নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হতেই চারিদিকে শুরু হয়েছে ভর্তি হওয়ার তোড়জোড় । জেলা থেকে একাধিক কৃতি ছাত্র ছাত্রীরা ভালো নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে। একয়ভাবে নদীয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা বানপুর হাই স্কুলের কৃতি ছাত্রী জয়া পাল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় বাবা পড়া বন্ধ করে দিতে বলে । জয়া বাবার কথায় কর্ণপাত না করে দাঁতে দাঁত চেপে মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রাগ চেপে জেদ ধরে বলে আমি পড়বোই । শেষ পর্যন্ত নিজে টিউশনি পরিয়ে অতি কষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে যায় । সেইজেদে ফল যা হবার তাই হল । এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৭৯ নম্বর পেয়ে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে প্রথম হয় জয়া। তার এই সাফল্যে খুশি পরিবার থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীরাও।
জয়ার বাবা প্রভাস পালের বানপুর বাজারে ভাড়ার কাপড়ের ছোট্ট দোকান রয়েছে। যদিও দু’বছর করোনা এবং লকডাউনের ফলে তার ব্যবসার অবস্থা বন্ধ হবার মত । সংসারে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য মা বাড়িতেই সেলাই মেশিনের কাজ করেন। জয়ারা দুই বোন বাবা মা নিয়ে ছোট্ট সুখের সংসার । ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী হিসেবেই পরিচিত জয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকতেও ভালোবাসে সে।
প্রতিদিন সন্ধ্যাই টিউশনি পরিয়ে বাড়িতে ফিরে পড়াশোনা করতে বসে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেত। উচ্চমাধ্যমিকে ফলাফল বাড়ি আসতে চিৎকার করে বলে ওঠে মা আমি পাশ করেছি । মেয়ের চিৎকারে মা ঘর থেকে ছুটে আসেন জড়িয়ে ধরেন মেয়েকে । দুচোখে অশ্রু তবে আজ অশ্রু দুঃখের নয়, বড় আনন্দের।কারন কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের প্রথম হয়েছে জয়া ।প্রথম হওয়ার পর জয়া বলে ওঠে আমি ভবিষ্যতে WBCS অফিসার হতে চাই। কিন্তু বাধ সেধেছে অর্থনৈতিক অবস্থা ।পারুক না পারুক সেটা বড় ব্যাপার নয় তার চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই এটা দেখেও যদি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের আসা ভবিষ্যতে তার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে । কিভাবে এল তার সাফল্য ?
স্কুল করোনার জন্য বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় বাড়িতেই অনলাইন ক্লাস এর মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যেত সে। তবে স্কুল খোলা থাকলে আরো ভালো নম্বর পেত বলে জানায় জয়া। তবে জয়ার সাফল্যের পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম ও কষ্টের জীবন ।
জয়ার বাবা প্রভাস পাল জানায়, একাদশ শ্রেণীতে আর্থিক অভাবের কারণে মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি ছিল জয়ার! নিজে টিউশনি করে এবং তার মা বাড়িতে সেলাই মেশিনের কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে যায় সে। বর্তমানে প্রভাস বাবুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ ।ভবিষ্যতে মেয়ের ইচ্ছে বড় অফিসার হবার কিন্তু তাকে অতদূর পড়ানোর সাধ থাকলেও সাধ্য নেই তার ।
। তিনি জানান যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি তার মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করেন তাহলেই তার মেয়ে ভবিষ্যতে একজন বড় অফিসার হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। জয়ার এই উদ্যোগে সকলেই গর্বিত গর্বিত শিক্ষকরাও । আমরাও তার মঙ্গল কামনা করি এবং তার এই কঠিন লড়াই কে আমরা কুর্ণিশ জানায় । জয়ার মা বলেন ছলছল চোখে প্রয়োজনে আরও নিজে পরিশ্রম করে মেয়েকে আমি পড়াতে চাই যদি কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোন এনজিও তাদের সাহায্য করে বা পাশে দাঁড়ান তাহলে তার ধারণা জয়া সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে ।
জীবন যুদ্ধে লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে ভালো ফল করাতে গর্বিত পরিবার থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীরাও।