উঃ দিনাজপুর, রাধারানী হালদারঃ- বছর পঞ্চাশের জয়দেব রাউত যে সমাজ সচেতনতার লক্ষ্যে সারা দেশে ছুটে বেড়ান, তার জন্য কিন্তু তিনি কর্মস্থল থেকে আলাদা কোনো সুবিধে পান না। কাজ করলে দিনে ৪০০ টাকা বেতন। কাজ না করলে সেদিন কোনো বেতন নেই। তা সত্ত্বেও তিনি কেবল মানুষের উপকার করতে চান বলে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য পাড়ি দেন সাইকেলে। কোনো রেকর্ড গড়ে বিখ্যাত হওয়ার তাগিদ থেকে নয়, মানুষকে ভালোবেসেই তিনি এই দুঃসাহসী কাজগুলো করে থাকেন। এরই মধ্যে ৩৯ বার রক্ত দান করে ফেলেছেন। মিরিক যাত্রা জয়দেবের তিন নম্বর অভিযান করে কিন্তু কুচবিহারে বন্যা কারনে শিলিগুড়ি থেকে ব্যাক করে । এখন তিনি পথে রয়েছেন রাস্তায় মালদা, উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ মতো বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং নানা সংগঠন। উত্তর দিনাজপুর কালিয়াগঞ্জ ২৪ জুন পোচায় নাথ মন্দির প্রাঙ্গণ এখানে ব্লড ব্যাকের সঙ্গে যুক্ত মানুষ ও বিভিন্ন সংঠনের পক্ষে সম্বর্ধনা ও আর্থিক ভাবে সাহায্য হাত বাড়েয়ে দেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে গন্তব্যতে পৌঁছবেন মোটামুটি ২১ তারিখ নাগাদ।
খুব অল্প বয়েসে ফুটবল খেলতে গিয়ে পেটে চোট লেগেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে ১৮ বছর বয়সে এক জটিল অস্ত্রোপচার হয় পেটে। তখন চার ইউনিট ও পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু সেই রক্ত সহজলভ্য হয়নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে রক্তের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল তখন। সেই ঘটনার স্মৃতি এখনও নদিয়ার জয়দেব রাউতের মনে টাটকা। আশেপাশের মানুষ যাতে কখনো তাঁর মতো রক্তের অভাবে ঘোরতর সমস্যায় না পড়ে, এরকম বাসনা নিয়ে ব্লাড ডোনার অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এবার সারা দেশে রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে গত ৫ জুন বুধবার তিনি সাইকেল নিয়ে বারাসত থেকে রওনা দেন উত্তর বঙ্গের উদ্দেশ্যে।
জয়দেব রাউত জন্মেছেন এবং বড়ো হয়ে উঠেছেন হুগলির চাঁপদানিতে। পৈত্রিক বাড়ি ওড়িশায় হলেও এখন তিনি পুরোদস্তুর বাঙালি। পেশা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন ঝাড়ুদারের কাজকে, এবং নিয়মিত আবর্জনা সাফ করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছেন, সাধারণ মানুষকে পরিচ্ছন্নতার পাঠ দেওয়া কত জরুরি। সেই লক্ষ্যে সাইকেল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, গোয়া, কর্ণাটকের মতো ২০টি রাজ্য চষে ফেলেন। সাইকেলের দু’দিকে লাগানো সাইনবোর্ডে লেখা ছিল পরিচ্ছন্নতার বার্তা। তারপর ফিরে এসে কয়েক মাস পর আবার রওনা দেন উত্তর বঙ্গে। নতুন মিশন। রক্তদানের উপযোগিতা নিয়ে প্রচার করতে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ-সহ আটটি রাজ্যে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ান। ফেরার পর আবার নতুন অভিযানের প্রস্তুতি থাকে।