গ্যাসের লাগামছাড়া দাম,মাটির উনুনে হাত দিতেই কেউটের ছোবল।

0
443

সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং – রান্নার করা গ্যাসের লাগাম ছাড়া দাম!আর সেই কারণে মাটির উনুনে হাত দিতেই কেউটের ছোবল খেলেন এক গৃহবধু। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাড়োয়া থানার অন্তর্গত আটপুকুর গ্রামে। বর্তমানে ওই গৃহবধু ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দীর্ঘ প্রায় এক মাসের অধিক সময় বাড়িতে মাটির তৈরী উনুনের মধ্যে বাসা বেঁধে আশ্রয় নিয়ে ছিলো বিশাল এক বিষধর কেউটে।সকলের অলক্ষ্যেই নিশ্চিন্তে বসবাস করছিল ওই যমদূত।ইদানিং রান্নার গ্যাসের দাম অত্যধিক হারে বেড়ে গিয়েছে।পরিবারের রান্নার গ্যাস ও শেষ। অগত্যা কাঠের জ্বালানী ব্যবহার করে বুধবার সকালে রান্নার তোড়জোড় করছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাড়োয়ার আটপুকুর গ্রামের গৃহবধু রাইদা বিবি।মাটির তৈরী উনুনের ছাই পরিষ্কার করার জন্য সবেমাত্র উনুনে হাত দিয়েছেন।হাত দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাঁর ডান হাতে ছোবল মারে বিষধর কেউটে।ছোবল মারার পর উনুনের মধ্যে গর্জন করতে থাকে সাক্ষাৎ ওই যমদূত।এদিকে সাপের কামড় খেয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেন ওই গৃহবধু।পরিবারের অন্যান্যরা গৃহবধুর কান্নার আওয়াজ শুনে দৌড়ে আসেন।বিপদের কথা পরিবারের সকল কে বলেন।এরপর পরিবারের লোকজন ওই গৃহবধুকে উদ্ধার করে বাইকে চাপিয়ে চিকিৎসার জন্য তড়িঘড়ি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ভুষিঘাটা এলাকার বিদ্যাধরী নদীর খেয়া পারাপার হয়ে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তড়িঘড়ি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছায়। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে তখন রোগী দেখচ্ছিলে চিকিৎসক ডেসান্ড মোদী।
তিনি তড়িঘড়ি ওই গৃহবধুর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেন। এরপর ফোন করে ডেকে নেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্পবিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় কে।
বিষধর কেউটে কামড় দিয়েছে ওই মহিলার ক্ষতস্থান পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হয়ে যায় সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায়।শুরু হয় চিকিৎসা।তাঁর শরীরে সাপে কামড়ানো প্রতিষেধক অ্যান্টি ভেনাম সেরাম(এভিএস) ৩০ টি প্রয়োগ করা হয়।বর্তমানে তিনি সুস্থ রয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে আক্রান্ত গৃহবধু রাইদা বিবি জানিয়েছেন ‘বিগত দিনে বাড়িতে মাটির উনুনে রান্না করতাম। গ্যাসে তাড়াতাড়ি রান্না করা যায় বলে মাটির উনুন ব্যবহার করতাম না।ইদানিং রান্না গ্যাসের দাম অত্যধিক হারে বেড়ে গিয়েছে।তারপর গ্যাসও শেষ হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে মাটির উনুনে রান্না করার জন্য পরিষ্কার করছিলাম। উনুনের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল একটি বিষধর কেউটে।উনুনে হাত দিতেই ছোবল মারে।’
বাড়ির কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না নিয়ে গিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসার কারণ সম্পর্কে গৃহবধুর ভাইপো হাবিবুল্লা মোল্লা জানিয়েছেন ‘ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে বহু দুরদূরান্ত থেকে সাপে কামড়ানো রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। এমন খবর অনেক আগে থেকেই জানতাম। বিশেষ করে হুগলি,বর্ধমান এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলতলি,গোসাবা,বাসন্তী,বারুইপুর,জয়নগর এলাকা থেকে সাপে কামড়ানো রোগীরা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।যার কারণে কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।’
চলতি বছরে অত্যধিক হারে সাপে কামড়ানো ঘটনা প্রসঙ্গে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্পবিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় জানিয়েছেন ‘বিগত ২০২১ সালে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ১১০ জন সাপে কামড়ানো রোগী চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে এসেছিলেন।সংখ্যা চলতি বছরে অনেকাংশ বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে চন্দ্রবোড়া,এবং কেউটে সাপের প্রচুর উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায়, সাপের কামড়ের ঘটনা অত্যধিক হারে বেড়ে গিয়েছে। প্রতিদিনই সাপে কামড়ানো রোগীরা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আসছেন চিকিৎসার জন্য।এছাড়াও আমদের কে সচেতন ভাবে চলাফেরা করতে হবে। তাহলে সাপে কামড়ানোর মতো ঘটনা কমবে।প্রথমত আমাদের কে সচেতন ভাবে পথ চলতে হবে।ঘাসের উপর কিংবা নোংরা আবর্জনা থাকলে সেখানে সাবধানে কাজ করতে হবে। এছাড়াও বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরী,প্রয়োজন চুন ও ব্লিচিং মিশিয়ে বাড়ির চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।রাতে অবশ্যই টর্চ ব্যবহার করা এবং মুসারি টাঙিয়ে ঘুমানো উচিৎ। সাবধানতার পর সাপে যদি কামড় দেয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া জরুরী। কারণ সাপে কামড়ানো প্রতিষেধক এভিএস একমাত্র সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পাওয়া যায়। “