বাংলা জনপদের শিল্প-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকারে মধ্য দিয়ে শেষ হলো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ‘ডেবরা গ্রামীণ উৎসব’ -২০২২ এর বর্ণাঢ্য উৎসব…….।

0
502

ডেবরা, সৌগত রাণা কবিয়াল:- ঋতু বৈচিত্রময় বাংলায় কৃষি নির্ভর জনপদে বেঁচে থাকা সাধারণ মাটির মানুষের উৎসবগুলো যেন আমাদের ঋতু-রঙের মতোই বর্ণিল রামধনু…!

অঘ্রাণের পাঁকা ধানের শীষের গন্ধে মাতাল কৃষকের হাসিমুখকে ঘিরে গ্রাম জনপদের প্রাচীণ বটের ছায়ায়, হাজার বিকিকিনির পসরা কিংবা গ্রামীণ ঐতিহ্যগত পুজো-পার্বণে ঢাকের ডগায় কাশফুলের শিশু-দোল দেখতে দেখতে উন্মাতাল কিশোরের ঘাস-মাটির ধুলো উড়িয়ে বাঁশের বাঁশির সুর ছুঁতে এগিয়ে যাওয়ার সেই স্বপ্নময় শৈশব…..
সে যাই হোক না কেন, বাঙালির পালা পার্বণের উৎসব মানেই যেন, সেই চীরচেনা দশ গ্রামের সবচাইতে বড় বিকিকিনির বাজারে অথবা স্কুলের বিশাল মাঠ প্রাঙ্গণে প্রিয় নাগরদোলার মেলা…! বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষের আপন হাতের মমতায় তৈরী স্থানীয় ঐতিহ্যের হরেক রকমের খাবার থেকে শুরু করে, হাতের নকশায় বোনা শীতল পাটির গন্ধ, রঙ বেরং এর বাহারী দেশীয় খেলনা, ছেলে-বুড়োদের চোখ কপালে তোলা সেই সার্কাসের যাদুর মানুষদের বিষ্ময়কর সব খেলা দেখা, অথবা পর্দার আড়ালে নিপুণ হাতের খেলায় পুতুল নাচের নেশা, যাত্রা পালায় রাত পালাতে গ্রামের সবচাইতে সুবোধ ছেলেটার হঠাৎ করে কেমন সাহসী হয়ে ওঠার সেই বর্ণিল শৈশব, বাবার হাত ধরে চুলে ফুলের ফিতে এঁকে ছোট্ট কিশোরীর কাঁচের চুড়ির,মাটির খেলনার আদুরে বায়না…..

সব- সব- মিলিয়ে একসময় নিজেদের সংস্কৃতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে নিতে এভাবেই নিজেদের পেশার প্রায় সবটা জুড়েই ছিলো মানুষের পরম যত্ন হাতের পরশ…..আর সেই পরশ মায়ের মমতার মতোই যেন ভীড় করে জড়িয়ে থাকতো মানুষের প্রাণের উৎসব প্রিয় ‘মেলা’র আকাশ-মাটি জুড়ে….!

সময় ছুটে সভ্যতার উচ্চতর পাহাড় টপকে যাওয়ার দিনে বাংলার মানুষের আবেগ-ভালোবাসা-বিনোদনের যায়গায় আজও অনেকটাই জড়িয়ে আছে গ্রামীণ সেই সব মেলার গল্পগাঁথা…যদিও ইদানীং আজকের শহুরে জীবনে, পাশ্চাত্যে বাবুয়ানায় বাংলার ঐতিহ্যগত মেলার ধরন পালটে অনেকটা কিম্ভুতকিমাকার হয়ে গেছে… তবুও পশ্চিমবাংলার শহর বহির্ভূত জেলাগুলোতে আজও গ্রামীণ মেলা মানেই যেন সেই ভিন্ন-ভিন্ন জনপদের ভিন্ন সংস্কৃতির রুপ-গন্ধের ঐশ্বর্য পসরায় দাদুর হাত ধরে মন ভরে ঘুরে এসে সেই গোলাপি হাওয়াই মিঠাই হাতে আপন মায়ের কাছে হাসি মুখে ঘরে ফেরা…!

“ডেবরা গ্রামীণ উৎসব”…

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অনুষ্ঠিত বাংলার গ্রামীণ জনপদের এমনই এক ঐতিহ্যবাহী শিল্প-সাংস্কৃতিক উৎসব…. যে উৎসবের অলংকারিক মেলবন্ধনে অকপটে নিজের জন্ম-মাটির শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে সুখী চোখে অহংকারী হতে পারে আপামর বাঙালি-মন….!

বর্তমান সময়ের বাংলার চলচিত্রের প্রিয় মুখ ও ঘাটাল লোকসভার মাননীয় সাংসদ শ্রী ‘দীপক অধিকারী দেব’- এর উদ্যোগে, ডেবরা বিধান সভার বিধায়ক ও পশ্চিম বাংলা সরকারের স্থানীয় মাননীয় মন্ত্রী (কারিগরি শিক্ষা ও কর্মদক্ষতা উন্নয়ন দপ্তর) শ্রী
ডঃ হুমায়ুন কবিরের আন্তরিক সহযোগিতায়, ডেবরা পঞ্চায়েত কমিটির কৃষি ও সেচ কর্মাদক্ষ মাননীয় শ্রী বিবেকানন্দ মুখার্জির পৃষ্ঠপোষকতায়, ডেবরা বিধান সভার সাংসদ প্রতিনিধি এবং ডেবরা গ্রামীণ উৎসব কমিটির বর্তমান সভাপতি মাননীয় শ্রী সীতেশ ধারার সার্বিক তত্তাবধানে এবং ডেবরা গ্রামীণ উৎসব কমিটির সম্পাদক মাননীয় শ্রী অশোক কুমার রায় সহ মেলার আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যগনের আন্তরিক প্রচেষ্টায়..
“ডেবরা গ্রামীণ উৎসব” শীর্ষক এই মেলাটির, ডেবরা হরিমতি স্কুলের বিশাল মাঠ প্রাঙ্গণে গত ২৬শে ফেব্রুয়ারিতে আলোকিত শুভারম্ভ হয়ে গত ৪ঠা মার্চে এর আড়ম্বরপূর্ণ সমাপ্তি হলো…!

সাত দিন ব্যাপি এই মেলায় বরাবরের মতোই অভূতপূর্বভাবে ফুটে উঠলো স্থানীয় শিল্প-সংস্কৃতি-জীবন ধারার অসাধারণ ছবি-পট, যা শব্দ কিংবা সেলুলয়েডের ফ্রেমে আটকে দিলে যেন এই উৎসবের পরিপূর্ণ আনন্দের সঠিক আস্বাদন অসম্পূর্ণ রয়ে যায়…!

একজন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আমার প্রথমবারের মতো সৌভাগ্য হলো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মাটি-মানুষের প্রাণের মেলা ‘ডেবরা গ্রামীণ উৎসব’ এর ঐতিহ্যগত উজ্জ্বলতা আপন দৃষ্টিতে উপলব্ধি করার…!

গত ২৬শে ফেব্রুয়ারী, মঙ্গল দ্বীপ প্রজ্জ্বলিত করে সপ্তাহব্যাপী বৈচিত্র্যময় এই ‘ডেবরা গ্রামীণ উৎসব’- মেলার শুভ উদ্ভোদন করেন পশ্চিমবাংলা সরকারের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী ডঃ হুমায়ুন কবীর মহাশয় সহ পশ্চিম বাংলা সরকারের অন্যান্য মাননীয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-জেলা প্রশাসক সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ …!
তার পূর্বে বিকেল ৫টায় মেলা প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর স্থানীয় স্কুল ব্যান্ড, বাংলা ব্যান্ড, ঢাকি, রণপা, কার্টুন, সংসাজ, আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় মেলার ঐতিহ্যবাহী বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা…!
শোভাযাত্রা শেষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মেলার সাংস্কৃতিক মঞ্চ উদ্ভোদনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সাংসদ মাননীয় শ্রী দীপক অধিকারী দেব মহাশয়….!
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, সন্মানিত অতিথি বরণ ও দেশ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হয় মেলার প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান..! উদ্ভোধনী সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে ঐতিহ্যবাহী ‘আহির ভৈরবী’ দল..! জনপ্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শ্রীমতী জয়তী চক্রবর্তী সঙ্গীত পরিবেশনার শেষে NLBC Trsut এর সহায়তায় প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে ট্রাই সাইকেল বিতরণ করা হয়…!
মেলার প্রথম প্রহরেই মেলা প্রাঙ্গণে জমে ওঠে নানান উপকরণে সজ্জিত স্টল সমূহ… উপচে পড়া মানুষের প্রাণবন্ত উৎসব মুখরিত পদচারণায় এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমন্ত্রিত আগত সন্মানিত অতিথি বৃন্দ মঞ্চে উপবিষ্ট হয়ে তাদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করে মেলা প্রাঙ্গণের সাংস্কৃতিক মঞ্চকে এক আলোকমঞ্চে পরিনত করেন….!

সপ্তাহব্যাপি এই মেলায় আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন…….
পশ্চিম বাংলা সরকারের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী ডঃ পার্থ চট্রোপাধ্যায় মহাশয় (পরিষদীয় মন্ত্রণালয়), মাননীয় মন্ত্রী শ্রী ডঃ সৌমেন কুমার মহাপাত্র মহাশয় (সেচ ও জলপথ উন্নয়ন), মাননীয় মন্ত্রী শ্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়া মহাশয় (জল সম্পদ অনুসন্ধান ও ক্রেতা সুরক্ষা), মাননীয় মন্ত্রী শ্রী শ্রীকান্ত মাহাত মহাশয় (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প), মাননীয় মন্ত্রী শ্রী অখিল গিরি মহাশয় (মৎস মন্ত্রণালয়), মাননীয়া প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতী শিউলি সাহা মহাশয়া (গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত), মাননীয়া প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতী বিরহবাহা সরেন মহাশয়া-হাঁসদা (বনবিভাগ), পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাষক মাননীয়া শ্রীমতী রশ্মি কমল মহাশয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাপরিষদ সভাপতি ও গড়বেতা বিধায়িকা শ্রীমতী উত্তরা সিংহ হাজরা মহাশয়া, মাননীয় শ্রী দীনেশ কুমার মহাশয় (আরক্ষাদক্ষা পঃ মেদিনীপুর জেলা), পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাপরিষদ সহ-সভাপতি ও পিংলা বিধানসভা বিধায়ক মাননীয় শ্রী অজিত মাইতি মহাশয়,

মাননীয় শ্রী দেবায়ন গাঙ্গুলি মহাশয় (ভারতের বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ও সমাজসেবক), মাননীয় শ্রী পরাণ মাঝি মহাশয় (বিশিষ্ট কবি ও সমাজসেবক), মাননীয় শ্রী দেবব্রত সরকার মহাশয় (বিশিষ্ট চলচিত্র পরিচালক), মাননীয় শ্রী সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয় (বিশিষ্ট কবি,সাহিত্যিক, গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও সব-খবর-ডেইলিহান্ট সাংবাদিক) ,

মাননীয় শ্রী দীনেশ রায়মাননীয় শ্রী মহাশয় (বিধায়ক ও চেয়ারম্যান- উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়া করণ পঃ মেদিনীপুর), মাননীয় শ্রী প্রদ্যুৎ ঘোষ মহাশয় (প্রাক্তন বিধায়ক ও ভাইসপ্রেসিডেন্ট , পরিকল্পনা দপ্তর, পঃ মেদিনীপুর),
মাননীয় শ্রী আশীষ চক্রবর্তী মহাশয় (প্রাক্তন বিধায়ক -গড়বেতা), মাননীয় শ্রী প্রদীপ সরকার মহাশয় (প্রাক্তন বিধায়ক খড়গপুর), মাননীয় শ্রী সঞ্জয় বক্সী মহাশয় (প্রাক্তন বিধায়ক), মাননীয় শ্রী নির্মল ঘোষ মহাশয় (কর্মাদক্ষ, পূর্তকার্য ও পরিবহন দপ্তর পঃ মেদিনীপুর), মাননীয় শ্রী শ্যামপদ পাত্র মহাশয় (কর্মাদক্ষ,জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ দপ্তর -পঃ মেদিনীপুর জেলা পরিষদ), মাননীয় শ্রী আজমল হোসেন মহাশয় (খড়গপুর মহুকুমা শাষক), মাননীয় শ্রী ভূবণ চন্দ্র হাঁসদা মহাশয় (জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা পঃ মেদিনীপুর), মাননীয়া শ্রীমতী সিঞ্জিনী সেনগুপ্ত মহাশয়া (সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক,ডেবরা), মাননীয় শ্রী কৃষ্ণেন্দু হোতা মহাশয় (সি.আই. ডেবরা), মাননীয় শ্রী প্রণব পাত্র মহাশয় (ও.সি ডেবরা থানা), মাননীয় শ্রী আরিফ হাসান সাহ মহাশয় (বি.এম.ও.এইচ- ডেবরা), মাননীয় শ্রী তমালকান্তি বসু মহাশয় (প্রধান শিক্ষক, ডেবরা হরিমতি সারস্বত বিদ্যামন্দির), মাননীয় শ্রী সুভাষ বেরা মহাশয় (এমডি,ওয়েলক্লিন ইনফ্লা টেলিকম প্রাঃ লিমিটেড), মাননীয় শ্রী আশীষ হুতাইত মহাশয় (বিশিষ্ট সমাজসেবী), মাননীয় শ্রী বিকাশ কর মহাশয় (বিশিষ্ট সমাজসেবী), মাননীয় শ্রী প্রদীপ কর মহাশয় (কর্মাদক্ষ বনবিভাগ, ডেবরা ব্লক) সহ অন্যান্য বিশেষ অতিথি বৃন্দ….!

‘ডেবরা গ্রামীণ উৎসব’ মেলার পূর্ণ সময়কালে মেলার আগত স্বতঃস্ফূর্ত সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ পরিনত হয় এক অসাধারণ গ্রামীণ শিল্প- সংস্কৃতির তীর্থ উৎসবে….! মেলার অনুষ্ঠান মঞ্চে অবিরাম অনুষ্ঠিত হতে থাকে একের পর এক বাংলা-সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী সকল অনুষ্ঠান ও মেলায় আগত জনস্রোতের সম্মুখে মঞ্চে উপবিষ্ট গুনিজনের উন্মুক্ত আলোকিত সম্বৃদ্ধ বক্তব্য প্রদান…!

ইতিমধ্যে পশ্চিম বাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই মেলা-উৎসব আয়োজনে, সারা সপ্তাহব্যাপী উক্ত অনুষ্ঠান মঞ্চে দেশের নানান প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন দেশীয় শিল্পগোষ্ঠীর দ্বারা অনুষ্ঠিত হয় মনমুগ্ধকর সব পরিবেশনা..!

উৎসব চলাকালীন সময়ের ২৭ শে ফেব্রুয়ারিতে মঞ্চে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলার জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী মাননীয়া শ্রীমতী দেবশ্রী রায় মহাশয়ার উজ্জ্বল উপস্থিতিতে…অনুষ্ঠান মঞ্চে আবৃতিতে ছিলেন উন্মিলিতা অধিকারী, সঙ্গীতে-সোনামনি মূর্মূ, বনশ্রী মূর্মু, শ্রেয়া মান্না, একক নৃত্যে- এথেনা মাইতি, স্নেহা ভৌমিক, সমবেত নৃত্যে- সঞ্চারী দেব ভট্রাচার্যের পরিকল্পনায় নটরাজ কলা মন্দির, মূদ্রার পরিবেশনায় ও অদ্রিজা ভট্রাচার্যের পরিকল্পনায় নৃত্যনাট্য দ্রৌপদী পরিবেশিত হয়..! সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় ইউটিউব শিল্পী দোলা ব্যানার্জি ও ব্যান্ড…!

অনুষ্ঠানের ২৮শে ফেব্রুয়ারিতে মঞ্চের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো– সকালে শিশু-কিশোরদের বিষয়ভিত্তিক অঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিশেষ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা..! সন্ধ্যাকালীন অনুষ্ঠানে ছিলো– আবৃতিতে- রাহী মাইতি, একক সঙ্গীতে- নিবেদিতা সুর, একক নৃত্যে – পূবালী রায়গুপ্ত, বিদিশা আচার্য, সায়নিকা মান্না.., সমবেত নৃত্যে- পিয়ালী মানকরের পরিকল্পনায় নৃত্যশ্রী কালচার একাডেমি ! পরবর্তীতে সঙ্গীত পরিবেশনায় মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী মনস্বিতা ঠাকুর..! সান্ধ্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন স্টার জলসার ধুলোকণা সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মানালী দে ও স্বরলিপি মিউজিকাল ট্রুপ..! উক্ত দিনের অনুষ্ঠানে মঞ্চে আলোকিত উপস্থিতিতে ছিলেন জনপ্রিয় চলচিত্র অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ…!

ডেবরা গ্রামীণ উৎসব মঞ্চে পহেলা মার্চের অনুষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখিত..
সকালে– বিনামূল্যে চক্ষু ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন স্বাদের মোমবাতি প্রজ্জলন ও শঙখবাদন প্রতিযোগিতা..!
সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের মধ্যে– আবৃতিতে – সৃজনী ঘোষ, একক সঙ্গীতে- সহদেব পাত্র, বাপী চক্রবর্তী, একক নৃত্যে- তিয়াশা বেরা, প্রীতিশা সেন, বৃষ্টি দে, স্মৃতি হড়, অদ্রিজা আদক ও অদ্রিজা দে…, যোগা অভি প্রদর্শনী পরিবেশনায় ছিলো বিবেকানন্দ যোগা একাডেমি, সমবেত নৃত্য পরিবেশনায়- মহুয়া দাস মাইতির পরিকল্পনায় “নৃত্যদীক্ষা”..! উক্ত দিনের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা চলচিত্রের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ মাননীয় শ্রী রঞ্জিত মল্লিক মহাশয় ও স্বরলিপি মিউজিক ট্রুপ…!

২রা মার্চ এর উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো…
সকালে বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা ও চশমা প্রদান, বিকেলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মিউজিক চেয়ার ও হাঁড়ি ভাঙা..! সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে- আবৃতিতে- মনামি দত্ত, একক সঙ্গীতে- অন্নেষা দাস, মৌমি রাণা, সুদীপা মান্না, একক নৃত্যে – সায়নী মাঝি, প্রীতি নায়ক, সোনিয়া জানা.., মেদিনীপুর বাচনিক ঐক্যের পরিবেশনায় আবৃতি কোলাজ.., মা সারদা যোগা একাডেমির পরিবেশনায় যোগানৃত্য…, শিল্পী সমন্বয় নিবেদিত সামাজিক যাত্রাপালা প্রতীক্ষা একটু ভালোবাসার রচনা ও অভিনয়ে ছিলেন জয়ন্ত কুমার চট্রোপাধ্যায়…!

৩রা মার্চের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো–
সকালে জেলাভিত্তিক যোগাসন প্রতিযোগিতা..! সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে– আবৃতিতে- আমিনা খাতুন মান্না.., একক সঙ্গীতে- মামনি মূর্মূ, অগ্নিমিত্রা জানা.., একক নৃত্যে – প্রীতি সামন্ত, নন্দিতা পাল… সমবেত নৃত্যে- ফার্স্ট স্টেপ দ্যা ড্যান্স পয়েন্ট…এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন এই সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সঞ্চিতা চ্যাটার্জি.. এবং মঞ্চে পারফর্ম করেন তুমি রবে নীরবে সিরিয়াল খ্যাত ও অনন্যা টেলিফ্লিমের জনপ্রিয় জুটি চন্দন ব্যানার্জি ও মিতালী ভট্টাচার্য…!

উৎসবের শেষ দিনে ৪ঠা মার্চে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেলার অসাধারণ সমাপ্তি হয়…! শেষ দিন সন্ধ্যা মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন পশ্চিম বাংলা সরকারের মাননীয় মন্ত্রীবর্গ সহ সাংসদ, বিধায়ক, জেলা প্রশাসক, সমাজসেবী সহ দেশের নানান প্রান্ত থেকে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ…! মঞ্চে অসাধারণ সুন্দর পরিবেশনা উপস্থাপন করে নিউ রাজধানী অর্কেস্ট্রা ও নাগপুরী ড্যান্স ধামাকা গ্রুপ…! ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী নৃত্য, সঙ্গীত ও শিল্প পরিবেশেনার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে সাত দিন ব্যাপি “ডেবরা গ্রামীণ উৎসব” মেলার বৈচিত্র্যময় আয়োজনের…!

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো আয়োজনটি স্বার্থকতার সাথে পরিচালনা করেন ডেবরা গ্রামীণ উৎসব কমিটির বর্তমান সভাপতি ও ডেবরা বিধান সভার সাংসদ প্রতিনিধি মাননীয় শ্রী সীতেশ ধারা মহাশয়, ডেবরা পঞ্চায়েত কমিটির কৃষি ও সেচ কর্মাদক্ষ এবং ‘ডেবরা গ্রামীণ উৎসব’ প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাননীয় শ্রী বিবেকানন্দ মুখার্জি, ডেবরা গ্রামীণ উৎসব কমিটির সম্পাদক মাননীয় শ্রী অশোক কুমার রায় মহাশয় সহ মেলার আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যগন…!

অনুষ্ঠানের মাঝে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ‘ডেবরা গ্রামীণ উৎসব’ এর সভাপতি মাননীয় শ্রী সীতেশ ধারা উৎসব স্বম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় জানান যে,

“২০০৯ সালের সিপিএমের সময়ে সর্বপ্রথম ডেবরা উৎসব নামে এই সাংস্কৃতিক মেলার পথ চলা শুরু হয়..! তৎকালীন সময়ে একজন সভাপতি হিসেবে আমি কমিটির সকলকে নিয়ে মেলাটাকে সার্বজনীন করার প্রচেষ্টা করি… পরবর্তীতে একসময় সেই কমিটি থেকে নতুন কমিটি গঠন করে, ২০১৫ সালে মাননীয় সাংসদ শ্রী দীপক অধিকারী দেব মহাশয়ের উদ্যোগে, মাননীয় শ্রী হুমায়ুন কবির মহাশয়কে চেয়ারম্যান হিসেবে, শ্রী বিবেকানন্দ মুখার্জির প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় আমাকে সভাপতি পূর্ন নির্বাচিত করে ‘ডেবরা উৎসব’ তার নব ধারায় ‘ডেবরা গ্রামীণ উৎসব’ নামে নতুন যাত্রা শুরু করে…!
এর পর থেকে দীর্ঘ সময় ব্যাপি আমরা পঃ মেদিনীপুর সহ আমাদের বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতির কথা প্রাধান্য দিয়ে, মেলাটিকে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা চেষ্টা করে চলেছি…! স্বদেশী মূল্যবোধ নিয়ে আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও জীবনধারার আলোকময় ইতিহাসকে আগামী সভ্যতায় বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য “ডেবরা গ্রামীণ উৎসব” এর এই ধারাবাহিক আয়োজন…. যা কিনা স্থানীয় মানুষের ভালোবাসায় ও বহু গুনি মানুষের আন্তরিক অনুপ্রেরণায়, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে ধর্ম-জাতি-মত নির্বিশেষে একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিনত হয়েছে…! ”

আমাদের ভারতীয় বাঙালি সংস্কৃতিতে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে “ডেবরা গ্রামীণ উৎসব” সত্যিই সার্বজনীনভাবে আমাদের সংস্কৃতির এক আলোকিত মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে…! মেলা প্রাঙ্গণে দেশীয় শিল্প-পণ্যের সমারোহে বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাসপূর্ণ আগ্রহ, পশ্চিম বাংলা সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের মুখরিত পদচারণায় এবং মেলার অনুষ্ঠান মঞ্চে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ও সর্বোপরিভাবে ডেবরা “গ্রামীণ উৎসব” পরিবারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মেলাটি এক অর্থে একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিনত হয়েছে…!

আমাদের সম্বৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসনের এই সময়ে ‘ডেবরা গ্রামীণ উৎসব’ এর মতন জেলাভিত্তিক শিল্প-সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোর দ্বারা আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা আমাদের সম্বৃদ্ধ সংস্কৃতিকে সঠিক পথে বয়ে নিতে পারবো, এই প্রত্যাশাই রাখি…!

দেশ মাতৃকার সঠিক সন্মান তার প্রারম্ভিক সংস্কৃতিকে লালন করে আগামী সভ্যতার দরজায় সঠিক ভাবে পৌঁছে দেয়া…! সেটাই হোক আমাদের সকলের দেশপ্রেমের ব্রত পালনের অন্যতম এক মাধ্যম…!

জয় হোক বিশুদ্ধ সংস্কৃতির….!

সৌগত রাণা কবিয়াল—
( কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক)