মনিরুল হক, কোচবিহার: সম্ভাব্য বাম প্রার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে। গতকাল রাতে দিনহাটা শহরের ৬ জন সম্ভাব্য বাম প্রার্থীর বাড়িতে গিয়ে ওই হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এক সম্ভাব্য বাম প্রার্থীর ওষুধের দোকান নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই দিনহাটার রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। হুমকির শিকার বাম প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দিনহাটা থানায় পৃথক পৃথক ভাবে ৪ টি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
ওই ঘটনা নিয়ে দিনহাটার সিপিআইএমের এড়িয়া কমিটির সম্পাদক দেবাশিস দেব অভিযোগ করে জানিয়েছেন, তাঁদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরী, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী মুন্না মিত্র, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী সৌহম চক্রবর্তী, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী অমিত মিত্র এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী প্রদীপ ঘোষের বাড়িতে গিয়ে তৃণমূল আশ্রিত বাইক বাহিনী গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার জন্য হুমকি দেয়। ওই বাইক বাহিনীর নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাঁদের নাম ধরে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
দেবাশিস বাবু বলেন, “হুমকির পরেও আমাদের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। জীবন গেলেও তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে প্রত্যেক প্রার্থীরা জানিয়েছেন। দিনহাটায় তৃণমূল যদি এতই উন্নতি করে থাকে, তাহলে কেন এখন হুমকি দিতে হচ্ছে? এই প্রশ্ন এখানকার তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। প্রশাসনের কাছে আবেদন পৌর নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে এই বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আর দিনহাটায় ভয়ের পরিবেষ দূর করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সাধারণ মানুষকে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার জন্য আবেদন করছি।”
দিনহাটা শহরে ২০১৯ এর লোকসভা এবং ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের নিরিখে বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে ছিল। কিন্তু বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল বিজেপি পিছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে যায়। কিন্তু বামেরা বহুদিন থেকেই দিনহাটায় সাংগঠনিক শক্তি হারিয়ে কার্যত কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। তারপরেও পুরসভা নির্বাচনে বাম প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ কেন উঠছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে? এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। যদিও এবিষয়ে কোন তৃণমূল নেতার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তবে বামেদের দাবি, রাজ্যে ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূল এখানে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী মনে হলেও শহরের সাধারণ মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ। তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে কোন্দল, হুমকি ভয় দেখানো, কিছু নেতার রাতারাতি কোটিপতি হয়ে ওঠা, দুর্নীতি এসব আর শহরের বাসিন্দারা মেনে নিতে পারছেন না। তাই মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারলে তৃণমূল আর দিনহাটায় ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না। এই ভয়েই বাইক বাহিনী নামিয়ে আতঙ্কের পরিবেষ সৃষ্টি করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলে বামেদের দাবি।