রক্তে হিমোগ্লোবিন বেশি থাকার কারণে অসুস্থ শিশুকে সুস্থ করে ফিরিয়ে দেওয়া হলো মায়ের কোলে,খুশির হাওয়া কোলাঘাটে।

0
307

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন হয় রক্ত। কখনো অপারেশন বা কখনো শারীরিক বিভিন্ন কারণে মানব দেহে প্রবেশ করাতে হয় রক্তের। কিন্তু কিন্তু রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীর থেকে রক্ত বের করে দিতে হচ্ছে সদ্যোজাত শিশুর এমন ঘটনা একেবারে বিরল, যা ডাক্তারি ভাষায় যেতে পারে লাখে এমন এক অসুখ আসে এমন ছবি অসুখ ধরা পড়ে একটা।যাকে বলা হয়(Polycythemia) পলিসাইথেমিয়া রোগ। এই সম্বন্ধে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কেলাঘাটের শিশু চিকিৎসক ডাঃ প্রবীর ভৌমিক জানান এমন রোগী গত ২০ বছরে পেয়েছেন মাত্র ২ জন শিশুকে।এমনই এক সদ্যজাত শিশুপুত্রের চিকিৎসা চলছে কোলাঘাটের একটি বেসরকারী নার্সিংহোমে।জানা গেছে হাওড়া জেলায় জয়পুর এলাকার উর্মিলা গুবড়ি গত ১৭ দিন আগে জন্ম নিয়েছে তমলুকের একটি নার্সিং হোমে জন্ম দেয় পুত্রসন্তান।মাত্র দুদিনের মধ্যেই শ্বাস কষ্ট, হেঁচকি টানা এবং হাতের শিরা ফুলে যাওয়া সহ একাধিক সমস্যায় পড়ে সদ্যজাড শিশুটি।সঠিক কি কারনে এই উপসর্গ ধরতে পারেনি চিকিৎসকেরা।এরপর তিন দিনের মাথায় কোলাঘাটের শিশু চিকিৎসব ডাঃ প্রবীর ভৌমিকের তত্বাবধানে ভর্তি হয় শিশুটি।এরপর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দেখে রীতিমতো ছানাবড়া চিকিৎসকের।দেখাযায় হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে দেখাযায় তার মাত্রা ২৬।হিমোগ্লোবিন বেড়ে যাওয়ায় এই শ্বাসকষ্ট,খিঁচুনি এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া। সাধারন মানুষের ১২ ছোট বাচ্চাদের১৬- ১৮ থাকে ।এরপর চিকিৎসা শুরু হয় সদ্যজাতের।ধিরেধিরে স্বাবাবিক হয়।এককথায় ছোট্ট পরীক্ষায় জীবন দান এই শিশুর।ব্যতিক্রমি রোগ এই পলিসাইথেমিয়া।বিরল রোগে আক্রান্ত নবজাতক শিশুকে মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয় আজ।ডাঃ প্রবীর ভৌমিক জানান,নবজাতক শিশুটি পলিসাইথেমিয়ার আক্রান্ত ছিলো। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন নতুন পরীক্ষার মধ্যেও ছোট্ট একটা হিমোগ্লোবিন পরীক্ষায় মায়ের মুখে হাসি ফিরিয়ে দিল। বাচ্চাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। বর্তমানে কোলাঘাটের শুশ্রূষা শিশু সেবা নিকেতনে বাচ্চাটি চিকিৎসাধীন । রোগের লক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা, গায়ের রং পরিবর্তন, সেই সঙ্গে শিরা-উপশিরায় রক্ত ফুলে উঠে পড়া প্রত্যেকটি উপসর্গই এই বাচ্চাটির মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। বাচ্চাটিকে পর্যবেক্ষন রাখার পর সাধারণ হিমোগ্লোবিন পরীক্ষায় ধরা পড়ে বাচ্চাটির রক্তে রয়েছে ২৬ গ্রাম হিমোগ্লোবিন। সাধারণত একটি ছোট বাচ্চার শরীরে থাকে ষোল থেকে সতেরো গ্রাম হিমোগ্লোবিন। পিসিভি পরীক্ষা করার পর দেখা যায় বাচ্চাটির শরীরে রক্তের ঘনত্ব ৮৫ শতাংশ, যেখানে সাধারন ভাবে থাকার কথা ৬০ থেকে ৬৫। যে পরিমান জল থাকার কথা তা না থাকার জন্যই শিশুর শিরা-উপশিরা গুলো ফুলে যাচ্ছে, রক্ত সঞ্চলন না হওয়ার জন্য শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট হচ্ছে । সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাচ্চাটির শরীর থেকে রক্ত বের করতে হবে। কয়েকদিন ধরে কিছু কিছু রক্ত বের করে প্রবেশ করা হয় লবণযুক্ত জল। আর তাতেই সাফল্য আসতে থাকে। বাচ্চাটির শরীরে দেখা যায় যে ২৬ গ্রাম হিমোগ্লোবিন ছিল তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে অর্থাৎ ১৭ গ্রামে। সেই সঙ্গে আরও লক্ষ্য করা যায় যে সমস্ত উপসর্গগুলি বাচ্চাটির শরীরে ছিল তা ধীরে ধীরে কমে আসছে। দীর্ঘ চিকিৎসা জীবনে এরকম রোগীর সংখ্যা মাত্র দুটি বলে জানান। আমরা সাধারণত দেখি মানুষ কে রক্ত দিতে হয় এই বাচ্চাটির শরীর থেকে রক্ত বের করতে হচ্ছে। প্রতিদিন একটু একটু করে রক্ত বের করে লবণ জল প্রবেশ করে যে পরিমাণ বাচ্চাটির দেহে হিমোগ্লোবিন থাকার কথা সেই অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। বাচ্চাটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। বাচ্চার মা উর্মিলা গুবড়ী তার সদ্যোজাত ছেলের নাম দিয়েছে কৃষ্ণ, কোলে পেয়ে কতই না আনন্দ চোখেমুখে। বাচ্চার নতুন জীবন পেয়ে ডাক্তারবাবুকে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেই সঙ্গে হাওড়া জেলার জয়পুর বাড়িতে যখন খবর যায় এই সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে শুক্রবারে তাদের ছুটি দেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে পরিবারের লোকজন।