তৃণ্ময় বেরা , ঝাড়গ্রাম:- দু’মাস ঘরবন্দি থাকার পর পরিকাঠামোর পরিবর্তন ঘটিয়ে হর্ষিণী ও দুই সন্তানকে এনক্লোজারে ছাড়া হল। বর্ষশেষে চিড়িয়াখানায়(জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক) চিতাদের দেখতে ভিড় বাড়ছে। শনিবারও চিড়িয়াখানায় চিতাবাঘ দেখতে ভাল ভিড় জমিয়েছিলেন মানুষজন। চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগেই হর্ষিণী ও তাঁর দুই সন্তানকে ছাড়া হয়েছে চিড়িয়খানায়। তবে দুই সন্তান এখন এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় পূর্নাঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তাই চট করে মা ও শাবকদের চেনার জো নেই।
গত ৭ অক্টোবর চিড়িয়াখানা থেকে আচমকা নিরুদ্দেশ হয়ে যায় হর্ষিণী। ৮ অক্টোবর ভোরে চিতাবাঘিনীর ঘেরাটোপ লাগোয়া একটি ঝোপে হর্ষিণীর হদিশ মেলে। তারপর দীর্ঘ ন’ঘণ্টার চেষ্টায় ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে হর্ষিণীকে খাঁচাবন্দি করেন বনর্মীরা। চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, এনক্লোজারের জাল বেয়ে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল হর্ষিণী। এনক্লোজারের উপরে ইলেকট্রিক ফেন্সিং দীর্ঘদিন ধরে খারাপ ছিল। ওই ইলেকট্রিক ফেন্সিং ঠিক থাকলে হর্ষিণী বাইরে বেরোতে পারত না। এনক্লোজারের পরিকাঠামোগত সমস্যা না মেটানো হলে হর্ষিণীকে মুক্ত পরিধিতে ছাড়া যাবে না জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। তারপরই জু অথরিটির নির্দেশে ডিএফও সহ বন আধিকারিক এমনকি এনক্লোজারের মেরামতকারী সংস্থার লোকজন পরিদর্শন করেন। কিন্তু এনক্লোজারের উচ্চতা বাড়ানো হবে না উপরের ফাঁকা অংশ জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে তা সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি হয় কিছুদিন। কিন্তু শেষমেশ এনক্লোজারের উচ্চতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। চিড়িয়খানা সূত্রে খবর, হর্ষিণীর এনক্লোজারের জাল আরও ২ মিটার উচ্চতায় বাড়নো হয়েছে। তারপর হেলানো অবস্থায় টিনের বিশেষ শেড আরও ২ মিটার বাড়ানো হয়। যারফলে এনক্লোজারের নকশা কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। একেবারে উপরে নতুন করে ইলেকট্রিক ফেন্সিং করা হয়েছে। এমনকি ইলেকট্রিক ফেন্সিংয়ে ইলেকট্রিকের ভোল্ট বাড়ানো হয়েছে। আগে তিনটি তার ছিল। এখন ইলেকট্রিক ফেন্সিংয়ে চারটি ইলেকট্রিক তার দেওয়া হয়েছে। তবে চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘এনক্লোজারের উপরের ফাঁকা অংশ পুরো জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হলে আর কোনও ঝুঁকি থাকত না। কারণ, এনক্লোজারের চারিদিকে শালগাছ রয়েছে। যে কোন সময় গাছের পড়ে ইলেকট্রিক ফেন্সিং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু শেড যেভাবে করা হয়েছে তাতে বেরোনোর সম্ভাবনা নেই।’’ হর্ষিণীর পাশে থাকা আলাদা আরও একটি এনক্লোজারে থাকা পুরুষ চিতাবাঘ সোহেলের এনক্লোজারটি উপরে জাল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। যারফলে সোহেলের বেরিয়ে যাওয়ার কোনও রকম সম্ভাবনা নেই। যারফলে প্রায় দু’মাস ঘরবন্দি থাকার পর এনক্লোজারে খোলা পরিবেশে ছাড়া হল হর্ষিণী ও তার জোড়া সন্তানকে।প্রাণী চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত বলেন, ‘‘দু’টি সন্তান পূর্নাঙ্গ হয়ে গিয়েছে। চেহারা মায়ের থেকে ভাল হয়েছে। তিনজনেই এনক্লোজারে খোশ মেজাজে রয়েছে।’’ চিড়িয়খানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এনক্লোজারের পরিকাঠামোর আমূল পরিবর্তন করার পর গত বুধবার এনক্লোজারে হর্ষিণী ও তার জোড়া সন্তানকে ছাড়া হয়েছে। চিতা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শকরা।’’ ডিএফও তথা চিড়িয়খানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শেখ ফরিদ ফোন ধরেননি।