ট্রাক্টর মেকানিক এবং চালিকা হিসাবেই দিদি নাম্বার ওয়ানে উইনার শান্তিপুরের কন্যা আত্রেয়ী।

0
320

নদীয়া-শান্তিপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- সন্তান মেয়ে হোক বা ছেলে, কর্মজীবন নিয়ে চিন্তিত থাকেন সব পিতা-মাতাই। তবে একটু ব্যতিক্রমী পড়াশোনা করলে হয়তো সফলতা মেলে অনায়াসে।
নদীয়ার শান্তিপুর শহরের ভদ্রকালী এলাকায় ইলেকট্রনিকস্ দোকানদার অদ্বৈত দাসের মেয়ে আত্রেয়ী কত্থক নাচে বহুবার পুরস্কৃত হয়েছে। তবে বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী আত্রেয়ী এবং তার দাদা অর্ঘ্য দুজনেই ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রতিষ্ঠিত।
তবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ২০১৫ সালে কৃষ্ণনগর গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা কোর্স করে, তিন বছরের কোর্স শেষ হওয়ার পর একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আরো তিন বছর পড়াশোনা করে বিটেক সম্পন্ন করে আত্রেয়ী। মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এ পড়াশোনার জন্য, বিভিন্ন সমস্যার কারণেই হয়তো মহিলাদের চোখে পড়ে না, তবে মা রীনা দাস গৃহবধূ হওয়ার কারণে তার মনের সুপ্ত বাসনা অনুযায়ী মেয়েকে সবক্ষেত্রেই সহযোগিতা করতেন। অন্যান্য পুরুষ সহপাঠীরা বিটেক সমাপ্ত হওয়ার পর বিভিন্ন বিভাগে চাকরিতে যোগদান করে, তবে একমাত্র মহিলা ছাত্রী আত্রেয়ীর জেদ ছিল যে বিষয়ে পড়াশোনা অর্থাৎ পরিবহন এবং চাষের ট্রাক্টর, সেই বিষয়েই খুঁজতে থাকে কর্মের সুযোগ। আন্তর্জাতিক মানের একটি ট্রাক্টর উৎপাদক এবং বিক্রেতা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে নদীয়ার একটি ইউনিটে প্রথম কাজ করতে শুরু করে। অল্পদিনের মধ্যেই তার পড়াশোনার দক্ষতা এবং ব্যবহারিক প্রয়োগে ওই সংস্থারই সমগ্র বাংলা এবং ভুটানের দায়িত্ব পান সেলস এন্ড মার্কেটিং এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে।
সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের পেশায় একজন মহিলা হিসেবে আত্রেয়ীর সফলতার কথা তুলে ধরতে নৈহাটিতে দিদি নাম্বার ওয়ান অডিশনে গত ৮ই মে আমন্ত্রণ জানায় তার এক বান্ধবী। ১৪ তারিখ
দ্বিতীয় অডিশনে যাওয়া প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলো কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকার কারণে, তবে ট্রাক্টর প্রস্তুতকারক সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে তারাই নিয়ে যান নিজেদের উদ্যোগে। এরপর ফাইনাল শুটিং হয় ১৯ শে মে মা-বাবা সহ পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন পরিজন সাতজন আমন্ত্রণ পান। ভিন্ন পেশায় স্বাবলম্বী মেয়ে হিসাবে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ফুচকা বিক্রেতা খবরের কাগজ বিক্রেতা এবং গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরতা এমনই তিনজন অংশগ্রহণের মধ্যেও আত্রেয়ী উইনার হয় দিদি নাম্বার ওয়ানে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শান্তিপুরে খুশির জোয়ার।
তবে আত্রেয়ী বলে, মূলত বাবার ইচ্ছায় মেকানিক্যাল পড়াশোনা ভালো লেগে যায়, যার ফলে প্রত্যন্ত গ্রামে কৃষকদের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছে, সেখানে আমাকে দেখে অনেক মেয়ের বাবা তাদের মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে সচেতন হবেন এটাই আমার বড় পাওনা।
আত্রেয়ীর মা রিনা দেবী মেয়ের মধ্যে দিয়ে নিজের সুপ্ত ইচ্ছা পূরণে উচ্ছ্বাসিত তিনি, তবে সকল মায়েদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তাদের মেয়েদের উপর বিশ্বাস রাখার জন্য।
বাবা অদ্বৈত দাস বলেন, নাচের ক্যারিয়ার কিছুটা ব্যাঘাত হলেও কর্ম নিশ্চিত হওয়ার পর এবার আবারো তা প্রকাশ পাবে।