আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ কবির ভাষায় – মোরা একই বৃন্তে দুটী কুসুম হিন্দু-মুসলমান।। মুসলিম তার নয়ণ – মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।। কবি, গীতিকার ও দার্শনিক নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি আছো যে কতটা প্রাসঙ্গিক তা আজকের এই উৎসব প্রমাণ করে।
সারাদেশে যখন সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা গ্রাস করতে চলেছে সভ্যতাকে তখন প্রায় দু থেকে তিনশো বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উজ্জ্বল নির্দশনের ধারাকে আজও উজ্জ্বল থেকে আরো উজ্জ্বলতর করে চলেছে বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের শিমুলিয়া ও দশরথ বাটি গ্রামের মানুষ।
পীরবাবার ঊরসে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র ধর্মের মানুষের কাছে এক মহামিলনের তীর্থভূমি হয়ে ওঠেছে মাজার।
সিমুলিয়া ও দশরথবাটি পীরবাবার মাজার যেন অমৃতকুম্ভ।
মানুষের ধর্মীয় আবেগ এবং বিশ্বাসের তীর্থভূমি এই মাজার-এ এলাকার যে কোন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে সকল ধর্মের মানুষই পীরবাবার মাজারে প্রার্থনা করে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এবং মানব সভ্যতার এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে আজও বিরাজ করছে, অসহিষ্ণু জাতিকে দেখাচ্ছে নতুন আলোর পথ, যে পথে আছে শান্তি, যে পথে আছে অনাবিল আনন্দ, যে পথে আছে একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার আন্তরিকতা।
পীরবাবার মাজার মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সিমুলিয়া,দলরথবাটি গ্ৰামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে ও মেয়েদের বিয়ের পরের দিন আজও পীরবাবার মাজারের সিন্নি খেয়ে তবেই বাড়িতে ঢুকে, এছাড়াও ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো বাচ্ছার মুখে ভাত অনুষ্ঠান হলে প্রথমেই পীরবাবার মাজারে নিয়ে যাওয়া হয় সেই পূর্বতন রীতি মেনেই।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় ধূপ এবং সন্ধ্যা দেওয়ার লাইন পড়ে হিন্দু মা ও বোনেদের।
পীরবাবার মাজারের চাদর মাথায় নিয়ে পথপরিক্রমায় অংশগ্রহণ করে আট থেকে আশি বছরের বহু সাধারণ মানুষও।