নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদাঃ– মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে বন্যাত্রাণ দুর্নীতির ঘটনায় এফআইআর হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে ফেরার ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস। সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন। আদালত ওই মামলার তদন্তভার দিয়েছে ক্যাগকে। সেই বন্যাত্রাণ দুর্নীতির রেশ না কাটতেই ফের অনিয়মের অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে। এবার স্কুল ঘর সংস্কারের জন্য টেন্ডার বিলিকে ঘিরে অনুয়মের অভিযোগ উঠেছে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাসের বিরুদ্ধে। তবে শুধু কোয়েল দাসই নয়। পঞ্চয়েত সমিতির কয়েকজন সদস্য এমনকি বিডিওর যোগসাজসে ওই বেনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর ওই অভিযোগ তুলেছেন পঞ্চায়েত সমিতিরই এক তৃণমূল সদস্যা সুজাতা সাহা। যদিও বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে প্রশাসনের সর্বস্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই সদস্যা সুজাতা সাহা। কেননা কংগ্রেস থেকে জয়ী হয়ে বিরোধী দলনেত্রী হন তিনি। কিন্তু পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এখনও তৃণমূলেই রয়েছেন।
প্রশাসন ও হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের আটটি প্রাথমিক স্কুল সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবন সংস্কারের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক কাজকর্মও রয়েছে। এজন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু সুজাতা সাহার অভিযোগ, টেন্ডার দেওয়ার আগে নিয়ম মেনে শিক্ষা স্থানীয় সমিতির সভা ডাকার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি জানানোর কথা বিরোধী দলনেত্রীকেও। কেননা সুজাতা শাসকদলে নাম লেখালেও খাতায় কলমে তিনি এখনও বিরোধী দলনেত্রী। অভিযোগ সেসব কিছুই করা হয়নি। তার অভিযোগ, গোপনে টেন্ডার করা হয়েছে। আরও অভিযোগ, যাদের ভবন সংস্কার ও বৈদ্যুতিক কাজকর্মের অভিগ্গতা রয়েছে তাদের কাজের বরাত পাওয়ার কথা। কিন্তু যে সব ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে তাদের সেই অভিগ্গতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সুজাতা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও ও কয়েকজন সদস্য চক্রান্ত করে সরকারি টাকা নয়ছয় করতে টেন্ডার বিলিতে অনিয়ম করা হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। আর ওই ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। দলেরই একাংশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যাত্রাণ বিলিকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে দীর্ঘদিন ফেরার থাকার পর জামিন পেয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস। একই ঘটনায় সুজাতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ হয়। আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে সুজাতা বলে দাবি করেছিলেন। এক্ষেত্রেও ফের অনিয়ম হওয়ায় তাকে ফাঁসানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন সুজাতা। পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগে দীর্ঘদিন ফেরার থাকার পর জামিন পেয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে এফআইআর হওয়ার পরেও কীভাবে কোয়েল দাস পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন তা নিয়ে তৃণমূলের একাংশই প্রশ্ন তুলেছেন। এদিকে গোটা ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। যদিও রাজ্য-জুড়ে দুর্নীতির খেলা চলছে। দলের লোকেরাই দলের বিরুদ্ধে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ আনছেন। আগামী নির্বাচনে মানুষ জবাব দেবে কটাক্ষ বিজেপির। অন্যদিকে দলের কেউ জড়িত থাকলেও দল দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। আমরা অবিলম্বে এ বিষয়ে ওই ব্লকের বিডিও সাহেবের সঙ্গে কথা বলব। যাতে টেন্ডার ক্যানসেল করা হয় সাফাই তৃণমূল নেতৃত্বের। শুরু তৃণমূল-বিজেপির রাজনৈতিক তরজা।
তৃণমূল নেত্রী তথা পঞ্চায়েত সমিতি বিরোধী দল-নেত্রী সুজাতা সাহা বলেন, বন্যা-ত্রাণ বিলির বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। আমার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়ো মাস্টাররোল তৈরি করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছিল।আদালতে তাই প্রথমেই জামিন পাই।আমার সই জাল কে করেছিল সেটা ভালো করে বলতে পারবে কোয়েল,জয়শ্রী, বিডিও।এবারেও আমাকে অন্ধকারে রেখে কাজ করা হচ্ছে। বিডিও আমাকে জানিয়েছে সমিতির সদস্য মকদুম আজম, রেজিয়া সুলতানা, কোয়েল দাস, আদিত্য মিশ্র এদের কথাতেই টেন্ডার হয়েছে। বাধ্য হয়েই অভিযোগ জানিয়েছি।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সুজাতা সাহা যে ভাবে অভিযোগ করছেন তাতে ওকে বিরোধী দলনেত্রী মনে হচ্ছে। উনি তৃণমূলে রয়েছেন নাকি কংগ্রেসে তা আগে জানাক।
এদিকে এ ঘটনার জেরে তৃণমূল কংগ্রেস কে তীব্র কটাক্ষ করেছে এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ আগারওয়াল জানান এর আগেও বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারি নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি খবরের শিরোনামে এসেছিল। সেখানেও সুজাতা সাহা অভিযোগ করেছিল তার সই জাল করা হয়েছে। আবার তিনি পঞ্চায়েত সমিতির স্কুল বিল্ডিং নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়া করণ নিয়ে অভিযোগ তুললেন। রাজ্য-জুড়ে দুর্নীতির খেলা চলছে। দলের লোকেরাই দলের বিরুদ্ধে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ আনছেন। আগামী নির্বাচনে মানুষ জবাব দেবে।
যদিও বিজেপির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল হরিশ্চন্দ্রপুর চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা জানান আমরা শুনতে পেয়েছি বিরোধী দল-নেত্রী পঞ্চায়েত সমিতির একটি টেন্ডার ঘিরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদি টেন্ডার প্রক্রিয়া করণ নিয়ে কোনো অনিয়ম হয় তাহলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে দলের কেউ জড়িত থাকলেও দল দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। আমরা অবিলম্বে এ বিষয়ে ওই ব্লকের বিডিও সাহেবের সঙ্গে কথা বলব। যাতে টেন্ডার ক্যানসেল করা হয়।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু ক্যামেরার সামনে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
চাঁচলের মহকুমা শাসক কল্লোল রায় বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ খতিয়ে গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
সব মিলিয়ে ত্রাণ কান্ডের পর টেন্ডার বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বেশ সর-গরম রয়েছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের রাজনীতি। সাধারণ মানুষ দ্রুত ত্রাণ-কান্ড সহ এই টেন্ডার দুর্নীতির সুষ্ঠ তদন্তের দাবী জানিয়েছে।