সুন্দরবনে বাঘের কবলে পড়ে ধারাবাহিক মৃত্যু মৎস্যজীবীদের।

0
439

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং : – সুন্দরবনে বাঘের আক্রমনে মৃত্যু অব্যাহত। পরপর তিন দিনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্য হ্যাট্রিক করলো। রবিবার সুন্দরবনের ঝিলার ৩ নম্বর জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন কুমীরমারীর বাসিন্দা অরবিন্দ বিশ্বাস(৪৩)। কুলতলি থানার দেউলবাড়ির বাসিন্দা শঙ্কর সরদার (৩৫)গিয়েছিলেন বেনিফেলি জঙ্গলের নদীখাড়িতে কাঁকড়া ধরতে। সোমবার তাকে বাঘে আক্রমণ করে। সঙ্গীরা উদ্ধার করে আনলেও বাঁচাতে পারেনি।মঙ্গলবার সকালে কলকাতার পিজি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।অন্যদিকে মঙ্গলবার সকালে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে মৃত্যু হল গোসাবা ব্লকের চিত্ত সরকার(৫৪) নামে এক মৎস্যজীবীর।পরপর তিন দিনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা তিনজন। এমন ঘটনায় সমগ্র সুন্দরবন জুড়ে মৎস্যজীবীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে।
পেটের দায়ে বড়ই দায়। পরিবারের মুখে দুবেলা দুমুঠো অন্ন তুলে দিতেই তাই প্রতিনিয়ত দরিদ্র মৎস্যজীবীদের ছুটতে হয় সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে কাঁকড়া ধরতে। আর এই কাজ করতে গিয়ে বাঘের হামলায় প্রাণ গিয়েছে বহু মৎস্যজীবীর। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল চিত্ত সরকারে নামও।

গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন কোষ্টাল থানার অন্তর্গত লাহিড়ীপুরের পরশমণি গ্রামের বাসিন্দা চিত্ত সরকার।কাঁকড়া ধরে পরিবারের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে এবং স্ত্রী কে নিয়ে কোন রকমের দিনযাপন করেন।পেটের তাগিদে প্রতিবেশী মৎস্যজীবী সুবল মন্ডল ও সুব্রত কয়াল কে নিয়ে সোমবার ভোরে নৌকায় চেপে ঝিলার ৪ নম্বর জঙ্গলের চিলমারী খালে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন।প্রথমদিন বেশকিছু কাঁকড়াও ধরেছিলেন।মঙ্গলবার সকালে ঝিলা ৪ নম্বর জঙ্গলের চিলমারী খালের নদীখাড়িতে আনমনে কাঁকড়া ধরছিলেন। সেই সময় সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অরণ্য থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে আসে।টার্গেট করে মৎস্যজীবী চিত্ত সরকার কে।সকলের অলক্ষ্যে নিঃশব্দে আচমকা নৌকায় ঝাঁপ দেয় বাঘ।থাবা মেরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই মৎস্যজীবীর উপর।একলহমায় তাকে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে যায় গভীর জঙ্গলে।সঙ্গীকে বাঁচানের জন্য কাঁকড়া ধরার শিক,লাঠি আর নৌকার বৈঠা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন দুই সঙ্গী।দীর্ঘ প্রায় মিনিট কুড়ি ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় বাঘে মানুষে।শিকার ফেলে বাঘ অপর দুই মৎস্যজীবীর উপর আক্রমণ করে।বাঘের রুদ্র মূর্তির সামনে অসহায় হয়ে পড়েন দুই সঙ্গী মৎস্যজীবী।বেগতিক বুঝে রণে ভঙ্গদেয় তারা। বাঘ তার শিকার নিয়ে গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়।কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসেন সঙ্গী দুজন। বাঘের মুখ থেকে দেহ ছিনিয়ে আনার সাহস হয়নি তাদের। তবে ফিরে এসেই গ্রাম ঘটনার খবর দেন তারা।
এমন মর্মান্তিক খবর পেয়ে কান্না ভেঙে পড়েন মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের সদস্যরা। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।