মাছ বিক্রেতা থেকে নাগরাজ নামেই পরিচিত ক্যানিংয়ের নিরাঞ্জন।

0
344

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – ক্যানিং থানার অন্তর্গত দিঘীরপাড় গ্রামের জয়দেব পল্লির বাসিন্দা নিরাঞ্জন সরদার।মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল। এলাকায় নাগরাজ নামে পরিচিত।আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে অভাব অনটন থেকে বাঁচার জন্য মাছ-কাঁকড়ার ব্যবসা কে বেছে নিয়েছিলেন নিরাঞ্জন সরদার।ক্যানিং বাজারেই মাছ বিক্রি করে দিনযাপন করেন।তৎকালীন সময়ে রাতের অন্ধকারে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে একটি বিশাল কেউটে সাপ ঢুকেছিল।ফোঁস ফোঁস গর্জন করছিল। এলাকায় বিদ্যুৎ ও ছিল না।বাড়ির লোকজন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন।কান্নাকাটি করছিলেন ভয়ে।সেই মুহূর্তে রাতের অন্ধকারে সাপ ধরা কিংবা সাপ মারার জন্য কাছাকাছি কেউই ছিলেন না।কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে হাতে একটি কাঁকড়া মারার লোহার শিক নিয়ে বেরিয়ে আসেন নিরাঞ্জন সরদার।হ্যারিকেন হাতে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে পড়েন সন্তপর্ণে।সাপ কে অনুসরণ করে। লোহার শিক দিয়ে বিশাল আকৃতির কেউটে সাপটি টেনে বের করেন ঘরের এক কোন থেকে।প্রতিবেশীরা হ্যারিকেন,ল্যাম্প জ্বেলে বাইরে বেরিয়ে আসে সাপ দেখার জন্য। কেউ কেউ আবার লাঠি হাতে চলে আসে সাপটি মারার জন্য।নিরাঞ্জন বাবু প্রতিবেশীদের হুমকীর সুরে জানায় সাপ মারা যাবে না। যদি জোরপূর্বক মারার চেষ্টা করা হয় তালহে লোকের ভীড়ে কেউটে সাপ ছেড়ে দেবেন।ভয়ে জড়োসড়ো গ্রামবাসীরা কোন কথা না বলে সাপ দেখে যে যার বাড়িতে চলে যায়। শেষে সাপটি অক্ষত অবস্থায় মাতলা নদীর জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় ছেড়ে দিয়ে আসেন।মাছ ব্যবসার পাশাপাশি সেই ত্রিশ বছর আগে সাপ ধরায় হাতেখড়ি।কোথাও সাপ ঢুকলেই ডাক পড়ে নিরাঞ্জন বাবুর। তবে এলাকায় নিরাঞ্জন বাবু ‘মনসার বর পুত্র নাগরাজ নামে পরিচিত।পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে দীর্ঘ ত্রিশ বছর এক নাগাড়ে কেউটে,গোখরো,কালাজ,চন্দ্রবোড়া,চিতিবোড়া,লাউডোগা সহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ধরে নির্জন জায়গায় ছেড়ে দিচ্ছেন।পাশাপাশি ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার হয়ে সাপে কামড়ে ওঝা গুণীন নয়,সরাসরি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সচেতনতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন যাবৎ।কোথাও কারোর বাড়িতে সাপ ঢুকলেই ডাক পড়ে নাগরাজ এর। সেই ডাক শুনে অনায়াসে চলে যায় নাগরাজ নিরাঞ্জন সরদার।অনেক সময় সাপ অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজের কাছেই রেখে সেবাশুশ্রূসা করেন। এমনকি নিজে হাতে সাপ কে খাইয়েও দেয়। এককথায় সাপ নিরাঞ্জন বাবুর পরম আত্মীয়।
এযাবৎ ক্যানিংয়ের নাগরাজ নামে খ্যাত নিরাঞ্জন সরদার প্রায় হাজার দুই সাপ ধরে নির্জন জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছেন।
ক্যানিংয়ের নাগরাজ প্রসঙ্গে ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার অন্যতম সদস্য দেবাশীষ দত্ত জানিয়েছেন ‘ছোট থেকেই দেখে আসছি নিরাঞ্জন বাবু সাপ ধরেন। তবে নিরাঞ্জন বাবু কে যতবেশি লোক না চেনেন তার থেকে ‘নাগরাজ’ নামেই বেশি লোকজন চেনেন এবং জানেন।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায়ের কথায় ‘নিরাঞ্জন বাবুকে দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি। তাঁর সাপ ধরার কৌশলই আলাদা। তিনি অনায়াসে যেকোন বিষধর সাপ ধরে ফেলতে পারেন।এলাকার অধিকাংশ লোকের কাছে তিনি নাগরাজ নামেই পরিচিত। ’
অন্যদিকে ক্যানিংয়ের হেড়োভাঙ্গার এক গ্রামীণ চিকিৎসক আশরাফ হালদার। তিনিও দীর্ঘদিন যাবৎ যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা ক্যানিং এর সাথে যুক্ত। তিনিও বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকায় সাপ সম্পর্কে সচেতন করে চলেছেন। তাঁর কথায় নিরাজ্ঞন সরদার কে আমরা সাপুড়ে হিসাবে যত বেশি না চিনি তার থেকে তিনি ক্যানিংয়ের নাগরাজ নামেই বেশি পরিচিত।’
ক্যানিংয়ের নাগরাজ অবশ্য এসব নিয়ে চিন্তিত নন। তাঁর কথায় ’পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে পড়া সাপ তাঁর অবর্তমানে কে ধরবে সাপ?না হলে তো মারা যাবে সাপ। কে হবেন তাঁর উত্তরসুরি ?সেই চিন্তায় রয়েছেন তিনি।’