উত্তর দিনাজপুর, রাধারানী হালদারঃ- বাংলা গাজন শব্দটি গর্জন শব্দ থেকে ব্যুৎপন্ন হয়েছে। এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসীরা প্রচণ্ড গর্জন করেন বলে উৎসবের এইরূপ নামকরণ হয়।[২] অপর মতে, গা শব্দের অর্থ গ্রাম এবং জন শব্দের অর্থ জনসাধারণ; গ্রামীণ জনসাধারণের উৎসব হওয়ায় এই উৎসবের এই রূপ নামকরণ হয়।[৩]
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, গাজন উৎসবের দিনে দেবী হরকালীর সঙ্গে শিবের বিবাহ হয়। বিবাহ উৎসবে সন্ন্যাসীরা বরযাত্রী হিসেবে অংশ নেন। অন্যদিকে, ধর্মঠাকুরের গাজন হল ধর্মঠাকুর ও দেবী কামিনী-কামাখ্যার (বাঁকুড়া জেলা), দেবী মুক্তির বিবাহ উৎসব।
গাজনউৎসব ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশে উদযাপিত একটি হিন্দুধর্মীয় লোকউৎসব। এই উৎসব শিব, নীল, মনসা ও ধর্মঠাকুরের পূজাকেন্দ্রিক উৎসব। মালদহে গাজনের নাম গম্ভীরা এবং জলপাইগুড়িতে গমীরা। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজার সঙ্গে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। ধর্মের গাজন সাধারণত বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে পালিত হয়। চৈত্রমাস ছাড়া বছরের অন্যসময় শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হলে তাকে হুজুগে গাজন বলা হয়। গাজন সাধারণত তিনদিন ধরে চলে।
সারা চৈত্র মাস নিরামিষ খেয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নৃত্য পরিবেশন করে অর্থ সংগ্রহ করেন গাজন শিল্পীরা।
চৈত্র মাসের শেষে সারারাত শ্মশানে থেকে পূজার্চনা করেন গাজন শিল্পীরা।
গাজনের সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা করেন।
উত্তর দিনাজপুর কালিয়াগঞ্জ এর সামনে অবস্থান শ্রীমতি শমশান ঘাট এলাকা থেকে
গাজন উপলক্ষ্যে তারা শোভাযাত্রা সহকারে দেবতার মন্দিরে যান। শিবের গাজনে সন্ন্যাসী শিব ও গৌরী সেজে এবং অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূতপ্রেত, দৈত্যদানব প্রভৃতির সং সেজে নৃত্য করতে থাকেন। শিবের নানা লৌকিক ছড়া আবৃত্তি ও গান করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তির গাজনে কালী নাচ একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। ধর্মের গাজনের বিশেষ অঙ্গ হল নরমুণ্ড বা গলিত শব নিয়ে নৃত্য বা মড়াখেলা (কালিকা পাতারি নাচ)।
শিব,কালি এবং বিভিন্ন সাজে গাজন শিল্পীরা ধারালো অস্ত্র, মড়ার খুলি সহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রা দেখতে মানুষের ঢ্ল কালিয়াগঞ্জ কালিবাড়ি এলাকায় পরিক্রমা করে গাজন শিল্পীরা। উপস্থিত হন চড়ক পূজার পিট তলা ময়দানে । এদিন সন্ধ্যায় পিঠে বংশী গেঁথে গাজন শিল্পীরা চড়কে অংশ নিবেন।
তারই প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকঢোল বাজিয়ে গাজন শিল্পীরা এদিন সকালে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
যার দেখার মানুষের ঢ্ল নামে রাস্তায়।