রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আধুনিক পুষ্টি বাগানের প্রয়াস স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের।

0
249

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- ঝড় – ঝঞ্ঝা সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবন বাসীদের নিত্য সাথী। বিগত দু বছর ধারাবাহিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর ফলে জীবন জীবিকা ব্যাহত হয়েছে তো বটেই, পাশাপাশি অনেকটাই বদলেছে মাটির চরিত্র। এর সাথে যোগ হয়েছে কবিড এর ভয়াবহতা। কৃষি অর্থনীতির এই সংকটকালে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র নিমপীঠের সহায়তায় ধারাবাহিকভাবে কৃষির উপর ট্রেনিং এবং কৌশলগত পরিষেবা দেওয়ার কাজ চলছে। মূল উদ্দেশ্য খাদ্য সুরক্ষা এবং জৈব পদ্ধতির প্রয়োগ। এমনই এক সফল উদ্যোগ যৌথ ভাবে রূপায়ণ করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মথুরাপুর-১ ব্লকের চক মধুসূদনপুর গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা রেখা কয়াল, রুপালি ঘরামী, মাধবী কয়াল এবং মেরিনা বেগম। সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন আয়োজিত একাধিক ঘরোয়া পুষ্টি বাগান এবং সবজি চাষের ট্রেনিং নিয়ে যৌথভাবে তাঁরা তৈরি করেছে আধুনিক পুষ্টি বাগান। এই পুষ্টি বাগানটি সম্পূর্ণভাবে মাটির চরিত্র এবং সুন্দরবনের জলবায়ুর চরিত্র অনুসারে তৈরি হয়েছে এবং কারিগরি সহায়তা দিয়েছে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। বিগত খরিফ মরশুমে বৃত্তাকারে প্রায় এক কাঠা জমিতে ১৪ রকমের শাক এবং সবজি চাষ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ঢেঁড়স, বেগুন, পেয়াঁজ, পুইঁ শাক, বরবটি, ধনে পাতা, গাজর, বীট, কলমি শাক, লংকা ইত্যাদি। ইতিমধ্যেই বাগানটি ডেমন্সট্রেশন সেন্টার হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে।
এমনিতেই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের রোজগারের একটি বড় অংশ খরচ হয় যায় খাদ্যের জন্য। কিন্তু বিগত দুই বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কবিড এর কারণে সেই ভাবে চাষ বাস না হওয়ার জন্য অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই পরিবারগুলি। রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন এর এই প্রয়াসের ফলে বর্তমানে এই চারটি পরিবার প্রত্যেকে এখন মাসে গড়ে ৮০০/- টাকার ফসল নিজেদের ফার্ম থেকে ঘরে তুলছে – নিশ্চিত হয়েছে নিজেদের পুষ্টি এবং বেড়েছে পরিবারের পরোক্ষ আয়। পাশাপাশি আগে প্রথাগত ও সাবেকি চাষের পদ্ধতির জন্য উৎপাদন বিশেষ হতো না, কিন্তু ট্রেনিং থেকে মাটির চরিত্র অনুসারে বীজ, ফার্ম এর ব্যবস্থাপনা, গাছের রোগ নিয়ন্ত্রণ, জৈব সারের প্রয়োগ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলি রপ্ত করার ফলে শুধু ফসলের গুণমান-ই বাড়েনি, পাশাপাশি কৃষি প্রশিক্ষক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছে মেরিনা, রুপালি, রেখা ও মাধবী। নিজেদের ফার্মের পাশাপাশি তাঁরা গ্রামের আরো প্রায় শতাধিক পরিবারকে শেখাচ্ছে পুষ্টি বাগানের কৌশলগত বিষয়গুলি। এই সাফল্য দেখে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রও এই ধরণের স্থানীয় জলবায়ু উপযোগী পুষ্টি বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছে। লক্ষ্য জৈব গ্রাম গড়ে তোলা।
আত্মবিশ্বাসী মাধবীর কথায় ” আজ আমাদের জৈব পদ্ধতিতে চাষের শিক্ষা রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের হাত ধরেই। এই ধরণের উদ্যোগ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের অবশ্যই জীবিকার বিকাশ ঘটাবে। আগামী দিনেও রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন এভাবেই আমাদের পাশে থাকুক, এটাই অনুরোধ করব ” ।