আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ নিজের মাতৃভাষা সাঁওতালীতে অনুবাদ ও অলচিকি হরফে লিখে নজীর সৃষ্টি করলেন আর এক আদিবাসী যুবক। বাঁকুড়ার খাতড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম মুড়াগ্রামের বাসিন্দা বছর বত্রিশের, পেশায় অধ্যাপক শ্রীপতি টুডু সেই অসাধ্য সাধন করেছেন। আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কে কি লেখা আছে দেশের সংবিধানে? তা জানার আগ্রহ থেকেই পড়া শুরু। পরে নিজেদের জনজাতির মানুষের কাছে সেই সংবিধান পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করেন তিনি। করোনা আবহে লক ডাউনের দিন গুলিতে মানুষ যখন গৃহবন্দি, শ্রীপতি টুডু তখন সংবিধান অনুবাদে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন। আর তা প্রকাশের পর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নজরে আসে। গত ২৯ মে ‘মন কি বাত অনুষ্ঠানে’ এই বিষয়টি তিনি উপস্থাপিত করার পাশাপাশি শ্রীপতি টুডুর এই কাজকে কূর্ণিশ জানিয়েছিলেন।
মুড়াগ্রামের বাসিন্দা শ্রীপতি টুডু গ্রামের স্কুলের পাঠ শেষে ঝিলিমিলি হাই স্কুল থেকে সাঁওতালী মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর পিরলগাড়ি মোড়ের পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্ম্মু মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। মাঝে পুরুলিয়া একটি স্কুল ও ঝাড়গ্রামের একটি কলেজে শিক্ষকতা করলেও বর্তমানে তিনি সিধু কানু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁওতালী ভাষা বিভাগে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত।
শ্রীপতি টুডুর সাঁওতালী ভাষায় অনুদিত এই সংবিধান কিছুটা হলেও সংক্ষিপ্ত, তবে প্রতিটি বিষয় তিনি সমান গুরুত্ব দিয়ে ছুঁয়ে গেছেন। ২০২২ সালে অনুবাদের কাজ শেষ হলে দিল্লীর একটি নামী প্রকাশনা সংস্থা তা প্রকাশ করে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসী সমাজে এই বিষয়টি যথেষ্ট আলোড়ন ফেলে। সংবিধান অনুবাদের পাশাপাশি অধ্যাপিকা সোনালী মুখোপাধ্যায়ের বিশেষ সহায়তায় তিনি রবীন্দ্রনাথের ৬৫ টি কবিতা সাঁওযালী ভাষায় অনুবাদ করেছেন বলেও জানা গেছে।