ইতিহাস বিজড়িত প্রথা মেনে দিনের আলোয় পূজিতা হয় দশ মাথা কালী মাতা। যা মাহাকালি নামে পরিচিত।

0
421

মালদা,নিজস্ব সংবাদদাতা:-ইতিহাস বিজড়িত প্রথা মেনে দিনের আলোয় পূজিতা হয় দশ মাথা কালী মাতা। যা মাহাকালি নামে পরিচিত। রয়েছে বলি প্রথা ও শোল মাছের টক বিশেষ প্রসাদ।১৯৩০ সাল, দেশে তখন ইংরেজদের রাজত্ব। সারাদেশের সঙ্গে মালদাতে ও সাধারণ মানুষের ওপর চরম অত্যাচার চালিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ শাসকদের সেই অত্যাচার সহ্য করতে পারছিল না মালদার শহরবাসী। সেই সময় পুড়াটুলির কিছু মানুষ ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নানা বিধ অস্ত্রে সজ্জিত বিদেশিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে লাগবে শক্তি আর সাহস। শারীরিক ভাবে নিজেদের সুদৃঢ় করে তুলতে সেই মানুষেরা একটি ব্যায়ামাগার নির্মাণ করেন। একই সঙ্গে নিজেদের মনকে শক্ত করতে শুরু করেন কালীর আরাধনা। শক্তির আরাধনায় তাদের আরাধ্য ছিলেন দশ মাথা মহাকালি। সেই পুজো এখনো হয়ে আসছে। তবে পুড়াটুলি থেকে পুজোর স্থান পরিবর্তন হয়ে এসেছে ইংরেজবাজার শহরের গঙ্গাবাগে। সারা জেলায় এই পুজো ১০ মাথার কালী নামে পরিচিত। চতুর্দশীর দিন ধুমধাম করে পূজিতা হন এই দেবী।
কালীমূর্তিতেও এখানে কিছুটা বিশেষ অর্থ রয়েছে। দেবীর ১০ মাথা, দশ হাত ও ১০ পা রয়েছে। প্রতিমায় শিবের কোন অস্তিত্ব নেই। দেবীর পায়ের তলায় রয়েছে অসুরের কাটা মুন্ডু। প্রতিহাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র।পুজো উদ্যোক্তারা জানালেন, শ্রী শ্রী চন্ডী গ্রন্থের বৈকৃতিক রহস্য এই মূর্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়ে ও প্রাচীন যুগে খোদাই করা রয়েছে এই মূর্তি। গঙ্গাবাগ এলাকায় মায়ের মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে ১৯৮৫ সালে।পুজোয় বলি প্রথা চালু রয়েছে। ‌ মায়ের মন্দির নির্মাণ নিয়ে এলাকায় রয়েছে অনেক কাহিনী। স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, বর্তমানে যেখানে মহাকালের মন্দির রয়েছে, সেখানে তন্ত্র সাধনা করতেন এলাকার বাসিন্দা প্রফুল্ল ধন মুখোপাধ্যায়। সাধনার জন্য তৈরি করে পঞ্চমুন্ডির আসন। সেই আসনের ওপরে দেবীর বেদি নির্মিত হয়েছে। প্রফুল্ল বাবুর মৃত্যুর পর তার বংশধর ও স্থানীয় মানুষজন এই পুজো চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতি।
প্রথম থেকেই এই পুজো প্রথমে অমাবস্যার পরিবর্তে চতুর্দশী তিথিতে অনুষ্ঠান ও পুজো হয়ে আসছে। পাঠা বলি দিয়ে রক্ত উৎসর্গের মাধ্যমে পুজো শুরু হয়। বলির শেষে শোল মাছের টক রান্না করে দেওয়া হয় মাকে। চতুর্দশীর সকালে মৃৎশিল্পীর ঘর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে মন্দির পর্যন্ত মাকে নিয়ে যাওয়া হয় শোভাযাত্রা সহকারে। শোভযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের বাদ্য বাজনার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি পাঁচ দিন ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষের দিন নরনারায়ন সেবা। তবে এবার করোণা আবহের মধ্যে বিভিন্ন রকম সচেতনতা অবলম্বন করে পূজা অনুষ্ঠান করা হবে।