আলোর কঙ্কাল : শোভন ভট্টাচার্য।

0
495

সব কিছুরই একটা প্রতীক থাকে,
আর গল্পের ভেতরে গল্প।
আগে জানতাম ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ ছিল,
এটা ছিল গল্প।
কিন্তু সে কর্তব্যবোধে আর স্নেহে অন্ধ ছিল,
সমস্ত মানবিক গুনগুলিতে সে ছিল অন্ধ।
সেই একই অন্ধ গান্ধারীও ছিল।
তাই মহান কুরুবংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।
এটা ভেতরের গল্প, প্রতীকের গল্প।

সমুদ্রমন্থন হল অমরত্ব লাভের জন্য।
অমৃত পাওয়া গেলো ঠিকই,
কিন্তু তার সাথে উঠে এলো দারুন বিষ।
মহেশ্বর সেই বিষপান করে বাঁচালেন পৃথিবীকে।
এটা শুধুই গল্প।
আসলে যখনই তুমি মহৎ কিছু লাভের জন্য
প্রানপন লড়াই করবে, তখনই লাভ করবে বিষ।
যদি তুমি স্বয়ং আশুতোষের মত শক্তিশালী হও,
তবেই শেষরক্ষা করতে পারবে।
এটা ভেতরের গল্প, প্রতীকের গল্প।

পতির অপমাণে সতী দেহত্যাগ করলেন,
একান্ন পীঠের জন্ম হলো।
এটাও একটা গল্প।
সতী অর্থাৎ মহামায়া একাই নারী সমাজ,
এই একান্ন পীঠ আমাদের নারী শক্তিকে
মাথা নুইয়ে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে শেখায়।
নারীর মধ্যে যে কী অপরিসীম শক্তি আছে,
তা সোমনাথ আমাদের শিখিয়েছেন।
এটা ভেতরের গল্প, প্রতীকের গল্প।

মহিষাসুর মহাশক্তি লাভ করলেন,
সমস্ত দেবলোকে সন্ত্রাসের সৃষ্টি হল।
তারপর তার নিধন হল।
এটাও একটা গল্প।
আসলে তুমি মহাশক্তি লাভ করার পর
তার অপব্যবহার করলে তোমার বিনাশ
ঠিকই হবে, তুমি যতই শক্তিশালী হও।
তাই শক্তি ও সাফল্যের ঔদ্ধত্য রাখতে নেই।

ঠিক এইরকমই
দ্রৌপদী আমাদের আত্মসম্মান,
কুন্তী আমাদের প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
বিধি বাম বলে আমরা যে গল্প বলি,
অজুহাত ও ত্রুটিতে গর্ভবতী করি
পদার্পণের স্খলন ও পতনকে।
প্রতীক তাই চিরকাল একা,
আর গল্পের কঙ্কাল ছলনা করে চলে যায়,
দূরে, দূরে, আরো দূরে, বহুদূরে।