রথযাত্রার দিন প্রবল জনজোয়ারের মধ্যে শ্রীমন্ মহাপ্রভু যে প্রেমের তরঙ্গ, ভাবের তরঙ্গ , ভক্তির তরঙ্গ , আবেগের—আনন্দের তরঙ্গ তুলেছিলেন– তার কাছে নীলাচলের নীল সমুদ্রের তরঙ্গ ক্ষুদ্র হয়ে গিয়েছিল, খর্ব হয়ে গিয়েছিল, ম্লান হয়ে গিয়েছিল। আমরা এতদিন জানতাম যে জগন্নাথের রথযাত্রার উদ্দেশ্য মাসির বাড়ি গমন ও ভক্তদের দর্শন দান। কিন্তু, মহাপ্রভু জানালেন যে, রথযাত্রার মধ্যে আরও একটি নিগূঢ় বিষয় আছে । আর তা হল—জগন্নাথের গোপন রসাস্বাদন ও ‘ব্রজযাত্রা’।
“যদ্যপি জগন্নাথ করে দ্বারকা বিহার।
সহজ প্রকট করে পরম উদার ।।
তথাপি বৎসর মধ্যে হয় একবার।
বৃন্দাবন দেখিতে হয় উৎকণ্ঠা অপার ।।
বৃন্দাবন সম এই উপবনগণ ।
তাহা দেখিবারে হয় উৎপন্ঠিত মন ।।
বাহির হইতে করে রথযাত্রা ছল ।
সুন্দরাচল ছাড়ি প্রভু যায় নীলাচল।।”
(চৈ.চ.–মধ্য)
রথযাত্রার দিন শ্রীজগন্নাথ সুন্দরাচল তথা ব্রজে যান , আবার উল্টোরথে ফিরেও আসেন । এ কারণেই ব্রজরসের যাঁরা উপাসক তাঁরা উল্টোরথ দর্শন করেন না । কারণ , ব্রজ ত্যাগ করে জগন্নাথের পুনরায় নীলাচলের মন্দিরে তথা দ্বারকায় প্রত্যাবর্তন তাঁরা মন থেকে মেনে নিতে পারেন না , কষ্ট পান অন্তরে। প্রেমাস্পদের থেকে বিরহ কে চায়! দূরত্ব কে পছন্দ করে ! প্রিয়তমকে প্রাণের থেকে দূরে যেতে দিতে কার প্রাণ চায় !
লেখিকা —রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক
গ্রন্থ—- মহাপ্রভুর মহাজীবন প্রসঙ্গ
প্রকাশক— সংস্কৃত পুস্তক ভান্ডার।