অভাবের সংসারে মেধাবী ছাত্রী মাথভাঙ্গার দীপিকা, উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তিত, সরকারের কাছে সাহায্যের দিনমজুর বাবার।

0
1290

মনিরুল হক, কোচবিহারঃ অভাবের সংসারে মেধাবী ছাত্রী। উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৯৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেও উচ্চ শিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তায় মাথাভাঙা ১ ব্লকের বৈরাগীরহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারত বাংলাদেশ ঘেঁষা চেনাকাটা গ্রামের কৃতি ছাত্রী দীপিকা বর্মন। দীপিকার বাবা সুনীল বর্মন দিনমজুর। মা স্বপ্না গৃহবধূ। রয়েছে সামান্য কৃষিজমি। সংসারের হাল ধরতে করতে হয় দিনমজুরিও পাশাপাশি মেলায় মেলায় ঘুরে ঘুরে ক্যালেন্ডারও ফেরি করেন। তবে মেয়ের পড়াশোনার খরচ নিয়ে কোনওদিন আপস করেন নি।
জানা গেছে, আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সব বিষয়ে টিউশনিও জোটেনি দীপিকার। এক কথায় লড়াইটা সহজ ছিল না। এর পরেও প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর জেদকে সম্বল করে যাবতীয় প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়েছে উচ্চমাধ্যমিকে মোহনপুর সাবিত্রী বিদ্যামন্দির থেকে কলা বিভাগে ৪৭৯ নম্বর পেয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। তার এই রেজাল্টে খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, গৃহশিক্ষক থেকে স্থানীয় মানুষরাও। মেয়ের সাফল্য হাসবেন, নাকি দুশ্চিন্তায় কাঁদবেন, ভেবে আকুল পরিবার। দারিদ্র আর অনটনের কথা মনে করে খুশির দিনেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে গিয়ে যেন গলা ধরে আসে দীপিকার। দীপিকার ইচ্ছে শিক্ষকতা করা।
এবিষয়ে মোহনপুর সাবিত্রী বিদ্যামন্দিরের প্ৰধান শিক্ষক কার্তিকচন্দ্র বর্মন বলেন, “দীপিকা মাধ্যমিকেও ভালো ফল করেছিল। একাদশে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েও অর্থাভাবে পড়তে না পেরে পরে কলা বিভাগে ভর্তি হয়। তার ফলাফলে আমরা খুশি। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সাহায্য করা হবে। উচ্চমাধ্যমিকে এত ভালো ফল করা সত্ত্বেও এরপর মেয়েকে কিভাবে পড়াশোনা করাবেন সেই দুশ্চিন্তায় দিশেহারা বাবা।
মেয়ের পড়াশোনার মাঝে আর্থিক সমস্যা যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সে জন্য সংবাদমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্য চাইছি। নয়তো মেয়েকে পড়াতে পারব না।”
এই খবর পাওয়ার পরেই মাথাভাঙ্গা মহিলা সমাজ কল্যাণ সংঘের পক্ষ থেকে সংস্থার কর্ণধার অঙ্কিতা দেব বর্মন দীপিকার বাড়িতে যান সম্বর্ধনা দিতে। সম্বর্ধনার পাশাপাশি তাকে মিষ্টিমুখ করানো হয় এবং তার হাতে ভালো কিছু বই তুলে দেওয়া হয় এবং বেশ কিছু সাহায্য করা হয়।অঙ্কিতা দেবে জানান দীপিকার মতো অভাবেই এবং মেধাবী ছাত্রী যেভাবে ভালো নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে সাড়া ফেলেছে তার জন্য আমরা গর্বিত। দীপিকার উচ্চশিক্ষায় যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য সদা সর্বদা খোঁজখবর রাখব এবং তার পাশে থাকব একথা জানিয়েছেন অঙ্কিতা দেবী। আজকের সম্বর্ধনা পেয়ে বেশ খুশি হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেষা মেধাবী ছাত্রী দীপিকা ও তার পরিবার।