তৃণ্ময় বেরা, ঝাড়গ্রাম : স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষকতা করতেন তিনি । অবসর নেয়ার কয়েক বছর পর প্রয়াত হন ওই শিক্ষিকা । প্রয়াত শিক্ষিকার একাউন্টে পড়ে ছিল দু’লক্ষ টাকা । সেই টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে স্কুলের মান উন্নয়নের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিল প্রয়াত ওই শিক্ষিকার ভাই ও তার স্ত্রী । মঙ্গলবার এমনই এক নজিরবিহীন ঘটনা সাক্ষী হয়ে রইল ঝাড়গ্রাম শহরের ঝাড়গ্রাম বাণীতীর্থ হাই স্কুল ।
১৯৬০ সালে বাণীতীর্থ সোসাইটির উদ্যোগে প্রথম স্কুল শুরু হয় । তার কিছুদিন পরেই সরকারি মান্নত পাই এই বিদ্যালয় । সেই সময় থেকে ওই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন জ্যোৎস্না ব্যানার্জি । তিনি ইতিহাসের শিক্ষিকা ছিলেন । স্কুল শুরু থেকেই তিলে তিলে স্কুলের বড় হয়ে ওঠা সবকিছুরই সাক্ষী তিনি । তাই স্কুলের প্রতি ক্ষেত্রেই তার এক অন্যধরনের সহানুভূতি ছিল । ২০০৩ সালে অবসর হন তিনি । শিক্ষা ও শিক্ষকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি বিয়ে করেননি । ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তান কে নিয়েই ছিল তার পরিবার । কিন্তু কালের নিয়মে প্রায় ৭৫ বছর বয়সে ২০২০ সালে তিনি প্রয়াত হন । তার ব্যাংকের একাউন্টে নমিনি রেখেছিলেন তার ভাই দেবাশীষ ব্যানার্জি কে। দিদি জ্যোৎস্না ব্যানার্জীর মৃত্যুর পর তিনি জানতে পারেন তার দিদির অ্যাকাউন্টে এখনো দু লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে তিনি দিদির অ্যাকাউন্টে টাকা তুলে স্ত্রীর ও পরিবারের সঙ্গে সহমত হয় স্কুল উন্নয়নের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে টাকা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । সেইমতো তিনি এদিন স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন । দেবাশীষবাবু সঙ্গে এসেছিলেন তার স্ত্রী গৌরী ব্যানার্জি । দেবাশীষবাবু ও গৌরী দেবী বলেন, দিদিকে সব সময় দেখেছি তার স্কুলের প্রতি এক অদম্য ভালোবাসা । সারাটা জীবন তিনি শিক্ষাও শিক্ষকতা নিয়েই থাকতেন । স্কুলের কথা ভাবতেন । তাই আমরা দুজনে ও আমাদের ছেলেমেয়েরা সকলে মিলে আলোচনা করি দিদির টাকা স্কুলের উন্নয়নকাজ এই খরচ হোক । তাই এদিন আমরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তীর্থদ্রুতি ভাওয়াল এর হাতে তুলে দিলাম । শহরের বাসিন্দা দেবাশীষবাবু অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী । তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন । মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ও ছেলে কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন ।
দেবাশীষবাবু ও তার স্ত্রী গৌরী দেবী স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে টাকা তুলে দেয়ার সময় প্রধান শিক্ষক সহ উপস্থিত ছিলেন স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি সুদেব কুমার সিংহ ও স্কুলের বর্ষিয়ান শিক্ষক সুখেন্দু করণ । এদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক তীর্থদ্রুতি ভাওয়াল বলেন, জ্যোৎস্না ব্যানার্জি স্মৃতি পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে কৃতি ছাত্র ছাত্রীদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা ভাবনা চিন্তা করছি । প্রয়াত শিক্ষিকা জ্যোৎস্না ব্যানার্জির ভাই দেবাশীষ ব্যানার্জি ও তার স্ত্রী গৌরী ব্যানার্জিকে এই উদ্যোগ নেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই । এই অর্থের মাধ্যমে স্কুলের মান উন্নয়নের পাশাপাশি দুস্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরও পাশে দাঁড়াতে পারবো আমরা ।