তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায়ের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী ভাবে দল পরিচালনার অভিযোগ দলের চেয়ারম্যান গীরিন্দ্র নাথের,সভা বয়কটের সিদ্ধান্ত।

0
307

মনিরুল হক, কোচবিহার: দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ।

তাঁর বক্তব্য, জেলা সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে দল চালাচ্ছেন। তিনি যোগ্য সম্মান না পেলে তাঁর কোন প্রোগ্রামে যাবেন বলে কার্যত বয়কট করার সিধান্ত নিয়েছেন। খোদ দলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান এমন বক্তব্য দেওয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি স্বাক্ষরিত কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পর পর দুটি কোর কমিটির তালিকা প্রকাশ হয় সামাজিক মাধ্যমে। প্রথম তালিকা ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাক্ষরিত। ওই সময় দলের জেলা সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ। কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়েই প্রথম কোর কমিটির কনভেনার করা হয় পার্থ প্রতিম রায়কে। ওই কোর কমিটির তালিকা নিয়ে জেলা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক মাধ্যমে তৃণমূল সাধারণ কর্মী সমর্থকদের একটা বড় অংশ প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে শুরু করেন। এরপর তড়িঘড়ি আরও একটি কোর কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় কোন নামের পরিবর্তন না হলেও তারিখের জায়গায় ২৮ মার্চ লিখে সংশোধন করা হয়। কিন্তু তারপরেও তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল প্রকাশ্যেই অব্যাহত রয়েছে। ওই তারিখের আগেই জেলা সভাপতি বদল করে পার্থ প্রতিম রায়কে করা হয়েছিল। তাই এই সংশোধনে বিতর্ক নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে দলীয় নেতৃত্ব মনে করেছিলেন।

কিন্তু বিতর্ক নিয়ন্ত্রণে আসা তো দুরের কথা উল্টে কোচবিহারে তৃণমূল কার্যত আড়াআড়ি ভাবে দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। প্রথমত গিরিন বাবুর মত বিশিষ্ট একজন শিক্ষাবিদ, পঞ্চানন গবেষক, তাঁকে চক্রান্ত করে দলের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন। শুধু তাই নয়, জেলা কমিটির চেয়ারম্যান থাকার পরেও তাঁকে কোন রকম গুরুত্ব নকা দিয়েই দল পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও গিরীন বাবু নিজেই অভিযোগ তুলেছেন।

পাশাপাশি কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে এবার দলের জেলা কোর কমিটির ১১ জন সদস্যের মধ্যে রাখা হয় নি। এই নিয়েও জেলার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের একটা বড় অংশ রীতিমত ক্ষুব্ধ। ইতিমধ্যেই রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং গিরিন বাবুর মধ্যে একটি বৈঠকও হয়। ওই বৈঠকে রবি অনুগামী হিসেবে পরিচিত আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি পরিমল বর্মণ, জেলা কিষান ক্ষেত মজুর সংগঠনের জেলা সভাপতি খোকন মিয়াঁ সহ বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। সেদিনও বৈঠক শেষে কোর কমিটি নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিতে দেখা যায় গিরিন বাবুকে।

এবার তিনি সরাসরি দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে দল পরিচালনা করার অভিযোগ তুলে বলেন, “ দলের সর্বচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন আমাকে চেয়ারম্যান এবং পার্থ প্রতিম রায়কে জেলা সভাপতি ঘোষণা করেছিলেন, সেদিন সকলকে নিয়ে দল পরিচালনা করার কথা নেত্রী বলে দিয়েছিলেন। কিন্তু পার্থ সেটা করছেন না।জেলা একাই প্রোগাম করে বেড়াচ্ছেন। কিম্বা প্রোগ্রাম ঠিক করার পর কাউকে না কাউকে দিয়ে খবর পাঠাচ্ছেন। কোন প্রোগ্রাম ঠিক করার আগে আলোচনা পর্যন্ত করছেন না। এই স্বৈরাচারী মনোভাবের জন্য আমি মর্মাহত, তাই আমি মনে করছি যদি জেলাক সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় আমাকে যোগ্য সম্মান না দেন, তাহলে আর তাঁর কোন প্রোগ্রামে যাবো না।”

দলের চেয়ারম্যান এমন বক্তব্য নিয়ে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পার্থ প্রতিম রায়ের এখনও কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। তবে এই বক্তব্যের জের যে আরও বেশ কিছুটা দূর এগোবে, তা বলাই যেতে পারে।