন, “অনেকদিন পর তোমাদের মতো দেশের মানুষদের কাছে পেয়েছি । আপনার বাবার সঙ্গে এভাবে দেখা হবে স্বপ্নেও ভাবিনি । আপনার বাবার বয়স হয়ে গেলেও তাঁর স্মৃতিতে এখনও ঐ দেশের সমস্ত কিছু মনে রয়েছে । তাঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে,অনেকদিন পর দেশে বসেই দেশের মানুষের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলছি ।“
আসান ও সৈকত সকলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিলো ।
দীপালির মামা একজন রসিক মানুষ । তিনি নাতিকে অর্থাৎ সৈকতকে উদ্দেশ্য করে হেসে হেসে বললেন, “এখন থেকেই বৌ নিয়ে যেখানে সেখানে উধাও হয়ে যাচ্ছ ভাই । অথচ তোমাদের আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়নি । এখনই যদি ভাবী বৌয়ের প্রতি এতটা টান, তাহলে আমাদের কথা বেমালুম ভুলে যাবে । এটা আমি আগাম বলে রাখছি ।“
কী যে বলো দাদু । তুমি হচ্ছ আমার হৃদয়ের মানুষ ।
মুখে তুমি যতই হৃদয়ের মানুষ বলো না কেন, তোমার পুরো হৃদয় দখল করে রয়েছে নাত-বৌ । আসানকে ছাড়া তুমি কিচ্ছু বোঝো না ।
দাদু, তুমি এবার থামবে । যে ব্যাপারে কথা বলতে এসেছো সেই ব্যাপারে মনোযোগ দিলে কৃতার্থ হই ।
“মিয়া-বিবি” রাজি কী করবে কাজী ?
“তুমি আমাদের অভিভাবক । বিয়ের দিন-তারিখের ব্যাপারে তোমার কথাই চূড়ান্ত !” সৈকত দাদুকে জানালো ।
বিয়ের দিন নিয়ে যেটা ইতাসের সঙ্গে আলোচনা হল, অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম বিয়ের দিনটাই যথার্থ ।
আসান সৈকতের দাদুর দিকে তাকিয়ে বললো, “কিন্তু দাদু, আপনাকে দেখতে হবে তারিখটা শুভ কিনা ?”
সেসব পুথি, পঞ্জিকা ঘেটেই আমার আগমন মহাশয়া ।
তবে তারিখটা ঘোষণা করে দিন ।
“এবার সবার সামনে ঘোষণা করা যেতে পারে ।“ উপস্থিত সকলে উদগ্রীবভাবে দীপালির মামার দিকে তাকিয়ে । দীপালির মামা বললেন, “অগ্রহায়ণের দুই তারিখ শুভদিন । বুধবার । খনার বচন সবাই জানেন, “মঙ্গলে ঊষা বুধে পা যথা ইচ্ছা তথা যা ।“ শুভদিনে শুভবিবাহ । আবার পাত্রের বাড়ির ক্ষেত্রেও বৃহস্পতিবার পয়া । অর্থাৎ লক্ষ্মীবারে নাত-বৌয়ের লক্ষ্মী রূপে দীপালিদের বাড়ি প্রবেশ । শুক্রবারে ছেলের বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান । সুতরাং আশা করি বিয়ের দিন নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয় । এবার ইতাস ও দীপালির উদ্দেশে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “যেহেতু তোমারা দুজন পাত্র ও পাত্রীর অভিভাবক, তোমাদের কোনো আপত্তি আছে কিনা ?”
ইতাস দীপালির দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাদের কোনো আপত্তি নেই । এবার দীপালি ম্যাডামের কী মত জানা যাক ।“ দীপালি ম্যাডামও ইমলির দিকে তাকিয়ে বললো, “যেহেতু মামা আমার অভিভাবক, সেহেতু মামা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে । এবার শুভবিবাহের মধ্যমণি পাত্র ও পাত্রী, উভয়ে মত দিলে দিন-তারিখ পাকা করতে দ্বিধা নেই ।
তারপর সকলের সম্মতিক্রমে অগ্রহায়ণ মাসের দুই তারিখ বিয়ের দিন ধার্য হল । তারপর উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি এবং অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান ।
দুপুরের খাওয়ার সময় ব্যাঙ্কের ম্যানেজারবাবু আমন্ত্রিত ছিলেন এবং কুসুমগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বটব্যালবাবুও আমন্ত্রিত ছিলেন । বটব্যালবাবুকে বলা যায় তাদের পরিবারের হিতাকাক্ষ্মী মানুষ । তিনি ইমলিকে খুব ভালবাসেন । ইস্কুলের বেতন ঐ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পেমেন্ট হওয়ার জন্য হেড স্যারের সাথে ইমলির ঘনিষ্ঠতা । এবার দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পালা । বেলা অনেকটা হয়েছে । ব্যাঙ্কের ম্যানেজারবাবুর আসতে দেরী হওয়ার কারণে খেতে বসতে দেরী ।
রান্নার ঝকমারি আয়োজন ।
 ( চলবে )