সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ১৬ তম “সুন্দরবন সৃজন উৎসব” ২০২২।

0
638

সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং:- করোনা বিধি মেনে ১৯ থেকে ২১ মার্চ হিমাদ্রি মিশন আয়োজিত ১৬ তম ‘সুন্দরবন সৃজন উৎসব’ ২০২২ অনুষ্ঠিত হল প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলের সন্দেশখালি থানার দুর্গামণ্ডপ হিমাদ্রি মিশন প্রাঙ্গণে। এবার সুন্দরবন সৃজন উৎসবের মঞ্চ উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের নামে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সুন্দরবন সৃজন উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট নাট্যকার ও পরিচালক ডঃ দানী কর্মকার। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী বর্ণালী কর্মকার, অভিনেতা অমিত সরকার, বিশিষ্ট সমাজসেবী পঙ্কজ মণ্ডল, শম্ভুনাথ মণ্ডল, নিত্যানন্দ রায়, প্রদীপ কুমার মণ্ডল, চিত্রশিল্পী সুনীল চক্রবর্তী, চিত্রশিল্পী নমি তরফদার প্রমুখ। উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন শমী তরফদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন সৃজন উৎসব কমিটির সভাপতি ডাঃ গিরীন্দ্রনাথ মণ্ডল।
সুন্দরবন সৃজন উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে অধ্যাপক ডঃ দানী কর্মকার বলেন, ‘একদিকে করোনার আবহ, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন -এর মধ্যে যুদ্ধের আবহ এরই মধ্যে হিমাদ্রি মিশন আয়োজিত ১৬ তম সুন্দরবন সৃজন উৎসব ২০২২ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুন্দরবন সৃজন উৎসব, সৃষ্টির এই উৎসব আমাদেরকে উৎসাহ যোগায়। আমাদের কে প্রাণিত করে বলে থেমে থেকো না চলতে থাকো এবং সৃজনে মেতে থাকো। বর্তমানে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দমদম থেকে সুন্দরবন সৃজন উৎসব আসতে আমাদের বাধ্য করেছে। গত বছরও আমরা এসেছিলাম। কারণ সারা পৃথিবী জুড়েই এরকম একটা ধ্বংসের আবহের মধ্যেও হিমাদ্রি মিশন সৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠেছে। তাই আমরা তাতে সামিল না হয়ে পারলাম না। এরকম একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও সৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠেছেন হিমাদ্রি মিশনের কর্ণধার হিমাদ্রিশেখর মণ্ডল সেজন্য আমরা রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ূধ-এর পক্ষ থেকে তাঁকে স্যালুট জানাই। এখান থেকেই হয়তো কোনও শিল্পী একদিন নাম যশ করবে, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।এই প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে হিমাদ্রি মিশনের প্রতি।’
স্বাগত ভাষণে ডাঃ গিরীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘সুন্দরবন সৃজন উৎসব কে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য সকলেই সহযোগিতা করেছেন এজন্য সবাইকে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আপনারা ‌ সকলে এগিয়ে আসুন, এই সুন্দরবন সৃজন উৎসবকে সকলের সহযোগিতায় আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাই।’
সুন্দরবন সৃজন উৎসব কমিটির সম্পাদক তথা বিশিষ্ট সাংবাদিক হিমাদ্রিশেখর মণ্ডল বলেন, ‘ড্যান্স হাঙ্গামার মতো পশ্চিমী সংস্কৃতি আজ সুন্দরবন অঞ্চলকে অক্টোপাসের মতো গিলে খাচ্ছে। তাই সুন্দরবন অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাঁচাতে সুন্দরবন সৃজন উৎসব। সুন্দরবন সৃজন উৎসবের মঞ্চ থেকে প্রতি বছর জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন প্রতিভা। এই প্রতিভারাই হয়তো একদিন সুন্দরবন অঞ্চলের নাম উজ্জ্বল করবেন। আমরা চাই সুন্দরবন সৃজন উৎসব সুন্দরবনবাসীর প্রাণের উৎসব হয়ে উঠুক। আর এজন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে একদিন আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে এ প্রত্যাশা রাখি।’
গত বছর ইয়াস, অতিবৃষ্টি এবং করোনায় মানুষের মনে হাসি নেই। তাই ‘রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ’ এবার সুন্দরবন সৃজন উৎসবে মঞ্চস্থ করল ড. দানী কর্মকার রচিত ও নির্দেশিত হাসির নাটক ‘গয়ানাথের হাতি’। এছাড়া তরজা, ঝুমুর পরিবেশিত হয়। সুরেলা কণ্ঠে মনোজ্ঞ সঙ্গীত পরিবেশন করেন শমী তরফদার ও নমি তরফদার। এছাড়াও ছিল বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। ডাক্তার গিরীন্দ্রনাথ মণ্ডল ৭৫ জন রোগী দেখেন। ছোটদের জন্য ছিল বসে আঁকো, যেমন খুশি সাজো, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। সুন্দরবন সৃজন উৎসব হয়তো আগামী দিনে সুন্দরবন কে পথ দেখাবে।