শাঁলখাড়া গ্রামের মা ভগবতীর গাজন।

0
537

আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ চৈত্র মাসে আমাদের বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ মেতে ওঠেন বিভিন্ন ঠাকুরের গাজনে। বিভিন্ন বর্নের মানুষ সামাজিক ভেদাভেদ ও কৌলিন্য ভুলে মেতে ওঠেন গাজন উৎসবে। শুধু শিবকে কেন্দ্র করে নয় গাজন উৎসব পালিত হয় মাভগবতীকে ঘিরেও। এই দুইয়ের আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেও অনেক মিল আছে। বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের থানার নদীঘেরা ছোট্ট একটি পবিত্র গ্রাম শাঁলখাড়া। এই গ্রামটিতে ভগবতীর গাজন উপলক্ষ্যে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটে এই কদিন।বলা হয় গাজন শব্দটির উৎপত্তি গর্জন থেকে। এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসীরা প্রচণ্ড গর্জন করেন বলে উৎসবের এইরূপ নামকরণ হয়। অপর মতে, গা শব্দের অর্থ গ্রাম এবং জন শব্দের অর্থ জনসাধারণ; গ্রামীণ জনসাধারণের উৎসব হওয়ায় এই উৎসবের এই রূপ নামকরণ হয়। কথিত আছে এই গ্রামেরই দামোদরের তীরে পাওয়া গিয়েছিল ভগবতী মাকে।পরে মুখোপাধ্যায় পরিবারের কোনো এক পূর্বপুরুষ কে সপ্নাদেশ দিয়ে বলেছিল মায়ের পূজা ও গানের নিয়ম। গ্রামের দুপ্রান্তে রয়েছে দুটি মন্দির।একটিতে মা সারাবছর বিরাজ করেন আর একটি মায়ের বাপেরবাড়ি।এই বাপেরবাড়িতে বাংলাপঞ্জিকার চৈত্র মাসের অমাবস্যার পর শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে গাজন বসে। পরম্পরা অনুয়ায়ী ওই দিন গ্রামের প্রতিটি মানুষ এককাছে থেকে গাজনের শুভারম্ভ হেতু ঝাঁট দিয়ে এলাকা পরিস্কার করে। সপ্তমীর দিন রাত্রি বেলায় বড় বড় মশালের ন্যায় শরের গুচ্ছ দিয়ে তৈরি মেড়াপোড়ানো হয়।প্রথম স্হানীয় ব্রাম্ভণেরা মায়ের মন্দিরে প্রথম মেড়া জ্বালান। পরে ভক্তসন্নাসীদের পাশাপাশি এলাকার মানুষেরাও জ্বলন্ত মেরা নিয়ে নেচে নেচে মূলগাজনের সূত্রপাত করে। অবাক করা বিষয় একসাথে এত মেড়ার আগুনে আজ পর্যন্ত কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি। পরেরদিন অর্থাৎ অষ্টমীর দিন রাতগাজন। ওই দিন শয়ে শয়ে সন্ন্যাসীরা প্রায় তিন কিমি পথ প্রণাম সেবা খাটতে খাটতে দামোদরের তীর হতে মূল মন্দিরে আসে। চারিদিকে ধ্বনিত হয়”ভগবতীর চরণে সেবা লাগে”। ওইদিন মধ্যরাতে শুরু হয় বানফোঁড়া।গাজনের সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রনা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা করেন। রাতগাজন উপলক্ষ্যে তারা শোভাযাত্রা সহকারে নাচতে নাচতে দেবীর মূল মন্দিরে যান। মন্দিরের সেবাইত প্রশান্ত মুখার্জি জানান, “বহু মানুষ সারাবছরই আসেন মায়ের কাছে মনোবাসনা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে।তবে গাজনের সময় ভক্তদের ভীড় প্রতিবছরের রেকর্ড ভেঙে দেয়।” পরেরদিন অর্থাৎ শ্রীরাম নবমীর দিন মা ভগবতী বাপেরবাড়ি যে যান। দুপুরে পূজোর সাথে চলে ছাগ বলির পর্ব। সারাদিন শেষে মা আবার নিজের মূল মন্দিরে ফিরে আসে। এদিন গিয়ে দেখা গেল গাজন উপলক্ষ্যে বসেছে বিভিন্ন ধরনের দোকান। কোথাও খেলনা, কোথাও জিলাপি আবার কোথাও মোগলাই এর স্টল। মেলার এক দর্শনার্থী জানান, “মায়ের টানে প্রতিবছর এই গাজন দেখতে ছুটে আসি।মা ভগবতী সকলের মনোবাসনা পূর্ণ করেন। তবে গোস্বামী গ্রামের বাঁশের সেতুটি পাকা হলে আমাদের আরও সুবিধা হবে।”