গাঢ় অন্ধকার রাত হলেও আকাশ বেশ পরিষ্কার ,রুপোলি আলোর বিন্দু গুলো মিটি মিটি জ্বলছে।উজানের বেশ মনে আছে ছোটবেলা মায়ের সঙ্গে ছাদে গিয়ে সে রাতের আকাশের তারা চিনেছিল,তারাদের নাম গুলোও বেশ সুন্দর কিন্তু কত বছর যে সে রাতের আকাশ দেখতে পায়নি মনে মনে হিসেব কষতে থাকে।আর তখনই ওই আকাশে দুটো সোনালী আলোর বিন্দু দেখতে পায়।এগুলো ফানুস যা মানুষ ওড়ায়। একটু আগে বাজারের মুখে খাবার কিনতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিশোর ছেলেগুলোর বাজি পোড়ানো দেখছিল আর তখনই যেন মনটা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তারপর বাড়ি ফিরে সোজা এই দোতলার খোলা ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে উজান।
লাট্টুর এক্সিডেন্টটা উজানের জন্যই হয়েছিল।
সেবার ঠিক আজকের মতোই
ভূত চতুর্দশীর রাত ছিল।
ওরা তখন সেভেন এইটে পড়ে।লাট্টু বরাবরই একটু ডাকাবুকো।উজান কিন্তু নিজের হাতে বাজি পোড়াতে ভয় পেত যদিও ওই আলোর ঝলক বা কানফাটা শব্দ শুনতে তার বেশ ভালো লাগতো। লাট্টু বাজিতে আগুন ধরিয়ে পর পর বাজি ফাটিয়ে যাচ্ছিল আর উজান ওকে আরও উৎসাহ দিচ্ছিল।উজান একটা চকোলেট বোম এনে ফাটাতে বলেছিল ,লাট্টু বলেছিল কালিপটকা ঠিক আছে চকলেট বোম এখন নয় ,রাত বাড়ুক চারদিক একটু ফাঁকা হোক তখন টুক করে বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে দিলেই হবে।কিন্তু উজান নাছোড়।এখনই ফাটা না ,আমরা লুকিয়ে পড়বো কিছু হবে না।কিন্তু হলো,অন্যরকম কিছু ঘটে গেল।চকলেট বোমা লাট্টুর হাতে ফেটে গেল।তারপর ওই রাতে লাট্টুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।একটা হাত ,মুখ পুড়ে গিয়েছিল।একটা চোখ ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো।লাট্টুদের অবস্থা এমনিতে স্বচ্ছল ছিল না তাই আর খুব বেশি চিকিৎসার সুযোগ হলো না।বরং আরো যে ক্ষতিটা হলো ,মেধাবী লাট্টুর পড়াশুনা এক্কেবারেই বন্ধ হয়ে গেল।
আজকের দিনেই উজানকে তার মফস্বলের বাড়িতে আসতে হলো,আসলে দিওয়ালির জন্য অফিস কয়েকদিনের ছুটি দিয়েছে। এই সময়টাকে কাজে লাগাবার প্রয়োজন ,প্রয়োজন অনেক টাকার।এই বাড়িটা বিক্রি করে দিলেই তার টাকার প্রয়োজন মিটবে।তার স্ত্রীর শরীরে মারন রোগ বাসা বেঁধেছে ।অপারেশন ,কেমোর জন্য অনেক খরচ।বাড়িটা অনেক বছর এমনিই পরে আছে।মা বাবা মারা যাওয়ার পর দু একবার ভাড়া দিয়ে রেখেছিল কিন্তু মফস্বলে সেভাবে ভাড়াটিয়া মেলে না।লাট্টুকে বিক্রি করিয়ে দেবার কথাও বলেছিল, যদি সে তার প্রভাব খাটিয়ে বিক্রি করে দিতে পারে কিন্তু উল্টো সমস্যা বেঁধেছিল।লাট্টুদের পার্টি এখানে হেরে যাওয়ার পর অন্য পার্টির মাতব্বররা মাথা গলানো শুরু করেছিল।
“ওসব বিক্রি বাট্টা একদম নয় এক্কেবারে জবর দখল। মা বাবা মরেছে, ছেলে দিল্লি না কোথায় থাকে এখানে জিন্দেগিতেও থাকতে আসবে না। অথচ বিক্রি করে অন্য লোক ঢুকিয়ে টাকা নিয়ে কেটে পড়বে। শালা কানু সামন্তর এলাকায় এসব চলবে না”।
কথাগুলো ফোনে লাট্টু মারফত কানে এসেছিল।
এরপর অনেকদিন আর লাট্টুর সঙ্গে কথা হয়নি।এখানে আসবার আগে ফোন করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু হয়নি।লাট্টু হয়তো নম্বর পাল্টে ফেলেছে এমনটাই ভেবেছিল। কিন্তু সকালে আসবার সময় রিকশায় বাড়ির সামনে না নেমে মোড়ের মাথায় চা এর দোকানে নেমেছিল।চা খেতে খেতেই খারাপ খবরটা শুনেছিল।লাট্টু গুণ্ডা মার্ডার হয়েছে,মাস দুয়েক আগে, কে বা কারা ওকে বাড়ির মধ্যেই গুলি করে গেছে।
কৈশোরের ওই এক্সিডেন্টটার পর লাট্টুর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল,খারাপ সঙ্গে গিয়ে মিশেছিল সে ।ক্রমে পার্টির লোকেরা ওকে খারাপ কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেছিলো। সেই মেধাবী এবং অভাবী ছেলেটি একসময় লাট্টু গুণ্ডা হয়ে উঠলো।কথায় বলে মস্তানদের নাকি চুল পাকে না।লাট্টুও তাই, চুল পাকার আগেই অকালে চলে গেল।লাট্টুর পরিবার অসহায় হয়ে পড়লো, তবে ওর ছেলে নাকি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র, এবার মাধ্যমিক দেবে।
এমন খবরে মন খারাপ হওয়ার সঙ্গে মনের ওপর চাপ আরও বেড়ে গেল উজানের, আসলে অনেক আশা নিয়ে এসেছিল সে বাড়িটা বিক্রির ব্যবস্থা করতে। কিন্তু প্রভাবশালী কেউ বাধা দিলে তো কিছুই করা যাবে না তাই যেভাবেই হোক কিছু টাকা পয়সা দিয়ে হলেও যদি একটা কিছু ব্যবস্থা করা যায় ,কারণ টাকাটা তার বড্ড প্রয়োজন।
কানু সামন্ত আর তার দলবল এখন এলাকা শাসন করে। উজানদের দোতলা বাড়িটার দিকে তাদের নজর অনেক দিনের। রাস্তার একদম শেষ প্রান্তের এই বাড়িটায় মদ জুয়ার ঠেক বানানো যেতেই পারে অথবা মধুচক্রের ব্যবসা। কাজেই ওই ছেলেটির বাড়ি বিক্রি বাট্টার উদ্দেশ্যকে সমর্থন করা যাবে না যদি কিছু টাকা দিয়ে হাত করতে চায় তাহলেও না।বরং তাকে নিকেশ করে দিতে হবে।এরকমই নির্দেশ দিয়ে রাখে কানু সামন্ত তার দলের ছেলেদের।
রাত যত বাড়তে থাকে মফস্বলের বাড়িগুলোর বারান্দায় বা ছাদে জ্বলতে থাকা টুনির আলো নিভে আসতে থাকে। এই নিকষ অন্ধকার মনটা আরো ভারী করে তোলে উজানের।সে ঠিক করে খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে।পরদিন সকালে কানু সামন্তর সঙ্গে সরাসরি কথা বলবে।বোঝাবে, তার কেন বাড়িটা বিক্রি করার দরকার এই মুহূর্তে।বাড়ি বিক্রির জন্য এই সব উটকো আগাছা সরাতে টাকা পয়সার টোপও দেবে। আইন এ ক্ষেত্রে খুব একটা কাজে আসবে না উজান বোঝে।স্থানীয় ফাঁড়ি এদের হাতের মুঠোর মধ্যে।তবে সবটা খুব ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।
মেজাজ ঠান্ডা রেখে কথা বলতে হবে,সহজে উত্তেজিত হওয়া চলবে না।
রাতে খেতে খেতে অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে নেয় উজান।ওর স্ত্রী মোনা ভালো করে সদর দরজা বন্ধ করে ঘুমোতে বলে আর বারণ করে রাতে কেউ ডাকলে উজান যেন একলা বেরিয়ে না পড়ে।উজান ভাবে মোনা হয়তো আজ ভূত চতুর্দশীর রাতের কথা ভেবে তাকে এতো সাবধান করছে।এদিন নাকি কি সব ভূতপ্রেত ঘোরাঘুরি করে ,আসলে মোনা বরাবরই ভীতু টাইপের তারমতো সাহসী নয় সে।
সদর দরজা ,কলাপসিবল গেট ভালো করেই বন্ধ করেছে উজান ,দোতলায় সে যে ঘরটায় থাকতো একসময় ,সেখানেই রাতে ঘুমোতে এসেছে ।এই বাড়িতে তার কত যে স্মৃতি, যদিও টুয়েলভ পাশ করেই সে দিল্লী চলে গিয়েছিল পড়াশুনা করতে তারপর চাকরি বিয়ে সব ওখানেই।কিন্তু তার শিকড়ের টান এই বাড়িই , বাবা বানিয়েছিলেন আর মা রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। অথচ তারা বেশিদিন থাকলেন না ,পর পর দুজনেই অসুখে ভুগে মারা গেলেন।উজান একমাত্র সন্তান তাই এই বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকার বা মালিক সে কিন্তু দীর্ঘদিন উজান বাইরে থাকায় ,এই বাড়ি তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে।আপাতত সুযোগ সন্ধানী মতলববাজের নজরে এখন এই বাড়ি।
কানু সামন্ত ভালোই জানে সমস্ত আইন কানুন কিন্তু ওই যে স্বভাব !যে ভাবেই হোক মালটাকে ভাগাতে হবে।উকিল টুকিল লাগাবার আগেই ব্যবস্থাটা সেরে ফেলতে হবে।কি যেন নাম উজান সরকার !সকালে যখনই এলাকায় পা দিয়েছে খবর এসে গেছে তার কানে আর সেই থেকে ছক কষছে, সমূলে উৎপাটন করে ফেলতে হবে।না কাচ্চা বাচ্চা পয়দা করে উঠতে পারেনি এখনো তবে বউ আছে বটে ,সে হোক সময় বেশি নেই আজ রাতেই ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে যখন বাগে পাওয়া গেছে!
কানু সামন্ত তার ছেলেদের ডেকে বুঝিয়ে দেয় সব।
তারপর নিজে ঠিক করে আজ রাতটা গায়েব হবে ,মানে এলাকা ছাড়বে না হলে পাছে সন্দেহ আবার তার ওপর পড়ে।
রাতে সে কলকাতায় তার যে ফ্ল্যাট আছে সেখানে বন্ধু বান্ধব নিয়ে একটা আসর বসাবে ঠিক করে, যাতে পুলিশের কাছে এলাকায় তার অনুপস্থিতি প্রমান করতে নাস্তানাবুদ হতে না হয় ,গত বার লাল্টুর কেসটায় ফেঁসে গিয়েছিল খুব তবে তখনকার অফিসারটা বেশ মোলায়েম স্বভাবের ছিল কিন্তু নতুন আসা অফিসারটা একটু খিটকেল আছে তাই এবারের প্ল্যানটা বেশ মাথা খাটিয়ে করতে হচ্ছে।
ক্লান্ত ছিল উজান ,ট্রেন জার্নির ধকল তাই রাতে ঘুম এসে গেল তাড়া তাড়ি।
-এই খেলবি?
-না খেলবো না ,তুই আসিসনা এখন।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল বাজ পড়ার শব্দে।
ছোট্ট একটুকরো স্বপ্ন,উজান লাট্টুকে খেলতে ডাকছে ,ছোটবেলার লাট্টুকে। কিন্তু লাট্টু আসতে বারন করছে।ছোটবেলায় এরকম বহুবার হয়েছে কিন্তু এখন সেই বা কেন লাট্টুকে ডাকছে! আবার লাট্টু তাকে কোথায় আসতে বারণ করছে!
বাড়ি বিক্রির বিষয়ে লাট্টুর ওপর নির্ভর করে ফেলেছিল উজান কিন্তু এখানে এসে লাট্টুর অকাল মৃত্যুর খবরে মনে মনে অসহায় বোধ করছিল। অবচেতনে হয়তো লাট্টুকে চাইছিল সে তার পাশে কিন্তু লাট্টু তার সঙ্গ চাইছে না ,সেটা অবশ্য ভালো দিক লাট্টু তো এখন ওই পারের বাসিন্দা।নিজে নিজেই স্বপ্নটির ব্যাখ্যা করে নিল উজান তারপর বাথরুম ঘুরে এসে খানিকটা জল
খেযে নিল উজান।
বাইরে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে।বিদ্যুতের চমক আর বাজ পড়ার আওয়াজ।অথচ সন্ধ্যেতে আকাশ বেশ পরিষ্কার ছিল, এ বৃষ্টির পূর্বাভাস তো ছিল না। বৃষ্টির ছাট আটকাতে ব্যালকনির দিকের জানালাটা বন্ধ করে আবার ঘুমে তলিয়ে যায় উজান।
কানু সামন্তের নির্দেশ মতো তার দুই শাগরেদ প্রস্তুতি নেয়।কার্নিশ বেয়ে ব্যালকনিতে পৌঁছবে, তারপর জানালা দিয়ে দেখবে লোকটা দোতলার ঘরে ঘুমাচ্ছে কি না।যদি ওখানে পেয়ে যায় তাহলে জানালা দিয়েই একটু কেরোসিন ছিটিয়ে জ্বলন্ত বাজি ছুড়ে দেবে। আর যদি দেখে দোতলায় নেই তাহলে ব্যালকনির দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকবে তারপর কাজ সারবে মানে পুড়িয়ে মারবে।তবে বাজি ব্যবহার করবে,যাতে মনে হয় জানালা দিয়ে বাজি ঢুকে আগুন লেগে গেছে। তবে কেরোসিনের ব্যাপারটা তদন্ত বেশিদূর এগোলে তবেই ধরা পড়বে যদিও কানু সামন্ত তার আগেই সব আটকে দেবে।
“বড় বাঁচা বেঁচে গেলি আজ”
ফিসফিসিয়ে কে যেন কানের কাছে বলে ওঠে।আর তখনই চোখ মেলে উজান দেখে কেউ কোথাও নেই কিন্তু বন্ধ জানালা দরজার ফাক দিয়েও যতটুকু আলো এসে পড়েছে তাতে বোঝা যায় সকাল হয়ে গেছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে শুধু সকাল নয় বেলা হয়ে গেছে অনেক।
দরজা খুলে ব্যালকনিতে এসে দেখে আকাশে রোদ ঝলমল করছে ,তবে আশ পাশের নুইয়ে পড়া গাছপালাগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে গত রাতে ঝড় বৃষ্টি হয়েছে অনেক।উজান ঠিক করে নেয় মোড়ের মাথার দোকান থেকে চা আর ডিমটোস্ট খেয়ে কানু সামন্তর বাড়ি দেখা করতে যাবে তারপর সন্ধ্যের ট্রেন ধরে দিল্লী ফিরে যাবে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে কেমন যেন অন্যরকম মনে হয় উজানের ,কিছু একটা ঘটে গেছে বোধহয় এ অঞ্চলে ।রাস্তার না না জায়গায় মানুষের জটলা,ফিসফিসানি।
চা এর দোকানে গিয়েই খবরটা পেল উজান।কাল রাতে কানু সামন্ত নাকি কলকাতার দিকে যাচ্ছিল সেইসময় হঠাৎ প্রবল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয় তার গাড়ির ওপর একটা ইলেক্ট্রিকের পোস্ট উপড়ে এসে পড়ে ,আশ্চর্য জনক ভাবে ড্রাইভার রক্ষা পায় কিন্তু কানু সামন্ত ঝলসে যায়।
উজান হতবাক ,এ কিভাবে সম্ভব!
কানু সামন্ত শেষ এভাবে!
বাড়ি এসে চটজলদি ব্যাগ গুছিয়ে নেয় উজান ।কাল রাতের স্বপ্ন ,হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি, কানু সামন্তের দুর্ঘটনায় মৃত্যু সব যেন কেমন গুলিয়ে যায়।
সকালে তার ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিল কার কথায়!কে বলেছিল ওই কথাটা! তার বেঁচে যাওয়ার কথা… মানে টা কি এই কথার !তার কি কোনো বিপদ ঘটতো!না স্বপ্ন তো নয় ,সে তো কিছু দেখেনি শুধু শুনেছে।আর তো নেই কেউ এ বাড়িতে।
গভীর রাতে উজান কে পুড়িয়ে মারার প্ল্যান ভেস্তে গিয়েছিল কানু সামন্তর মৃত্যুর খবর আসবার সাথে সাথে।
হঠাৎ ঝড় জল শুরু হওয়ায় কানু সামন্তের শাগরেদরা অপেক্ষা করতে থাকে ঝড় বৃষ্টি থামলেই তারা অপারেশন সাকসেস করবে কিন্তু সেই অপেক্ষার মাঝেই ফোনাফুনি হয়ে যায় কলকাতা পৌঁছবার আগেই রাস্তায় তাদের বসের অপমৃত্যু হয়েছে।
ড্রয়িং রুমের দেওয়ালে টাঙানো বাবা মায়ের ছবিতে প্রণাম করে আশীর্ব্বাদ প্রার্থনা করে দিল্লিতে ফিরে যাওয়ার জন্য সদর দরজার তালা বন্ধ করছিল উজান আর সেই মুহূর্তে আবারও পুরুষ কন্ঠের ফিসফিসানি তার কানের কাছে।
“তোকে বাঁচিয়ে দিলাম”।
চমকে উজান এদিক ওদিক দেখলো ,না কোথাও তো কেউ নেই!
সাহসী উজান ঠিক ভয় না পেলেও তার মনে খটকা তৈরি হলো।এসব কি কথা শুনছে সে !কে বলছে এসব ! তার মনের ভুল নয়তো!
মোড়ের মাথা থেকে স্থানীয় রেল স্টেশনে পৌঁছবার জন্য রিক্সায় উঠতেই আবার সেই একই ভাবে ফিসফিসিযে কে যেন বলে উঠলো,
“আমার ছেলেটাকে একটু দেখিস উজান”
তবে কি লাট্টু!
বাড়িটা বিক্রিতে আর তো বাধা নেই । এবার বিজ্ঞাপন দেবে সে,চায়ের দোকানেও নিজের ফোন নম্বর দিয়ে বলে রেখেছে খরিদ্দার দেখে রাখতে।লাট্টুর ছেলের কথা কাল থেকেই ভেবেছে উজান ,বাড়িটা বিক্রি হলে ওর পড়াশুনার জন্য কিছু টাকা দিয়ে যাবে সে।
মাত্র কয়েক ঘন্টায় কত কিছু ঘটে গেল আচমকাই ,সহজে সত্যিই তার ব্যাখ্যা মেলে না।তবে যা হলো তা ভালো।মোনার শরীর খারাপ তাই এতো কিছু ওকে বলা ঠিক হবে না।উজান সবটা নিজের মনেই রেখে দেবে আর মনে মনে লাট্টুর
উদ্দেশে প্রার্থনা করে উজান ,
“ভালো থাকিস ভাই ওই পরপারে”।
সমাপ্ত।