তৃণ্ময় বেরা, ঝাড়গ্রাম:- রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরই নেতাই গ্রামে একাধিক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবারও নেতাই গ্রামে আসেননি। তাই মুখ্যমন্ত্রী আসার অনুরোধ জানিয়ে সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে চিঠি দিয়েছে নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটি। শুক্রবার নেতাই দিবসের দিনই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির তরফ থেকে মন্ত্রীকে সেই চিঠি দেন নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি নন্তু অধিকারী। নন্তু বলেন, ‘‘নেতাই গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী এত উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি আসেননি। তাই তাঁকে আমরা আসার অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি কিছু চাহিদার কথা বলেছি।’’
রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর নেতাই একাধিক উন্নয়নের কাজ হয়েছে। নেতাইয়ের ঘটনার সময় রাস্তার খারাপ দেখে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্ষমতায় এলেই রাস্তা তৈরি করা হবে। তারপরই ২০১২ সালে লালগড় থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিমি রাস্তা তৈরির জন্য টেণ্ডার হয়েছিল। ২০১৪ সালের জুনে রাস্তার তৈরির কাজ শেষ হয়। কংসাবতী নদীর পাড় লাগোয়া নদী-ভাঙন রোধের কাজ হয়েছে। নেতাই গ্রামে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল প্রকল্প হয়েছে। আবার প্রাথমিক স্কুল, জুনিয়র হাইস্কুল এবং গ্রামের পাঠাগারের নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। জুনিয়র হাইস্কুলটি হাইস্কুলে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি হল হয়েছে। নেতাই গ্রামের ভিতরে ঢালাই রাস্তা হয়েছে। গ্রামের রাস্তায় সৌরবিদ্যুতের পথবাতি হয়েছে। নেতাই গ্রামে কংসাবতী নদী তীরে শ্মশান শেড ও জলের ব্যবস্থা হয়েছে। বিভিন্ন সময় লালগড়ে মুখ্যমন্ত্রী এলেও নেতাই গ্রামে যান নি। এমনকি ২০১৪ সালে ৭ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী আমলাশলোলে গেলেও নেতাই গ্রামে যাননি। তবে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘ শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটি আমাকে চিঠি দিয়েছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাব।’’ শুক্রবার লালগড়ের ঝিটকায় পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে নেতাই গ্রামে ঢুকতে না পারেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে নেতাইয়ের উন্নয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা। নেতাই দিবসের দিন শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘নেতাই গ্রামে শহিদ বেদী আমার ব্যক্তিগত টাকায় তৈরি করা। গত বছর নেতাই গ্রামে ২৮টি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। পুজো অনুষ্ঠান থেকে আমি নেতাই গ্রামের সঙ্গে থাকি। শহীদ পরিবারকে ৫ হাজার টাকা, আহত পরিবারকে ২ হাজার টাকা, এদের চিকিৎসা, পুজোয় জামা-কাপড় দিই।’’ শুভেন্দু দাবি করেছেন, ‘‘কোথায় ছিল এরা ২০১১ সালে। আমি এসে লাশ কুড়িয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরের দিন এসেছিলেন। তখন এখানে ঝাড়খণ্ড পার্টি, সিপিএম পার্টি, জনসাধারণ কমিটি ছিল। তৃণমূলের কোন নাম গন্ধ ছিল না লালগড়ে। আমি এসে জন্ম দিয়েছি পার্টিকে।’’ তবে নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তথা লালগড় অঞ্চল যুব তৃণমূলের সভাপতি জয় রায় বলছেন, ‘‘সাহসিকতার পাঁচ লক্ষ টাকা, পঞ্চায়েত সমিতির আড়াই লক্ষ টাকা কমিউনিটি হল তৈরি শুরু হয়েছিল। পরে দোলা সেন ১৭ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। আর নদী পাড় ভাঙন সেচ দফতর থেকে হয়েছে। এরকম নেতাইয়ে প্রতিটি উন্নয়ন মুখ্যমন্ত্রীর কোনও না কোনও দফতর থেকে হয়েছে। কারোর একক প্রচেষ্টায় হয়নি।’’সেই সঙ্গে জয় জুড়ছেন, ‘‘তখন উনি কোন দলে ছিলেন? এতই যদি ক্ষমতা তাহলে এখন নেতাই গ্রামের জন্য কিছু করুক।’’ তবে মন্ত্রীও জানিয়েছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগের নেতাই যাবতীয় উন্নয়ন হয়েছে। এই কৃতিত্ব শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর।’’