রান্না ঘরে ভাত বাড়তে গিয়ে কেউটের ছোবল,যন্ত্রনায় চিৎকার গৃহবধুর।

0
350

রান্না ঘরে ভাত বাড়তে গিয়ে কেউটের ছোবল,যন্ত্রনায় চিৎকার গৃহবধুর।

সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং :- বুধবার ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে রাত নটার দিকে এগিয়ে চলেছে।সারদিনের সংসারের সমস্ত ঝক্কি ঝামেল সেরে রান্না ঘরে গিয়েছিলেন এক গৃহবধু।স্বামী সন্তানকে কে খেতে দেওয়ার জন্য ভাতের হাঁড়ি থেকে ভাত বাড়ছিলেন।আচমকা একটি বিশাল কেউটে সাপ ওই গৃহবধুর পায়ে ছোবল দিয়ে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়।শুরু হতে থাকে প্রবল যন্ত্রণা।মুহূর্তে গৃহবধু জয়ন্তী বারিক চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে।রাতের অন্ধকারে রান্না ঘরের মধ্যে গৃহবধুর কান্নার আওয়াজ শুনে দৌড়ে আসে পরিবারের সদস্যরা।গৃহবধু তার পরিবারের লোকজনদের কে জানায় ‘তিনি আর বাঁচবেন না,তাকে মনে হয় সাপে কামড় দিয়েছে’।একদিকে অশনি আতঙ্ক,অন্যদিকে রাতের অন্ধকারে এমন দুর্ঘটনা ঘটায় কি করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ফুলমালঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েতের মনসাখালি গ্রামের বারিক পরিবার।যেনতেন প্রকারে গৃহবধু কে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা।রাতের অন্ধকারে কোন যানবাহন না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন।চিন্তা করতে থাকেন,আর মনে হয় বাঁচানো সম্ভব হবে গৃহবধু জয়ন্তী দেবীকে।অন্যদিকে নিশ্চিত মৃত্যু হতে পারে ভেবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই গৃহবধুও।এমন খবর জানতে পারেন গৃহবধুর ভাইপো সমীরণ বারিক। তিনি ঘটনার কথা শুনে এক মুহূর্ত দেরী না করে বাইকের পিছনে তাঁর কাকিমা জয়ন্তী দেবীকে বসিয়ে দ্রুতগতিতে রওনা দেয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।মাত্র কুড়ি মিনিটে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে হাসপাতালে পৌঁছে যায়।সেই সময় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা করছিলেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায়।
তিনি তড়িঘড়ি ওই গৃহবধুর চিকিৎসা শুরু করেন।পাশাপাশি ক্ষতস্থান দেখে তিনি নিশ্চিত হয়ে যান যে কেউটে সাপ কামড় দিয়েছে।মুহূর্তে ওই গৃহবধু শরীরে ১০ টি সাপে কামড়ানো প্রতিষেধক অ্যান্টি ভেনাম সিরাম(এভিএস) প্রয়োগ করেন। পরে আরো ১০ এভিএস প্রয়োগ করা হয়।
তিনি আর বাঁচবেন না!তাঁর একমাত্র সন্তান কে কে দেখবে?এই চিন্তায় চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতালেরই বিছানায় ওই গৃহবধু কান্নায় ভেঙে পড়েন।চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় ওই গৃহবধুকে স্বান্তনা দিয়ে আশ্বস্থ করেন বলেন ‘সুস্থ হয়েই বাড়িতে ফিরবেন। কোন সমস্যা নেই’।
বর্তমানে বিপদমুক্ত ওই গৃহবধু ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্পবিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় বলেন ‘সাপে কামড় দিলে রোগীকে দ্রুততার সাথে হাসপাতালে আনলে চিকিৎসা করতে সুবিধা হয় এবং জীবন হানির আশাঙ্কা একে বারেই থাকে না বললেই চলে।সরকারী হাসপাতাল ছাড়া সাপে কামড়ানোর চিকিৎসা অন্য কোথাও হয় না।তবে একটা কথা সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে,যেনতেন প্রকারে রোগী কে ভয় দেখিয়ে বিব্রত করা যাবে না,সাহস যোগাতে হবে। কোন প্রকারে ভেঙে পড়লে চলবে না।কারণ আতঙ্ক অনেক সময় মানুষ কে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয়। ’