সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পথ কুকুরদের আনাগোনা দেখত পাওয়া যায়।এমন কি বিভিন্ন মানুষের দ্বারা আক্রান্তও হয় এই সমস্ত পথ কুকুররা।অনেক সময় অকালে প্রাণ হারাতে হয় তাদের কে। অথচ মানুষের কাছে সর্ব প্রথম পোষ মেনেছিল কুকুর।এছাড়াও একমাত্র কুকুরই মানুষের কাছে প্রভুভক্ত এবং বিশ্বস্থ বান্ধব হয়ে ওঠে। যা অন্য কোন প্রাণীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না।যদিও অনেক ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে। তবে কুকুর তার প্রভুর জন্য প্রাণ দিতেও কুন্ঠিতবোধ করে না।এছাড়াও কুকুর সহজে কাউকে ক্ষতিও করে না যা তাদের স্বভাব। এতো গুণের অধিকারী হওয়া স্বত্বেও পথ কুকুররা যখন তখন কোন কারণ ছাড়াই আক্রান্ত হয় সভ্য সমাজের মানুষের কাছে। তবে নামী দামী নামজাদা কুকুর আবার মানবসমাজে বেশ আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে। এমন কি দেশের সেনাবাহিনীতেও কুকুরের আধিপত্য বিশাল ভাবে রয়েছে।
কুকুরে এমন ভাবাবেগ আচরণের জন্য পথ কুকুরদের নিরাপত্তা দিতে পথে নামলেন হেলথ অ্যানিমেলস্ নামক এক সংস্থা।মূলত এই সংস্থা পথ কুকুরদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে গঠন করা হয়েছে। কেন এমন উদ্যোগ? এ প্রসঙ্গে সংস্থার সদস্য তথা ক্যানিংয়ের তালদি এলাকার যুবক অভিক কুমার গুপ্তা’র কথায় ‘আজ থেকে প্রায় বছর দশেক আগের কথা। সেই সময় স্কুলের ব্যাগ ঘাড়ে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে একটি কুকুর কে গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। সেই মুহূর্তে অসহায় পথ আর্তনাদ শুনে কুকুরের জীবন বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু আঘাত এতোবেশি যে তাকে বাঁচাতে পারেন নি। তবে মৃত্যুর আগেই স্কুলের ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে আহত পথ কুকুর কে জল খেতে দিয়েছিলেন।তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়,মারা যায় কুকুর টি। সে দিনের সেই মরণাপন্ন কুকুর কে বাঁচাতে না পেরে ওই যুবকের মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সেই থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে পথ কুকুরদের সেবায় নিজে কে আত্মনিয়োগ করেন।এরপর একাধিক রোগগ্রস্থ,দুর্ঘটনাগ্রস্থ কুকুর কে রাজপথ থেকে তুলে এনে সুস্থ করে পরিবেশে ছেড়ে দিয়েছেন। এমন কাজের জন্য প্রশংসা দুরের কথা সাধারণ মানুষের কাছে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। তবে হাল ছাড়েন নি। চালিয়ে গিয়েছেন এমন পশু প্রেমের কর্মযঞ্জ।পরবর্তী সময় কুকুরের উপর কোন প্রকার অত্যাচার হতে দেখলেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।দীর্ঘদিনের কর্মকান্ড দেখে যুবকের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে আসেন এলাকার দীপ ভট্টাচার্য,সান্তনু ধর,শ্রীজিতা দে চৌধূরী,রাম দেবনাথ,পশু চিকিৎসক আলি গাজি সহ অন্যান্যরা
সংঘবদ্ধ হতেই পথ কুকুরদের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা।
গত ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর পথ কুকুরদের নিরাপত্তা ও সেবা কাজের জন্য গঠন করেন হেলথ্ অ্যানিমেলস্ নামক একটি সংস্থা।সংস্থার মাধ্যম্যে সমাজসেবার কাজ করার মানসিকতা নিয়ে অসংখ্য পশু চিকিৎসক এবং এলাকার যুবকরা যোগদান করেন।ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে পথ কুকুরদের নিরাপত্তা এবং সেবার জন্য সংস্থা জোর কদমে কাজ শুরু করেছে। এযাবৎ প্রায় ১৫/২০ টি অসহায় কুকুর কে সেবা শুশ্রূষা করে বাঁচিয়ে তুলেছেন।
কোথাও অকারণে কুকুর কে অত্যাচার করলে তার প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তাঁরা।
ফলে এক প্রকার ক্যানিং মহকুমা এলাকায় পথ কুকুরদের ত্রাতা হয়ে উঠেছে হেলথ্ অ্যানিমেলস্।
সংস্থার মূল কারীগর অভিক কুমার গুপ্তার জানিয়েছেন ‘অকারণে সাধারণ মানুষের দ্বারা প্রতিনিয়ত অত্যচারিত হচ্ছে পথ কুকুরের দল।এমন কি অনেক গাড়ি চালকের জন্য দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য পথ কুকুর।ফলে সেই সমস্ত মানুষদের বিরুদ্ধে সরকারী ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অত্যাচারের মাত্রা কমবে। সরকারী ভাবে পথ কুকুরদের কথা চিন্তা করে তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা জরুরী।তাহলে হয়তো অকালে অসংখ্য প্রভুভক্ত কে ঝরে যেতে হবে না’।