৪৫ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক ড. রামপ্রসাদ বিশ্বাসের লেখা “দিলীপ রায় জীবন ও সাহিত্য” গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।

0
1407

কলকাতা, নিজস্ব সংবাদদাতা:- ৪৫ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় (০৬|০৩|২০২২) বিশিষ্ট সাহিত্যিক ড. রামপ্রসাদ বিশ্বাসের লেখা “দিলীপ রায় জীবন ও সাহিত্য” গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল গতকাল । এই মহতী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কিংবদন্তী স্বনামধন্য সাহিত্যিক ষষ্টীপদ চট্টোপাধ্যায়, এপার-ওপার বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিক ড. দেবব্রত দেবরায় (আগরতলা), বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গ্রন্থ প্রণেতা ড.রামপ্রসাদ বিশ্বাস, কবি ও নাট্য ব্যক্তিত্ব আরণ্যক বসু, বিশিষ্ট কবি জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ, আনন্দ প্রকাশনের কর্ণধার নিগমানন্দ মণ্ডল ও আরও শ্রদ্ধাভাজন বরিষ্ঠ কবি ও সাহিত্যিক । আশীর্বাদ করলেন বিশিষ্ট কবি কমল দে শিকাদার ও বরিষ্ঠ কবি কৃষ্ণা বসু । “সততা ও নিষ্ঠা” সম্বল করে দরিদ্রতার মধ্যে কঠোর পরিশ্রম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কাহিনি “দিলীপ রায় জীবন ও সাহিত্য” গ্রন্থে তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. রামপ্রসাদ বিশ্বাস মহাশয় ।


শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক ড.রামপ্রসাদ বিশ্বাসের ভাষায়, “আমি কোনও সাহিত্যিকের জীবদ্দশায় তাঁর জীবনী লেখার সুযোগ পাইনি । শ্রদ্ধেয় কথা সাহিত্যিক দিলীপ রায়কে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি । তাঁর জীবন দর্শন আমাকে খুব আকৃষ্ট করে । সততা, আত্মবিশ্বাস ও নিয়মানুবর্তিতা তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র । এহেন ব্যক্তিত্বের জীবনী লেখার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য ।” তারপর ড. বিশ্বাসের ক্ষুরধার লেখনীর উপস্থাপনা “দিলীপ রায় জীবন ও সাহিত্য ” গ্রন্থখানি । যার বাস্তব রূপ সম্ভব হয়েছে কলকাতার নামজাদা “আনন্দ প্রকাশন” সংস্থার সৌজন্যে । আনন্দ প্রকাশনের কর্ণধার নিগমানন্দ মণ্ডল বললেন, “দিলীপ রায় এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্য জগতে একটি ব্রান্ড নেম । তাঁর প্রত্যেকটি গ্রন্থ পাঠক সমাজে ভীষণভাবে সমাদৃত । গ্রাম বাংলার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এত সুন্দর তাঁর লেখার পটভূমি । যেসব সুহৃদ পাঠক দিলীপ রায়ের লেখা পড়েছেন, তাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাঁর লেখার ক্ষুরধার । তা ছাড়া তাঁর লেখায় অতিরিক্ত সংযোজন নারীর শিক্ষা, নারীর বিশ্বায়ন, নারীর মূল্যায়ন, নারীর স্বাধীনতা, নারীর উন্নয়ন, ইত্যাদি । আনন্দ প্রকাশনের পক্ষ থেকে কথা সাহিত্যিক দিলীপ রায়কে বিনম্র শ্রদ্ধা ।“
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন কবি শোভন ব্যানার্জী । পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল স্তরের সম্মাননীয় মানুষদের গ্রন্থটি সংগ্রহ করার (প্রাপ্তিস্থানঃ আনন্দ প্রকাশন +৯১ ৬২৯০৩১৬৩০৪ ) অনুরোধ রইল ।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি কথা সাহিত্যিক দিলীপ রায় ভাল থাকুন, লেখার জগতে আরও অনেকদিন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকুন । “সব খবর” পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁকে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ।


কথা সাহিত্যিক দিলীপ রায় সম্পর্কে দুটি কথাঃ
শ্রী দিলীপ রায়’এর জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার বাজারসৌ স্টেশন সংলগ্ন গৌরীনগর গ্রামে । পিতার নাম দ্বিঁজেন্দ্র লাল রায় ও মাতা শ্যাঁমাদাসী রায় । তাঁর জন্ম, বেড়ে উঠা এমনকি শিক্ষা সমস্তটাই গ্রাম থেকে । ভীষণ দারিদ্রতা ও কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে সংগ্রাম করে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন (উচ্চ-শিক্ষা বি-কম, এম-এ, সি-এ-আই-আই-বি, মুম্বাই) । যার জন্য জন্ম থেকেই শ্রী রায় গ্রাম-বাংলার প্রতি সতত সংবেদনশীল । যদিও তাঁর জন্মভিটার গ্রাম আজও অবহেলিত, পুরোটাই অনুন্নত । তাঁর লেখনির ক্ষুরধার ও অনবদ্য সৃষ্টির জন্য তিনি বরিষ্ট “কথা সাহিত্যিক” হিসাবে বাংলা সাহিত্যের জগতে প্রতিষ্টিত ও স্বীকৃত ।
পশ্চিম বঙ্গের মাননীয় প্রাক্তন রাজ্যপাল, শ্রী কেশরী নাথ ত্রিপাঠী, বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করে কথা সাহিত্যিককে সম্মান জানিয়েছেন (চিঠির তারিখ ০৩.০৪.২০১৯) ।


এমনকি ভারতের প্রাক্তন রাষ্টপতি, মাননীয় প্রঁণব মুখার্জী কথা সাহিত্যিক দিলীপ রায়কে তাঁর বাসভবনে ডেকে আশীর্বাদ করে (তারিখ ঃ ০২.০৩.২০১৯) বলেছিলেন, “দিলীপ, তুমি আমার পাশে বসো । তোমার গৌরীনগর গ্রামে আমি যাইনি একথা ঠিক, কিন্তু তোমার এলাকা আমি চিনি । সালার, বাজারসৌ, কান্দি, আমার পরিচিত এলাকা । সেই হিসাবে তুমি আমার দেশের ছেলে । তোমার “নারী জাগরণের দশটি উপন্যাস” আমার পড়ার ইচ্ছা রইলো । আর একটা কথা, তুমি কিন্তু লেখা ছাড়বে না । আমৃত্যু লিখে যাও । সরকারি স্বীকৃতি না পেলেও পাঠক তোমাকে সম্মান দেবে ।“ স্যারের স্নেহমাখা কথাগুলি তাঁর কাছে অমৃত সমান ।
শ্রী রায়ের উৎকৃষ্ট সৃষ্টির পরম্পরা সর্বজনবিদিত । অভিজ্ঞতার নিরিখে, গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ও নারীদের স্বাবলম্বনের দিক নিয়েই তাঁর সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি । সাহিত্যির সৃষ্টিতেই তাঁর ধ্যান জ্ঞ্যান ।
এযাবৎ তাঁর প্রকৃষ্ঠ উপন্যাস ঃ
১। শ্রীপুলক, ২। জেদি মেয়ে, ৩। বোবা মেয়ে, ৪। অভাগীর মন্দ কথা, ৫। জীবন যুদ্ধে নারী, ৬। অপয়ার সংসার, ৭। দজ্জাল মেয়ে, ৮। সাহসিনী রমণী, ৯। তেজস্বিনী দামিনী, ১০। তাতিয়ার শুভ-যাত্রা। ১১। *নারী জাগরণের দশটি উপন্যাস* ১২। গাঁয়ের মাটির ঝাঁঝ, ১৩। ঝাঁঝালো বউ, ১৪। আদর্শ টী স্টল, ১৫। মহিলা ঢাকির ঝাঁঝ ।
গল্প সংকলনঃ-
১। গল্প এক ডজন, ২। স্বনির্বাচিত ৫০টি শ্রেষ্ঠ গল্প ।।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত হচ্ছে এবছরের সারা জাগানো আরও একটি উপন্যাস আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় । তা ছাড়া “স্বরচিত ১০১টি প্রিয় গল্প” প্রকাশের পথে ।
দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক-মাসিক- ত্রৈমাসিক- পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখেন । অসংখ্য পত্রিকায় প্রচুর গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে । দুখানি উপন্যাস (১) অভাগীর মন্দ কথা ও (২) অপয়ার সংসার, ধারাবাহিকভাবে “ত্রিপুরা দর্পন” (ত্রিপুরা রাজ্যে) দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ।
বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা “দৈনিক সবুজ বার্তা”এর নিয়মিত প্রবন্ধ ও গল্প লেখক । এছাড়া “দৈনিক জবাবদিহি” “জনগণের খবর”, তৃণমূল বার্তা”, “বিজয় প্রতিদিন” ইত্যাদি পত্রিকা থেকেও তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে । এছাড়া অন্যান্য মাসিক, ত্রৈমাসিক পত্রিকায় বাংলাদেশে শ্রী রায়ের লেখা প্রকাশিত হচ্ছে । আমাদের দেশে একসময় “একদিন” দৈনিকে সম্পাদকীয়তে শ্রী রায় নিয়মিত লিখতেন (৪নং পাতায়) । তাছাড়া “যুগসঙ্খ”, “সুখবর” “সব খবর” “একদিন” ইত্যাদি দৈনিকে তাঁর লেখা প্রবন্ধ ও গল্প প্রায়শই বের হচ্ছে । “সব খবর” পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ “মনসারস”এ বর্তমানে শ্রী রায়ের ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি রবিবার বের হচ্ছ । এছাড়া টি ভি চ্যানেলে (বার্তা-kalyani, CTN tv, Channel 26, Dhaka, Samay Barta tv, B’desh, Trinumul Tv, MASP Tv, etc.) তাঁর সাক্ষাৎকার নিঃসন্দেহে নজরকাড়া । “দিলীপ রায় ফ্যান্স ক্লাব” গত বুদ্ধ পূর্ণিমার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে (প্রতিষ্ঠিতঃ ৭-৫-২০২০) তাতে প্রায় ৫০০ জন সদস্য ।
বিভিন্ন সাহিত্য গোষ্ঠী দেশে ও বাংলাদেশে শ্রী রায়কে তাঁর বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য সম্মাননা দিচ্ছেন । বাংলাদেশের কয়েকটা সাহিত্য গোষ্ঠীতে তিনি উপদ্বেষ্টা হিসাবে রয়েছেন । আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি, সহ-সভাপতি, উপদ্বেষ্টা, ইত্যাদি হিসাবে রয়েছেন ।
এহেন বরিষ্ঠ কথা সাহিত্যিকের নিজস্ব জীবন দর্শন আজ ভীষণ প্রাসঙ্গিকঃ সততা, স্বচ্ছতা, ও নিয়মানুবর্তিতা । দীর্ঘ বাইশ বছর সাহিত্য সাধনার মধ্যেও কর্মজীবনে বিভিন্ন জনহিতকর কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতেন এবং এখনও রাখছেন । তিনি মনে করেন সমাজ উন্নয়নে তাঁরও নিযুক্ত থাকা মানবিক ধর্ম । তাই শ্রী দিলীপ রায় মানুষের মধ্যে সমাজ সেবার নিরিখে একজন উজ্জল দৃষ্টান্ত ।