সঞ্জুর মন ভালো নেই।
মায়ের এতো বকাবকি আর নিতে পারছেনা কোনোভাবেই।কিছুতেই তাকে একটু তার মতো ভালো থাকতে দেবে না,বাবা বাড়িতে এলে শুধু নালিশ আর নালিশ।তারপর দুজনে মিলে…
কেন গায়ে হাত তুলবে এতো বড় ছেলের!
সারাদিন তোমরা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকো আর ছেলে নিলেই যত দোষ!
এতো বাজে বাজে কথা !
“আমার নাকি কিছুই হবে না জীবনে”!
আচ্ছা মা বাবা কেন এভাবে বললো!কেন আজ চড়টা মারলো!ওই মোবাইলে গেম খেলছিলাম বলেই তো।
বেশ আর খেলবোই না কোনোদিন, তোমাদের মোবাইল নিয়ে তোমরাই থাকো ।আমাকে আর পাবেনা কখনো।
সঞ্জু বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে ,যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে তাকে।
সামনের মেট্রো স্টেশনে গিয়ে টিকিট কেটে স্কেলেটর এর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে আর তখনই বয়স্ক একজন ধুতিপাঞ্জাবী পড়া ভদ্রলোক তার হাতের একটা বড় ব্যাগ সঞ্জুকে ধরতে অনুরোধ করে বলেন ,তিনি কাউন্টার থেকে
খুচরোটা নিতে ভুলে গেছেন ওটা নিয়েই চলে আসবেন।সঞ্জু কিছু বলার আগেই ভদ্রলোক ব্যাগটা দিয়ে টিকিট কাউন্টারের দিকে ভিড়ে মিশে গেলেন।
সঞ্জু ব্যাগটি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু কাউন্টারতো সামনেই দেরিতো হওয়ার কথা নয়।এদিকে আপ ডাউন দুদিকের ট্রেন বেরিয়ে যায়।
ব্যাগটা নিয়ে সঞ্জু এখন কি করবে!হঠাৎ মনে হয় ব্যাগের মধ্যে বোমা রাখা নেইতো! পরক্ষণেই ভাবে সে কিভাবে সম্ভব !লোকটিতো বেশ বৃদ্ধ, দেখেতো সেরকম কিছু মনে হয়না কিন্তু তাহলে ভদ্রলোক গেলেনই বা কোথায়!
এ এক দায়িত্ব।সঞ্জু তখন ভুলেই গেছে সে মেট্রো স্টেশনে কেন এসেছে।
পুলিশ এসে সঞ্জুকে এবার জেরা করতে শুরু করেছে।কেন সে এখানে এতক্ষন দাঁড়িয়ে আছে?ব্যাগের মধ্যে কি আছে?
সঞ্জু পুলিশকে সেই ভদ্রলোকের কথা বলে।কিন্তু পুলিশ সেকথায় আমল না দিয়ে সঞ্জুকে আটক করে ব্যাগটা খুলে ফেলে।
অবাক কান্ড এত্তো ভারী ব্যাগ এক্কেবারে ফাঁকা,কিচ্ছু নেই শুধু একটা দলা পাকানো কাগজ ছাড়া!
কাগজে কিছু লেখা আছে কিনা জানতে পুলিশের মতো সঞ্জুও কৌতূহলী হয়ে ওঠে।
“জীবন মূল্যবান তাকে আগলে রাখতে হয়
মৃত্যু শূন্যে বিলীন হওয়া ছাড়া আর কিছু নয়,
সমস্যার সমাধান ঠিক একদিন হয়ে যায়
সমস্যা মোকাবিলা করবার সাহস রাখতে হয়”।
ততক্ষনে ষোল বছরের সঞ্জুও পুলিশের জেরার মুখে পড়ে বলে ফেলেছে সে কেন মেট্রো স্টেশনে এসেছে।
সঞ্জুর মা বাবাকে ফোন করা হয়েছে।
সঞ্জু বেশ ঘাবড়ে গেছে।মা বাবার বকুনি অসহ্য হয়ে উঠেছিল,মরে গিয়ে তাদের শায়েস্তা করবে ঠিক করেছিল কিন্তু ওই ভদ্রলোক এমন ঝামেলা পাকিয়ে দিলেন !তবে কাগজে উনি ঠিকই লিখেছেন।কি লাভ হতো মরে গিয়ে!
না খুব বেশি ভুল করে ফেলছিল সে,ভীষণ বোকার মতো কাজ হয়ে যেত।বরং সমাধান করতে মা বাবাকে এবার বোঝাবে সে, লেখাপড়া ঠিক মতো করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোবাইলে গেম খেলবে সে।
“নিজেরাও একটু কম ফোন ঘাটবেন।ছেলের এই অভ্যাস কিন্তু আপনাদের দেখেই হয়েছে”।
বয়স্ক পুরুষ কন্ঠের বলা কথাটি মেট্রো স্টেশনে ভিড়ের মধ্য থেকে শুনতে পেয়েছিল সঞ্জুর মা বাবা।
আজ যে তাদের চরম শিক্ষা হয়েছে।কি ভয়ানক বিপদটাই না ঘটতে যাচ্ছিল।না, আর বকাবকি করে নয়।ছেলেকে ধৈর্য্য নিয়ে বুঝিয়ে সমাধান করতে হবে।
এদিকে মেট্রো পুলিশ অবাক হয়ে গেছে এই ঘটনায়।এও কি সম্ভব!
গতকালই তো এরকমই বয়স্ক ধুতিপাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক প্লাটফর্মে হার্ট এট্যাক করে মারা গিয়েছিলেন।তার হাতেও ঠিক এরকম একটি ব্যাগ পাওয়া গিয়েছিল আর তার মধ্য থেকে কিছু কাগজপত্র উদ্ধার হয়েছিল যা থেকে জানা গিয়েছিল তিনি রিটায়ার্ড স্কুল শিক্ষক।
সমাপ্ত