সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং : – এতোদিন যাবৎ দুয়ারে দুয়ারে সরকার তার পরিষেবা নিয়ে হাজীর হয়েছিলো। এবার সেই সরকারেরই একটি বড় অংশ পুলিশ প্রশাসন হাজির হয়েছে দুয়ারে দুয়ারে।তবে কোন চোর,ডাকাত কিংবা দাগী আসামী ধরার জন্য নয়।হাজীর হয়েছে প্রান্তিক মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করে তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনে সহজেই সমাধান করার জন্য। তা ছাড়াও সাধারণ মানুষ পুলিশ কে কোন প্রকার ভয় না পেয়ে বন্ধুর মতো মনে করেন সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বারুইপুর জেলা পুলিশের তরফে।কর্মসূচীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘সম্পর্ক’।সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে শনিবার সকালে এক শিবিরের আয়োজন হয়েছিল ক্যানিংয়ের নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের হিঞ্চাখালি গ্রামে। সেখানে ক্যানিং মহিলা থানার আধিকারীক তনুশ্রী মন্ডল,সুজাতা নায়েক,দেবশ্রী বেরা সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা হাজীর হয়েছিলেন।হাজীর হয়েছিলেন এলাকার শতাধিক মহিলা-পুরুষ। রীতিমতো থানার মতোই সেখানে একে একে গ্রামবাসীরা তারা তাদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেন।এবং খোলা মনেই বন্ধুবান্ধবের মতোই সমস্যা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে মত বিনিময় করেন।
গ্রামেরই মহিলা লিপীকা সরদার। গত দেড়বছর আগে বিয়ে হয়েছিলো বাসন্তীর হাড়ভাঙ্গী গ্রামের বিভাস হালদারের সাথে।বিয়ের পর থেকেই স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত।পুলিশে অভিযোগ জানানোর ইচ্ছা থাকলেও ভয় এবং অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে হয়ে ওঠেনি। শনিবার নিজের গ্রামে(দুয়ারে পুলিশ)পুলিশ আসায় অভিযোগ জানাতে পেরে খুশি।
ইনা মন্ডল। বিয়ে হয়েছিলো উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেখালি থানার রাজবাড়ি এলাকার শুভঙ্কর মন্ডলের সাথে।বিয়ের পর থেকেই স্বামীর অত্যাচারে জর্জরিত। এদিন দুয়ারে পুলিশ আসায় তিনিও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এলাকার গৃহবধু মায়া বায়েন। সম্পত্তি নিয়ে ভাসুরের সাথে দীর্ঘদিনের বিবাদ। থানা পুলিশ করে কিছুই হয়নি। এদিন দুয়ারে পুলিশ প্রশাসন আসায় তিনি সুবিচার পাবেন আশা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন।এছাড়াও হিঞ্চাখালি গ্রামের অসংখ্য মহিলা-পুরুষ তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছেন দুয়ারে পুলিশ প্রশাসনের কাছে। তারা আশাবাদী এতোদিন থানায় গেলে কোন প্রকারই কাজের কাজ হতো না। পুলিশ প্রশাসন দরজার আঙিনায় এসে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করায় আশার আলো দেখতে শুরু করছেন গ্রামে মানুষজন।ক্যানিং মহিলা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারীক তনুশ্রী মন্ডল জানিয়েছেন ‘সাধারণ মানুষের সুখ,দুঃখে সাথী হয়ে পুলিশ প্রশাসন কাজ করতে বদ্ধ পরিকর। যার জন্য ‘সম্পর্ক’ নামক একটি প্রকল্প বারুইপুর পুলিশ জেলা চালু করেছেন। আমরা প্রতি মাসে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করে অভাব অভিযোগ শুনে লিপিবদ্ধ করে তার সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি খুব অল্পদিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হবে।
অন্যদিকে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ঝড়খালি কোষ্টাল থানার পুলিশ আধিকারীক প্রদীপ রায় ও অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা ও সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ জানতে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ত্রিদীবনগর এলাকার মানুষের দূয়ারে হাজীর হয়েছিলেন।সেখানে সাধারণ মানুষ তাদের অভিযোগ পুলিশের কাছে লিপিবদ্ধ করেন।তবে এই ঝড়খালি কোষ্টাল থানা এলাকায় কোন নারী নির্যাতন বা ক্রাইম সম্পর্কে কেউ পুলিশে অভিযোগ করেন নি। তারা এলাকার রাস্তাঘাট,পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ সহ অন্যান্য পরিষেবার জন্য পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য দুয়ারে পুলিশ প্রসাশন হাজীর হয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করায় সাধারণ মানুষজন খুশি। গ্রামবাসী ললিতা,মাধব,অরবিন্দু,নমিতাদের দাবী ‘হয়তো এবার সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে। কারণে আগে পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে দাদা-দিদি কিংবা পার্টীর লোকেদের হাত ধরে যেতে হতো। তাতে করে টাকা পয়সার খেলা চলতো।সমস্যা রয়েই যেতো সমাধান হতোই না। বর্তমানে পুলিশ প্রশাসন দুয়ারে আসায় একদিকে যেমন সমস্যা সহজেই জানানো যাচ্ছে,তেমনই দাদা-দিদি,পার্টীর লোকজন কিংবা টাকা পয়সার কোন উল্লেখ থাকছে না। ফলে পুলিশের এই সম্পর্ক উদ্যোগ টা ভালো। অনেক আগে থেকে এমনাই হওয়া উচিৎ ছিল।