নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- মনসা-লৌকিক দেবী হিসেবে খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০অব্দে সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্গত আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাঁর প্রচলন পরবর্তীতে পৌরাণিক দেবী হিসেবেও খ্যাত।পদ্মপুরাণ,দেবীভাগবত পুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণসহ কয়েকটি উপপুরাণে এই দেবীর উল্লেখ রয়েছে।তবে ইতিহাসবেত্তাদের মতে,মনসা দেবীর বর্তমান মূর্তিরূপে পূজার প্রচলন ঘটে দশম-একাদশ শতকে ।পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে পুরো শ্রাবণ মাস মনসা পুজো হয়। পুজো উপলক্ষে হয় পালা গান ‘সয়লা’। এই পালার বিষয় হল — পদ্মপুরাণ বা মনসা মঙ্গল। সারা রাত ধরে গায়ক দোয়ারপি-সহ পালা আকারে ‘সয়লা’ গান গায়। বেহুলা লখিন্দর চাঁদ সওদাগরের নানান কাহিনী নৃত্য গীত বাজনা সহ পরিবেশন করে থাকেন শিল্পীরা, পুরুষেরা মহিলার কণ্ঠস্বর বেশভূষা পরিধান করে হরবোলা শিল্পীরুপে দশকের সামনে বাংলার রীতিনীতি ও কৃষ্টি কে উপস্থাপিত করে থাকেন। অথচ এত গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও তারা সরকারি শিল্পী কার্ড থেকে বঞ্চিত। শ্রাবণ মাসে এ ধরনের অনুষ্ঠান হলেও, মা মনসার মানসিক পুজো ভক্তদের ইচ্ছা অনুসারে হয়ে থাকে, আর এই রকমই এক পুজোয় আমরা সান্নিধ্য পেলাম মনসা মঙ্গল পালা গানের সদস্যদের। নদীয়ার শান্তিপুরে নিখিল প্রামাণিকের মনসামঙ্গল পালা গান দলের 16 জন প্রতিনিধি নিয়ে আজও বিভিন্ন গ্রামে পালা গানের অনুষ্ঠান করে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাদের শিল্পীসত্তা। তিনি জানান বিগত পঞ্চাশ বছর যাবত ভাই অখিল প্রামানিক এবং মিলন মন্ডল সুপদ সরকারদের মতো এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে তা আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। বর্তমান ইন্টারনেট ডিজিটাল যুগে দর্শক কিছুটা কম থাকলেও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। তার জেঠামশাই স্বর্গীয় সুশীল প্রামানিকের মুখ থেকে শুনে কানা হরিদত্তর প্রথম লিখিত পরবর্তীতে বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল তাকে আকৃষ্ট করেছিলো।
করণা পরিস্থিতির কারণে এবং দীর্ঘ লকডাউনে তাদের মূল পেশা কৃষি কাজ এবং তাঁত বুনে কাপড় উৎপাদনে যেমন ব্যাহত হয়েছে তেমনই ভাড়া মেলেনি পালা গানেরও। তবুও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। শত অর্থ কষ্টের মধ্যেও নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে গেছেন, তবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন সরকার যদি একটু সহযোগিতা করতো, শুধু আমাদের পেটের ভাত নয় বেঁচে থাকতো বাংলার বহু পুরনো রীতি সংস্কৃতি।