নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদাঃ- পাড়ায় পাড়ায় রেশনের মতো এবার পাড়ায় জলাশয়। এক নজরে রাস্তা না জলাশয় দেখলে বোঝা যাবে না। বিক্ষুব্ধ মানুষরা বলছেন রাজ্য সরকার পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন রকম প্রকল্প নিয়ে আসছে সেরকম ভাবেই পাড়াতেই এবার জলাশয় প্রকল্প দেখতে পাবে সরকারের উদাসীনতার কারণে। এমনটাই চিত্র ধরা পড়েছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার সুলতান নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নানারাহি গ্রামে। ওই গ্রামের প্রবেশের রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ ওই রাস্তা দিয়ে গ্রামবাসীরা গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ে যেতে ভয় পান। বারে বারে স্থানীয় পঞ্চায়েত ব্লক অফিসে জানিয়ে কোনো ফল হয়নি। এলাকার জন-প্রতিনিধি এ ব্যাপারে উদাসীন।বাধ্য হয়ে এবার প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন গ্রামবাসী।এদিন তারা রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় জুড়ে। যদিও ঘটনাকে ঘিরে কটাক্ষ করেছে এলাকার বিজেপি জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া। তাদের দাবি রাজ্যজুড়ে দুর্নীতি পরায়ন তৃণমূল সরকার উন্নয়নের নামে কাটমানির সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। এর জন্যই গ্রাম বাংলার রাস্তাঘাটের এই অবস্থা। পাল্টা যদিও তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত উপ-প্রধান ওবায়েদূর রহমান বলেন ওই রাস্তার টেন্ডার তোলা আছে। এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। গোটা ঘটনায় শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির কাজিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার নানারাহি গ্রামের ভেতরে প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা অবস্থায় রয়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় জল। জল জমে রাস্তায় জলাশয়ের আকার ধারণ করে। এ বিষয়ে বারবার এলাকার প্রশাসন জন-প্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ভোট আসলে মিলে প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ভোট চলে গেলে আবার একই অবস্থায় চলে যায় রাস্তা। দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীদের। গর্ভবতী মহিলাদের এই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে ভয় পান এলাকার বাসিন্দারা। এবার তাই বাধ্য হয়ে এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। এই রাস্তার ওপরে ধানের চারা লাগিয়ে বিক্ষোভ করলেন গ্রামবাসীরা। আগামীতে এই রাস্তা নির্মাণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিলেন গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজিমুল হক বলেন, রাস্তা সব সময় কর্দমাক্ত অবস্থায় থাকে। প্রসূতিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। বাচ্চাদের পড়াশোনা করতে নিয়ে যেতে অসুবিধা হয়। বর্ষার সময় আমরা গ্রামের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায় পুরো। দ্রুত রাস্তা মেরামত না হলে এরপর আমরা বৃহত্তর আন্দোলন করবো এবং প্রয়োজনে ভোট বয়কট করব।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদেক আলী বলেন, রাস্তা যানবাহন চলাচলের অযোগ্য। পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক সব জায়গায় বারবার জানিয়েছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের। সরকার যে দুয়ারে সরকার কর্মসূচি করছে সেই জিনিস ঢোকার জন্য রাস্তার অবস্থা এতটাই বেহাল যে ঢুকতে পারবে না গ্রামে।”
সুলতান নগর গ্রাম-পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা তথা উপ-প্রধান ওবায়দুর রহমান বলেন, আমাদের আমলে ৮০% কাজ হয়ে গেছে। মানুষের চাহিদা মেটানো যাবে না। মানুষ চাইছে যেটুকু বাকি আছে ওইটুকু হয়ে যাক। ওই রাস্তার টেন্ডার তোলা আছে। এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।
জেলা বিজেপি সম্পাদক কিষান কেডিয়া কটাক্ষ করে বলেন, দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মত দুয়ারে জলাশয় হয়ে গেছে। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। দুর্ঘটনা ঘটছে। সব কিছুতেই কাটমানি হয়ে গেছে। কাটমানি ছাড়া এই সরকার চলে না।
চাঁচলের মহকুমা শাসক কল্লোল রায় বলেন, বিষয়টি এখনই শুনলাম। সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জন-প্রতিনিধিরা মুখে বারবার প্রচুর উন্নয়নের কথা বলছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এত যদি উন্নয়ন হয়ে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমছে না কেন? কেন মানুষ অভিযোগ জানানোর পর সুরাহা হচ্ছে না? বাধ্য হয়ে তখন মানুষকে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে এই ব্যাপার গুলো মানবিক ভাবে দেখা।